সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সনদ জালিয়াতি, অভিযোগ ডাচ দূতাবাসের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের চিঠিতে উদ্বেগ ৬৫০ কোটি টাকার ড্রেজার কেনায় অনিয়ম by রাহীদ এজাজ
মিথ্যা তথ্য ও সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার খননযন্ত্র (ড্রেজার) সরবরাহের কাজ বাগিয়ে নিয়েছে বলে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের একটি যৌথ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম ভোসতা-এলএমজি কর্ণফুলী।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকার নেদারল্যান্ড দূতাবাস থেকে পানিসম্পদমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, খননযন্ত্র উৎপাদনকারী হিসেবে ডাচ প্রতিষ্ঠান ভোসতা যে সনদ দিয়েছে, সেটি জাল। এরপর ভোসতা-এলএমজি কর্ণফুলীকে কাজ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা। তিনি পানিসম্পদমন্ত্রীকে দেওয়া এক চিঠিতে ‘জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া প্রতিষ্ঠানকে’ কাজ দেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
ভোসতা-এলএমজি কর্ণফুলী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য ৩৫৭ কোটি টাকায় চারটি খননযন্ত্র ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জন্য ১৩৯ কোটি টাকায় দুটি খননযন্ত্র সরবরাহের কাজ পেয়েছে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএর আরেকটি প্রকল্পের আওতায় ১৫০ কোটি টাকায় ছয়টি খননযন্ত্র সরবরাহের কাজ একই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
যেভাবে জালিয়াতি ধরা পড়ে: খননযন্ত্র সরবরাহ কাজের দরপত্রে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল ডাচ কোম্পানি ভোসতা-এলএমজি। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের যেহেতু খননযন্ত্র তৈরির অভিজ্ঞতা নেই, বিদেশি প্রতিষ্ঠানটিকে প্রকৃত খননযন্ত্র উৎপাদনকারী হতে হবে। এ জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের নিজ দেশের চেম্বারের সনদ লাগবে। দরপত্রে আমস্টারডাম চেম্বার অব কমার্স ও নেদারল্যান্ডের জাহাজনির্মাতা সংস্থার সনদ জমা দেয় ভোসতা। ওই সনদ দুটিতে উল্লেখ করা হয়, ভোসতা প্রকৃত খননযন্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ওই সনদ দুটির পক্ষে গত ১ মার্চ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে একটি প্রত্যয়নপত্র দেয় ঢাকায় নেদারল্যান্ডের দূতাবাস।
পরে গত ১৭ জুন ঢাকায় নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত আলফন্স হ্যানিক্যান্স পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনকে চিঠি দিয়ে জানান, ভোসতা খননযন্ত্র প্রস্তুতকারী মর্মে যে সনদ দেওয়া হয়েছে, তা জাল।
রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ‘ভোসতা-এলএমজির দেওয়া সনদের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ মার্চ আপনাকে জানিয়েছিলাম, প্রতিষ্ঠানটিকে একটি প্রকৃত খননযন্ত্র প্রস্তুতকারী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আর এটি বাংলাদেশে দরপত্রে অংশ নেওয়ার পূর্বশর্ত। এ ব্যাপারে আমস্টারডাম চেম্বার অব কমার্স এবং নেদারল্যান্ড জাহাজনির্মাতা সংস্থার সনদের উল্লেখ করি। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, আমরা পরে জানতে পেরেছি, আমস্টারডাম চেম্বারের যে সনদটি ভোসতা আমাদের দিয়েছে, সেটি জাল। এটি জেনে আমরা আমস্টারডাম চেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। গত ১১ জুন আমস্টারডাম চেম্বারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভোসতা যে সনদটি দিয়েছে, সেটি তারা দেয়নি।’ আমস্টারডাম চেম্বারের এই বক্তব্যের পর নেদারল্যান্ড জাহাজনির্মাতা সংস্থাও এ বিষয়ে অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলে চিঠিতে বলা হয়।
চিঠির শেষে রাষ্ট্রদূত আলফন্স হ্যানিক্যান্স বলেন, ‘মিথ্যা সনদের ভিত্তিতে আমরা আপনাদের ভুল তথ্য সরবরাহের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। তাই আমরা গত মার্চে যে অবস্থানের কথা জানিয়েছিলাম, তা শুধরে নিচ্ছি। এবং আমাদের কাছে এমন কোনো বস্তুনিষ্ঠ তথ্য নেই, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে ভোসতা প্রকৃত অর্থে খননযন্ত্র নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান।’
এই চিঠির অনুলিপি পানিসম্পদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোসতার এ দেশীয় অংশীদার কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রশিদ প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন, ভোসতা খননযন্ত্রের প্রকৃত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নয়। তবে জাল সনদ জমা দেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ‘প্রকৃত প্রস্তুতকারী শব্দটি ভ্যাগ টার্ম। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে খননযন্ত্র তৈরি করে, ভোসতাও সেভাবে তৈরি করে।’
যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের চিঠির পর এর কার্যকারিতার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে গেলেন কেন, এই প্রশ্নের জবাবে আবদুর রশিদ বলেন, ‘ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বিরুদ্ধে যাতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, সে জন্য আদালতে গিয়েছি।’
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না: এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ১৬ জুলাই ভোসতা-এলএমজি কর্ণফুলীর স্থগিতাদেশ দেন। ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ৫ আগস্ট হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ স্থগিত করে দেন। এরপর অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতার অবসান হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন।
তবে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ আলতাফ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘কী পদ্ধতি অনুসরণ করে ভোসতা-এলএমজি কর্ণফুলীকে ড্রেজার সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পর্কে আমি অবগত নই। এ ছাড়া আদালত সর্বশেষ যে রায় দিয়েছেন, সেটির কপিও আমাদের হাতে আসেনি।’
মজীনার চিঠি ও দূতিয়ালি: এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা গত ১১ জুলাই পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে লেখা চিঠিতে খননযন্ত্র সরবরাহের কাজ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এলিকোট-আনন্দকে দিতে অনুরোধ করেছেন। চিঠিতে মজীনা লিখেছেন, ‘দরপত্রে বিবেচিত হতে এলিকোট-আনন্দের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান জাল সনদ জমা দিয়ে যেভাবে নিজেদের প্রকৃত ড্রেজার উৎপাদনকারী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, তা জেনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। এ ব্যাপারে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিজেদের আগের অবস্থান বদলের যে সিদ্ধান্ত ডাচ দূতাবাস নিয়েছে, সেটি প্রশংসনীয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে এলিকোট-আনন্দ ছাড়া অন্য কাউকে খননযন্ত্র সরবরাহের কাজ দেওয়া হলে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেবে।’
ওএসডি হলেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা: খননযন্ত্র কেনায় অনিয়ম ও ভারতের ঋণচুক্তির আওতায় খননযন্ত্র সংগ্রহে নিয়মবহির্ভূতভাবে দরপত্রের শর্ত পরিবর্তনসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ তারেককে পদ থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। গত ২৫ জুলাই এক দাপ্তরিক আদেশে তাঁর চাকরি বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
ভোসতা-এলএমজি কর্ণফুলী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য ৩৫৭ কোটি টাকায় চারটি খননযন্ত্র ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জন্য ১৩৯ কোটি টাকায় দুটি খননযন্ত্র সরবরাহের কাজ পেয়েছে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএর আরেকটি প্রকল্পের আওতায় ১৫০ কোটি টাকায় ছয়টি খননযন্ত্র সরবরাহের কাজ একই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
যেভাবে জালিয়াতি ধরা পড়ে: খননযন্ত্র সরবরাহ কাজের দরপত্রে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল ডাচ কোম্পানি ভোসতা-এলএমজি। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের যেহেতু খননযন্ত্র তৈরির অভিজ্ঞতা নেই, বিদেশি প্রতিষ্ঠানটিকে প্রকৃত খননযন্ত্র উৎপাদনকারী হতে হবে। এ জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের নিজ দেশের চেম্বারের সনদ লাগবে। দরপত্রে আমস্টারডাম চেম্বার অব কমার্স ও নেদারল্যান্ডের জাহাজনির্মাতা সংস্থার সনদ জমা দেয় ভোসতা। ওই সনদ দুটিতে উল্লেখ করা হয়, ভোসতা প্রকৃত খননযন্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ওই সনদ দুটির পক্ষে গত ১ মার্চ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে একটি প্রত্যয়নপত্র দেয় ঢাকায় নেদারল্যান্ডের দূতাবাস।
পরে গত ১৭ জুন ঢাকায় নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত আলফন্স হ্যানিক্যান্স পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনকে চিঠি দিয়ে জানান, ভোসতা খননযন্ত্র প্রস্তুতকারী মর্মে যে সনদ দেওয়া হয়েছে, তা জাল।
রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, ‘ভোসতা-এলএমজির দেওয়া সনদের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ মার্চ আপনাকে জানিয়েছিলাম, প্রতিষ্ঠানটিকে একটি প্রকৃত খননযন্ত্র প্রস্তুতকারী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আর এটি বাংলাদেশে দরপত্রে অংশ নেওয়ার পূর্বশর্ত। এ ব্যাপারে আমস্টারডাম চেম্বার অব কমার্স এবং নেদারল্যান্ড জাহাজনির্মাতা সংস্থার সনদের উল্লেখ করি। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, আমরা পরে জানতে পেরেছি, আমস্টারডাম চেম্বারের যে সনদটি ভোসতা আমাদের দিয়েছে, সেটি জাল। এটি জেনে আমরা আমস্টারডাম চেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। গত ১১ জুন আমস্টারডাম চেম্বারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভোসতা যে সনদটি দিয়েছে, সেটি তারা দেয়নি।’ আমস্টারডাম চেম্বারের এই বক্তব্যের পর নেদারল্যান্ড জাহাজনির্মাতা সংস্থাও এ বিষয়ে অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলে চিঠিতে বলা হয়।
চিঠির শেষে রাষ্ট্রদূত আলফন্স হ্যানিক্যান্স বলেন, ‘মিথ্যা সনদের ভিত্তিতে আমরা আপনাদের ভুল তথ্য সরবরাহের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। তাই আমরা গত মার্চে যে অবস্থানের কথা জানিয়েছিলাম, তা শুধরে নিচ্ছি। এবং আমাদের কাছে এমন কোনো বস্তুনিষ্ঠ তথ্য নেই, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে ভোসতা প্রকৃত অর্থে খননযন্ত্র নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান।’
এই চিঠির অনুলিপি পানিসম্পদ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোসতার এ দেশীয় অংশীদার কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রশিদ প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন, ভোসতা খননযন্ত্রের প্রকৃত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নয়। তবে জাল সনদ জমা দেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ‘প্রকৃত প্রস্তুতকারী শব্দটি ভ্যাগ টার্ম। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে খননযন্ত্র তৈরি করে, ভোসতাও সেভাবে তৈরি করে।’
যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের চিঠির পর এর কার্যকারিতার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে গেলেন কেন, এই প্রশ্নের জবাবে আবদুর রশিদ বলেন, ‘ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বিরুদ্ধে যাতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, সে জন্য আদালতে গিয়েছি।’
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না: এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ১৬ জুলাই ভোসতা-এলএমজি কর্ণফুলীর স্থগিতাদেশ দেন। ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ৫ আগস্ট হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ স্থগিত করে দেন। এরপর অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতার অবসান হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন।
তবে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ আলতাফ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘কী পদ্ধতি অনুসরণ করে ভোসতা-এলএমজি কর্ণফুলীকে ড্রেজার সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে, সেটি সম্পর্কে আমি অবগত নই। এ ছাড়া আদালত সর্বশেষ যে রায় দিয়েছেন, সেটির কপিও আমাদের হাতে আসেনি।’
মজীনার চিঠি ও দূতিয়ালি: এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা গত ১১ জুলাই পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে লেখা চিঠিতে খননযন্ত্র সরবরাহের কাজ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এলিকোট-আনন্দকে দিতে অনুরোধ করেছেন। চিঠিতে মজীনা লিখেছেন, ‘দরপত্রে বিবেচিত হতে এলিকোট-আনন্দের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান জাল সনদ জমা দিয়ে যেভাবে নিজেদের প্রকৃত ড্রেজার উৎপাদনকারী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, তা জেনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। এ ব্যাপারে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিজেদের আগের অবস্থান বদলের যে সিদ্ধান্ত ডাচ দূতাবাস নিয়েছে, সেটি প্রশংসনীয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে এলিকোট-আনন্দ ছাড়া অন্য কাউকে খননযন্ত্র সরবরাহের কাজ দেওয়া হলে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেবে।’
ওএসডি হলেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা: খননযন্ত্র কেনায় অনিয়ম ও ভারতের ঋণচুক্তির আওতায় খননযন্ত্র সংগ্রহে নিয়মবহির্ভূতভাবে দরপত্রের শর্ত পরিবর্তনসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ তারেককে পদ থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। গত ২৫ জুলাই এক দাপ্তরিক আদেশে তাঁর চাকরি বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
No comments