বইপত্র- ভিন্নস্বরে ভিন্ন মানবীকথা by আখতার হুসেন
বাংলাদেশে যৌনতা বিক্রি জীবনের দামে কেনা জীবিকা: কুর্রাতুল-আইন-তাহিমনা/শিশির মোড়ল \ প্রকাশক: সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড) \ প্রকাশকাল: জুন ২০০০ \ প্রচ্ছদ: নিয়াজ মজুমদার \ মূল্য: ২০০ টাকা
প্রকাশকালের গোনাগুনতি দশ বছর পর হাতে আসা বইটি নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই একটা প্রশ্ন আমাকে তিরের মতো বারবার বিদ্ধ করতে থাকে, এ বই এত দিন কোথায় ছিল? কোথাও তো এর বিজ্ঞাপন দেখিনি! কোনো আলোচনাও পড়েনি চোখে। নিজেকে খুবই দীন-দরিদ্র মনে হতে থাকে বইটির পাঠপর্ব শেষে।
এ বইয়ের লেখকদ্বয় শুরুতেই বলেন, ‘এ দেশের যৌনকর্মীদের সম্পর্কে কোনো দীর্ঘ ও গভীর গবেষণার ফসল এটা নয়। আমরা দুজন সাংবাদিক বিষয়টি বুঝতে চেয়েছিলাম। আমাদের সমস্ত সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা যেটুকু বুঝতে পেরেছি এবং যেসব টুকরো ছবি দেখতে পেয়েছি, সেসব কথাই আমরা এখানে লিখেছি।’ তাঁদের এমত উচ্চারণে বিনয়ের স্পর্শ থাকলেও, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা অত্যুক্তি হবে না যে যৌনকর্মীদের বিষয়ে এর আগে আমি খুচরোখাচরা নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন, বাংলা ও ইংরেজিতে আঙুলে গোনা বই পড়লেও এতৎসংক্রান্ত এত গভীর বই এর আগে আমি সত্যিই পড়িনি।
মোট আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই বই। অধ্যায়গুলোর শিরোনাম থেকেই বোঝা যাবে বিষয়ের গভীরতার দিকগুলো। যেমন: ‘যৌনতা-বিক্রি কি বৈধ পেশা হতে পারে?’, ‘পতিতালয় উচ্ছেদের রাজনীতি-অর্থনীতি’, ‘যৌনতা বিক্রির বাজারে’, ‘পতিতালয়ে যে মেয়েরা কাজ করেন’, ‘যৌনতা বিক্রির ভাসমান বাজার’, ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক যৌনকর্মী: দেয়ালে পিঠ-ঠেকা জীবন’, ‘ওরা মায়ের সন্তান’, ‘কারা কী করছে’ এবং সবশেষে ‘পাঠ-সহায়িকা’।
এ বইয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, গ্রন্থাকারদ্বয়ের প্রসঙ্গিত বিষয়ে তাত্ত্বিক কিছু হাজির করার চেয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়, যারা যৌনকর্মী, তাদের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ করা এবং তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা। এই অভিজ্ঞতার ওপর দাঁড়িয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, ‘তাঁদের পেশার পরিচয় ছাপিয়ে কেউ কেউ আমাদের সামনে বড় বেশি জীবন্ত মানুষের পরিচয় নিয়ে দাঁড়ালেন। আমরা কৌতূহলী হলাম, আগ্রহী হলাম তাঁদের কথা আরেকটু জানতে।
‘আর জানতে গিয়েই নতুন করে ভাবতে শিখলাম, প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব একটা জীবন থাকে, যে জীবনের অভিজ্ঞতায় ব্যক্তি হিসেবে তিনি অনন্য। কিন্তু আবার তাঁর জীবনের সাধারণ দাবি-চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আর দশজনের মতো।’ এই অনুসিদ্ধান্ত থেকেই অগ্রসর হয়েছেন কুর্রাতুল-আইন-তাহিমনা ও শিশির মোড়ল। তাঁরা ইতিহাসের শরণ যেমন নিয়েছেন, তেমনি বারবণিতাদের জীবনমান বিষয়ে বিভিন্ন কালপর্বের সংস্কার আইন বিষয়েও আলোকপাত করেছেন।
যৌনকর্মীদের পেশা নিয়ে যে বিতর্ক চলে আসছে, সে বিষয়ে তাঁদের আলোচনা হালকা চালের কিছু নয়। এ ক্ষেত্রে গ্রন্থকারদ্বয় একপেশেমিতার আশ্রয় নেননি। একরৈখিকতাকে তাঁরা সর্বাংশে পরিহার করার প্রয়াস পেয়েছেন।
এ গ্রন্থ যত নির্মোহভাবেই আপনি পড়তে শুরু করার প্রতিজ্ঞা করুন না কেন, নির্মোহ ও নিরাবেগ থাকতে পারবেন না। চোখ ভিজে উঠবে অধ্যায়ের পর অধ্যায়ের পাঠে। পুরুষশাসিত সমাজ, দারিদ্র্য, বুভুক্ষা, প্রচলিত আইন, আইনের সংস্কার, সরকারি ও বেসরকারি প্রয়াস-প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে যৌনকর্মীরা যে কতটা অসহায়, এ বই সেটা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখতে সাহায্য করবে। এবং এই প্রতিজ্ঞায় প্রাণিত করবে, আসুন, পতিতাদের আমরা আর পতিততর হতে দেব না। তারাও মানুষ।
এ রকম একটি বই রচনা করার জন্য লেখকদ্বয়কে আন্তরিক অভিনন্দন। বইটির বহুল প্রচার আমাদের কাম্য।
এ বইয়ের লেখকদ্বয় শুরুতেই বলেন, ‘এ দেশের যৌনকর্মীদের সম্পর্কে কোনো দীর্ঘ ও গভীর গবেষণার ফসল এটা নয়। আমরা দুজন সাংবাদিক বিষয়টি বুঝতে চেয়েছিলাম। আমাদের সমস্ত সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা যেটুকু বুঝতে পেরেছি এবং যেসব টুকরো ছবি দেখতে পেয়েছি, সেসব কথাই আমরা এখানে লিখেছি।’ তাঁদের এমত উচ্চারণে বিনয়ের স্পর্শ থাকলেও, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা অত্যুক্তি হবে না যে যৌনকর্মীদের বিষয়ে এর আগে আমি খুচরোখাচরা নিবন্ধ, প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন, বাংলা ও ইংরেজিতে আঙুলে গোনা বই পড়লেও এতৎসংক্রান্ত এত গভীর বই এর আগে আমি সত্যিই পড়িনি।
মোট আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত এই বই। অধ্যায়গুলোর শিরোনাম থেকেই বোঝা যাবে বিষয়ের গভীরতার দিকগুলো। যেমন: ‘যৌনতা-বিক্রি কি বৈধ পেশা হতে পারে?’, ‘পতিতালয় উচ্ছেদের রাজনীতি-অর্থনীতি’, ‘যৌনতা বিক্রির বাজারে’, ‘পতিতালয়ে যে মেয়েরা কাজ করেন’, ‘যৌনতা বিক্রির ভাসমান বাজার’, ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক যৌনকর্মী: দেয়ালে পিঠ-ঠেকা জীবন’, ‘ওরা মায়ের সন্তান’, ‘কারা কী করছে’ এবং সবশেষে ‘পাঠ-সহায়িকা’।
এ বইয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, গ্রন্থাকারদ্বয়ের প্রসঙ্গিত বিষয়ে তাত্ত্বিক কিছু হাজির করার চেয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়, যারা যৌনকর্মী, তাদের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ করা এবং তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা। এই অভিজ্ঞতার ওপর দাঁড়িয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, ‘তাঁদের পেশার পরিচয় ছাপিয়ে কেউ কেউ আমাদের সামনে বড় বেশি জীবন্ত মানুষের পরিচয় নিয়ে দাঁড়ালেন। আমরা কৌতূহলী হলাম, আগ্রহী হলাম তাঁদের কথা আরেকটু জানতে।
‘আর জানতে গিয়েই নতুন করে ভাবতে শিখলাম, প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব একটা জীবন থাকে, যে জীবনের অভিজ্ঞতায় ব্যক্তি হিসেবে তিনি অনন্য। কিন্তু আবার তাঁর জীবনের সাধারণ দাবি-চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আর দশজনের মতো।’ এই অনুসিদ্ধান্ত থেকেই অগ্রসর হয়েছেন কুর্রাতুল-আইন-তাহিমনা ও শিশির মোড়ল। তাঁরা ইতিহাসের শরণ যেমন নিয়েছেন, তেমনি বারবণিতাদের জীবনমান বিষয়ে বিভিন্ন কালপর্বের সংস্কার আইন বিষয়েও আলোকপাত করেছেন।
যৌনকর্মীদের পেশা নিয়ে যে বিতর্ক চলে আসছে, সে বিষয়ে তাঁদের আলোচনা হালকা চালের কিছু নয়। এ ক্ষেত্রে গ্রন্থকারদ্বয় একপেশেমিতার আশ্রয় নেননি। একরৈখিকতাকে তাঁরা সর্বাংশে পরিহার করার প্রয়াস পেয়েছেন।
এ গ্রন্থ যত নির্মোহভাবেই আপনি পড়তে শুরু করার প্রতিজ্ঞা করুন না কেন, নির্মোহ ও নিরাবেগ থাকতে পারবেন না। চোখ ভিজে উঠবে অধ্যায়ের পর অধ্যায়ের পাঠে। পুরুষশাসিত সমাজ, দারিদ্র্য, বুভুক্ষা, প্রচলিত আইন, আইনের সংস্কার, সরকারি ও বেসরকারি প্রয়াস-প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে যৌনকর্মীরা যে কতটা অসহায়, এ বই সেটা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখতে সাহায্য করবে। এবং এই প্রতিজ্ঞায় প্রাণিত করবে, আসুন, পতিতাদের আমরা আর পতিততর হতে দেব না। তারাও মানুষ।
এ রকম একটি বই রচনা করার জন্য লেখকদ্বয়কে আন্তরিক অভিনন্দন। বইটির বহুল প্রচার আমাদের কাম্য।
No comments