চন্দ্রবিজয়ী নিল আর্মস্ট্রংয়ের মহাপ্রয়াণে by রুশো তাহের
১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। স্থানীয় সময় সকাল নয়টা ৩২ মিনিট। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষিপ্ত হলো দুই হাজার ৯০০ টন ওজনের স্যাটার্ন ভি রকেট। সঙ্গে বয়ে নিয়ে গেল কলম্বিয়া লুনার কমান্ড মডিউল। মিশনটি ছিল এ্যাপোলো-১১। মিশনের অধিনায়ক ছিলেন নিল আর্মস্ট্রং।
বিশালাকৃতির রকেটটি মহাকাশযান কলম্বিয়া এবং নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন-ই অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্সকে নিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে দুই ঘণ্টা ৩৩ মিনিট অবস্থান করে। এরপর পৃথিবীর মহাকর্ষবল অতিক্রমণের পর শুরু হয় চাঁদের দিকে যাত্রা। অভিযান শুরুর ১০২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পরে ঈগল চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে। এরপর ঈগল থেকে ছোট্ট সিঁড়ি বেয়ে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন নিল আর্মস্ট্রং। এর ২০ মিনিট পর চাঁদে নামেন তার সহযোগী অলড্রিন। সেদিন ছিল ২০ জুলাই, ১৯৬৯। মানবসভ্যতার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় একটি দিন। গোটা বিশ্ব সেদিন ভীষণ এক উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছিল একটা বিশেষ মুহূর্তের জন্য। ওই মুহূর্ত মানে এ্যাপোলো-১১ ঠিকমতো চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবে কি না, তা নিয়ে খোদ মার্কিনবিজ্ঞানীরাও শঙ্কিত ছিলেন। মিশন ব্যর্থ তথা নভোচারীদের মৃত্যু হতে পারেÑ এ রকম আশঙ্কা মিশনসংশ্লিষ্টরাও করেছিলেন। আর এর অংশ হিসেবে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের একটি শোকবাণীও যথারীতি প্রস্তুত করা ছিল। কিন্তু সব আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে এ্যাপোলো-১১ সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করেছিল। সেজন্য মানবজাতির ইতিহাসে সেটি একটি চিরস্মরণীয় মুহূর্ত।
চাঁদের বুকে পা রেখে মিশন অধিনায়ক নিল আর্মস্ট্রং বললেন, ‘একজন মানুষের একটি ছোট্ট পদক্ষেপ, মানবজাতির জন্য এক বিরাট অগ্রগতি।’ এদিকে চাঁদের বুকে মানুষের পা রাখা ওই দৃশ্য টেলিভিশনে সরাসরি দেখল পৃথিবীর প্রায় ৫০ কোটি মানুষ। চাঁদে নেমেই আর্মস্ট্রং তো অবাক। চারদিকে সারি সারি পাথর আর বড় বড় গর্ত। চাঁদের বুক থেকে আর্মস্ট্রং বিভিন্ন ধরনের শিলা সংগ্রহ করলেন, অসংখ্য ছবি তুললেন, স্থাপন করলেন আমেরিকার পতাকা। আর্মস্ট্রং চাঁদে নামার সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর অলড্রিনও নেমে আসেন। তিনিও ছবি তোলেন। অলড্রিনই প্রথম ঈগলে প্রবেশ করেন। তাকে অনুসরণ করেন আর্মস্ট্রং। তবে ঈগলে ওঠার আগে দু’জনই দুটি ব্যাগে করে নিয়ে নেন সাড়ে একুশ কেজি ধুলো-বালি, পাথর ইত্যাদি। তবে তারা চাঁদ থেকে শুধু নিয়েই আসেননি, দিয়েও এসেছেন। তার মধ্যে রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আমেরিকার পতাকা, পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের মানচিত্র, একটি সিলিকন মেসেজ ডিস্ক যার মধ্যে রেকর্ড করা আছে পৃথিবীর ৭৩টি দেশের প্রধানসহ আমেরিকার কয়েক প্রেসিডেন্টের বাণী।
ওই অভিযানে আর্মস্ট্রংয়ের সহ-নভোচারী ছিলেন এডউইন-ই অলড্রিন। আর্মস্ট্রংয়ের পর তিনিও পা রাখেন চাঁদের মাটিতে। এ্যাপোলো-১১-এর পাইলট ছিলেন মাইকেল কলিন্স। তবে তিনি নভোযান থেকে বের হননি। চন্দ্রপৃষ্ঠে মোট সাড়ে একুশ ঘণ্টা অবস্থান করে এ্যাপোলো-১১। এর মধ্যে আড়াই ঘণ্টা চাঁদের বুকে হাঁটাহাঁটি করেন নিল আর্মস্ট্রং ও এডউইন-ই অলড্রিন। সেই নিল আর্মস্ট্রংই গত ২৫ আগস্ট ২০১২ হয়ে যান ইতিহাস। মানে তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে। নিল আর্মস্ট্রংয়ের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওতে ১৯৩০ সালের ৫ আগস্ট। কোরীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৬২ সালে তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘মহাকাশ কর্মসূচী’তে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে ‘জেমিনি-৮’ মহাশূন্য মিশন দিয়ে তাঁর প্রথম মহাকাশযাত্রা শুরু হয়। তিনি ছিলেন ওই মিশনের কমান্ড পাইলট। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে চাঁদে প্রথম মনুষ্য অভিযান এ্যাপোলো-১১-এর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন নিল আর্মস্ট্রং।
আর্মস্ট্রং খুব অল্প বয়সেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন। ছয় বছর বয়সে বাবার সঙ্গে বিমানে চড়েন। ষোলো বছর বয়সে শিক্ষার্থী বিমান চালনার অনুমতি পান। ছাত্র হিসেবে খুব ভাল ফলাফল করে মার্কিন নৌবাহিনীর বৃত্তি পেয়ে ১৯৪৭ সালে পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে কোরীয় যুদ্ধে মার্কিন নৌবাহিনীর পাইলট হিসেবে তাঁর ডাক পড়ে। সেখানে নিল আর্মস্ট্রং যুদ্ধ বিমান চালনায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান। ১৯৫২ সালে ওই দায়িত্ব থেকে ফিরে আবার পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন। আর্মস্ট্রং ১৯৫৬ সালে জ্যানেট শিরনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দুই সন্তানের জনক। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন ধীরচিত্ত ও ঠা-া মাথার মানুষ। এর একটি দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। এ্যাপোলো-১১ অভিযানে আর্মস্ট্রং যে নভোযানটি পরিচালনা করছিলেন, চাঁদ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসার সময় সেটির জ্বালানি ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছিল। নিয়ন্ত্রণকক্ষের সবাই তখন চিন্তিত হয়ে পড়লেন, যানটিকে তারা ঠিক জায়গায় অবতরণ করাতে পারবেন তো! কিন্তু আর্মস্ট্রং বিচলিত হলেন না। তিনি অপেক্ষা করলেন। এবং অত্যন্ত স্থিরতার সঙ্গে ঠিক জায়গাটিতেই নভোযানটি অবতরণ করালেন।
মহাকাশচারী তারকা নিল আর্মস্ট্রং ছিলেন নিভৃতচারী। বিশ্বজোড়া খ্যাতি তাঁর অত ভাল লাগত না। তিনি পছন্দ করতেন নির্জনতা। কিন্তু এই মানুষটি বিশ্ববাসীর কাছে শুধু ইতিহাস সৃষ্টি করেননি বরং পৃথিবীর বাইরের জগত স্বর্গীয় ও অবস্তুগত এমন ধারণা মিথ্যে প্রমাণ করেন চাঁদে পা রেখে ও হাঁটাহাঁটি করে। আমরা জানি, বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি টেলিস্কোপে আকাশ পর্যবেক্ষণের আগে মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবীর বাইরের জগত স্বর্গীয়। সেখানে থাকেন অতিপ্রাকৃত শক্তি। কিন্তু গ্যালিলিও গ্যালিলি সেই ধারণা মিথ্যে প্রমাণ করেন টেলিস্কোপিক পর্যবেক্ষণে। আর সরেজমিন চন্দ্রপৃষ্ঠে হাঁটাহাঁটি করে তা আবারও ভুল প্রমাণ করলেন নিল আর্মস্ট্রং।
মর্ত্যরে মানুষ পৃথিবীর বাইরে ‘চন্দ্রপৃষ্ঠে যে পদচিহ্ন রেখে আসেন ১৯৬৯ সালে, তারই ধারাবাহিকতায় এ্যাপোলো-১২ তে চড়ে চাঁদের বুকে আবার পা রাখেন চার্লস পেইট কনরাড এবং এ্যালান এল. বিন। সেটাও ১৯৬৯ সালে। ১৯৭১ সালে চন্দ্র অভিযানে যায় এ্যাপোলো-১৪। সেই অভিযানের নভোচারী এ্যালেন বি. শেফার্ড এবং এডগার ডি. মিশেলও চন্দ্রে অবতরণ করেন। এখানে শেফার্ড সম্পর্কে একটি বিষয়ের অবতারণা করতে চাই। শেফার্ড যখন চন্দ্রাভিযানে যান, তখন তার বয়স ছিল ৪৭ বছর। সাধারণত অত বয়সে নভোচারী হওয়া যায় না। কিন্তু তার ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছিল। যা হোক, শেফার্ড শুধু চাঁদের বুকে হাঁটাহাঁটিই করেননি, বরং দু’টো গলফ বল নিয়েও খেলা করেছিলেন। তার আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি প্রথম মার্কিন নভোচারী, যিনি পৃথিবীর কক্ষপথ পরিভ্রমণে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই মহাকাশযানটির নকশা কক্ষপথকে পূর্ণ ঘূর্ণনের উপযোগী ছিল না বলে, সেটি প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে যায়। তবে শেফার্ড প্রাণে বেঁচে যান। আবার ১৯৭১ সালে চাঁদের যায় এ্যাপোলো-১৫। সেখান থেকে চাঁদের বুকে পদচিহ্ন রাখেন ডেভিড স্কট এবং জেমস বি. আইরুইন। ১৯৭২ সালেও দুটি চন্দ্র অভিযান সংঘটিত হয়। একটি হচ্ছে এ্যাপোলো-১৬। এ্যাপোলো-১৬ থেকে চাঁদের বুকে নামেন জন ইয়াং এবং চার্লস এম. ডিউক। অপরটি হচ্ছে এ্যাপোলো-১৭। এ্যাপোলো-১৭ থেকে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করেন ইউজিন এ. চারন্যান এবং হ্যারিসন জ্যাক স্মিথ।
এ্যাপোলো-১৬ এবং এ্যাপোলো-১৭-এর যে চারজন নভোচারী চন্দ্রপৃষ্ঠে নেমেছিলেন, তারা হেঁটে চাঁদের দৃশ্য দেখেননি। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন লুনার রোভার। যাতে করে তারা চষে বেড়ান চন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকা, যা হেঁটে কিছুতেই সম্ভব হতো না। এর মাধ্যমে ওই নভোচারীরা আমাদের জন্য একটি বার্তা নিয়ে এসেছেন। আর তা হলো, চাঁদ আদৌ সুন্দর নয়। বরং অসুন্দর ও এর পৃষ্ঠ এবড়ো-থেবড়ো। এমনকি চাঁদের কোথাও অলৌকিকতারও চিহ্ন পাননি নভোচারীরা। আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ৬টি চন্দ্রাভিযান, তার ১২ জন নভোচারীর ৮ জন চন্দ্রপৃষ্ঠে হাঁটাহাঁটি করেছেন, বাকি ৪ জন লুনার রোভারে চড়ে চাঁদের বিস্তীর্ণ এলাকা সরেজমিন প্রত্যক্ষ করেছেন। এরা সবাই গ্যালিলিও গ্যালিলির পর্যবেক্ষণের সত্যতারই প্রমাণ পেয়েছেন। পৃথিবীর জগৎ স্বগীয়। সেখানে পৃথিবীর মতোই বস্তুর সমারোহ। এবং ওইসব বস্তুর উদ্ভবও বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। বস্তুত চাঁদের বুকে একের পর এক পদচিহ্ন রেখে যে ১২ মার্কিন নভোচারী ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তাদের সবার অগ্রদূত নিল আর্মস্ট্রং।
নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে পা রেখে। এঁকে দিলেন মর্ত্যরে মানুষের পদচিহ্ন তার কিন্তু একটা পটভূমি আছে। আছে মহাকাশ জয়ের দীর্ঘ স্বপ্ন ও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের অদম্য মানবীয় প্রয়াস। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়ণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেন মার্কিন বিজ্ঞানী রবার্ট এইচ. গডার্ড আধুনিক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র আবিষ্কার করে। সেখান থেকেই মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন বাস্তবের কাছাকাছি চলে আসে। এদিকে মহাকাশ নিয়ে মানুষের গবেষণা শুরু হয় ১৯৫০ সাল থেকে। মানুষ আবিষ্কার করল রকেটের সাহায্যে মহাকাশ যানকে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ অতিক্রম করে মহাশূন্যে উৎক্ষেপণের পদ্ধতি। বস্তুত রকেট যে বেগে পৃথিবীর টান ছিন্ন করে মহাশূন্যে পাড়ি জমায় তাকে বলে নিষ্ক্রমণ বেগ।
মহাকাশ অভিযানে প্রথম মনোনিবেশ করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারা প্রথমে পাঠায় লাইকা নামের এক কুকুর। এরপর ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয় পৃথিবীর কক্ষপথে নভোচারী ইউরি গ্যাগারিনকে পরিভ্রমণে পাঠিয়ে। তিনি মহাকাশযান স্পুৎনিকে চড়ে সফলভাবে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিভ্রমণ শেষে ফিরে আসেন। সোভিয়েত নারী ভেলেনতিনা তেরেসকোভাও কক্ষপথ পরিভ্রমণ করেন। বস্তুত এর ফলে মানবজাতির মহাকাশ অভিযানের স্বপ্ন নতুন মাত্রা পায়। ধাপে ধাপে এগিয়ে যায় মহাকাশে সরেজমিন পরিভ্রমণের স্বপ্ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন। বস্তুত এভাবেই মানবপ্রজাতির মহাকাশ অভিযানের পটভূমি প্রস্তুত হতে থাকে। একদা তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোতা ক্রুসেভ বলেছিলেন, চাঁদের বুকে আমরা আমেরিকানদের অভ্যর্থনা জানাব।
নিল আর্মস্ট্রং ছিলেন দারুণ আশাবাদী মানুষ। এখন থেকে বারো বছর আগের একটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি)। তখন এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেছিলেন, মি. আর্মস্ট্রং, আপনার কি মনে হয় মানুষ কি কখনও মঙ্গলে যেতে পারবে? আর্মস্ট্রং তার উত্তরে বলেছিলেন, আমি ঠিক বলতে পারব না; তবে আমি যখন তোমাদের বয়সী ছিলাম, সে সময় কখনও ভাবিনি যে, আমরা একদিন চাঁদে যেতে পারব। আর্মস্ট্রংয়ের এই উক্তি বিজ্ঞানের প্রকৃতিরই বহির্প্রকাশ। বিজ্ঞান কখনও আগ বাড়িয়ে, আন্দাজে কিংবা বিজ্ঞান তত্ত্বকে পরিহার করে কোনো কিছু বলে না। করে না কোনো ভবিষ্যদ্বাণী। তবে এগিয়ে যায়। নিল আর্মস্ট্রং যে কথা বলেছিলেন তার বাল্যকালের উদ্ধৃতি টেনে, আমরা এখন সেই অবস্থায়ও নেই। মানে আরও এগিয়ে আছি। আর্মস্ট্রংয়ের মৃত্যুর মাত্র ১৯ দিন আগে সবচেয়ে আধুনিক রোবোটিক মহাকাশযান কিউরিওসিটি সফলভাবে অবতরণ করে মঙ্গলগ্রহে। এর লক্ষ্য মঙ্গলে কখনও প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, থাকলে তা বিলুপ্ত হলো কেন, কিংবা মঙ্গল গ্রহকে প্রাণ বসবাসের উপযোগী করা যায় কিনা এবং সেটি কিভাবে সম্ভব করা যেতে পারে ইত্যাকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা। সবচেয়ে বড় কথা, ২০২৬ সালে লাল গ্রহ মঙ্গলের পথে পাড়ি জমাবে সবুজ গ্রহ ‘পৃথিবী’র একমাত্র বুদ্ধিমান প্রজাতি মানুষ। সেই সম্ভাব্যতাও যাচাই করে দেখবে ৬ আগস্ট মঙ্গলের বুকে অবতরণ করা রোবোটিক মহাকাশযান কিউরিওসিটি। এক্ষেত্রে সৃষ্টি হবে আরেকটি ইতিহাস। আসলে ২০২৬ সালে পৃথিবীর মানুষ যদি মঙ্গলের বুকে পা রাখতে সক্ষম হয়, সেটিও হবে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই নিল আর্মস্ট্রংয়ের চন্দ্রপৃষ্ঠে পদচিহ্ন রাখার আরেক ভার্সন। পার্থক্য হলো চাঁদ হচ্ছে আমাদের নিকটতম পড়শী উপগ্রহ। আর মঙ্গল হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রহ।
No comments