সাল্লুর যত প্রেম

বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান খান। প্রেম ও বিচ্ছেদের কারণে বহুবার মুখরোচক সব খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবারই সম্পর্ক ভাঙাগড়ার খেলায়  মেতেছেন এ ‘দাবাং’ তারকা। অবশ্য ‘বিগহার্ট লাভারবয়’ খ্যাত সালমান বহুবার প্রেমে পড়লেও আজ পর্যন্ত তার কোনো প্রেমই টেকেনি।
তার সঙ্গে গভীর প্রেমে যেমন জড়িয়েছেন বলিউডের প্রথম সারির কয়েকজন অভিনেত্রী, তেমনি তার সঙ্গে অনেকের প্রেমের গুজবও ছড়িয়েছে বলিউডপাড়ায়। এমন ৮ প্রেমের বৃত্তান্ত নিয়েই ‘সালমানের ৮ প্রেম’।
সংগীতা বিজলানি
অভিনয় জীবনের শুরুর দিকে সালমান প্রথম তার হৃদয়ে ঠাঁই দিয়েছিলেন সংগীতা বিজলানিকে। ১৯৮০ সালের ‘মিস ইন্ডিয়া’ সংগীতা বলিউডে পা রাখেন আশির দশকের শেষের দিকে। একই জগতের বাসিন্দা হিসেবে সখ্য গড়ে ওঠে সালমান ও সংগীতার ভেতর। একপর্যায়ে মডেল ও অভিনেত্রী সংগীতার সঙ্গে সালমানের গভীর প্রেম হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টেকেনি সালমান-সংগীতার এই প্রেম। সালমানকে ছেড়ে সংগীতা বিয়ে করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আজহারউদ্দিনকে। সালমানের সঙ্গে সম্পর্ক চুকেবুকে গেলেও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঠিকই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন সংগীতা। ১৪ বছর সংসার করার পর আজহারউদ্দিনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে সংগীতার। বিচ্ছেদের পর একাকী সংগীতা সাহায্য চাইতেও ছুটে গিয়েছিলেন পুরোনো প্রেমিক সালমানের কাছে।
সোমি আলি
সংগীতার পর সালমানের জীবনে শুরু হয় নতুন প্রেমের অধ্যায়। সেবার তার হৃদয়ে রানি হয়ে আসেন সোমি আলি। সোমির মা ইরাকি এবং বাবা পাকিস্তানি, থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। বলিউডে ক্যারিয়ার গড়তে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুম্বাই পাড়ি জমান সোমি। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় সোমি ও সুনীল শেঠি অভিনীত ব্যবসাসফল ছবি ‘আনথ’। সোমির সঙ্গে সালমানের প্রেম অনেক দিন টিকলেও, স্থায়ী হয়নি। খবর রটেছিল, সালমানের মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান আর বাজে আচরণ সহ্য করতে না পেরেই তাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হন সোমি। কেবল সালমানকেই নয়, বলিউডকেও বিদায় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান সোমি। ফ্লোরিডার নোভা সাউথ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৭ সালে তিনি ‘হিউম্যান বিয়িং’ নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান খোলেন। ২০১০ সালে সালমান ‘বিয়িং হিউম্যান’ দাতব্যপ্রতিষ্ঠান খুললে আবারও আলোচনায় আসে সালমান-সোমির প্রেম। সে সময় তাদের পুনর্মিলনের খবরও ছাপা হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন
সালমানের জীবনের তৃতীয়া বলিউডের অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই। ১৯৯৪ সালে ‘বিশ্ব সুন্দরী’ খেতাব জয়ের বছর তিনেক পর তিনি অভিনয় জগতে পা রাখেন। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ব্লক বাস্টার’ হিট ছবি ‘হাম দিল দে চুকে সোনম’-এ একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে প্রেমে পড়েন সালমান-ঐশ্বরিয়া। কিন্তু সালমানের জীবনের এই প্রেমও টেকেনি। যথারীতি এই ভাঙনের জন্য দায়ী করা হয় সালমানের বাজে আচরণকে। ২০০২ সালের মার্চে সম্পর্কের ইতি টানেন ঐশ্বরিয়া। এ আঘাত সহ্য করতে না পেরে এক রাতে মাতাল অবস্থায় ঐশ্বরিয়ার বাড়িতে হানা দেন সালমান। ঘরের আসবাব ভাঙচুর করেন এবং ঐশ্বরিয়ার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল।
ক্যাটরিনা কাইফ
ঐশ্বরিয়ার পর সালমানের জীবনে আসেন আরেক বলিউডের অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ। তখন বলিউডে আসন গাড়তে সংগ্রাম করছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এ মডেল ও অভিনেত্রী। ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বুম’ ছবিতে ক্যাটরিনাকে দেখে ভালো লাগে সালমানের। বলিউডের নামিদামি প্রযোজকদের সঙ্গে ক্যাটরিনার পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু ভাঙা ভাঙা হিন্দি উচ্চারণের জন্য কেউই ক্যাটরিনাকে ছবিতে সুযোগ দেয়ার আগ্রহ দেখান না। এরপর ভাই সোহেল খানের প্রযোজনায় ‘ম্যায় নে পেয়ার কিউ কিয়া’ ছবিতে ক্যাটরিনাকে অন্তর্ভুক্ত করেন সালমান। ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেন ক্যাটরিনা। ছবিটি ব্যবসাসফল হয়। পরের বছর ‘পার্টনার’ ছবিতে সালমান ও গোবিন্দর সঙ্গে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান ক্যাটরিনা। সালমানের কল্যাণে পরপর দুটি হিট ছবি উপহার দিয়ে নির্মাতাদের নজরে আসেন ক্যাটরিনা। ২০০৭ সালে মুক্তি পায় ক্যাটরিনা ও অক্ষয় কুমার অভিনীত হিট ছবি ‘নমস্তে লন্ডন’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ক্যাটরিনাকে। একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ডিঙিয়েছেন। কিন্তু সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে সালমানের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। একটা সময়ে গিয়ে ভেঙে যায় তাদের প্রেম।
ব্রুনা আব্দুল্লাহ
ক্যাটরিনার পর সালমানের প্রেমিকা হিসেবে উচ্চারিত হয়েছিল মডেল ও অভিনেত্রী ব্রুনা আব্দুল্লাহর নাম। ব্রুনার বাবা আরবের এবং মা ব্রাজিলের। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া অনুভব সিনহার ‘ক্যাশ’ ছবির ‘রহম করে’ আইটেম গানে অংশ নিয়ে ভারতীয় দর্শকদের নজর কাড়েন ব্রুনা। পরবর্তী সময়ে ইমরান খানের সঙ্গে ‘আই হেট লাভ স্টোরি’ ছবিতে অভিনয় করেন। গত বছর মুক্তি পাওয়া ‘দেশি বয়েজ’ ছবির ‘সুবহা হোনে না দে’ আইটেম গানেও অংশ নিয়েছেন। সালমানের সঙ্গে তার প্রেমের খবর চাউর হলেও তেমন জোরালো কোনো প্রমাণ মেলেনি। বিষয়টিকে অস্বীকারও করেছেন ব্রুনা। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘সবাই যেমনটা বলছেন, সালমানের সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্ক আমার নেই। আমাদের মধ্যে মাত্র দুবার সাক্ষাৎ হয়েছে। একবার কাজ নিয়ে আলোচনা করতে আর অন্যবার সামাজিক একটি অনুষ্ঠানে।’
ক্লদিয়া সিজলা
২০০৯ সালে ভারতীয় টিভি রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস ৩’-এ অমিতাভ বচ্চনের সঞ্চালনায় অংশ নেন জার্মান মডেল, অভিনেত্রী ও গায়িকা ক্লদিয়া সিজলা। সালমান-ক্লদিয়ার প্রেমের খবর চাউর হয় যখন সালমান তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ক্লদিয়ার পরিচয় করিয়ে দেন। ক্লদিয়া সম্পর্কে সালমান বলেছিলেন, ‘ক্লদিয়া চমৎকার একজন মেয়ে। আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। সে আমার ‘বিশেষ’ বন্ধু।’ পরে অবশ্য ভিন্ন সুরেই কথা বলেন ক্লদিয়া। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি ও সালমান শুধুই ভালো বন্ধু। তিনি আমার প্রেমিক নন। সালমান এবং আমার প্রেম নিয়ে যেসব খবর এখানে প্রকাশিত হয়েছে, তা আদৌ ঠিক নয়। সবার জানা উচিত, ক্যাটরিনা কাইফ তার প্রেমিকা, আমি নই।’
অসিন
‘গজিনি’খ্যাত বলিউডের অভিনেত্রী অসিনের সঙ্গেও সালমানের প্রেমের গুজব ছড়িয়েছে। ‘লন্ডন ড্রিমস’ এবং ‘রেডি’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন এ দুই তারকা। অসিনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন সালমানÑ এমন ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর নানা গুজব ভাসতে থাকে বলিউডপাড়ায়। পরে অবশ্য জানা যায়, সেটি ছিল ‘লন্ডন ড্রিমস’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যের ছবি। ২০১১ সালে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অসিন ও সালমানের বিয়ের খবর প্রকাশিত হয়। ‘রেডি’ চলচ্চিত্রের বিয়ের দৃশ্যের ছবি ফাঁস হওয়াতেই এমন খবর চাউর হয়েছিল।
হ্যাজেল কিচ
২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্লকবাস্টার হিট ছবি ‘বডিগার্ড’-এ সালমানের সঙ্গে অভিনয় করতে যুক্তরাজ্য থেকে ভারত আসেন ব্রিটিশ মডেল হ্যাজেল কিচ। তার সঙ্গেও সালমানের প্রেমের জোর গুঞ্জন ওঠে। ‘বডিগার্ড’ ছবির শুটিং হয়েছে পুনেতে। খবর রটে, সেখানে সুন্দর সময় কাটিয়েছেন হ্যাজেল ও সালমান। একে অপরের সঙ্গ দারুণ উপভোগও করেছেন। ছবির সেটে তো বটেই, সেটের বাইরেও একসঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন। শুটিংয়ের ফাঁকে সালমানের সঙ্গে পুনের রাস্তায় মোটরসাইকেলে চেপে ঘুরতে দেখা গেছে হ্যাজেলকে।
বলিউডের অন্যতম ‘কাক্সিক্ষত’ ব্যাচেলর হওয়া সত্ত্বেও বিয়ে নিয়ে সালমানের গড়িমসি ভালো চোখে দেখছেন না কেউই। কাছের লোকজন তাকে বিভিন্নভাবে বোঝাচ্ছেন, যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে করে থিতু হওয়া উচিত তার। কিছুদিন আগে তার সহকর্মী ও কাছের বন্ধু আমির খান বলেছিলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে সালমানকে বলে আসছি, তাড়াতাড়ি বিয়ে করা উচিত তার। কিন্তু সে তো কারও কথাই শোনে না।’ আমিরের এমন মন্তব্যের জের ধরে সালমান বলেন, ‘বিয়ে নিয়ে আমির আমার পেছনে লেগেছেন।
শুধু আমির নন, সবাই আমার বিয়ের পেছনে লেগেছেন। আমি বুঝি না, আমার বিয়ে হলে কার কী লাভ!’ এমনকি সাবেক প্রেমিকা ক্যাটরিনাও সম্প্রতি ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন, এখনই বিয়ে করা উচিত সালমানের। তার বিয়ে নিয়ে ক্যাটরিনার বাণীর কারণেই কি না কে জানে, হঠাৎ করে ভিন্ন সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন সালমান। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ৪৬ বছর বয়সী এ তারকা বলেছেন, ‘আমি সারা জীবন একা থাকতে চাই না। যেকোনো দিন বিয়ের সানাই বাজতে পারে আমার।’ এখন দেখার বিষয় হলো, ‘শুভস্য শীঘ্রম’ প্রবাদটিকে মেনে দ্রুত গাঁটছড়া বাঁধার উদ্যোগ নেন কি না সালমান।

No comments

Powered by Blogger.