বুদ্ধির জোর by দীপংকর চন্দ
হাতি এখন যেমন, দেখতে কিন্তু তেমন ছিল না আগে! একেবারেই ছোটখাটো গড়ন ছিল তার! লম্বা একটা শুঁড় এবং ছোট লেজ থাকলেও হাতির চোখ দুটো ছিল কিন্তু বেশ বড়।চোখ দুটো বড় হওয়ার কারণে খাবার জিনিস সে দেখতে পেত অন্যদের চেয়ে বেশি। সেই হিসেবে অন্যদের চেয়ে হাতি একটু বেশিই খেত।
একদিন নিজের ডেরা ছেড়ে বহুদূর চলে গেল হাতি। হঠাৎ একটা আমলকী বন আবিষ্কার করল সে। কৌতূহলী ভঙ্গিতে একটা ফল ছিঁড়ে মুখে দিল!
আরে থু! ভীষণ তেতো মনে হলো প্রথমে। বিরক্ত হয়ে ফলটি যখনই ফেলতে গেল মুখ থেকে, তখনই ভিন্ন স্বাদের উপস্থিতি টের পেল জিহবায়। আরে! ফলটা এখন মনে হচ্ছে মিষ্টি! বেশ মজা তো!
মনের আনন্দে চিবোতে থাকে হাতি। যতই চিবোয়, বিচিত্র স্বাদের স্পর্শ পায় জিহবায়।
আনন্দে জ্ঞানশূন্য হয়ে আমলকী বনে ঘাঁটি গাড়ল হাতি। সারা দিন আমলকী ভক্ষণের পর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে ফিরে এল নিজের ডেরায়।
কিন্তু আমলকী খেলে যে রুচি বাড়ে, প্রচণ্ড খিদে পায়, এ কথা জানা ছিল না হাতির।
অবিরাম খাদ্য গ্রহণের ফলে অল্প দিনের মধ্যেই হাতির শরীরটা হলো পাহাড়ের মতো। ধীরে ধীরে বনের মধ্যে বাস করা অন্য প্রাণীদের খাবারও কেড়ে খেতে শুরু করল হাতি। মোটকথা সবার কাছে ভীষণ ভীতিকর হয়ে উঠল হাতি। উপায় না দেখে বনের প্রাণীরা দলবেঁধে রাজার কাছে গেল।
বনের রাজা সিংহ। হাতির কাণ্ড দেখে অসন্তুষ্ট সে-ও। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু যে বলবে, হাতিকে তার উপায় নেই। কারণ, এমন বিশাল শরীর নিয়ে হাতি যদি ইচ্ছে করে, সিংহকে নামিয়ে নিজেই বসতে পারে সিংহাসনে।
কিন্তু প্রজাদের কাছে তো এসব কথা বলা যাবে না!
তাই প্রতিকারের আশ্বাস দিয়ে প্রজাদের দ্রুত বিদায় করল সিংহ। রাতে সে তলব করল মন্ত্রীকে।
সিংহের মন্ত্রী হচ্ছে শেয়াল।
সবকিছু শুনে সে বলল, গায়ের জোরে তো হাতিকে আটকানো যাবে না হুজুর। হাতিকে আটকাতে হবে বুদ্ধির জোরে। বিষয়টা আপনি আমার ওপর ছেড়ে দিন। শেয়ালের কথায় আশ্বস্ত হয়ে ঘুমাতে গেল সিংহ। কয়েক দিন পর। হাতি যখন একটা চাঁপাকলার বন উজাড় করতে ব্যস্ত, শেয়াল ধীরে ধীরে হাতির কাছে এসে দাঁড়াল। অত্যন্ত নম্রস্বরে বলল, সালাম হুজুর, আপনার শরীর ভালো?
হাতি একটু তাকিয়ে দেখল শেয়ালকে, তারপর মুখে আস্ত একটা কলাগাছের চারা পুরে দিতে দিতে আয়েশে উত্তর দিল, হুম! শরীর বেশ ভালোই যাচ্ছে আজকাল।
কিন্তু হুজুরের চোখ দুটো তো তেমন ভালো দেখাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। সন্দেহ ভরা গলায় বলল শেয়াল।
কেন? চোখের আবার কী সমস্যা দেখছ তুমি? নির্লিপ্তভাবে জানতে চাইল হাতি।
কেমন যেন রোগাক্রান্ত, ফুলেও আছে মনে হচ্ছে দুটো চোখ। ব্যথা আছে নাকি? শেয়ালের কণ্ঠস্বরে উদ্বিগ্নতা।
না, কোন ব্যাথা নেই তো!
নেই! অবাক গলায় বলল শেয়াল, হুম! আমার ভাইয়ের ছেলেরও এমন হয়েছিল। ব্যথা নেই প্রথম প্রথম। তারপর সেই যে ব্যথা শুরু হলো, আর কমে না।
তারপর?
তারপর বদ্যির কাছে নিয়ে গেলাম ওকে। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
মানে? হ্যাঁ হুজুর। চোখ দুটো আর রক্ষা করা গেল না।
আমার চোখেও কি তেমন লক্ষণ দেখছ তুমি? সভয়ে জিজ্ঞেস করল হাতি।
হুজুর ভয়ে বলব না নির্ভয়ে?
নির্ভয়ে বলো।
আমার মনে হয় তেমন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে আপনার চোখে। এখন উত্তম হচ্ছে বদ্যির কাছে যাওয়া।
বনের বদ্যি হচ্ছে বাঁদর।
বাঁদরকে বলা ছিল আগেই।
হাতি চোখ দেখাতে যাওয়া মাত্রই বাঁদর হাতির বড় বড় চোখ দুটো পাল্টে ছোট এক জোড়া চোখ লাগিয়ে দিল।
ছোট চোখের কারণে হাতির দেখার পরিধি অনেক ছোট হয়ে গেল। খাবার জিনিসও তার দৃষ্টিগোচর হলো কম। ফলে হাতির খাওয়া একটা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নেমে এল। গায়ের জোর দেখানোর প্রবণতাও কমে গেল তার। নতুন চেহারার হাতি আর তেমন ভীতিকর রইল না কারও কাছে।
আরে থু! ভীষণ তেতো মনে হলো প্রথমে। বিরক্ত হয়ে ফলটি যখনই ফেলতে গেল মুখ থেকে, তখনই ভিন্ন স্বাদের উপস্থিতি টের পেল জিহবায়। আরে! ফলটা এখন মনে হচ্ছে মিষ্টি! বেশ মজা তো!
মনের আনন্দে চিবোতে থাকে হাতি। যতই চিবোয়, বিচিত্র স্বাদের স্পর্শ পায় জিহবায়।
আনন্দে জ্ঞানশূন্য হয়ে আমলকী বনে ঘাঁটি গাড়ল হাতি। সারা দিন আমলকী ভক্ষণের পর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে ফিরে এল নিজের ডেরায়।
কিন্তু আমলকী খেলে যে রুচি বাড়ে, প্রচণ্ড খিদে পায়, এ কথা জানা ছিল না হাতির।
অবিরাম খাদ্য গ্রহণের ফলে অল্প দিনের মধ্যেই হাতির শরীরটা হলো পাহাড়ের মতো। ধীরে ধীরে বনের মধ্যে বাস করা অন্য প্রাণীদের খাবারও কেড়ে খেতে শুরু করল হাতি। মোটকথা সবার কাছে ভীষণ ভীতিকর হয়ে উঠল হাতি। উপায় না দেখে বনের প্রাণীরা দলবেঁধে রাজার কাছে গেল।
বনের রাজা সিংহ। হাতির কাণ্ড দেখে অসন্তুষ্ট সে-ও। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু যে বলবে, হাতিকে তার উপায় নেই। কারণ, এমন বিশাল শরীর নিয়ে হাতি যদি ইচ্ছে করে, সিংহকে নামিয়ে নিজেই বসতে পারে সিংহাসনে।
কিন্তু প্রজাদের কাছে তো এসব কথা বলা যাবে না!
তাই প্রতিকারের আশ্বাস দিয়ে প্রজাদের দ্রুত বিদায় করল সিংহ। রাতে সে তলব করল মন্ত্রীকে।
সিংহের মন্ত্রী হচ্ছে শেয়াল।
সবকিছু শুনে সে বলল, গায়ের জোরে তো হাতিকে আটকানো যাবে না হুজুর। হাতিকে আটকাতে হবে বুদ্ধির জোরে। বিষয়টা আপনি আমার ওপর ছেড়ে দিন। শেয়ালের কথায় আশ্বস্ত হয়ে ঘুমাতে গেল সিংহ। কয়েক দিন পর। হাতি যখন একটা চাঁপাকলার বন উজাড় করতে ব্যস্ত, শেয়াল ধীরে ধীরে হাতির কাছে এসে দাঁড়াল। অত্যন্ত নম্রস্বরে বলল, সালাম হুজুর, আপনার শরীর ভালো?
হাতি একটু তাকিয়ে দেখল শেয়ালকে, তারপর মুখে আস্ত একটা কলাগাছের চারা পুরে দিতে দিতে আয়েশে উত্তর দিল, হুম! শরীর বেশ ভালোই যাচ্ছে আজকাল।
কিন্তু হুজুরের চোখ দুটো তো তেমন ভালো দেখাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। সন্দেহ ভরা গলায় বলল শেয়াল।
কেন? চোখের আবার কী সমস্যা দেখছ তুমি? নির্লিপ্তভাবে জানতে চাইল হাতি।
কেমন যেন রোগাক্রান্ত, ফুলেও আছে মনে হচ্ছে দুটো চোখ। ব্যথা আছে নাকি? শেয়ালের কণ্ঠস্বরে উদ্বিগ্নতা।
না, কোন ব্যাথা নেই তো!
নেই! অবাক গলায় বলল শেয়াল, হুম! আমার ভাইয়ের ছেলেরও এমন হয়েছিল। ব্যথা নেই প্রথম প্রথম। তারপর সেই যে ব্যথা শুরু হলো, আর কমে না।
তারপর?
তারপর বদ্যির কাছে নিয়ে গেলাম ওকে। কিন্তু তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
মানে? হ্যাঁ হুজুর। চোখ দুটো আর রক্ষা করা গেল না।
আমার চোখেও কি তেমন লক্ষণ দেখছ তুমি? সভয়ে জিজ্ঞেস করল হাতি।
হুজুর ভয়ে বলব না নির্ভয়ে?
নির্ভয়ে বলো।
আমার মনে হয় তেমন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে আপনার চোখে। এখন উত্তম হচ্ছে বদ্যির কাছে যাওয়া।
বনের বদ্যি হচ্ছে বাঁদর।
বাঁদরকে বলা ছিল আগেই।
হাতি চোখ দেখাতে যাওয়া মাত্রই বাঁদর হাতির বড় বড় চোখ দুটো পাল্টে ছোট এক জোড়া চোখ লাগিয়ে দিল।
ছোট চোখের কারণে হাতির দেখার পরিধি অনেক ছোট হয়ে গেল। খাবার জিনিসও তার দৃষ্টিগোচর হলো কম। ফলে হাতির খাওয়া একটা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নেমে এল। গায়ের জোর দেখানোর প্রবণতাও কমে গেল তার। নতুন চেহারার হাতি আর তেমন ভীতিকর রইল না কারও কাছে।
No comments