ঈদের আনন্দ কেনাকাটায় by তৌফিক অপু
ঈদের আমেজ এখন বাংলার প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি পরিবারে; যার ঢেউ এসে পড়েছে পথে, শপিংমলে। ঢাকার মার্কেটসহ সারাদেশে চলছে এখন ঈদের তুমুল উৎসবমুখর গুঞ্জরণ। বিশেষ করে কেনাকাটার ধুম লেগেছে ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে বিভিন্ন শপ হাউসে। এই ধুম চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। ঈদকেন্দ্রিক সবার ব্যস্ততা এখন চোখে পড়ার মতো।
ধনীশ্রেণীর বিলাসিত এবং মধ্যবিত্তের বাড়তি ব্যয়ের যেন জুড়ি নেই ঈদ এলে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে চাইলেও ঈদ এলে যেন অনেকে ভুলেই যান এ কথা। পরিসংখ্যানের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে বলা যায় এদেশের ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৪১ লাখ হচ্ছে ধনী; যা মোট জনসংখ্যার তুলনায় নগণ্য। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, ঈদ বাজারের মোট লেনদেনের ৭৫ শতাংশ ব্যয় হয় উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষের কেনাকাটায়। ব্যবসায়িক তথ্য মতে, সারাদেশে ঈদকেন্দ্রিক প্রতিদিন গড়ে হাজার কোটি টাকার ওপর লেনদেন হচ্ছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এবারের ঈদ লেনদেন ৩৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এক কথায় বলা চলে ঈদ কেনাকাটায় চারদিকে টাকার ছড়াছড়ি।
বিশ্বব্যাপী ঈদ পালিত হলেও আবহমান এই বাংলায় ঈদের আমেজটাই যেন অন্যরকম। এক ধরনের মেলবন্ধন সূচিত হয় সবার সঙ্গে। তৈরি হয় হৃদ্য; যা বহন করে অন্য রকম এক আমেজ। এক মাস রোজা রাখার পর ঈদ বয়ে নিয়ে আসে আনন্দের বারতা। সে আনন্দ পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করার মধ্যে অন্য রকম এক ভাললাগা লুকিয়ে থাকে। ঈদকে উপলক্ষ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে শপিং-এ যাওয়াও যেন আনন্দের মাত্রা দ্বিগুণ হওয়া। এ কারণেই শপিংমলগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এ কাজে নারীরা বেশ সিদ্ধহস্ত। তাছাড়া ফ্যামিলি ম্যানেজমেন্টের মতো গুরুদায়িত্ব নারীরা ভাল বোঝেন বলেই হয়ত নিজ থেকেই কেনাকাটার দায়িত্ব নেন। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে শপিংমলগুলো। পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী শপিং সেন্টার ছাড়াও নতুন নতুন শপিংমলেও ক্রেতাদের আনাগোনা এবার লক্ষণীয়। বেশ ক’বছর ধরেই প্রচুর ক্রেতার সমাগম এবং সমাদৃত মার্কেট গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, মৌচাক ছাড়াও ক্রেতারা একটু স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে ঝুঁকছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, কনকর্ড, টুইন টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাস, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, প্রিন্স প্লাজা, রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, জিনেটিক প্লাজা, হ্যাপি আর্কেড, ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড অন্যতম। এছাড়া দেশীয় প্রোডাকশন হাউস আড়ং, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট, ওজি, নাগরদোলা, রঙ, নিপুণ, সুতি, সাদাকালো দেশালসহ অনেকে তাদের নিজ নিজ শো-রুমগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিজাইনে এনেছে ভেরিয়েশন; যা ক্রেতাদের খুবই আকৃষ্ট করেছে। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে শপিং মলগুলো সেজেছে আপন মহিমায়। বিদ্যুত সাশ্রয়ের কারণে আলোকসজ্জা থেকে বিরত থাকার কথা থাকলেও অনেকেই তা মানছে না। তার পরও শপিং মলগুলোর সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছে। রোজার ঈদ উপলক্ষে রাতেরবেলায় কোন ধরাবাঁধা সময়ের বেড়া নেই। নিজস্ব বিদ্যুত ব্যবস্থাপনায় যতক্ষণ ক্রেতাসাধারণ মার্কেটে থাকবে ততক্ষণ মার্কেট খোলা রাখা যাবে বলে মন্তব্য করেছে দোকান মালিক সমিতি।
ক্রেতাদের কেনাকাটায় সুবিধা দেয়ার জন্য বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস একত্রিত হয়ে এক ছাদের নিচে অবস্থান নিয়েছে। এতে করে ক্রেতারা এক জায়গাতেই পরিচিত শো-রুমগুলোর দেখা পাবেন। একেক জায়গায় একেক শোরুম খুঁজে বের করে কষ্ট করে কেনাকাটা করার দিন শেষ। এখন ঝামেলাহীনভাবে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে পারবেন। দেশী দশ, স্বদেশী, সাতআনা এসব শোরুম একত্র হয়ে এ ধরনের নাম ধারণ করেছে। এক জায়গাতে প্রবেশ করলে মোটামুটি সব ধরনের কেনাকাটা করে ফেলা সম্ভব।
বারো মাসে তেরো পার্বণে অভ্যস্ত বাঙালী শুধু উৎসব উদ্যাপনে সীমাবদ্ধÑএ কথা অতীত হয়েছে অনেক আগেই। বাঙালী এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডে চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। হয়ে উঠেছে ফ্যাশনসচেতন। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পাওয়া যায় এর ছোঁয়া। চলমান এ ধারা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিটি উৎসবে-আমেজে এ প্রভাব বিদ্যমান। সারাবিশ্বে উৎসবমুখর জাতি হিসেবে বাঙালীর আলাদা একটি পরিচয় রয়েছে। যে কোন উৎসবে নিজেদের মেলে ধরতে কার্পণ্য করে না। উৎসবের রঙে রঙিন করে তোলে উৎসবের আকাশকে।
যে কোন উৎসবেরই একটা প্রস্তুতি থাকে। উৎসবকে সফল করে তুলতে বাড়তি কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন। উৎসবের ধরন অনুযায়ী প্রস্তুতির ধরনও পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়। তেমনি এক বাড়তি প্রস্তুতি নেয়ার উৎসব হচ্ছে ঈদ। একেবারেই দ্বারপ্রান্তে কড়া নাড়ছে ঈদ। আর মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে রোজার ঈদ হচ্ছে বড় একটি উৎসব। এই ঈদকে ঘিরে প্রস্তুতির যেন অন্ত নেই। রীতিমতো কেনাকাটার হিড়িক পড়ে যায় তা সে তৈজসপত্র হোক বা জামাকাপড়। তবে রোজার ঈদে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় যে বিষয়টি তা হচ্ছে পোশাক-পরিচ্ছদ কেনাকাটা। পোশাক বিক্রেতারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। শপিংমলগুলোতে ছড়িয়ে যায় অন্যরকম এক আবহ। ক্রেতারাও খোশমেজাজে ঘোরাঘুরি করে শপিংমলগুলোতে। হুড়োহুড়ি করে, ভিড় ঠেলে কেনাকাটা করলেও এ আনন্দ যেন ম্লান হবার নয়। যে কারণে ঈদকেন্দ্রিক পোশাক ব্যবসায়ীদের ঘুম হারাম হবার যোগাড়। শুধু পোশাক নয়, ফ্যাশনের যাবতীয় উপকরণ নিয়েই চলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। তেমনি একটি উদ্যোগ হচ্ছে ঈদ মেলা। ঈদকে উপলক্ষ করে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পরিচালিত হচ্ছে ঈদ মেলা। বর্তমানে মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আইটেমের পসরা সাজিয়ে থাকে ব্যবসায়ীরা। এক কথায় ক্রেতাদের যা দরকার তার সবই পাওয়া যায়।
রোজার ঈদকে সামনে রেখে মেলাগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে। এবার ঈদে প্রাধান্য পাচ্ছে বর্ষকাল। বৃষ্টিভেজা সময় এবং গরম এই দুই মিলিয়ে সিলেক্ট করা হয়েছে কাপড়। এ প্রসঙ্গে বেইলি রোড ঈদ জামদানি মেলার উদ্যোক্তা মোঃ আমিন জানান, গরমকে প্রাধান্য দিয়ে এবারের মেলায় কাপড় এবং ডিজাইন সিলেক্ট করা হয়েছে। শাড়ির মধ্যে জামদানি, মসলিন এবং সিল্ক। ডিজাইনেও রয়েছে ভেরিয়েশন। কারচুপি, হাতের কাজ ছাড়াও নকশি ডিজাইনের কিছু শাড়ি রয়েছে। বাংলাদেশ উইভার্স এ্যান্ড মেন্যুফেকচার বিজনেস এ্যািসাশিয়নের উদ্যোগে এ মেলা পরিচালিত হচ্ছে। মোট স্টল রয়েছে ৮৫ টি। এর মধ্যে শুধু জামদানি শাড়ি কেন্দ্র করে স্টল রয়েছে ১৮ টি। আর নারী উদ্যোক্তাদের স্টল রয়েছে ১৫ টি। মেলা প্রসঙ্গে আরেক উদ্যোক্তা ওসমান গনি বলেন, ঈদ উৎসবকে আরও বেশি গতিশীল করতেই মেলার উৎপত্তি। ক্রেতারা মেলায় এলে শপিংমলের চেয়েও ভিন্ন কিছু টেস্ট পাবেন। যেমন এ মেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় পোশাকআশাক এবং তৈজসপত্র ছাড়াও বিভিন্ন কুটির শিল্পের দেখা পাবেন; যা সহজেই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে। আশা করি, মেলার আয়োজন ক্রেতাদের ভাল লাগবে। ঈদকে উপলক্ষ করে ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে ঈদমেলা; যার প্রয়োজনীয়তা এবং কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সব উৎসবেরই থাকে নিজস্ব প্রস্তুতি। উৎসবকে আনন্দঘন করে তুলতে থাকে পরিকল্পনা। বাঙালী মুসলমানের সবচেয়ে বড় আনন্দ-উৎসব ঈদ। ঈদ-উল-ফিতরকে ঘিরে বাঙালী মুসলমান আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। একমাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদ-উল-ফিতর। দীর্ঘ সিয়াম সাধনার পর যে উৎসব তাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ বেশি। যেহেতু এই ঈদ-উল-ফিতর আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব, তাই মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনাও বেশি। সেই উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে কেনাকাটায়। শুধু পরনের পোশাকে নয়, এই কেনাকাটা ছড়িয়ে পড়ে তৈজসপত্র থেকে শুরু করে আসবাবপত্রেও। তবে রমজানের ঈদে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে কাপড়ের বাজারে। এ সময় রীতিমতো কেনার হিড়িক পড়ে যায়। পাড়ার ছোট ছোট শপিংমল থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণি বিতান সবখানেই নামে মানুষের ঢল। মানুষের এই আগ্রহ এবং আস্থার প্রতিদান দিতেই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও রুচি, চাহিদা এবং সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করে নিয়ে আসে নতুন নতুন পোশাক। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, বুটিক শপের ডিজাইনাররা মানুষের চাহিদা এবং আগ্রহের কথা বিবেচনা করে নিত্যনতুন ডিজাইন তৈরিতে মনোযোগী হয়।
এই সময়ের এমনি একটি জনপ্রিয় পোশাক শর্ট পাঞ্জাবি। এর প্রচলন খুব বেশিদিনের নয়। খুব অল্প সময়েই জয় করে নিয়েছে তারুণ্যের হৃদয়। সাধারণ পাঞ্জাবির তুলনায় একটু শর্ট বিধায় এর নাম শর্ট পাঞ্জাবি। বাকি সব বৈশিষ্ট্য সাধারণ পাঞ্জাবির মতোই। শর্ট পাঞ্জাবির দামও হাতের নাগালেই। শর্ট পাঞ্জাবি ৬৫০ থেকে শুরু করে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের রয়েছে। ছেলেদের যেমন শর্ট পাঞ্জাবি তেমনি মেয়েদের বেলায় এখন চলছে শর্ট কামিজ। এবারের ঈদে মেয়েদের পছন্দের পোশাকের তালিকায় রয়েছে শর্ট কামিজ। এই গরমে সবচেয়ে মানানসই পোশাক শর্ট কামিজ। শর্ট কামিজ এখন হয়ে উঠেছে তারুণ্যের প্রতীক। রং, ডিজাইন এবং কাপড়ের মানের ওপর ভিত্তি করে শর্ট কামিজের দাম পড়বে ১,০৫০ টাকা থেকে ৩,২০০ টাকার মধ্যে। শর্ট পাঞ্জাবি এবং শর্ট কামিজের মতো ফতুয়ারও কদর তরুণ-তরুণীর কাছে। ফতুয়া এখন বেশ জনপ্রিয়। ঘরে-বাইরে এমনকি উৎসব অনুষ্ঠানে হরহামেশা ফতুয়া পরিহিত তরুণ-তরুণীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ডিজাইন এবং কাপড়ভেদে লেডিস এবং জেন্টস ফতুয়ার মূল্য পড়বে ৪৫০ টাকা থেকে ১,২৫০ টাকা। তবে শর্ট পাঞ্জাবি, শর্ট কামিজ বা ফতুয়া যাই কিনুন না কেন, ভাদ্র মাসের এই গরমে উৎসবের আনন্দ যেন ম্লান না হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে পোশাক নির্বাচন করতে হবে। এ সময়টায় ভাপসা গরম, সে কারণে যাই কেনা হোক না কেন কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতি এবং এন্ডিকটনকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত।
পাঞ্জাবি: পাঞ্জাবি ছাড়া ঈদ কোন পুরুষ কল্পনাই করতে পারেন না। অন্য কোন পোশাক কিনুন বা না কিননু পাঞ্জাবি যেন কিনতেই হবে। এ কারণেই ফ্যাশন হাউসগুলো প্রতিবছরই পাঞ্জাবির ডিজাইন এবং রঙের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনতে চেষ্টা করে। ফ্যাশন হাউসগুলোর ভেতরে রীতিমতো প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। কোন্ হাউস কত ভাল ডিজাইনের পাঞ্জাবি তৈরি করব্ েএবং ডিজাইনভেদে পাঞ্জাবির মূল্য একেক রকম। বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদের পাঞ্জাবিও পাওয়া যায়। পাঞ্জাবি-পায়জামা সেট ৫৫০ থেকে ৩,২০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর বড়দের পাঞ্জাবি পড়বে ৮০০ থেকে ৩,৫০০ টাকা।
পাঞ্জাবির সঙ্গে আর যে পোশাকটির কথা মনে আসে, তা তরুণীদের শাড়ি। যে কারণে ফ্যাশন হাউসগুলো নারীদের অন্যান্য পোশাকের পাশাপাশি শাড়িকে গুরুত্ব দেয় বেশি। বিভিন্ন মোটিফ ডিজাইনের শাড়ি ইতোমধ্যে শোরুমগুলোতে শোভা পাচ্ছে। শাড়ির কাপড় এবং ডিজাইনের রকমফেরও প্রচুর। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, হাফ সিল্ক, সুতির মধ্যে কোটা শাড়ি, সুতির শাড়ি এ্যাগ্রি কটন, রাজশাহী সিল্ক, বলাকা সিøক এমনকি মসলিন শাড়িও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। সুতির শাড়ি পাওয়া যাবে ৬০০ থেকে ২,৮০০ টাকার মধ্যে। সিফন জর্জেট পাথর বসানো শাড়ির মূল্য পড়বে ১,৫০০ থেকে ৬,০০০ টাকা। টিস্যু কাপড়ের ডিজাইনের শাড়ির মূল্য ১,৮০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা। মসলিন ৩,২০০ থেকে ৭,৫০০ টাকা। তাঁত ৩৫০ থেকে ২,৬০০ টাকা। জামদানি ৩,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা।
ঈদের কেনাকাটার আগে অবশ্য আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন। আর শিশুদের পোশাক নির্বাচনের বেলায় এ বিষয়টি তো আরও জরুরী। কিন্তু ছোট্ট মুনিয়া কিছুতেই কান্না থামাচ্ছে না । তাকে সুজুকার মতো ড্রেস কিনে দিতে হবে। মায়ের কড়া নিষেধ ওসব ড্রেস কিনতে হবে না । বাবার আক্কেলগুড়ুম। সুজুকা আবার কে? কিন্তু মুনিয়ার কান্নাকাটিতে অনেকটা লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। মুনিয়ার মা ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল, সুজুকা ডরিমন কার্টুনের একটা মেয়ে চরিত্রের নাম। এতক্ষণে মুনিয়ার বাবা যেন সম্বিত ফিরে পেল। ও, আচ্ছা এই ব্যাপার বলে মায়ের নিষেধ সত্তেও মেয়ের হাতে সুজুকা স্টাইলের ড্রেসটি কিনে দেয়। এর পর কান্না থামায় মুনিয়া। এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি এমন পরিবার খুব কমই আছে। ঈদ শপিংয়ে কেনাকাটায় পরিবার নিয়ে শপিংমলে যাওয়ার পর সবার আগে বাচ্চাদের পোশাক কেনার জন্য প্রস্তুতি নেন সবাই। আর প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিটি শপিংমলে প্রচুর পরিমাণে দেখা মিলবে বাচ্চাদের ফ্যাশনেবল ড্রেস। আর ড্রেসগুলো অধিকাংশই বিভিন্ন জনপ্রিয় কার্টুনের ছবি সংবলিত।
বর্তমানে সব শিশুই কার্টুন দেখে অভ্যস্ত। কার্টুনের মজার মজার চরিত্রের ভেতর শিশুরা যেন একেবারে হারিয়ে যায়। এক সময় তারা কল্পনায় নিজেদেরকে ওসব চরিত্র হিসেবে ভাবতে শুরু করে। ফলে কার্টুনের প্রিয় চরিত্রগুলোর পোশাক হাতে পেলে তারা খুশিে ত আত্মহারা হয়ে যায়। আর তাই শিশুদের মন যোগাতে বড় বড় পোশাক প্রস্তুতকারীরা তৈরি করে থাকে বিভিন্ন কার্টুনের আদলে কস্টিউম। বিদেশে হ্যালোউইন উৎসবকে সামনে রেখে প্রচুর কস্টিউম প্রস্তুত হয়ে থাকে। এবং বিক্রিও প্রচুর। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ঈদেও বাচ্চাদের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মজাদার কস্টিউম বাজারে নিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ঘোস্ট, ড্রাকুলা, ব্যাটম্যান, ডরিমন, পাপাই, সিনড্রেলা, কিং কুইন, রেড রাইডিংহুড অন্যতম। মেয়েদের পরীর বা ফ্রেইরির ড্রেসে লাগানো পাখা সহজেই আকৃষ্ট করে।
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। এই খুশি যেন ম্লান না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কেনাকাটা করা উচিত। ঈদের আনন্দ কেনাকাটার মধ্য দিয়ে ঝলমলে হয়ে উঠুক সেই প্রত্যাশাই রইল।
বিশ্বব্যাপী ঈদ পালিত হলেও আবহমান এই বাংলায় ঈদের আমেজটাই যেন অন্যরকম। এক ধরনের মেলবন্ধন সূচিত হয় সবার সঙ্গে। তৈরি হয় হৃদ্য; যা বহন করে অন্য রকম এক আমেজ। এক মাস রোজা রাখার পর ঈদ বয়ে নিয়ে আসে আনন্দের বারতা। সে আনন্দ পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করার মধ্যে অন্য রকম এক ভাললাগা লুকিয়ে থাকে। ঈদকে উপলক্ষ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে শপিং-এ যাওয়াও যেন আনন্দের মাত্রা দ্বিগুণ হওয়া। এ কারণেই শপিংমলগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এ কাজে নারীরা বেশ সিদ্ধহস্ত। তাছাড়া ফ্যামিলি ম্যানেজমেন্টের মতো গুরুদায়িত্ব নারীরা ভাল বোঝেন বলেই হয়ত নিজ থেকেই কেনাকাটার দায়িত্ব নেন। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে শপিংমলগুলো। পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী শপিং সেন্টার ছাড়াও নতুন নতুন শপিংমলেও ক্রেতাদের আনাগোনা এবার লক্ষণীয়। বেশ ক’বছর ধরেই প্রচুর ক্রেতার সমাগম এবং সমাদৃত মার্কেট গাউছিয়া, চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, মৌচাক ছাড়াও ক্রেতারা একটু স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে ঝুঁকছে। এর মধ্যে ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, কনকর্ড, টুইন টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাস, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, প্রিন্স প্লাজা, রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, জিনেটিক প্লাজা, হ্যাপি আর্কেড, ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড অন্যতম। এছাড়া দেশীয় প্রোডাকশন হাউস আড়ং, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট, ওজি, নাগরদোলা, রঙ, নিপুণ, সুতি, সাদাকালো দেশালসহ অনেকে তাদের নিজ নিজ শো-রুমগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিজাইনে এনেছে ভেরিয়েশন; যা ক্রেতাদের খুবই আকৃষ্ট করেছে। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে শপিং মলগুলো সেজেছে আপন মহিমায়। বিদ্যুত সাশ্রয়ের কারণে আলোকসজ্জা থেকে বিরত থাকার কথা থাকলেও অনেকেই তা মানছে না। তার পরও শপিং মলগুলোর সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছে। রোজার ঈদ উপলক্ষে রাতেরবেলায় কোন ধরাবাঁধা সময়ের বেড়া নেই। নিজস্ব বিদ্যুত ব্যবস্থাপনায় যতক্ষণ ক্রেতাসাধারণ মার্কেটে থাকবে ততক্ষণ মার্কেট খোলা রাখা যাবে বলে মন্তব্য করেছে দোকান মালিক সমিতি।
ক্রেতাদের কেনাকাটায় সুবিধা দেয়ার জন্য বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস একত্রিত হয়ে এক ছাদের নিচে অবস্থান নিয়েছে। এতে করে ক্রেতারা এক জায়গাতেই পরিচিত শো-রুমগুলোর দেখা পাবেন। একেক জায়গায় একেক শোরুম খুঁজে বের করে কষ্ট করে কেনাকাটা করার দিন শেষ। এখন ঝামেলাহীনভাবে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে পারবেন। দেশী দশ, স্বদেশী, সাতআনা এসব শোরুম একত্র হয়ে এ ধরনের নাম ধারণ করেছে। এক জায়গাতে প্রবেশ করলে মোটামুটি সব ধরনের কেনাকাটা করে ফেলা সম্ভব।
বারো মাসে তেরো পার্বণে অভ্যস্ত বাঙালী শুধু উৎসব উদ্যাপনে সীমাবদ্ধÑএ কথা অতীত হয়েছে অনেক আগেই। বাঙালী এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডে চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। হয়ে উঠেছে ফ্যাশনসচেতন। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পাওয়া যায় এর ছোঁয়া। চলমান এ ধারা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিটি উৎসবে-আমেজে এ প্রভাব বিদ্যমান। সারাবিশ্বে উৎসবমুখর জাতি হিসেবে বাঙালীর আলাদা একটি পরিচয় রয়েছে। যে কোন উৎসবে নিজেদের মেলে ধরতে কার্পণ্য করে না। উৎসবের রঙে রঙিন করে তোলে উৎসবের আকাশকে।
যে কোন উৎসবেরই একটা প্রস্তুতি থাকে। উৎসবকে সফল করে তুলতে বাড়তি কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন। উৎসবের ধরন অনুযায়ী প্রস্তুতির ধরনও পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়। তেমনি এক বাড়তি প্রস্তুতি নেয়ার উৎসব হচ্ছে ঈদ। একেবারেই দ্বারপ্রান্তে কড়া নাড়ছে ঈদ। আর মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে রোজার ঈদ হচ্ছে বড় একটি উৎসব। এই ঈদকে ঘিরে প্রস্তুতির যেন অন্ত নেই। রীতিমতো কেনাকাটার হিড়িক পড়ে যায় তা সে তৈজসপত্র হোক বা জামাকাপড়। তবে রোজার ঈদে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় যে বিষয়টি তা হচ্ছে পোশাক-পরিচ্ছদ কেনাকাটা। পোশাক বিক্রেতারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। শপিংমলগুলোতে ছড়িয়ে যায় অন্যরকম এক আবহ। ক্রেতারাও খোশমেজাজে ঘোরাঘুরি করে শপিংমলগুলোতে। হুড়োহুড়ি করে, ভিড় ঠেলে কেনাকাটা করলেও এ আনন্দ যেন ম্লান হবার নয়। যে কারণে ঈদকেন্দ্রিক পোশাক ব্যবসায়ীদের ঘুম হারাম হবার যোগাড়। শুধু পোশাক নয়, ফ্যাশনের যাবতীয় উপকরণ নিয়েই চলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। তেমনি একটি উদ্যোগ হচ্ছে ঈদ মেলা। ঈদকে উপলক্ষ করে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পরিচালিত হচ্ছে ঈদ মেলা। বর্তমানে মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আইটেমের পসরা সাজিয়ে থাকে ব্যবসায়ীরা। এক কথায় ক্রেতাদের যা দরকার তার সবই পাওয়া যায়।
রোজার ঈদকে সামনে রেখে মেলাগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে। এবার ঈদে প্রাধান্য পাচ্ছে বর্ষকাল। বৃষ্টিভেজা সময় এবং গরম এই দুই মিলিয়ে সিলেক্ট করা হয়েছে কাপড়। এ প্রসঙ্গে বেইলি রোড ঈদ জামদানি মেলার উদ্যোক্তা মোঃ আমিন জানান, গরমকে প্রাধান্য দিয়ে এবারের মেলায় কাপড় এবং ডিজাইন সিলেক্ট করা হয়েছে। শাড়ির মধ্যে জামদানি, মসলিন এবং সিল্ক। ডিজাইনেও রয়েছে ভেরিয়েশন। কারচুপি, হাতের কাজ ছাড়াও নকশি ডিজাইনের কিছু শাড়ি রয়েছে। বাংলাদেশ উইভার্স এ্যান্ড মেন্যুফেকচার বিজনেস এ্যািসাশিয়নের উদ্যোগে এ মেলা পরিচালিত হচ্ছে। মোট স্টল রয়েছে ৮৫ টি। এর মধ্যে শুধু জামদানি শাড়ি কেন্দ্র করে স্টল রয়েছে ১৮ টি। আর নারী উদ্যোক্তাদের স্টল রয়েছে ১৫ টি। মেলা প্রসঙ্গে আরেক উদ্যোক্তা ওসমান গনি বলেন, ঈদ উৎসবকে আরও বেশি গতিশীল করতেই মেলার উৎপত্তি। ক্রেতারা মেলায় এলে শপিংমলের চেয়েও ভিন্ন কিছু টেস্ট পাবেন। যেমন এ মেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় পোশাকআশাক এবং তৈজসপত্র ছাড়াও বিভিন্ন কুটির শিল্পের দেখা পাবেন; যা সহজেই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে। আশা করি, মেলার আয়োজন ক্রেতাদের ভাল লাগবে। ঈদকে উপলক্ষ করে ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে ঈদমেলা; যার প্রয়োজনীয়তা এবং কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সব উৎসবেরই থাকে নিজস্ব প্রস্তুতি। উৎসবকে আনন্দঘন করে তুলতে থাকে পরিকল্পনা। বাঙালী মুসলমানের সবচেয়ে বড় আনন্দ-উৎসব ঈদ। ঈদ-উল-ফিতরকে ঘিরে বাঙালী মুসলমান আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। একমাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদ-উল-ফিতর। দীর্ঘ সিয়াম সাধনার পর যে উৎসব তাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ বেশি। যেহেতু এই ঈদ-উল-ফিতর আমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব, তাই মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনাও বেশি। সেই উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে কেনাকাটায়। শুধু পরনের পোশাকে নয়, এই কেনাকাটা ছড়িয়ে পড়ে তৈজসপত্র থেকে শুরু করে আসবাবপত্রেও। তবে রমজানের ঈদে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে কাপড়ের বাজারে। এ সময় রীতিমতো কেনার হিড়িক পড়ে যায়। পাড়ার ছোট ছোট শপিংমল থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণি বিতান সবখানেই নামে মানুষের ঢল। মানুষের এই আগ্রহ এবং আস্থার প্রতিদান দিতেই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও রুচি, চাহিদা এবং সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করে নিয়ে আসে নতুন নতুন পোশাক। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, বুটিক শপের ডিজাইনাররা মানুষের চাহিদা এবং আগ্রহের কথা বিবেচনা করে নিত্যনতুন ডিজাইন তৈরিতে মনোযোগী হয়।
এই সময়ের এমনি একটি জনপ্রিয় পোশাক শর্ট পাঞ্জাবি। এর প্রচলন খুব বেশিদিনের নয়। খুব অল্প সময়েই জয় করে নিয়েছে তারুণ্যের হৃদয়। সাধারণ পাঞ্জাবির তুলনায় একটু শর্ট বিধায় এর নাম শর্ট পাঞ্জাবি। বাকি সব বৈশিষ্ট্য সাধারণ পাঞ্জাবির মতোই। শর্ট পাঞ্জাবির দামও হাতের নাগালেই। শর্ট পাঞ্জাবি ৬৫০ থেকে শুরু করে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের রয়েছে। ছেলেদের যেমন শর্ট পাঞ্জাবি তেমনি মেয়েদের বেলায় এখন চলছে শর্ট কামিজ। এবারের ঈদে মেয়েদের পছন্দের পোশাকের তালিকায় রয়েছে শর্ট কামিজ। এই গরমে সবচেয়ে মানানসই পোশাক শর্ট কামিজ। শর্ট কামিজ এখন হয়ে উঠেছে তারুণ্যের প্রতীক। রং, ডিজাইন এবং কাপড়ের মানের ওপর ভিত্তি করে শর্ট কামিজের দাম পড়বে ১,০৫০ টাকা থেকে ৩,২০০ টাকার মধ্যে। শর্ট পাঞ্জাবি এবং শর্ট কামিজের মতো ফতুয়ারও কদর তরুণ-তরুণীর কাছে। ফতুয়া এখন বেশ জনপ্রিয়। ঘরে-বাইরে এমনকি উৎসব অনুষ্ঠানে হরহামেশা ফতুয়া পরিহিত তরুণ-তরুণীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ডিজাইন এবং কাপড়ভেদে লেডিস এবং জেন্টস ফতুয়ার মূল্য পড়বে ৪৫০ টাকা থেকে ১,২৫০ টাকা। তবে শর্ট পাঞ্জাবি, শর্ট কামিজ বা ফতুয়া যাই কিনুন না কেন, ভাদ্র মাসের এই গরমে উৎসবের আনন্দ যেন ম্লান না হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে পোশাক নির্বাচন করতে হবে। এ সময়টায় ভাপসা গরম, সে কারণে যাই কেনা হোক না কেন কাপড়ের ক্ষেত্রে সুতি এবং এন্ডিকটনকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত।
পাঞ্জাবি: পাঞ্জাবি ছাড়া ঈদ কোন পুরুষ কল্পনাই করতে পারেন না। অন্য কোন পোশাক কিনুন বা না কিননু পাঞ্জাবি যেন কিনতেই হবে। এ কারণেই ফ্যাশন হাউসগুলো প্রতিবছরই পাঞ্জাবির ডিজাইন এবং রঙের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনতে চেষ্টা করে। ফ্যাশন হাউসগুলোর ভেতরে রীতিমতো প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। কোন্ হাউস কত ভাল ডিজাইনের পাঞ্জাবি তৈরি করব্ েএবং ডিজাইনভেদে পাঞ্জাবির মূল্য একেক রকম। বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদের পাঞ্জাবিও পাওয়া যায়। পাঞ্জাবি-পায়জামা সেট ৫৫০ থেকে ৩,২০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর বড়দের পাঞ্জাবি পড়বে ৮০০ থেকে ৩,৫০০ টাকা।
পাঞ্জাবির সঙ্গে আর যে পোশাকটির কথা মনে আসে, তা তরুণীদের শাড়ি। যে কারণে ফ্যাশন হাউসগুলো নারীদের অন্যান্য পোশাকের পাশাপাশি শাড়িকে গুরুত্ব দেয় বেশি। বিভিন্ন মোটিফ ডিজাইনের শাড়ি ইতোমধ্যে শোরুমগুলোতে শোভা পাচ্ছে। শাড়ির কাপড় এবং ডিজাইনের রকমফেরও প্রচুর। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, হাফ সিল্ক, সুতির মধ্যে কোটা শাড়ি, সুতির শাড়ি এ্যাগ্রি কটন, রাজশাহী সিল্ক, বলাকা সিøক এমনকি মসলিন শাড়িও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। সুতির শাড়ি পাওয়া যাবে ৬০০ থেকে ২,৮০০ টাকার মধ্যে। সিফন জর্জেট পাথর বসানো শাড়ির মূল্য পড়বে ১,৫০০ থেকে ৬,০০০ টাকা। টিস্যু কাপড়ের ডিজাইনের শাড়ির মূল্য ১,৮০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা। মসলিন ৩,২০০ থেকে ৭,৫০০ টাকা। তাঁত ৩৫০ থেকে ২,৬০০ টাকা। জামদানি ৩,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা।
ঈদের কেনাকাটার আগে অবশ্য আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন। আর শিশুদের পোশাক নির্বাচনের বেলায় এ বিষয়টি তো আরও জরুরী। কিন্তু ছোট্ট মুনিয়া কিছুতেই কান্না থামাচ্ছে না । তাকে সুজুকার মতো ড্রেস কিনে দিতে হবে। মায়ের কড়া নিষেধ ওসব ড্রেস কিনতে হবে না । বাবার আক্কেলগুড়ুম। সুজুকা আবার কে? কিন্তু মুনিয়ার কান্নাকাটিতে অনেকটা লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। মুনিয়ার মা ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল, সুজুকা ডরিমন কার্টুনের একটা মেয়ে চরিত্রের নাম। এতক্ষণে মুনিয়ার বাবা যেন সম্বিত ফিরে পেল। ও, আচ্ছা এই ব্যাপার বলে মায়ের নিষেধ সত্তেও মেয়ের হাতে সুজুকা স্টাইলের ড্রেসটি কিনে দেয়। এর পর কান্না থামায় মুনিয়া। এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি এমন পরিবার খুব কমই আছে। ঈদ শপিংয়ে কেনাকাটায় পরিবার নিয়ে শপিংমলে যাওয়ার পর সবার আগে বাচ্চাদের পোশাক কেনার জন্য প্রস্তুতি নেন সবাই। আর প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিটি শপিংমলে প্রচুর পরিমাণে দেখা মিলবে বাচ্চাদের ফ্যাশনেবল ড্রেস। আর ড্রেসগুলো অধিকাংশই বিভিন্ন জনপ্রিয় কার্টুনের ছবি সংবলিত।
বর্তমানে সব শিশুই কার্টুন দেখে অভ্যস্ত। কার্টুনের মজার মজার চরিত্রের ভেতর শিশুরা যেন একেবারে হারিয়ে যায়। এক সময় তারা কল্পনায় নিজেদেরকে ওসব চরিত্র হিসেবে ভাবতে শুরু করে। ফলে কার্টুনের প্রিয় চরিত্রগুলোর পোশাক হাতে পেলে তারা খুশিে ত আত্মহারা হয়ে যায়। আর তাই শিশুদের মন যোগাতে বড় বড় পোশাক প্রস্তুতকারীরা তৈরি করে থাকে বিভিন্ন কার্টুনের আদলে কস্টিউম। বিদেশে হ্যালোউইন উৎসবকে সামনে রেখে প্রচুর কস্টিউম প্রস্তুত হয়ে থাকে। এবং বিক্রিও প্রচুর। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ঈদেও বাচ্চাদের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মজাদার কস্টিউম বাজারে নিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ঘোস্ট, ড্রাকুলা, ব্যাটম্যান, ডরিমন, পাপাই, সিনড্রেলা, কিং কুইন, রেড রাইডিংহুড অন্যতম। মেয়েদের পরীর বা ফ্রেইরির ড্রেসে লাগানো পাখা সহজেই আকৃষ্ট করে।
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। এই খুশি যেন ম্লান না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কেনাকাটা করা উচিত। ঈদের আনন্দ কেনাকাটার মধ্য দিয়ে ঝলমলে হয়ে উঠুক সেই প্রত্যাশাই রইল।
No comments