৭ সেপ্টেম্বরের আগে সরছেন না মসিউর by আবুল কাশেম

অন্তত আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান পদত্যাগ করছেন না। স্বপদে বহাল থেকেই পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক তদবির শুরু করেছেন তিনি। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা এই উপদেষ্টা আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ভারতে যাচ্ছেন।


সঙ্গে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীও। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবেই এই সফরে যাচ্ছেন তাঁরা। সেখানে গিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা চাবেন তাঁরা।
এ বিষয়ে কথা বলতে এই দুই উপদেষ্টার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ড. মসিউর রহমানের সহকারী একান্ত সচিব তপন কুমার ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার রাতে কালের কণ্ঠকে জানান, 'মসিউর স্যার ৪ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে গওহর রিজভী স্যারও যাচ্ছেন। আগামী সাত সেপ্টেম্বর তাঁরা দেশে ফিরবেন।'
ভারতে দুই উপদেষ্টার কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তপন কুমার তা জানাতে পারেননি।
তবে মসিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রানজিট ইস্যুতে ভারতের খুবই আস্থা অর্জন করেছেন ড. মসিউর রহমান। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরের সময় সবকিছুই চূড়ান্ত করেন মসিউর রহমান ও গওহর রিজভী। বিশ্বব্যাংকের চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারতের আস্থাভাজন হওয়ার কারণেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়নি। তবে মসিউর রহমান চাচ্ছেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক ফিরে আসুক।
সরকারের একজন নীতিনির্ধারক আরো জানান, বিশ্বব্যাংকে দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ভারতীয় নাগরিক এমএন প্রসাদ। তিনিই মূলত ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পক্ষে লবিস্টের মতো কাজ করছেন। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রসাদ। ভারতে গিয়ে মসিউর রহমান ও গওহর রিজভী বিশ্বব্যাংকের অবস্থান সম্পর্কে যেমন স্পষ্ট ধারণা পাবেন, তেমনি ভারত সরকার যাতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ সমর্থন জানায় সেজন্যও তদবির করবেন তাঁরা।
ঈদের পর দেশের গণমাধ্যমে মসিউর রহমানের পদত্যাগের বিষয়টি উঠে আসার পর তিনি তৎপর হয়ে ওঠেন। হঠাৎ করেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে কেবল একটি শর্তই অপূর্ণ রয়ে গেছে। তা হলো প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের পদত্যাগ। তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পে ইনটিগ্রিটি অ্যাডভাইজর হিসেবেও রয়েছেন। বিশ্বব্যাংক তাঁকে পদত্যাগ বা ছুটিতে পাঠানোর শর্ত দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে দফায় দফায় আলোচনা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে সম্মত হননি। ফলে তাঁকেও আপাতত পদত্যাগ করতে হচ্ছে না।
পদত্যাগ প্রশ্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সম্প্রতি মসিউর রহমান বলেছেন, বিশ্বব্যাংক অর্থ দিলে তিনি ১০ বার পদত্যাগ করতে রাজি আছেন। তবে সংস্থাটির চাপে নয়, সরকার ও প্রধানমন্ত্রী বললেই তিনি পদত্যাগ করবেন। তার আগে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও চেয়েছেন তিনি।
এদিকে সরকারের আনুষ্ঠানিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এডিবি ও জাইকা ঋণ চুক্তি কার্যকরের মেয়াদ এক মাস বাড়ানোর পক্ষে সম্মতি দিয়েছে। আজ শুক্রবার সংস্থা দুটি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে। তাই বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে সরকার আরো এক মাস সময় পাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.