স্বদেশে কেমন থাকেন বাঙালীরা? by সুলতানা আজীম
(পূর্ব প্রকাশের পর) এভাবে কেউ চেনে না আমাকে। কিন্তু, আমি তো আমাকে চিনি’। কিছুটাও যদি অপরাধবোধ হয় তার তখন, কি হবে দায়িত্ব? প্রতিটি মাসের প্রতিটি দিনের চব্বিশ ঘন্টা, এতো এতো এতো ধরনের দুর্নীতি করে কাটিয়ে, একটি মানুষও দুর্নীতিবাজ এবং অপরাধী মনে করে না নিজেকে এদেশে। কেন? কারণ’টি কি?
এই মানুষগুলো দুর্নীতিমুক্ত না হলে, অথবা দুর্নীতি না কমালে, কিভাবে গড়ে উঠতে পারে দেশ? কিভাবে তৈরি হবে অনেকটা শোষণমুক্ত, ভারসাম্যময় সমাজ রাষ্ট্র? ছোট বড় অপরাধ এবং দুর্নীতির সঙ্গে, যে দেশের প্রতিটি মানুষ জড়িত, সে দেশে কে কাকে অপরাধী বলবে? সমুদ্র যে চুরি করে সে অবশ্যই চোর। পুকুর বা জলাশয় যে চুরি করে, চোর সেও। পরিমাণে ভিন্ন হলেও, শাস্তি দুজনেরই প্রাপ্য।
চোর বদমাশ অমানুষ বাবাকেও মনে করে তার সন্তান, খুব সৎ আর নীতিবান মানুষ। বাড়ির কাজের বাচ্চাটিকে মেরে ফেললেও, সন্তান বলে, ‘আমার মা অসাধারণ, খুব মানবিক’। বলবে না কেন? ন্যায় আর অন্যায়ের পার্থক্য তো বোঝানো হয় না সন্তানকে। বোঝাবে কোন মা বাবা, যারা দুর্নীতি করে প্রতিপালন করছে সন্তানকে, তারা? তারাই কি বড় হয়েছে ন্যায় আর অন্যায়ের পার্থক্য বুঝে এবং মেনে? সন্তানকে তো এটাই শেখানো হয়, মা বাবাকে শ্রদ্ধা সম্মান করতে। সন্তানের কাছে তো দাবিও করা হয় এসব। যত বড় অপরাধী-ই হোক তার মা এবং বাবা।
ভাবতে ভাবতে ফিরে আসি বাড়িতে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় পূর্ণ হয়ে যেতে থাকে স্মৃতির এলবাম। নিমন্ত্রণ রয়েছে সন্ধ্যায়, পরিচিত এক পরিবারে। প্রস্তুতির প্রথম পর্ব হিসেবে যাই, স্নান করতে। এলার্জি আক্রান্ত শরীর আমার, মেনে নিতে পারে না কলের জল। পরিমিত ফুটানো জলে অতৃপ্ত স্নান সেরেই, ঘামতে থাকি অর্নগল। এয়ার কন্ডিশন নিয়ন্ত্রিত ঘর, আর বাইরের তাপের বৈপরীত্যও সহ্য হয় না আমার। সহ্য হয় না ‘আননেচারাল’কোন কিছুই। ন্যাচারের একটি অংশ আমি। সুস্থ থাকতে সাহায্য করে আমাকে প্রকৃতি।
কোন একটি স্ন্যাক্স খাবার ইচ্ছায় ফ্রিজ খুলি। অফ হয়ে রয়েছে ওটা। ইলেকট্রিসিটি নেই। অনুভব করি মায়া, যথেষ্ট বড় এবং নতুন এই ফ্রিজটির জন্যে। প্রতি ঘন্টায় বিদ্যুত বন্ধ হয়ে গেলে এবং ঘন্টা ধরে না এলে, কিভাবে টিকে থাকে এদেশে জরুরী এই যন্ত্রটি? কি অবস্থা হয় এর ভেতরে সংরক্ষিত খাবারগুলোর? ফ্রিজগুলো ব্যবহার করে কিভাবে এদেশের পরিবারগুলো, যাদের আছে এটি? যে অভিজ্ঞতা আমার, তা বলছে, প্রায় কোন বাড়ির গৃহর্কতা গৃহিণী-ই জানেন না, কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয় খাবার। এবং কম আর বেশি কত দিনের জন্যে। যতœ করতে হয় এটি কিভাবে, তাও নয়। হতে পারে জানেন কেউ কেউ। কিন্তু তা মানেন না। না মানলে, জানার অর্থ কি?
পুরনো পচে যাওয়া সিমেল ধরা খাবার, তেলাপোকার শীতল রাজত্ব, পলিথিন ব্যাগ বা বস্তার ভেতর রাখা রক্ত গড়ানো মাছ মাংসের অদ্ভুত ধরনের গন্ধ বা দুর্গন্ধ, সব-ই পাওয়া যায় এদেশের ফ্রিজগুলোর ভেতরে। পাওয়া যায়, ফ্রিজে যা রাখা যায় না, তেমন জিনিসও। একটি বা একাধিক ডিপ ফ্রিজও থাকে সচ্ছল এবং ধনী পরিবারগুলোর। যে দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় যেখানে সেখানে রয়েছে কাঁচাবাজার। বিক্রি করেন অনেক কিছু বাড়িতে এসেও, মাছ তরকারিওয়ালারা। বিক্রি করেন যেখানে সেখানে, ভ্যানে করেও প্রতিদিনের খাবারের জিনিস, সেদেশে, কোন কারণে গৃহকর্তা গৃহিণীরা পরিপূর্ণ করে রাখেন ফ্রিজ এবং আলাদা ডিপফ্রিজগুলো মাছ মাংস মিষ্টি সব্জি দিয়ে, বোঝা কঠিন। বোঝা কঠিন, বছরের পর বছর ধরে জমিয়ে রাখা বিষাক্ত এই সব খাবার খেয়ে, কি রকম প্রতিক্রিয়া করে তাদের সুখী অসুখী শরীরগুলো।
গাড়ি বাড়ি ফ্ল্যাট ফ্রিজ কম্পিউটর এবং আরও অনেক যন্ত্র, গত দুই তিন দশকে কিনতে পেরে, ব্যবহার করতে পেরে, কতটা সহজ সুন্দর হয়েছে মানুষের জীবন এদেশে, হয়েছে কতটা সুস্থ, বুঝতে পারি না। কোন একটি যন্ত্র, কোন একটি প্রযুক্তিও কি র্নিবিঘেœ ব্যবহার করতে পারে মানুষ? পারে না কেন? প্রযুক্তি সৃষ্টি করেছেন গবেষক বিজ্ঞানীরা মানুষের জীবনকে সহজ, সুবিধাজনক এবং দ্রুত করতে। সেটাই তো হয়েছে উন্নত দেশগুলোতে। বাংলাদেশের বাড়ি বা ফ্ল্যাটগুলোতে পৌঁছানোর পরে, এতো সমস্যা কেন তৈরি করে এসব যন্ত্র? কারণ টি কি? এসব নিয়ে ভাবে না কেউ এখানে। ভাবে না কেন?
বাতিল করতে হয় খাবারের ইচ্ছে। অন করি টেলিভিশন। প্রবেশ করি ‘সিএনএন’-এ। প্রবেশ করতে চাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, এই চ্যানেলটির সাহায্যে। কি কি এবং কি ঘটেছে পৃথিবীতে, না জানলে কিছুটা, অভুক্ত মনে হয়। বিদায় নেয় বিদ্যুত আবার। জানা হয় না অনেক খবর। গরম। অসহনীয় গরম। বিরক্তির শেষ প্রান্তে পৌঁছে, এগিয়ে যাই লনের দিকে, মুক্ত বাতাসের প্রত্যাশায়। বসি কিছুক্ষণ ওখানে। না, মুক্ত নয় ঢাকার বাতাস। বদ্ধ। ভয়াবহ ভাবে আবদ্ধ। গাছ নির্মূল করে মাইলের পরে মাইল, এলাকার পরে এলাকায় তৈরি করা কথিত হাইরাইজ ফ্ল্যাট বাড়ি, আমেরিকার অনুকরণে টাওয়ার, এবং অবস্থান অনুসারে টুইন টাওয়ার, বলে যাচ্ছে যেগুলোকে ঢাকার মানুষ, সেগুলোর কারণে বাতাসও হয়ে উঠেছে দুষ্পাপ্য। গাছ বিহীন এলাকার লক্ষ লক্ষ অধিবাসীদের কার্বনডাইঅক্সাইড এ্যাবজর্ব করে কে? কার কি যায় আসে তাতে?
এই দেশের মানুষেরা যারা বলেন এবং লেখেন, ‘ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহর’। বর্ণনাও করেন তারা, কোন কোন কারণে ঢাকা এখন অযোগ্য শহর। তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই রয়েছে, নতুন বাড়ি অথবা ফ্ল্যাট, ঢাকার প্রধান আবাসিক এলাকাগুলোতে। দু’তিনটি করেও রয়েছে অনেকের। গাড়িও আছে প্রায় প্রত্যেকের। অনেকের রয়েছে একাধিক। বাড়ির গ্যারাজে পড়ে থাকে না এদের গাড়িগুলো। চলে অধিকাংশ সময় রাস্তায়। গাড়ি থাকার গর্ব এরা করেন, কিন্তু যানজটের জন্যে দায়ী করেন না নিজেদের। গাড়ি থাকার সুখে পরিতৃপ্ত থাকেন এরা। কিন্তু অজস্র গাড়ি চলার মতো প্রশস্ত সুস্থ রাস্তা যে দেশে নেই, সে দেশে গাড়ি কিনে যানজট সৃষ্টি এবং পরিবেশের ক্ষতি করাকে, নিজের অপরাধ মনে করেন না। গাছ কেটে, বিল জলাশয় ভরাট করে যেখানে সেখানে অপরিকল্পিত বাড়ি তৈরি করে, বসবাস করার জন্যেও কি কোন অনুতাপ করেন এরা? এসব বাড়ি ফ্ল্যাট, গাড়ি, অর্থ সম্পদ অবশ্যই রেখে যাবেন এরা, তাদের পরবর্তী এবং তারও পরবর্তী বংশধরদের জন্যে। ততোদিনে তাদের বংশধরেরা নিশ্বাস নিতে, ফেলতে এবং স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারবে কি না, তা ভাবেন না। ভীত হন না, কেমন একটি দেশ তারা রেখে যাচ্ছেন তাদের জন্যে।
বাংলাদেশের জল বাতাস এবং পরিবেশ ধ্বংস করার জন্যে দায়ী, এদেশের প্রতিটি মানুষ। নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্যে প্রকৃতি ধ্বংস করে, কিছুমাত্র অপরাধী মনে করে না এরা নিজেদের। অপরাধ স্বীকার করা এবং তা সংশোধন করার ব্যাপারটি, ঘটবে কি করে তাহলে? এটিও একটি দুর্নীতি। ভয়ঙ্কর দুর্নীতি। নিজের এবং নিজেদের অপরাধ মেনে নেয় না কেউ। যে কোন ব্যাপারে দোষ দেবে অন্যকে। এভাবেই রক্ষা করে নিজেকে। মনেও করে, কোন অপরাধ নেই তার। এটা অন্যায়। ভীষণ অন্যায়। কাকে দোষ দিচ্ছে সে? যাকে দিচ্ছে, সেও তো স্বীকার করে না তার অন্যায়। বোঝেও না। সে বোঝে, তারা বোঝে তাদের চাহিদা, তাদের লোভ, তাদের প্রাপ্তি আর ভোগ। এভাবেই ঢাকাকে বাসের অযোগ্য করেছে এরা। এদের ধারাবাহিক চাহিদা এবং লোভ।
পৃথিবীর পরিবেশের নেগেটিভ পরিবর্তনের জন্যে শিল্পোন্নতদেশগুলোর অতি উতপাদনকেন্দ্রিক ‘সি ও টু’ দায়ী। ওরা উৎপাদন করে কেন? করে কারণ, পৃথিবীর সব দেশগুলো কেনে। বাংলাদেশ, দরিদ্রদেশের মধ্যে অন্যতম একটি। কেন তৈরি করা হয়েছে সে দেশে অসংখ্য বাজার, গত দু’তিন দশকে? বাজার বাজার আর বাজার। যেগুলোকে বলা হচ্ছে পাশ্চাত্যের অনুকরণে, শপিংমল। সুপার মার্কেট। শপিং সিটি, শপিং সেন্টার, কমপ্লেক্স, প্লাজা। পাশ্চাত্যের মার্কেটগুলোর মতো শৃঙ্খলা, পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা হয় না, তবুও বাজারগুলোকে পরিচিত করা হয়েছে এভাবে। এই বাজারগুলোতে রয়েছে, পণ্য পণ্য আর পণ্য। বিদেশী এবং দেশী পণ্য। বিদেশী পণ্যের অনুকরণে তৈরি হলেও, অধিকাংশ দেশী পণ্যের মান এতোই নিচে, সচ্ছল এবং ধনীরা সেগুলো কেনে খুবই কম। কেনে হয়তো বাড়ির দরিদ্র র্কমচারীদের জন্যেই।
যা প্রয়োজন নেই, তাও কেনে এ রকম ক্রেতারা দেখানোর জন্যে। ‘এটা তোমার আছে, তাহলে তুমি একটা কিছু।’ যাদের এসব নেই, তাদের দেখানো যায়, এটাই ধনীদের সুখ। এইসব মহা সুখের জন্যে, পৃথিবীর কি হচ্ছে, পৃথিবী এবং তার প্রাণীরা কতদিন টিকে থাকবে, কিভাবে টিকে থাকবে, তাতে কি যায় আসে এদের? নিজেদেরকে কেন ভোগ বিলাস বঞ্চিত করবে তারা, এসব তুচ্ছ আর অকারণ ব্যাপার ভেবে?
ভোগ্যপণ্যের ভেতর ডুবে বাঁচবার জন্যেই পৃথিবীতে এসেছে তারা। সুরক্ষা করে যাবে তাদের সন্তান নাতি, নাতনি এবং তারও পরবর্তীদের বিলাসী জীবন। জরুরী নয় সুস্থ আর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কারো জন্যেই। ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতা আর মানসিক দারিদ্রতা এটা। অন্য কিছু নয়।
বৈদ্যুতিক ফ্যান, লাইট, এসি, কম্পিউটার, টিভি এবং এবং ...। বাড়ি ও ফ্ল্যাটগুলোতে আলো জ্বলতে পারে এবং জ্বলে, রাতে কেবল নয়, দিনেরও সব কটি ঘন্টা। ঘুরতে পারে এবং ঘোরে ফ্যান, দিন রাতের চব্বিশ ঘন্টা। বিদ্যুত থাকলে অনও থাকবে, এসি, টিভি, কম্পিউটার প্রায় সারা দিন এবং রাতেও। কি প্রয়োজন তাহলে মানুষের, প্রাকৃতিক আলো বাতাসের? ঢাকার মানুষ তো ন্যাচারের অংশ নয়। বিদেশী টেকনোলজির অংশ। তা থেকেই এদের উদ্ভব এবং বিকাশ। ন্যাচারের কি হলো না হলো, কি যায় আসে তাদের? সম্পর্ক কি এই ন্যাচারের সাথে? হ্যাঁ আছে। তবুও আছে। নাহলে এই আগুন গরমে বাইরে যেতে হলে, এতো আপত্তি কেন? কেন অসহ্য হয়ে যাচ্ছে, শরীর পুড়ে যাওয়া গরম? অতিবৃষ্টিতে এতো সমস্যা কেন? সমস্যা কেন অনাবৃষ্টিতে?
সমস্যা কেন অধিক ঠা-া পড়লে এবং একেবারে না পড়লেও?
প্রকৃতির শক্তি তোমার চেয়ে বেশি। এতো বেশি, যা ভাবতেও পারছো না তুমি। খুব শক্তিবান মনে করে নিজেকে, ধ্বংস করেছো প্রকৃতি, নিজের তুচ্ছ স্বার্থে। সে ফিরিয়ে দেবে না তোমাকে কিছু? দিচ্ছে। দেবে। দিয়ে যাবে। কি করে ঠেকাবে তুমি তার শক্তি? ঠেকাও। মানুষ, কত অসহায় প্রাণী প্রকৃতির মধ্যে, অনুভব করে না সে। আর কি ভয়াবহ স্ববিরোধী। যা কিছুর নিন্দা করে, সবই সে নিজে করে। যা বলে, তা করে না। যা করে, তা বলে না।
কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে, তা রপ্তানী করেই নাকি বাংলাদেশকে উন্নত করা সম্ভব। বলেন এবং লেখেন কেউ কেউ। কি করে গড়তে পারি আমরা কৃষির মাধ্যমে এই দেশ? ফেটে যায় মাটি এখানে আগুন তাপে। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, ঝড় হয় প্রায় নিয়মিত। এসবই তো প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা, পর্যাপ্ত কৃষি পণ্য উতপাদনের ক্ষেত্রে। নাহলে, চল্লিশ বছর পেরিয়ে যাওয়া একটি দেশ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এমন ঘোষণার পরেও কেন আমদানি করে প্রধান খাদ্য ‘চাল’সহ আরো অনেক জরুরী শুকনো খাবারের জিনিস? এতো আমদানিনির্ভর দেশ, গড়ে তোলা সহজ কতটা?
এদেশ চলছে কিভাবে, কি হবে এবং কি হবে না দেশটির, তাতে কি সত্যিই যায় আসে কিছু আত্মস্বার্থের ধান্দাবাজিতে ব্যাস্ত ঢাকার আত্মকেন্দ্রিক নাগরিকদের? এদের কেউ কি ভালোবাসে এই দেশটিকে? পরিবেশবাদী বলে দাবি করছেন যারা নিজেদের, তারাও কি? নাকি ভালোবাসেন তারা নিজেকে, নিজের খ্যাতিকে (যদি থেকে থাকে) নিজের পজিশনকে, নিজের সন্তানকে আর অর্থ সম্পত্তিকে। দায়িত্ব মনে করেন ভোগ করা এবং বশংধরদের জন্যে সুরক্ষা করাকেই। অন্য কোন দায় এবং দায়িত্ব কি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ এদের কাছে?
কোন কোন আদিবাসী সমাজ বাদ দিয়ে, পৃথিবীর ভোগবাদী সমাজবাস্তবতায়, সাম্যবাদ সমাজতন্ত্রের কনসেপ্ট সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারটি, রয়েছে ফ্যান্টাসির পর্যায়ে এখনো। সাম্যবাদী মার্কসবাদী বলে দাবি করেন যারা নিজেদের এদেশে,
অর্থ সম্পত্তি বাড়ি গাড়ি মদ নারী সুযোগ সুবিধা, কোনটি ভোগ করেন না তারা? শুধু কি ভোগ? সুরক্ষাও করছেন সবকিছু তাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্যে। এদেশের ব্যসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করে, অপচয়ও করেন প্রচুর সন্তানদের বিয়ে জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বক্তৃতা করার সময় সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী বলে তীব্র নিন্দা করেন যাদের, তাদের দেশগুলোতে যাবার সুযোগ পেলে, না পেলেও, যে কোন পথে এবং পদ্ধতিতে সুযোগ সৃষ্টি করে, সেসব দেশে যান নি এবং যান না, কে এদের মধ্যে? বেড়ানো, চিকিৎসা, ব্যবসা, কোন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া, অথবা যে কোন কারণে। তাদের অনেকেরই সন্তান বাস করেন পুঁজিবাদী দেশগুলোতে। নাতি-নাতনিরাও। নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে আরও অনেক অনৈতিক কাজ করেও, তারা বলেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা। কাদের দিয়ে প্রতিষ্ঠা হবে সমাজতন্ত্র? কিভাবে? স্ববিরোধিতার কোন পর্যায় এটা? প্রতিবাদ করে না কেউ তবুও এসবের, এই দেশে। কেন?
যেতে হবে নিমন্ত্রণে, ফিরে আসি ঘরে। ধন্যবাদ দেই নীরবে, আইপিএসের সাপোর্টে জ্বালানো আলোকে। নাহলে, প্রস্তুত করতাম কি করে নিজেকে অন্ধকারে?
পৌঁছাই যে বাড়িতে, তারা এদেশের ধনী শ্রেণী। যাদের বলা হয় উচ্চ শ্রেণী। বাড়িটির সামনের রাস্তাটি, রাস্তা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিলো কি না জানি না। তবুও রাস্তা বলে সবাই এটি কে। এ রকম সবগুলোকেই। আলোর স্বল্পতা রহস্যময় করে রাখলেও
রাস্তাটিকে, লাইটপোস্টকে কেন্দ্র করে স্তূপ হয়ে থাকা উৎকট দুর্গন্ধময় আবর্জনা বুঝিয়ে দেয় নবাগতদের, ডাস্টবিন বিষয়টির সাথে পরিচিত নয় এই এলাকাবাসীরা। অথবা কোন প্রয়োজন নেই এদের এটির। ধুলোয় ধুলোময় ক্ষত-বিক্ষত রাস্তাটির দুপাশে প্রবাহিত সø্যাপ বিহীন নর্দমা, বমি করতে বাধ্য করতে পারে পরিচ্ছন্নতাপ্রিয় নবাগতকে। ‘মিউনিসিপ্যালিটি’ শব্দটি বিদেশী। বিদেশে উদ্ভাবিত এবং কার্যকরী হওয়া এই ব্যবস্থাটি বিদেশেই রয়েছে। এদেশেও এই নামে আছে বড় একটি প্রতিষ্ঠান। সেটি কি কার্যকরী হয়েছে, এতোগুলো বছরে? হলে, কতটা? না হলে, হয়নি কেন?
এ বাড়ির গেটটি এবং ভেতরের পরিবেশ জানিয়ে দিচ্ছে এরা ধনী। অতিরিক্ত আসবাব এবং ঝলমলে ডেকোরেশনও বুঝিয়ে দিচ্ছে সেটা। অর্থবিত্ত আছে, আর তা সবাইকে দেখাবে না, তা হয় না।
বসার ঘরে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসে, বিভিন্ন ধরনের এপিটাইজার নাস্তা হিসেবে। এগুলো যে ‘শেরাটনে’ অর্ডার করে আনানো হয়েছে, জানিয়ে দেয়া হয়। ‘শেরাটনের’ কিচেনে তৈরি হলেই কি নির্ভয়ে খাওয়া যাবে? কোন মার্কেট থেকে কিনেছে তারা খাবারের শুকনো এবং কাঁচামালগুলো? যারা রান্না করেছে ওখানে, তারা কারা?
খেতে হবে রাতের খাবার এ বাড়িতে। মানসিক সমস্যা আমার ‘পরিচ্ছন্নতা’। হাইজেনিক আর ফুডভ্যালু ঠিক রেখে রান্না করা হয়েছে কি না, সেটাও। অপরিচ্ছন্ন মনে হওয়া কোন খাবার খেলে, প্রতিক্রিয়া করে আমার শরীর। সম্পর্কের ব্যক্তিগত পর্যায়কে নির্ভর করে, দাঁড়াই রান্নাঘরের সামনে।
একটি বাড়ি অথবা ফ্ল্যাটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট। পাশ্চাত্যের উন্নত জীবন মানের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন এবং দেশের বাসাটিতে তা প্রয়োগ করেছেন, এ রকম কোন কোন বাঙালীর বাসা ছাড়া, এদেশের প্রায় কারো বাড়িতেই দেখিনি, সঠিকভাবে সাজানো পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট। থাকবে কি করে? দু’তিন দশক আগে এরকম কিচেন এবং বাথরুম ছিলো না। এখনকার ফ্ল্যাট বাড়িগুলোতে যেমন। মাটির চুলো, কাঁচা পায়খানা এবং প্যানে অভ্যস্ত হবার পরে, হঠাৎ করে কমোড, বাথটাব, কেবিনেট লাগানো কিচেন পেলে কি করে বুঝবে বাঙালী, কিভাবে এসব ব্যবহার করতে হয়? স্রোত হয়ে আসা অর্থের জোরে বিদেশী ব্যবস্থা কিনতে পারা এক কথা, আর তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানা এবং করা অন্য কথা। এদের প্রতিটি কিচেন বাথরুম টয়লেট আক্রান্ত অনেক রকম সমস্যায়। দুই তিন চারটি বা তারও বেশি গৃহপরিচারিকার দায়িত্বে থাকা এই ঘরগুলো, পরিষ্কার করার ট্রেনিং দেয়া হয় না। কারা দেবে ট্রেনিং?
এই গৃহ পরিচারিকারা অপরিচ্ছন্ন পোশাকে শরীর ঢাকলেও, ঢাকতে পারে না মাথার উকুন, খুশকি। বিভিন্ন ধরনের রোগ জর্জরিত শরীরের হাঁচি, কাশী কি লুকোয় তারা টিসু পেপারের আড়ালে? রান্নরত অবস্থাতেই প্রকাশ ঘটে তার, বার বার। রান্না করার আগে বাড়ির গৃহিণীদেরই তো অভ্যেস নেই, সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোবার। গৃহপরিচারিকাদের সে অভ্যেস হবে কেন? ধুতে বললেও, ধোয় কি তারা সত্যিই? যদি ধোয়, তো কতটা পরিষ্কার করে? তারা কি নখ কাটে নিয়মিত? পরিষ্কার করে নখের ময়লা? রান্না করার সময় জরুরী হতে পারে তাদেরও, চোখ নাক পরিষ্কার করা। অভ্যেসের কারণে দাঁত দিয়ে নখ কাটা। গা চুলকানো এবং আরো অনেক কিছু। ময়দা মাখায় তারা সে হাতেই। সে হাতেই তৈরি করে চপ, কাবাব এবং অন্যান্য খাবার। কে লক্ষ্য রাখে সেটা? বাড়ির গৃহিণী, যিনি ব্যস্ত অন্য কাজে অথবা অকাজে, তিনি? কন্যাটি? যে রান্না ঘরে আসে হয়তো মাসে দু’একবার কিছু চাইতে, দু’এক মিনিটের জন্যে, সে? সে কেন লক্ষ্য রাখবে এসব? কি সম্পর্ক এ রকম পরিবারের মেয়েদের রান্নাঘরের সাথে? সংসারের সাথে?
নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার মিশিয়ে দেয়া হলো কি না, মিশিয়ে দেয়া হলো কি না ফ্লোরে পড়ে যাওয়া কোন খাবার, নতুন প্রস্তুত করা খাবারের সঙ্গে, জানা সম্ভব নয়, পরিচারিকাদের ওপর সব ছেড়ে দিলে। তাদের নোংরা ওড়নার শেষ প্রান্ত পড়েছে কতবার খাবারের পাত্রে, জানা সম্ভব নয় তাও। রান্নাঘরের মেঝেতে রেখে কাটা হয় যে মাছ মুরগি শব্জি, কতটা গ্রহণযোগ্য এটা, তা নিয়েই বা কি যায় আসে কার।
বাংলাদেশের যে কোন বাড়িতেই বাস করে মশা টিকটিকি, গিরগিটি, কেঁচো, পিঁপড়ে, তেলেপোকা, মাকড়সা, মাছি, উইপোকাসহ নানা ধরনের পতঙ্গ। গৃহপালিত না হয়েও থাকতে পারে ইঁদুর, বিড়াল এবং কুকুর। বংশ বৃদ্ধি করে এরা বাড়ি এবং ফ্ল্যাটগুলোতে। বাথরুম, টয়লেট এবং রান্না ঘরেও। কেন? কারণটি কি এর? কারণটি লিখি যদি, মেনে নেবেন না, এদেশের অধিকাংশ গৃহিণী। গৃহকর্তারাও হয়তো। কি পরিমাণ পোকামাকড় খাইয়ে দেয় এদেশের পরিচারিকারা খাবারের সাথে, জানে না কেউ। না পরিবারগুলোর সদস্যরা। না নিমন্ত্রিত অতিথিরা। এরা জানে না, রান্নাঘরে ব্যবহৃত একটি জিনিসও সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে। সংরক্ষণ করতেও। জানেন না গৃহিণীরাও। জানেন না এবং নিজেরা এসব কাজ করেন না বলে, কিছু যায় আসে না তাদেরও।
(চলবে)
চোর বদমাশ অমানুষ বাবাকেও মনে করে তার সন্তান, খুব সৎ আর নীতিবান মানুষ। বাড়ির কাজের বাচ্চাটিকে মেরে ফেললেও, সন্তান বলে, ‘আমার মা অসাধারণ, খুব মানবিক’। বলবে না কেন? ন্যায় আর অন্যায়ের পার্থক্য তো বোঝানো হয় না সন্তানকে। বোঝাবে কোন মা বাবা, যারা দুর্নীতি করে প্রতিপালন করছে সন্তানকে, তারা? তারাই কি বড় হয়েছে ন্যায় আর অন্যায়ের পার্থক্য বুঝে এবং মেনে? সন্তানকে তো এটাই শেখানো হয়, মা বাবাকে শ্রদ্ধা সম্মান করতে। সন্তানের কাছে তো দাবিও করা হয় এসব। যত বড় অপরাধী-ই হোক তার মা এবং বাবা।
ভাবতে ভাবতে ফিরে আসি বাড়িতে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় পূর্ণ হয়ে যেতে থাকে স্মৃতির এলবাম। নিমন্ত্রণ রয়েছে সন্ধ্যায়, পরিচিত এক পরিবারে। প্রস্তুতির প্রথম পর্ব হিসেবে যাই, স্নান করতে। এলার্জি আক্রান্ত শরীর আমার, মেনে নিতে পারে না কলের জল। পরিমিত ফুটানো জলে অতৃপ্ত স্নান সেরেই, ঘামতে থাকি অর্নগল। এয়ার কন্ডিশন নিয়ন্ত্রিত ঘর, আর বাইরের তাপের বৈপরীত্যও সহ্য হয় না আমার। সহ্য হয় না ‘আননেচারাল’কোন কিছুই। ন্যাচারের একটি অংশ আমি। সুস্থ থাকতে সাহায্য করে আমাকে প্রকৃতি।
কোন একটি স্ন্যাক্স খাবার ইচ্ছায় ফ্রিজ খুলি। অফ হয়ে রয়েছে ওটা। ইলেকট্রিসিটি নেই। অনুভব করি মায়া, যথেষ্ট বড় এবং নতুন এই ফ্রিজটির জন্যে। প্রতি ঘন্টায় বিদ্যুত বন্ধ হয়ে গেলে এবং ঘন্টা ধরে না এলে, কিভাবে টিকে থাকে এদেশে জরুরী এই যন্ত্রটি? কি অবস্থা হয় এর ভেতরে সংরক্ষিত খাবারগুলোর? ফ্রিজগুলো ব্যবহার করে কিভাবে এদেশের পরিবারগুলো, যাদের আছে এটি? যে অভিজ্ঞতা আমার, তা বলছে, প্রায় কোন বাড়ির গৃহর্কতা গৃহিণী-ই জানেন না, কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয় খাবার। এবং কম আর বেশি কত দিনের জন্যে। যতœ করতে হয় এটি কিভাবে, তাও নয়। হতে পারে জানেন কেউ কেউ। কিন্তু তা মানেন না। না মানলে, জানার অর্থ কি?
পুরনো পচে যাওয়া সিমেল ধরা খাবার, তেলাপোকার শীতল রাজত্ব, পলিথিন ব্যাগ বা বস্তার ভেতর রাখা রক্ত গড়ানো মাছ মাংসের অদ্ভুত ধরনের গন্ধ বা দুর্গন্ধ, সব-ই পাওয়া যায় এদেশের ফ্রিজগুলোর ভেতরে। পাওয়া যায়, ফ্রিজে যা রাখা যায় না, তেমন জিনিসও। একটি বা একাধিক ডিপ ফ্রিজও থাকে সচ্ছল এবং ধনী পরিবারগুলোর। যে দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় যেখানে সেখানে রয়েছে কাঁচাবাজার। বিক্রি করেন অনেক কিছু বাড়িতে এসেও, মাছ তরকারিওয়ালারা। বিক্রি করেন যেখানে সেখানে, ভ্যানে করেও প্রতিদিনের খাবারের জিনিস, সেদেশে, কোন কারণে গৃহকর্তা গৃহিণীরা পরিপূর্ণ করে রাখেন ফ্রিজ এবং আলাদা ডিপফ্রিজগুলো মাছ মাংস মিষ্টি সব্জি দিয়ে, বোঝা কঠিন। বোঝা কঠিন, বছরের পর বছর ধরে জমিয়ে রাখা বিষাক্ত এই সব খাবার খেয়ে, কি রকম প্রতিক্রিয়া করে তাদের সুখী অসুখী শরীরগুলো।
গাড়ি বাড়ি ফ্ল্যাট ফ্রিজ কম্পিউটর এবং আরও অনেক যন্ত্র, গত দুই তিন দশকে কিনতে পেরে, ব্যবহার করতে পেরে, কতটা সহজ সুন্দর হয়েছে মানুষের জীবন এদেশে, হয়েছে কতটা সুস্থ, বুঝতে পারি না। কোন একটি যন্ত্র, কোন একটি প্রযুক্তিও কি র্নিবিঘেœ ব্যবহার করতে পারে মানুষ? পারে না কেন? প্রযুক্তি সৃষ্টি করেছেন গবেষক বিজ্ঞানীরা মানুষের জীবনকে সহজ, সুবিধাজনক এবং দ্রুত করতে। সেটাই তো হয়েছে উন্নত দেশগুলোতে। বাংলাদেশের বাড়ি বা ফ্ল্যাটগুলোতে পৌঁছানোর পরে, এতো সমস্যা কেন তৈরি করে এসব যন্ত্র? কারণ টি কি? এসব নিয়ে ভাবে না কেউ এখানে। ভাবে না কেন?
বাতিল করতে হয় খাবারের ইচ্ছে। অন করি টেলিভিশন। প্রবেশ করি ‘সিএনএন’-এ। প্রবেশ করতে চাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, এই চ্যানেলটির সাহায্যে। কি কি এবং কি ঘটেছে পৃথিবীতে, না জানলে কিছুটা, অভুক্ত মনে হয়। বিদায় নেয় বিদ্যুত আবার। জানা হয় না অনেক খবর। গরম। অসহনীয় গরম। বিরক্তির শেষ প্রান্তে পৌঁছে, এগিয়ে যাই লনের দিকে, মুক্ত বাতাসের প্রত্যাশায়। বসি কিছুক্ষণ ওখানে। না, মুক্ত নয় ঢাকার বাতাস। বদ্ধ। ভয়াবহ ভাবে আবদ্ধ। গাছ নির্মূল করে মাইলের পরে মাইল, এলাকার পরে এলাকায় তৈরি করা কথিত হাইরাইজ ফ্ল্যাট বাড়ি, আমেরিকার অনুকরণে টাওয়ার, এবং অবস্থান অনুসারে টুইন টাওয়ার, বলে যাচ্ছে যেগুলোকে ঢাকার মানুষ, সেগুলোর কারণে বাতাসও হয়ে উঠেছে দুষ্পাপ্য। গাছ বিহীন এলাকার লক্ষ লক্ষ অধিবাসীদের কার্বনডাইঅক্সাইড এ্যাবজর্ব করে কে? কার কি যায় আসে তাতে?
এই দেশের মানুষেরা যারা বলেন এবং লেখেন, ‘ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহর’। বর্ণনাও করেন তারা, কোন কোন কারণে ঢাকা এখন অযোগ্য শহর। তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই রয়েছে, নতুন বাড়ি অথবা ফ্ল্যাট, ঢাকার প্রধান আবাসিক এলাকাগুলোতে। দু’তিনটি করেও রয়েছে অনেকের। গাড়িও আছে প্রায় প্রত্যেকের। অনেকের রয়েছে একাধিক। বাড়ির গ্যারাজে পড়ে থাকে না এদের গাড়িগুলো। চলে অধিকাংশ সময় রাস্তায়। গাড়ি থাকার গর্ব এরা করেন, কিন্তু যানজটের জন্যে দায়ী করেন না নিজেদের। গাড়ি থাকার সুখে পরিতৃপ্ত থাকেন এরা। কিন্তু অজস্র গাড়ি চলার মতো প্রশস্ত সুস্থ রাস্তা যে দেশে নেই, সে দেশে গাড়ি কিনে যানজট সৃষ্টি এবং পরিবেশের ক্ষতি করাকে, নিজের অপরাধ মনে করেন না। গাছ কেটে, বিল জলাশয় ভরাট করে যেখানে সেখানে অপরিকল্পিত বাড়ি তৈরি করে, বসবাস করার জন্যেও কি কোন অনুতাপ করেন এরা? এসব বাড়ি ফ্ল্যাট, গাড়ি, অর্থ সম্পদ অবশ্যই রেখে যাবেন এরা, তাদের পরবর্তী এবং তারও পরবর্তী বংশধরদের জন্যে। ততোদিনে তাদের বংশধরেরা নিশ্বাস নিতে, ফেলতে এবং স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারবে কি না, তা ভাবেন না। ভীত হন না, কেমন একটি দেশ তারা রেখে যাচ্ছেন তাদের জন্যে।
বাংলাদেশের জল বাতাস এবং পরিবেশ ধ্বংস করার জন্যে দায়ী, এদেশের প্রতিটি মানুষ। নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্যে প্রকৃতি ধ্বংস করে, কিছুমাত্র অপরাধী মনে করে না এরা নিজেদের। অপরাধ স্বীকার করা এবং তা সংশোধন করার ব্যাপারটি, ঘটবে কি করে তাহলে? এটিও একটি দুর্নীতি। ভয়ঙ্কর দুর্নীতি। নিজের এবং নিজেদের অপরাধ মেনে নেয় না কেউ। যে কোন ব্যাপারে দোষ দেবে অন্যকে। এভাবেই রক্ষা করে নিজেকে। মনেও করে, কোন অপরাধ নেই তার। এটা অন্যায়। ভীষণ অন্যায়। কাকে দোষ দিচ্ছে সে? যাকে দিচ্ছে, সেও তো স্বীকার করে না তার অন্যায়। বোঝেও না। সে বোঝে, তারা বোঝে তাদের চাহিদা, তাদের লোভ, তাদের প্রাপ্তি আর ভোগ। এভাবেই ঢাকাকে বাসের অযোগ্য করেছে এরা। এদের ধারাবাহিক চাহিদা এবং লোভ।
পৃথিবীর পরিবেশের নেগেটিভ পরিবর্তনের জন্যে শিল্পোন্নতদেশগুলোর অতি উতপাদনকেন্দ্রিক ‘সি ও টু’ দায়ী। ওরা উৎপাদন করে কেন? করে কারণ, পৃথিবীর সব দেশগুলো কেনে। বাংলাদেশ, দরিদ্রদেশের মধ্যে অন্যতম একটি। কেন তৈরি করা হয়েছে সে দেশে অসংখ্য বাজার, গত দু’তিন দশকে? বাজার বাজার আর বাজার। যেগুলোকে বলা হচ্ছে পাশ্চাত্যের অনুকরণে, শপিংমল। সুপার মার্কেট। শপিং সিটি, শপিং সেন্টার, কমপ্লেক্স, প্লাজা। পাশ্চাত্যের মার্কেটগুলোর মতো শৃঙ্খলা, পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা হয় না, তবুও বাজারগুলোকে পরিচিত করা হয়েছে এভাবে। এই বাজারগুলোতে রয়েছে, পণ্য পণ্য আর পণ্য। বিদেশী এবং দেশী পণ্য। বিদেশী পণ্যের অনুকরণে তৈরি হলেও, অধিকাংশ দেশী পণ্যের মান এতোই নিচে, সচ্ছল এবং ধনীরা সেগুলো কেনে খুবই কম। কেনে হয়তো বাড়ির দরিদ্র র্কমচারীদের জন্যেই।
যা প্রয়োজন নেই, তাও কেনে এ রকম ক্রেতারা দেখানোর জন্যে। ‘এটা তোমার আছে, তাহলে তুমি একটা কিছু।’ যাদের এসব নেই, তাদের দেখানো যায়, এটাই ধনীদের সুখ। এইসব মহা সুখের জন্যে, পৃথিবীর কি হচ্ছে, পৃথিবী এবং তার প্রাণীরা কতদিন টিকে থাকবে, কিভাবে টিকে থাকবে, তাতে কি যায় আসে এদের? নিজেদেরকে কেন ভোগ বিলাস বঞ্চিত করবে তারা, এসব তুচ্ছ আর অকারণ ব্যাপার ভেবে?
ভোগ্যপণ্যের ভেতর ডুবে বাঁচবার জন্যেই পৃথিবীতে এসেছে তারা। সুরক্ষা করে যাবে তাদের সন্তান নাতি, নাতনি এবং তারও পরবর্তীদের বিলাসী জীবন। জরুরী নয় সুস্থ আর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কারো জন্যেই। ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতা আর মানসিক দারিদ্রতা এটা। অন্য কিছু নয়।
বৈদ্যুতিক ফ্যান, লাইট, এসি, কম্পিউটার, টিভি এবং এবং ...। বাড়ি ও ফ্ল্যাটগুলোতে আলো জ্বলতে পারে এবং জ্বলে, রাতে কেবল নয়, দিনেরও সব কটি ঘন্টা। ঘুরতে পারে এবং ঘোরে ফ্যান, দিন রাতের চব্বিশ ঘন্টা। বিদ্যুত থাকলে অনও থাকবে, এসি, টিভি, কম্পিউটার প্রায় সারা দিন এবং রাতেও। কি প্রয়োজন তাহলে মানুষের, প্রাকৃতিক আলো বাতাসের? ঢাকার মানুষ তো ন্যাচারের অংশ নয়। বিদেশী টেকনোলজির অংশ। তা থেকেই এদের উদ্ভব এবং বিকাশ। ন্যাচারের কি হলো না হলো, কি যায় আসে তাদের? সম্পর্ক কি এই ন্যাচারের সাথে? হ্যাঁ আছে। তবুও আছে। নাহলে এই আগুন গরমে বাইরে যেতে হলে, এতো আপত্তি কেন? কেন অসহ্য হয়ে যাচ্ছে, শরীর পুড়ে যাওয়া গরম? অতিবৃষ্টিতে এতো সমস্যা কেন? সমস্যা কেন অনাবৃষ্টিতে?
সমস্যা কেন অধিক ঠা-া পড়লে এবং একেবারে না পড়লেও?
প্রকৃতির শক্তি তোমার চেয়ে বেশি। এতো বেশি, যা ভাবতেও পারছো না তুমি। খুব শক্তিবান মনে করে নিজেকে, ধ্বংস করেছো প্রকৃতি, নিজের তুচ্ছ স্বার্থে। সে ফিরিয়ে দেবে না তোমাকে কিছু? দিচ্ছে। দেবে। দিয়ে যাবে। কি করে ঠেকাবে তুমি তার শক্তি? ঠেকাও। মানুষ, কত অসহায় প্রাণী প্রকৃতির মধ্যে, অনুভব করে না সে। আর কি ভয়াবহ স্ববিরোধী। যা কিছুর নিন্দা করে, সবই সে নিজে করে। যা বলে, তা করে না। যা করে, তা বলে না।
কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে, তা রপ্তানী করেই নাকি বাংলাদেশকে উন্নত করা সম্ভব। বলেন এবং লেখেন কেউ কেউ। কি করে গড়তে পারি আমরা কৃষির মাধ্যমে এই দেশ? ফেটে যায় মাটি এখানে আগুন তাপে। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, ঝড় হয় প্রায় নিয়মিত। এসবই তো প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা, পর্যাপ্ত কৃষি পণ্য উতপাদনের ক্ষেত্রে। নাহলে, চল্লিশ বছর পেরিয়ে যাওয়া একটি দেশ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এমন ঘোষণার পরেও কেন আমদানি করে প্রধান খাদ্য ‘চাল’সহ আরো অনেক জরুরী শুকনো খাবারের জিনিস? এতো আমদানিনির্ভর দেশ, গড়ে তোলা সহজ কতটা?
এদেশ চলছে কিভাবে, কি হবে এবং কি হবে না দেশটির, তাতে কি সত্যিই যায় আসে কিছু আত্মস্বার্থের ধান্দাবাজিতে ব্যাস্ত ঢাকার আত্মকেন্দ্রিক নাগরিকদের? এদের কেউ কি ভালোবাসে এই দেশটিকে? পরিবেশবাদী বলে দাবি করছেন যারা নিজেদের, তারাও কি? নাকি ভালোবাসেন তারা নিজেকে, নিজের খ্যাতিকে (যদি থেকে থাকে) নিজের পজিশনকে, নিজের সন্তানকে আর অর্থ সম্পত্তিকে। দায়িত্ব মনে করেন ভোগ করা এবং বশংধরদের জন্যে সুরক্ষা করাকেই। অন্য কোন দায় এবং দায়িত্ব কি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ এদের কাছে?
কোন কোন আদিবাসী সমাজ বাদ দিয়ে, পৃথিবীর ভোগবাদী সমাজবাস্তবতায়, সাম্যবাদ সমাজতন্ত্রের কনসেপ্ট সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারটি, রয়েছে ফ্যান্টাসির পর্যায়ে এখনো। সাম্যবাদী মার্কসবাদী বলে দাবি করেন যারা নিজেদের এদেশে,
অর্থ সম্পত্তি বাড়ি গাড়ি মদ নারী সুযোগ সুবিধা, কোনটি ভোগ করেন না তারা? শুধু কি ভোগ? সুরক্ষাও করছেন সবকিছু তাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্যে। এদেশের ব্যসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করে, অপচয়ও করেন প্রচুর সন্তানদের বিয়ে জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বক্তৃতা করার সময় সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী বলে তীব্র নিন্দা করেন যাদের, তাদের দেশগুলোতে যাবার সুযোগ পেলে, না পেলেও, যে কোন পথে এবং পদ্ধতিতে সুযোগ সৃষ্টি করে, সেসব দেশে যান নি এবং যান না, কে এদের মধ্যে? বেড়ানো, চিকিৎসা, ব্যবসা, কোন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া, অথবা যে কোন কারণে। তাদের অনেকেরই সন্তান বাস করেন পুঁজিবাদী দেশগুলোতে। নাতি-নাতনিরাও। নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে আরও অনেক অনৈতিক কাজ করেও, তারা বলেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা। কাদের দিয়ে প্রতিষ্ঠা হবে সমাজতন্ত্র? কিভাবে? স্ববিরোধিতার কোন পর্যায় এটা? প্রতিবাদ করে না কেউ তবুও এসবের, এই দেশে। কেন?
যেতে হবে নিমন্ত্রণে, ফিরে আসি ঘরে। ধন্যবাদ দেই নীরবে, আইপিএসের সাপোর্টে জ্বালানো আলোকে। নাহলে, প্রস্তুত করতাম কি করে নিজেকে অন্ধকারে?
পৌঁছাই যে বাড়িতে, তারা এদেশের ধনী শ্রেণী। যাদের বলা হয় উচ্চ শ্রেণী। বাড়িটির সামনের রাস্তাটি, রাস্তা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিলো কি না জানি না। তবুও রাস্তা বলে সবাই এটি কে। এ রকম সবগুলোকেই। আলোর স্বল্পতা রহস্যময় করে রাখলেও
রাস্তাটিকে, লাইটপোস্টকে কেন্দ্র করে স্তূপ হয়ে থাকা উৎকট দুর্গন্ধময় আবর্জনা বুঝিয়ে দেয় নবাগতদের, ডাস্টবিন বিষয়টির সাথে পরিচিত নয় এই এলাকাবাসীরা। অথবা কোন প্রয়োজন নেই এদের এটির। ধুলোয় ধুলোময় ক্ষত-বিক্ষত রাস্তাটির দুপাশে প্রবাহিত সø্যাপ বিহীন নর্দমা, বমি করতে বাধ্য করতে পারে পরিচ্ছন্নতাপ্রিয় নবাগতকে। ‘মিউনিসিপ্যালিটি’ শব্দটি বিদেশী। বিদেশে উদ্ভাবিত এবং কার্যকরী হওয়া এই ব্যবস্থাটি বিদেশেই রয়েছে। এদেশেও এই নামে আছে বড় একটি প্রতিষ্ঠান। সেটি কি কার্যকরী হয়েছে, এতোগুলো বছরে? হলে, কতটা? না হলে, হয়নি কেন?
এ বাড়ির গেটটি এবং ভেতরের পরিবেশ জানিয়ে দিচ্ছে এরা ধনী। অতিরিক্ত আসবাব এবং ঝলমলে ডেকোরেশনও বুঝিয়ে দিচ্ছে সেটা। অর্থবিত্ত আছে, আর তা সবাইকে দেখাবে না, তা হয় না।
বসার ঘরে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসে, বিভিন্ন ধরনের এপিটাইজার নাস্তা হিসেবে। এগুলো যে ‘শেরাটনে’ অর্ডার করে আনানো হয়েছে, জানিয়ে দেয়া হয়। ‘শেরাটনের’ কিচেনে তৈরি হলেই কি নির্ভয়ে খাওয়া যাবে? কোন মার্কেট থেকে কিনেছে তারা খাবারের শুকনো এবং কাঁচামালগুলো? যারা রান্না করেছে ওখানে, তারা কারা?
খেতে হবে রাতের খাবার এ বাড়িতে। মানসিক সমস্যা আমার ‘পরিচ্ছন্নতা’। হাইজেনিক আর ফুডভ্যালু ঠিক রেখে রান্না করা হয়েছে কি না, সেটাও। অপরিচ্ছন্ন মনে হওয়া কোন খাবার খেলে, প্রতিক্রিয়া করে আমার শরীর। সম্পর্কের ব্যক্তিগত পর্যায়কে নির্ভর করে, দাঁড়াই রান্নাঘরের সামনে।
একটি বাড়ি অথবা ফ্ল্যাটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট। পাশ্চাত্যের উন্নত জীবন মানের অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন এবং দেশের বাসাটিতে তা প্রয়োগ করেছেন, এ রকম কোন কোন বাঙালীর বাসা ছাড়া, এদেশের প্রায় কারো বাড়িতেই দেখিনি, সঠিকভাবে সাজানো পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট। থাকবে কি করে? দু’তিন দশক আগে এরকম কিচেন এবং বাথরুম ছিলো না। এখনকার ফ্ল্যাট বাড়িগুলোতে যেমন। মাটির চুলো, কাঁচা পায়খানা এবং প্যানে অভ্যস্ত হবার পরে, হঠাৎ করে কমোড, বাথটাব, কেবিনেট লাগানো কিচেন পেলে কি করে বুঝবে বাঙালী, কিভাবে এসব ব্যবহার করতে হয়? স্রোত হয়ে আসা অর্থের জোরে বিদেশী ব্যবস্থা কিনতে পারা এক কথা, আর তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানা এবং করা অন্য কথা। এদের প্রতিটি কিচেন বাথরুম টয়লেট আক্রান্ত অনেক রকম সমস্যায়। দুই তিন চারটি বা তারও বেশি গৃহপরিচারিকার দায়িত্বে থাকা এই ঘরগুলো, পরিষ্কার করার ট্রেনিং দেয়া হয় না। কারা দেবে ট্রেনিং?
এই গৃহ পরিচারিকারা অপরিচ্ছন্ন পোশাকে শরীর ঢাকলেও, ঢাকতে পারে না মাথার উকুন, খুশকি। বিভিন্ন ধরনের রোগ জর্জরিত শরীরের হাঁচি, কাশী কি লুকোয় তারা টিসু পেপারের আড়ালে? রান্নরত অবস্থাতেই প্রকাশ ঘটে তার, বার বার। রান্না করার আগে বাড়ির গৃহিণীদেরই তো অভ্যেস নেই, সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোবার। গৃহপরিচারিকাদের সে অভ্যেস হবে কেন? ধুতে বললেও, ধোয় কি তারা সত্যিই? যদি ধোয়, তো কতটা পরিষ্কার করে? তারা কি নখ কাটে নিয়মিত? পরিষ্কার করে নখের ময়লা? রান্না করার সময় জরুরী হতে পারে তাদেরও, চোখ নাক পরিষ্কার করা। অভ্যেসের কারণে দাঁত দিয়ে নখ কাটা। গা চুলকানো এবং আরো অনেক কিছু। ময়দা মাখায় তারা সে হাতেই। সে হাতেই তৈরি করে চপ, কাবাব এবং অন্যান্য খাবার। কে লক্ষ্য রাখে সেটা? বাড়ির গৃহিণী, যিনি ব্যস্ত অন্য কাজে অথবা অকাজে, তিনি? কন্যাটি? যে রান্না ঘরে আসে হয়তো মাসে দু’একবার কিছু চাইতে, দু’এক মিনিটের জন্যে, সে? সে কেন লক্ষ্য রাখবে এসব? কি সম্পর্ক এ রকম পরিবারের মেয়েদের রান্নাঘরের সাথে? সংসারের সাথে?
নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার মিশিয়ে দেয়া হলো কি না, মিশিয়ে দেয়া হলো কি না ফ্লোরে পড়ে যাওয়া কোন খাবার, নতুন প্রস্তুত করা খাবারের সঙ্গে, জানা সম্ভব নয়, পরিচারিকাদের ওপর সব ছেড়ে দিলে। তাদের নোংরা ওড়নার শেষ প্রান্ত পড়েছে কতবার খাবারের পাত্রে, জানা সম্ভব নয় তাও। রান্নাঘরের মেঝেতে রেখে কাটা হয় যে মাছ মুরগি শব্জি, কতটা গ্রহণযোগ্য এটা, তা নিয়েই বা কি যায় আসে কার।
বাংলাদেশের যে কোন বাড়িতেই বাস করে মশা টিকটিকি, গিরগিটি, কেঁচো, পিঁপড়ে, তেলেপোকা, মাকড়সা, মাছি, উইপোকাসহ নানা ধরনের পতঙ্গ। গৃহপালিত না হয়েও থাকতে পারে ইঁদুর, বিড়াল এবং কুকুর। বংশ বৃদ্ধি করে এরা বাড়ি এবং ফ্ল্যাটগুলোতে। বাথরুম, টয়লেট এবং রান্না ঘরেও। কেন? কারণটি কি এর? কারণটি লিখি যদি, মেনে নেবেন না, এদেশের অধিকাংশ গৃহিণী। গৃহকর্তারাও হয়তো। কি পরিমাণ পোকামাকড় খাইয়ে দেয় এদেশের পরিচারিকারা খাবারের সাথে, জানে না কেউ। না পরিবারগুলোর সদস্যরা। না নিমন্ত্রিত অতিথিরা। এরা জানে না, রান্নাঘরে ব্যবহৃত একটি জিনিসও সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে। সংরক্ষণ করতেও। জানেন না গৃহিণীরাও। জানেন না এবং নিজেরা এসব কাজ করেন না বলে, কিছু যায় আসে না তাদেরও।
(চলবে)
No comments