বৃক্ষ নিধন-লোভ কি শতবর্ষী গাছকেও ছাড়বে না?
কথায় বলে, খলের ছলের অভাব হয় না। অর্থাৎ দুষ্ট লোকের অজুহাতের অভাব নেই। নিজের উদ্দিষ্ট সাধনের জন্য ছলে-বলে-কৌশলে কাজ করাই যাদের লক্ষ্য, জনস্বার্থের তারা তোয়াক্কা করবে কেন? শুধু জনস্বার্থ কেন, পরিবেশ-প্রতিবেশের স্বার্থও তারা দেখে না।
এ কারণেই আমরা নদীতীরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠতে দেখি, জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন হতে দেখি। বৃক্ষ নিধন সে তুলনায় অনেক সহজসাধ্য অপরাধ। কেননা নানা উন্নয়ন পরিকল্পনার অজুহাত বৃক্ষ নিধনের ক্ষেত্রে সহজেই খাটে। কোনো নতুন বিল্ডিং ওঠানো দরকার, রাস্তা সম্প্রসারণ করা দরকার, কাটো গাছ। গাছ কাটলেই কাঠ। আর গাছ যদি পুরনো হয়, আকারে বিশাল হয়, তবে তো লাভের অঙ্ক বেড়ে যায়। ফলে উন্নয়নকর্মে জড়িতদের পছন্দের তালিকায় বৃক্ষ কর্তন শুরুর দিকে। মজার ব্যাপার হলো, গাছ কাটতে গিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের উদাহরণও দেওয়া হয়। গাছের চেয়ে বড় সৌন্দর্য আর কী হতে পারে? আর পুরনো গাছ তো শুধু গাছ নয়, রীতিমতো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। সে গাছ কাটতে যদি সৌন্দর্য বর্ধনের যুক্তি দেওয়া হয়, তবে এর থেকে পরিহাস আর কী হতে পারে? কিন্তু এই পরিহাসই করেছেন ফেঞ্চুগঞ্জের ক্ষমতাধররা। হজরত সৈয়দ ইসহাক শাহের (র.) মাজারের গাছ কাটার ক্ষেত্রে সৌন্দর্য বর্ধনের অজুহাত দিয়েছেন। গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতির তোয়াক্কাও করা হয়নি। কতটি গাছ কাটা হয়েছে তার হিসাবও নেই। এখন প্রশ্ন হলো, গাছ কাটার জন্য যারা দায়ী, তাদের কি খুঁজে পাওয়া যাবে? পাওয়া গেলেও কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে? ক্ষমতাসীনদের মদদে এমন অপরাধ কি ঘটতেই থাকবে? আমরা এমন অপরাধের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না, তাই অপরাধীদের শাস্তি হওয়া দরকার। সে শাস্তির জন্য প্রশাসনের উদ্যোগ প্রত্যাশিত।
No comments