গণপরিবহন ও সড়ক দুর্ঘটনা-রাজপথের নৈরাজ্য দূর হোক
রাজধানীর গণপরিবহনের হাল কী সেটা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। প্রয়োজনীয় সড়ক সংকটের পাশাপাশি গণপরিবহন ব্যবস্থার সংকট রাজধানীবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থার প্রধান অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় কোনো শৃঙ্খলা নেই। গণপরিবহন ব্যবস্থায় সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ আছে।
বিআরটিসির নতুন কিছু বাস ছাড়া রাজধানীর গণপরিবহনে নতুন বাস যুক্ত হয়নি। পুরনো বাসগুলো রাস্তায় চলার উপযুক্ত নয়। একসময়ের টিকিট বিক্রি করা সিটিং সার্ভিসের বাস এখন লোকাল বাসকেও হার মানিয়েছে। লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে ফিটনেসবিহীন বাস তুলে দিয়ে নিরাপত্তাহীন করে ফেলা হচ্ছে ঢাকার রাজপথ। এই ফিটনেসবিহীন গাড়ি আর লাইসেন্সবিহীন চালকের কারণে শাহবাগ মোড়ে প্রাণ দিতে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্রকে। কিছুকাল আগে এক ছাত্রীকেও একই জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হচ্ছে গণপরিবহনের এই নৈরাজ্য।
ঢাকার গণপরিবহনকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে না পারলে রাজপথের এই অকালমৃত্যু ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। গণপরিবহনকে একটি নিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খলার মধ্যে আনার কোনো চেষ্টা সংশ্লিষ্ট মহলের আছে বলে মনে হয় না। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড সর্বশেষ যে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) প্রণয়ন করেছিল, তাতে ঢাকার যানজট নিরসন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করার জন্য বাস র্যাপিড ট্রানজিট ও মেট্রোরেল ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বিপরীতে কিছু ক্ষেত্রে উড়াল সড়ক ও এলিভেটেড এঙ্প্রেসওয়ে নির্মাণ করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সরকারের নীতিনির্ধারক মহল পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশকে অগ্রাধিকার দিয়ে উড়াল সড়ক নির্মাণে উৎসাহী হয়ে পড়ে। ফলে বাস র্যাপিড ট্রানজিটের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মেট্রোরেল প্রকল্পে কোনো অগ্রগতি নেই। এসটিপিতে বলা হয়েছে, দখল ও অব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকার রাস্তার প্রায় ৪৭ শতাংশ অব্যবহৃত থাকে। এসব রাস্তা দখলমুক্ত করার ব্যাপারেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রাজধানীতে শাহবাগের মোড়টিও যেন একটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়টিকে ঘিরে কোনো বড় পরিকল্পনা দেখা গেল না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উড়াল সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। শাহবাগ এলাকায় একটি বহুমুখী উড়াল সড়কের খুবই প্রয়োজন। এখানে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনার পর বাস ভাঙচুর হয়। ক্ষোভের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে প্রতীকী কফিন মিছিল হয়। দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল এই মোড়ের পাশে। অন্যদিকে শিশুপার্ক, জাদুঘর, পাবলিক লাইব্রেরি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখানে কোনো উড়াল সড়ক নেই। নেই যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা। দুর্ঘটনার পর গাড়ি ভাঙচুর হয়, যানজটে পড়ে নাকাল হতে হয় মানুষকে। কিন্তু স্থায়ী কোনো প্রতিকার নেই। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালক ও পরিবহন মালিক- এই চক্রের কাছে যেন বন্দি ঢাকাবাসী।
কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে দুর্ঘটনা দিনের পর দিন বাড়বে। অকালে ঝরে যাবে অনেক সম্ভাবনাময় অমূল্য জীবন। আমরা আশা করব, ঢাকার গণপরিবহনের নৈরাজ্য দূর হবে। গণপরিবহনের হালহকিকত নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের কার্যকর পদক্ষেপ আমাদের কাম্য।
No comments