চরাচর-পর্যটনের বাংলাদেশ by আফতাব চৌধুরী
এশিয়া মহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত আমাদের বাংলাদেশকে প্রকৃতি উপহার হিসেবে দিয়েছে চোখে পড়ার মতো নৈসর্গিক বৃক্ষরাজি, দুর্লভ প্রজাতির অনন্য জীব, পশু, পাখি বা উদ্ভিদ। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে সবুজ সুন্দরবন, দক্ষিণে রয়েছে কঙ্বাজারের বিরাট সমুদ্র সৈকত।
প্রাচীনকাল থেকেই এ ঐতিহ্যময় বাংলাদেশে বিকশিত হয়েছে নানা ধর্মীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি। বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ঐতিহাসিক কীর্তিস্তম্ভ বা ধ্বংসাবশেষগুলোই প্রমাণ করে দেশটির অতীত শৌর্যবীর্যের বিশালতা। এ অনুপম সম্পদ ও সৌন্দর্যগুলো আমরা এতদিন নিজেরই উপভোগ করে বিভোর হওয়ার পাশাপাশি 'আমরা গরিব নই' স্লোগান দিয়ে চলেছি। অথচ সমপরিমাণের অথবা এর চেয়েও কম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদকে নিয়ে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো বিকশিত করে তুলছে নিজেদের পর্যটন উদ্যোগ। তারা সুপরিকল্পিতভাবে সীমিত সম্পদগুলো বিশ্বের চোখে এমনভাবে আকর্ষণীয় রূপে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে যে সেসব দেশে দেশি-বিদেশি পর্যটকের জমজমাট গমনাগমন লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন সম্ভব হওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের পথও খুলেছে। পর্যটনের আনুষঙ্গিক বিষয়ের বাজার সৃষ্টির ফলে দেশগুলোর অর্থনৈতিক দিকে ঘটেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। দেশে আসছে প্রচুর বিদেশি মুদ্রার স্রোত। পর্যটন শিল্প যে সম্প্রতি এক লাভজনক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে, তা পৃথিবীজুড়ে স্বীকৃত হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন নেই যথেষ্ট পরিমাণের কাঁচামাল, উচ্চমাপের প্রযুক্তি তথা অভিজ্ঞ মানবসম্পদের। প্রকৃতির সহজাত আর কিছু পরিমাণে মানবসৃষ্ট সম্পদকে কাঁচামাল হিসেবে নিয়ে একে কৌশলপূর্ণভাবে আকর্ষণীয় রূপে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করতে পারলেই বিপণনযোগ্য উৎকৃষ্ট সামগ্রী হয়ে পড়ে। এগুলো করার জন্য প্রয়োজন হয় কিছু সংখ্যক নিষ্ঠাবান মানুষ, আর নূ্যনতম পরিকাঠামোর, যাদের ওপর ন্যস্ত থাকবে পর্যটনের সম্ভাবনার স্থান নির্বাচনের দায়িত্ব। সাধারণ একজন পর্যটক সুবিধাজনক যাতায়াত, আরামদায়ক অথচ সহজলভ্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি স্থানের প্রতি আকর্ষিত হয়। অন্যদিকে একজন ইকো-ট্যুরিস্ট যেকোনো একটি অঞ্চলের সৌন্দর্য, কৃষ্টি-পরম্পরা, ঐতিহ্য ইত্যাদির প্রত্যক্ষ স্বাদ স্বাভাবিক আর অপরিবর্তনীয় রূপে পেতে আগ্রহী হয়। স্থানীয় ইতিহাস আর ভৌগোলিক জ্ঞানসমৃদ্ধ যুবক-যুবতীরা অনায়াসে পর্যটকদের পথপ্রদর্শক রূপে নিযুক্ত হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য অবদান জোগাতে যে সক্ষম হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য, পর্যটনের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আজ অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতী নিয়োজিত হয়েছে, যা গৌরবের বিষয়। বহু জাতি-উপজাতি, গোষ্ঠী-উপগোষ্ঠীর মিনলভূমি তথা ঐতিহ্যময় স্বকীয় ভাষা-সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ নীল পাহাড়ের এখানে প্রকৃতি দিয়েছে শুধু সবুজ আর সবুজ, যার সৌন্দর্য যা তুলনাবিহীন। সময়োপযোগী সরকারি দৃঢ় পদক্ষেপ তথা নিষ্ঠাবান অগ্রণী ব্যক্তি, অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের সুপরিকল্পিত এবং ঐকান্তিক সমন্বয়ের মাধ্যমে সামান্য সম্পদগুলো যথোপযুক্ত সুব্যবহার করে দেশের পর্যটন ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে আরো অধিক ত্বরান্বিত করার সময় এখন সমাগত। এর জন্য অবশ্য সংশ্লিষ্ট উভয় পক্ষের সততা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেম থাকা দরকার।
আফতাব চৌধুরী
আফতাব চৌধুরী
No comments