পবিত্র হজযাত্রা হোক সুন্দর ও বিশৃঙ্খলামুক্ত by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
সরকার ঘোষিত সিডিউল অনুযায়ী আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু উড়োজাহাজ লিজ সংক্রান্ত জটিলতায় হজ ফ্লাইট নিয়ে নানা জটিলতার কথা সংবাদমাধ্যমে আসছে। খবরে প্রকাশ, এ জটিলতা এড়াতে না পারলে প্রায় ২০ হাজার হজযাত্রী হজে যেতে পারবে না বিমান সংকটের কারণে।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি প্রতিবারের মতো দুর্ভোগ এবারও হজযাত্রীদের পিছু ছাড়ছে না? এক শ্রেণীর মুনাফাখোরদের সৃষ্ট এমন ঝামেলা আর কতদিন পোহাতে হবে হাজিদের? কৃত্রিম সংকট ও জটিলতা এড়িয়ে কি হজযাত্রাকে সামগ্রিকভাবে সুন্দর করা খুবই কষ্টকর?
হজে যাওয়ার বাসনা মনে পোষণ করেন না এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। অনেকে হজের জন্য নিয়ত করে অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করে সারা জীবন। সেই সঞ্চয়কৃত পুঁজি দিয়ে মৃত্যুর আগে একবার পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ ও হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) রওজা মোবারক জিয়ারত করতে চায়। প্রাণভরে জমজম কূপের পানি পান করে আকণ্ঠ তৃষ্ণা মেটাতে চায়। সাফা-মারওয়ায় দৌড়ে লক্ষ্যহীন জীবনকে আল্লাহ ও রাসূল নির্দেশিত পথে চালাতে চায়। মিনায় অবস্থান করে ইমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধি ও পশু কোরবানি করে নিয়তের বিশুদ্ধতাকে যাচাই করতে চায়। আরাফার ময়দানে উপস্থিত হয়ে হৃদয়মন দিয়ে উপলব্ধি করতে চায় মাওলায়ে পাকের সৃষ্টির বিশালতা।
হজের সফর যে একেবারে সহজসাধ্য তা নয়; এই সফর কষ্টের ও পরিশ্রমের। সৌদিতে হাজিদের জন্য প্রায় সব ধরনের সুবিধাই বিদ্যমান। হজ বছরে একবার বিধায় সৌদিতে হাজিদের ভিড় হয় প্রচুর, তাই হজ ব্যবস্থাপনাকে সামগ্রিকভাবে সুন্দর করতে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। তার আলোকে হাজিদের ভিসা প্রদান করা হয়। হজ পালনকালে ভাষায় ভিন্নতা ও নতুন পরিবেশ ছাড়াও হাজিদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় স্বাভাবিকভাবেই। তারপরও সৌদি সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে কেউ অভিযোগের আঙুল তুলতে পারে না। এ ছাড়াও বিশ্বের প্রায় সব দেশ হজযাত্রা ব্যবস্থাপনাকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে থাকেন। হজযাত্রা নিয়ে উলেল্গখযোগ্য কোনো কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনার কথা শোনা যায় না। ব্যতিক্রম শুধু আমাদের বাংলাদেশ।
প্রতি বছর হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া ও ফ্লাইট নিয়ে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়। হজ ক্যাম্পের অব্যবস্থাপনা তো আছেই। হজ এজেন্সিগুলোর প্রতারণামূলক আচরণের অভিযোগও বিস্তর। হাজিদের টাকা নিয়ে সটকে পড়ার ঘটনাও প্রতি বছর ঘটছে। আরও আছে পাসপোর্ট-ভিসা ও টিকিট নিয়ে নয়-ছয় কারবার, সৌদি আরবে পেঁৗছার পর থাকা-খাওয়া নিয়ে জালিয়াতি এবং কোরবানি নিয়ে প্রতারণা ইত্যাদি। বছরের পর বছর এসব নিয়ে সংবাদপত্রে বিস্তর লেখালেখি হয়। টেলিভিশন চ্যানেলে রিপোর্টও হয়। হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ধর্ম মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঘটনা ঘটলে প্রতিবার প্রতিশ্রুতি দেন পরবর্তী বছরের ব্যবস্থাপনা উন্নত করার। কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুতিই সার। অবস্থা দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার হজ মৌসুম শুরু হলে হজ ব্যবস্থাপনা সুন্দর করার ঘোষণা দিয়ে বরাবরই ব্যর্থ। হাজিদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে সরকারের সংশিল্গষ্ট মহলের এমন ব্যর্থতা ও উদাসীনতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অমুসলিম দেশগুলোও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে হজ ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পাদন করে থাকে। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম দেশে ফরজ ইবাদত হজ নিয়ে এমন ছলচাতুরী, শঠতা ও ব্যর্থতা মোটেই কাম্য নয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে আগামীতে হজে যাওয়ার জন্য অনেকেই সাহস করবে না হয়তো। তাই সময় থাকতে হজের ব্যাপারে সুষ্ঠু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আর সেই উদ্যোগে যেন ব্যবসায়িক কোনো ফন্দি না থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতি বছর হজের সময় হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করা কিছু হজ এজেন্সির নিয়মে পরিণত হয়েছে। তারা লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে হজযাত্রীদের আকৃষ্ট করেন। সৌদিতে যাওয়ার পর হজযাত্রীরা তার কিছুই দেখতে পান না। কাবা শরিফের সনি্নকটে বাড়ি, হেঁটেই কাবায় গিয়ে নামাজ পড়ার সুবিধা, থাকা-খাওয়ার বিশেষ আয়োজন, দর্শনীয় স্থান জিয়ারতের ব্যবস্থা_ এসব চটকদার কথা বলে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্রতারণা করে থাকে। সৌদিতে পা রাখার পর হজযাত্রীরা বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। তখন আর তাদের কিছুই করার থাকে না।
বাংলাদেশের হাজিদের বেশিরভাগই বয়স্ক। তাদের মধ্যে উলেল্গখযোগ্য সংখ্যক মহিলাও রয়েছে। তাদের অধিকাংশই আবার শারীরিকভাবে দুর্বল। এসব বৃদ্ধ ও দুর্বল হাজিদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় প্রতি বছর। এ দুর্ভোগের সঙ্গে যুক্ত হয় হজ এজেন্সিগুলোর প্রতারণা। ফলে হজযাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। দুঃখজনক হলেও বলতে হয়, প্রতারণাকারী এসব এজেন্সির অধিকাংশেরই মালিক সমাজে পরিচিত। এ ছাড়াও রয়েছে মাঠ পর্যায়ের হাজি সংগ্রহকারী মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠী কিছু ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার শিক্ষক ও ওয়ায়েজ। তারাই মূলত হাজিদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের কথা বলে হাজিদের এজেন্সির কাছে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট কমিশন নিয়ে কেটে পড়ে। এরপর শুরু হয় দুর্ভোগের সাতকাহন। হজের মতো একটি পবিত্র বিষয়কে অবলম্বন করে প্রতারকরা নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। হজযাত্রীদের পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিটসহ সামগ্রিক বিষয় একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রয়োজনে বাংলাদেশের পুরো হজ ব্যবস্থাপনা সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনার অধীনে নিয়ে আসা যেতে পারে। তা সম্ভব না হলে যেসব হজ এজেন্সি হজ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত_ যাদের সততা, স্বচ্ছতা ও কর্মদক্ষতা রয়েছে যাচাই-বাছাই করে শুধু তাদেরই লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
সম্প্রতি সৌদি হজ মন্ত্রণালয় হজ কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক প্রচারণায় ধর্মীয় ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্য দিয়ে হজে গমনেচ্ছুদের আকৃষ্ট করতে কিছু হজ কোম্পানি প্রখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিদের নাম প্রচার করার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত বিতর্কের অবসান ঘটল। বাংলাদেশেও হজ কাফেলার নামে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিচালিত বিভিন্ন এজেন্সির প্রতারণা বন্ধ করতে বিখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তি, ওলামা-মাশায়েখ, পীর-বুজুর্গ ও ওয়ায়েজদের সম্পৃক্ততা নিষেধ করার বিষয়টি ভাবা যেতে পারে।
জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনাসহ মনমানসিকতাকে পরকালের জন্য তৈরি করতে হজ অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি ইবাদত। জীবনকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রাখতে হজের সফর বিরাট ভূমিকা রাখে। আমাদের কাছে হজ যতটুকু গুরুত্ব বহন করে, তেমনি আল্লাহতায়ালার কাছেও হজ অতীব মর্যাদাপূর্ণ। ত্যাগ-তিতিক্ষার এক সুমহান নিদর্শন হজ। সেই হজযাত্রা হোক সুন্দর, আরামদায়ক ও বিশৃঙ্খলামুক্ত_ এই প্রত্যাশা সবার।
muftianaet@gmail.com
হজে যাওয়ার বাসনা মনে পোষণ করেন না এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। অনেকে হজের জন্য নিয়ত করে অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করে সারা জীবন। সেই সঞ্চয়কৃত পুঁজি দিয়ে মৃত্যুর আগে একবার পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ ও হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) রওজা মোবারক জিয়ারত করতে চায়। প্রাণভরে জমজম কূপের পানি পান করে আকণ্ঠ তৃষ্ণা মেটাতে চায়। সাফা-মারওয়ায় দৌড়ে লক্ষ্যহীন জীবনকে আল্লাহ ও রাসূল নির্দেশিত পথে চালাতে চায়। মিনায় অবস্থান করে ইমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধি ও পশু কোরবানি করে নিয়তের বিশুদ্ধতাকে যাচাই করতে চায়। আরাফার ময়দানে উপস্থিত হয়ে হৃদয়মন দিয়ে উপলব্ধি করতে চায় মাওলায়ে পাকের সৃষ্টির বিশালতা।
হজের সফর যে একেবারে সহজসাধ্য তা নয়; এই সফর কষ্টের ও পরিশ্রমের। সৌদিতে হাজিদের জন্য প্রায় সব ধরনের সুবিধাই বিদ্যমান। হজ বছরে একবার বিধায় সৌদিতে হাজিদের ভিড় হয় প্রচুর, তাই হজ ব্যবস্থাপনাকে সামগ্রিকভাবে সুন্দর করতে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। তার আলোকে হাজিদের ভিসা প্রদান করা হয়। হজ পালনকালে ভাষায় ভিন্নতা ও নতুন পরিবেশ ছাড়াও হাজিদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় স্বাভাবিকভাবেই। তারপরও সৌদি সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে কেউ অভিযোগের আঙুল তুলতে পারে না। এ ছাড়াও বিশ্বের প্রায় সব দেশ হজযাত্রা ব্যবস্থাপনাকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে থাকেন। হজযাত্রা নিয়ে উলেল্গখযোগ্য কোনো কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনার কথা শোনা যায় না। ব্যতিক্রম শুধু আমাদের বাংলাদেশ।
প্রতি বছর হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া ও ফ্লাইট নিয়ে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়। হজ ক্যাম্পের অব্যবস্থাপনা তো আছেই। হজ এজেন্সিগুলোর প্রতারণামূলক আচরণের অভিযোগও বিস্তর। হাজিদের টাকা নিয়ে সটকে পড়ার ঘটনাও প্রতি বছর ঘটছে। আরও আছে পাসপোর্ট-ভিসা ও টিকিট নিয়ে নয়-ছয় কারবার, সৌদি আরবে পেঁৗছার পর থাকা-খাওয়া নিয়ে জালিয়াতি এবং কোরবানি নিয়ে প্রতারণা ইত্যাদি। বছরের পর বছর এসব নিয়ে সংবাদপত্রে বিস্তর লেখালেখি হয়। টেলিভিশন চ্যানেলে রিপোর্টও হয়। হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ধর্ম মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঘটনা ঘটলে প্রতিবার প্রতিশ্রুতি দেন পরবর্তী বছরের ব্যবস্থাপনা উন্নত করার। কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুতিই সার। অবস্থা দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার হজ মৌসুম শুরু হলে হজ ব্যবস্থাপনা সুন্দর করার ঘোষণা দিয়ে বরাবরই ব্যর্থ। হাজিদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে সরকারের সংশিল্গষ্ট মহলের এমন ব্যর্থতা ও উদাসীনতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অমুসলিম দেশগুলোও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে হজ ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পাদন করে থাকে। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম দেশে ফরজ ইবাদত হজ নিয়ে এমন ছলচাতুরী, শঠতা ও ব্যর্থতা মোটেই কাম্য নয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে আগামীতে হজে যাওয়ার জন্য অনেকেই সাহস করবে না হয়তো। তাই সময় থাকতে হজের ব্যাপারে সুষ্ঠু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আর সেই উদ্যোগে যেন ব্যবসায়িক কোনো ফন্দি না থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতি বছর হজের সময় হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করা কিছু হজ এজেন্সির নিয়মে পরিণত হয়েছে। তারা লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে হজযাত্রীদের আকৃষ্ট করেন। সৌদিতে যাওয়ার পর হজযাত্রীরা তার কিছুই দেখতে পান না। কাবা শরিফের সনি্নকটে বাড়ি, হেঁটেই কাবায় গিয়ে নামাজ পড়ার সুবিধা, থাকা-খাওয়ার বিশেষ আয়োজন, দর্শনীয় স্থান জিয়ারতের ব্যবস্থা_ এসব চটকদার কথা বলে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্রতারণা করে থাকে। সৌদিতে পা রাখার পর হজযাত্রীরা বুঝতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। তখন আর তাদের কিছুই করার থাকে না।
বাংলাদেশের হাজিদের বেশিরভাগই বয়স্ক। তাদের মধ্যে উলেল্গখযোগ্য সংখ্যক মহিলাও রয়েছে। তাদের অধিকাংশই আবার শারীরিকভাবে দুর্বল। এসব বৃদ্ধ ও দুর্বল হাজিদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় প্রতি বছর। এ দুর্ভোগের সঙ্গে যুক্ত হয় হজ এজেন্সিগুলোর প্রতারণা। ফলে হজযাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। দুঃখজনক হলেও বলতে হয়, প্রতারণাকারী এসব এজেন্সির অধিকাংশেরই মালিক সমাজে পরিচিত। এ ছাড়াও রয়েছে মাঠ পর্যায়ের হাজি সংগ্রহকারী মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠী কিছু ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার শিক্ষক ও ওয়ায়েজ। তারাই মূলত হাজিদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের কথা বলে হাজিদের এজেন্সির কাছে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট কমিশন নিয়ে কেটে পড়ে। এরপর শুরু হয় দুর্ভোগের সাতকাহন। হজের মতো একটি পবিত্র বিষয়কে অবলম্বন করে প্রতারকরা নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। হজযাত্রীদের পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিটসহ সামগ্রিক বিষয় একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রয়োজনে বাংলাদেশের পুরো হজ ব্যবস্থাপনা সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনার অধীনে নিয়ে আসা যেতে পারে। তা সম্ভব না হলে যেসব হজ এজেন্সি হজ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত_ যাদের সততা, স্বচ্ছতা ও কর্মদক্ষতা রয়েছে যাচাই-বাছাই করে শুধু তাদেরই লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
সম্প্রতি সৌদি হজ মন্ত্রণালয় হজ কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক প্রচারণায় ধর্মীয় ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্য দিয়ে হজে গমনেচ্ছুদের আকৃষ্ট করতে কিছু হজ কোম্পানি প্রখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিদের নাম প্রচার করার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত বিতর্কের অবসান ঘটল। বাংলাদেশেও হজ কাফেলার নামে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিচালিত বিভিন্ন এজেন্সির প্রতারণা বন্ধ করতে বিখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তি, ওলামা-মাশায়েখ, পীর-বুজুর্গ ও ওয়ায়েজদের সম্পৃক্ততা নিষেধ করার বিষয়টি ভাবা যেতে পারে।
জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনাসহ মনমানসিকতাকে পরকালের জন্য তৈরি করতে হজ অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি ইবাদত। জীবনকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত রাখতে হজের সফর বিরাট ভূমিকা রাখে। আমাদের কাছে হজ যতটুকু গুরুত্ব বহন করে, তেমনি আল্লাহতায়ালার কাছেও হজ অতীব মর্যাদাপূর্ণ। ত্যাগ-তিতিক্ষার এক সুমহান নিদর্শন হজ। সেই হজযাত্রা হোক সুন্দর, আরামদায়ক ও বিশৃঙ্খলামুক্ত_ এই প্রত্যাশা সবার।
muftianaet@gmail.com
No comments