সামিট থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছে সরকার

সামিট পাওয়ার লিমিটেডের আইনী জালে জড়িয়ে পড়ছে সরকার। বিদ্যুত কেন্দ্র বানাতে না পারলেও যথাসময়ে জমি বুঝিয়ে দিতে না পারায় সরকারের কাছে উল্টো ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে সামিট। আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সামিটের কাছ থেকে আইনগতভাবে কিভাবে বের হয়ে আসা যায় সে চেষ্টাই করা হচ্ছে।


বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সামিটকে চলতি মাসের শুরুর দিকে বিবিয়ানা-১ জমি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য দুই দফা চিঠি দেয়া হলেও তারা নিতে সম্মত হয়নি। উল্টো তারা বিদ্যুত কেন্দ্রের জমি সময়মতো বুঝিয়ে দিতে না পারার জন্য সরকারের কাছে ৪০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। উল্লেখ্য, বিবিয়ানা-১ বিদ্যুত
প্রকল্পে সামিট পারফরমেন্স গ্যারান্টি (পিজি) জমা দিয়েছে ৩০ লাখ ডলার। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ব্যর্থ হলে সামিটের জমা দেয়া পিজি সরকার আটকে দিতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার সামিটের কাজের গতি দেখে এর মধ্যে বুঝতে পেরেছে তাদের পক্ষে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব নয়। সামিটও মৌখিকভাবে বিষয়টি সরকারকে জানিয়ে বিদ্যুত প্রকল্পটি অন্য কাউকে দিলে তাদের পক্ষ থেকে কোন বাধা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সামিট লিখিতভাবে কোন চিঠি দিয়ে সরকারকে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
বৃহস্পতিবার বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ে বিবিয়ানার প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বিবিয়ানার বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। যদিও বিবিয়ানার তিনটি বিদ্যুত প্রকল্পের মধ্যে এখন পর্যন্ত দুটির চুক্তি করা হয়েছে সামিটের সঙ্গে। সামিট ওই দুই প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারেনি।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, সামিটের কাছ থেকে কিভাবে আইনগতভাবে সরে আসা যায় সরকার সে চেষ্টা শুরু করেছে। তিনি বলেন, সামিট ক্ষতিপূরণ বাবদ যে অর্থ চেয়েছে তাও আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু আন্তর্জাতিক চুক্তি এটি, তাই এ সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলা ঠিক নয়।
এ সময় বিদ্যুত সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা বিবিয়ানা-১ বিদ্যুত কেন্দ্র হবে না ধরে নিয়েই বিবিয়ানায় আরও দুটি বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি করেছি।
বিদ্যুত মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চুক্তি স্বাক্ষরের ১৫ মাস পরেও সামিট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায় সরকার বিব্রতবোধ করছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী এক বৈঠকে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকার পরও সামিটকে এত বিদ্যুত কেন্দ্র কেন দেয়া হলো তা জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী সামিটের এই কর্মকা-ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারপরই সামিটের কাছ থেকে আইনগতভাবে সরে আসার প্রক্রিয়া শুরু করে বিদ্যুত বিভাগ।
চলতি মাসের শুরুর দিকে সামিটের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার জন্য যে সব আইনগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করার অংশ হিসেবে তাদের জমি রেজিস্ট্রি করে নিতে বলা হয়, যাতে সামিট বিষয়টিকে আর অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে না পারে। অন্যদিকে সামিটের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার ১৫ মাসেও জমি দিতে না পারায় তারা ব্যাংক ঋণ সংগ্রহ করতে পারেনি। সামিট বলছে, সরকারের অদক্ষতার দায় আমাদের ওপর চাপানো যাবে না। অন্যদিকে বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সে কোথায় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অর্থ পাবে তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রটির উৎপাদন শুরু করতে হবে।
প্রথম থেকেই দেখা যায় সামিটকে জমি বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করে বিদ্যুত বিভাগ। সামিটের অর্থ সংগ্রহ যতই অনিশ্চয়তার পথে এগুচ্ছিল সেই সঙ্গে জমি রেজিস্ট্রির বিষয়টিও ঝুলে যাচ্ছিল। সামিটের সঙ্গে চুক্তির অনেক আগেই হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করলেও প্রক্রিয়া শেষ করতে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময় নেয় তারা। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে বেশ উদাসীন ছিল।
বিবিয়ানা-১ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য পিডিবির সঙ্গে সামিট গত বছর ৫ মে চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুত কেন্দ্রটির সিম্পল সাইকেল আগামী বছরে মার্চে উৎপাদনে আসার কথা। আর কমবাইন্ড সাইকেল উৎপাদনে আসার কথা ছিল ওই বছরে মে মাসে।

No comments

Powered by Blogger.