আবার জবাই!

চরমপন্থীরা মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাটে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে গভীর আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা শিলাইদহে পদ্মা নদীর খেয়াঘাটে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম এবং তাঁর দুই সঙ্গী আফজাল ও ভুট্টোকে এলোপাতাড়ি গুলি ও জবাই করে হত্যা করে।


হত্যার পর নিহতদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়া অঞ্চলে পুনরায় ‘চরমপন্থীদের’ তৎপরতার খবর পাওয়া গেল। বিষয়টি মোটেই উপেক্ষা করার মতো নয়; বরং ঘটনাটি এক ভয়াবহ আতঙ্কের স্মৃতি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এমন একটা সময় ছিল, যখন এ ধরনের সন্ত্রাসীরা বেআইনী নানা ধরনের দল ও উপদলের নামে কুষ্টিয়াসহ সমগ্র দক্ষিণ বাংলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় হত্যা, ডাকাতি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে এক ভয়ঙ্কর অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। সে সময়ে এ অঞ্চলের গ্রাম ও শহরের কোন কোন এলাকায় আইনের শাসন ও স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছিল; এবং সর্বত্র এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। নিহত ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম পাবনা জেলা জজ আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে নদীপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলা চালায়।
এই ভয়াবহ হত্যাকা- কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণবঙ্গের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের কাছে এক ভয়াবহ অশনিসঙ্কেত বয়ে এনেছে। এসব ‘চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের’ বিষয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে। এরা যে কোন মুহূর্তে বিভিন্ন এলাকায় হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে পারে। এরা কখনও ‘সর্বহারা’ কখনও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি প্রভৃতি নানা ধরনের বেআইনী সংগঠনের নাম ব্যবহার করে। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার মতো এরা আরও নানা ধরনের তৎপরতার সঙ্গে জড়িত হয়। কিন্তু এদের মূল পরিচয় এরা সন্ত্রাসী, ডাকাত, ভাড়াটে খুনী ও জঘন্য অপরাধী। এদের কর্মকা- সম্পূর্ণভাবে বেআইনী। সরকারকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ ধরনের ‘চরমপন্থীদের’ বিষয়ে তদন্ত চালাতে হবে। দেশে বর্তমানে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এ সময় কাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে চরমপন্থীরা আবার মাঠে নেমেছে সেটাই প্রশ্ন। বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বিরাজ করছে; সে সময় এসব ‘চরমপন্থীরা’ আবার বেআইনী হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা নস্যাত করতে চায়। তাই এ ধরনের বেআইনী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করতে হবে এবং তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। পাশাপাশি কুষ্টিয়ার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও তাঁর দুই সহযোগীর প্রকৃত হত্যাকারীদের অবশ্যই গ্রেফতার করা দরকার। তথাকথিত ‘চরমপন্থীদের’ সবাইকে শনাক্ত করা অপরিহার্য। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই এই জঘন্য অপরাধীদের গ্রেফতার করা জরুরি। এক্ষেত্রে একটুও নমনীয়তা কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.