মানুষের অভূতপূর্ব সাড়ায় আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে- কৃষক লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিরোধী দলের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, বিএনপি বলেছে, ক্ষমতায় গেলে তারা দুইটি পদ্মা সেতু করবে। যেখানে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে একটি সেতুও তারা বানাতে পারেনি, সেখানে দুইটা সেতু বানাবে কীভাবে? ধোঁকাবাজির একটি সীমা আছে।


তিনি বলেন, বিশে^র অন্য সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচনের মতোই এ দেশের নির্বাচনও হবে। গণতন্ত্র যাতে অব্যাহত থাকে, সে চেষ্টাই সরকার করবে। গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিও করবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ আবারও অস্বীকার করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু অবশ্যই আমরা করব। দেশের মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র চত্বরে কৃষক লীগের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর আগে কাউন্সিলস্থলে উপস্থিত হয়েই জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উ™ে^াধন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কাউন্সিলে সারাদেশের ৬৭টি সাংগঠনিক জেলার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কৃষক লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৩ সালের ২৯ জুলাই। এ কাউন্সিলে ড. মির্জা এমএ জলিলকে সভাপতি ও মোতাহার হোসেন মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়।
বিএনপি আমলের দুর্নীতির বিচারের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ে তোলা হবে। দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের বিচার হবেই। সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদীদের আশ্রয়ও এ দেশে আর হবে না। দুর্নীতি-লুটপাটে জড়িত বিএনপি নেতাদের দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবেই। এটা কখনই চাপা থাকে না। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ৫ হাজার ২২৫টি নির্বাচনের সবই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। একটি নির্বাচন নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। কোথাও কোন সমস্যা কিংবা বিশৃঙ্খলাও হয়নি। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অতীতে কখনই হয়নি। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করেছে, তাদের কাজে কোন হস্তক্ষেপও করা হয়নি। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট ও সাংবিধানিক অধিকারে বিশ^াস করে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যে ওয়াদা দেয়, সেটা বাস্তবায়ন করে ছাড়ে। পদ্মা সেতুও আমরা অবশ্যই করব। এ সেতুর জমি অধিগ্রহণ ও সমীক্ষার জন্য আমরা দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করেছি। দাতা সংস্থাগুলোও এ খরচে কোন দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। যেখানে নিজেদের দেড় হাজার কোটি টাকা খরচে দুর্নীতি হলো না, সেখানে বিশ^ব্যাংকের ঋণের একটি টাকা ছাড় না হওয়ার পরও দুর্নীতি হয় কীভাবে? কী উদ্দেশ্যে এই অভিযোগ করা হয়েছে, সেটাই বড় বিষয়।
তিনি বলেন, প™§া সেতু তো আমরা করবই, সে সঙ্গে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের দেশেও পরিণত করতে পারবÑ সে বিশ^াসও আমাদের রয়েছে। কৃষক, শ্রমিক, মজুর ও সব মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ আর বাংলা ভাই সৃষ্টি করাই ছিল তাদের কাজ। দুর্নীতি-লুটপাট আর নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিল তারা। মানুষ শান্তিতে থাকতে পারেনি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী আবার ক্ষমতায় এলে এ সরকারের সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। তারা ক্ষমতায় থাকতেও জনগণের কল্যাণে কিছু করেনি। কেবল আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে যেসব কাজ করেছেÑ সেগুলোরই ফিতা কেটেছে। আর ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙ্গেছে। ওদের চরিত্রই ভাঙ্গা, গড়া নয়। প্রতিহিংসাপরায়ণই তাদের কাজ। তবে এটা জনগণও বোঝে। এগুলো যারা করেছে, জনগণ আর তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে না। সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের শাসনও মানুষ আর চায় না।
কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এক নেতা যিনি দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রাপ্ত তার কাছ থেকেও দুর্নীতির কথা শুনতে হয়। এর চেয়ে দুঃখের কী আছে! এই নেতা আওয়ামী লীগেও ছিলেন। পরে এরশাদের হাত-পায়ে ধরে জাতীয় পার্টিতে এবং বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিএনপিতে গেছেন। আগামীতে কারা ক্ষমতায় আসেন, সেটি দেখতে গলা উঁচু করে আছেন। তিনি হাতের আংটির মতো, যখন যার হাতে তখন তার। দুর্নীতির দায়ে চাকরি চলে যাওয়া এবং বঙ্গবন্ধুর অনুকম্পায় চাকরি ফিরে পাওয়া বিএনপির আরেক নেতাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলছেন। এ যেন চোরের মায়ের বড় গলা। যে বিএনপি দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল, তাদের মুখে দুর্নীতির কথা মানায় না।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে গ্রামগঞ্জে সংগঠন শক্তিশালী করতে কৃষক লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার যেসব উন্নয়ন কাজ করছে তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উ™ে^াধন করেন। এ সময় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন কৃষক লীগের সভাপতি ড. মির্জা এমএ জলিল। সারাদেশের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আলাদাভাবে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন।
ড. মির্জা জলিলের সভাপতিত্বে কাউন্সিলের উ™ে^াধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মোল্লা। অনুষ্ঠানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসিনার হাতে কাউন্সিলের ক্রেস্ট তুলে দেন। এছাড়া কৃষক লীগের প্রকাশনা ‘কৃষকের কন্ঠে’র কপিও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয়।
কাউন্সিল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং সর্বভারতীয় কিষান সভার সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সংগঠনের দফতর সম্পাদক গৌতম ব্যানার্জী। কাউন্সিলের শুরুতেই সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশিত হয়।
পরে একইস্থানে কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। এতে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট এবং গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন ও অনুমোদিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.