র‌্যাবকে অব্যাহতি দিয়ে রিপোর্ট, লিমনের নারাজি- ঝালকাঠিতে মানববন্ধন

জেলার রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে কলেজছাত্র লিমন হোসেনকে গুলি করে পঙ্গু করার ঘটনায় তার মা হেনোয়ারার র‌্যাবের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পুলিশের ফাইনাল রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি দেয়ার পর আদালতের


বিচারক নুসরাতজাহান নথি তলব এবং আগামী ১৭ অক্টোবর নারাজির শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এদিকে লিমনের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে এদিন ঝালকাঠিতে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর লিমনকে গুলি করে পঙ্গু করার ঘটনায় তার মা হেনোয়ারা র‌্যাবের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কিছুদিন টালবাহানা করে রাজাপুর থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করে। গত ১৪ আগস্ট এই মামলায় অভিযুক্ত র‌্যাব সদস্যদের এই অমানবিক ঘটনার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে। বৃহস্পতিবার লিমনের পক্ষে তার আইনজীবীরা পুলিশের এই ফাইনাল রিপোর্টের বিরুদ্ধে জুডিসিয়াল তদন্ত চেয়ে আবেদন করে নারাজি দাখিল করে। লিমনের পক্ষে ঢাকার আইন সালিশ কেন্দ্রের এ্যাডভোকেট নিনা গোস্বামী, আঃ রশিদ, ঝালকাঠির আইনজীবী মানিক আচার্য্য ও আক্কাস শিকদার ছিলেন।
এদিকে ঢাকা থেকে আসা মানবাধিকার সংগঠনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মোঃ মজিদ আলী ও আইনজীবী সমিতির সভাপতির সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাঁরা সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিমন ও তার পরিবারের যথাযথ নিরাপত্তা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন।
বৃহস্পতিবার ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে হিউম্যান রাইটস ও সচেতন নাগরিক কমিটি ঝালকাঠির আয়োজনে র‌্যাবের গুলিতে লিমনের পঙ্গু হওয়ার প্রতিবাদে এবং এই ঘটনায় তার মায়ের দায়ের করা র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলায় ন্যায়বিচারের দাবিতে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঢাকা থেকে আসা মানবাধিকার সংগঠনের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং শিক্ষক-সাংবাদিক, আইনজীবী ও সঙ্গীতশিল্পীরা অংশগ্রহণ করেছেন। এ ছাড়াও ঝালকাঠির একাধিক সংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে অংশ নেয়।
এর পূর্বে ঢাকা থেকে আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা লিমনের ওপরে ঈদের দিনের হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। সেখানে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম ও লিমন হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তবে সে সময় লিমনের ওপর হামলাকারী মোঃ ইব্রাহীম ও তার কয়েকজন সহযোগী দূরে দাঁড়িয়েছিলেন।

চার দফা দাবি
লিমনের জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য ঝালকাঠির নাগরিক উদ্যোগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ জাতীয় পর্যায়ের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা চার দফা দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভায় এই দাবি তোলা হয়েছে। প্রেসক্লাব সভাপতি চিত্তরঞ্জন দত্তের সভাপতিত্বে এই সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
লিমনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে দেশের নাগরিক ও মানবাধিকার রক্ষার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সমর্থনে একটি সর্বজনগ্রাহ্য জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, এই কমিশনের তদন্তের ভিত্তিতে লিমনের পা হারানোর জন্য কারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করা ও দোষী ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান, লিমন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আনীত বানোয়াট ও মিথ্যে মামলাসহ হয়রানিমূলক তৎপরতার অবসান, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে লিমন ও তার পরিবারের স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবনযাপনের আশ্বাস প্রদান ও কার্যকর করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আইনউর্ধ ক্ষমতা প্রয়োগের সমস্ত বিশেষ অধিকার বাতিল করে এগুলোকে নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে ঢেলে সাজানো।

No comments

Powered by Blogger.