সংবাদ বিশ্লেষণ-মালয়েশিয়ার প্রস্তাব আর্থিক দায় বাড়াবে by শওকত হোসেন
দাতাদের দেওয়া সহজ শর্তের ঋণে পদ্মা সেতু তৈরি হলে বাংলাদেশের আর্থিক দায় তুলনামূলকভাবে কম হবে। আর মালয়েশিয়ার প্রস্তাব মানলে মানতে হবে বড় ধরনের আর্থিক দায়। পদ্মা সেতুর আয়ুষ্কাল হবে ১০০ বছর। এর মধ্যে ৫০ বছরই এর মালিকানা থাকবে মালয়েশিয়ার হাতে।
এ সময় তারা বিনিয়োগের তুলনায় অন্তত তিন গুণ বেশি অর্থ নিয়ে যাবে। এই অর্থ বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে ডলারে, অথচ সেতু ব্যবহারের জন্য টোল আদায় হবে স্থানীয় মুদ্রায়। ফলে এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।
পদ্মা সেতুতে মালয়েশিয়া বিনিয়োগ করবে ২৩০ কোটি ডলার। এই অর্থ তারা দুবাই মুদ্রাবাজার থেকে সংগ্রহ করবে। মালয়েশিয়া বলছে, নির্মাণ, পরিচালনা, সুদ পরিশোধ ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত তাদের ব্যয় হবে ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ৫০ বছরে তাদের আয় হবে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
২০১৬ সালে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত টোল বাবদ কী পরিমাণ আয় হবে, তার একটি হিসাব মালয়েশিয়া দেখিয়েছে। বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে বর্তমানে যে হারে টোল আদায় হচ্ছে, সে হারে পদ্মা সেতুর টোল আদায় করা হলে আয় হবে ৫৮০ কোটি মার্কিন ডলার। দ্বিগুণ করা হলে হবে ৯৮৬ কোটি ডলার এবং এর ওপর ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরলে ২০৫০ সালের মধ্যে আয় হবে এক হাজার ১৯৯ কোটি মার্কিন ডলার। এ তো গেল ৩৪ বছরের হিসাব। সেতুর মালিকানা ৫০ বছর হলে আয় বেড়ে এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
আর যদি সেতুর মালিকানা বাংলাদেশের থাকে? পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৮১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর বাইরে প্রকল্পকালীন সময়ে সুদ ও সেবা বা সার্ভিস চার্জ হিসেবে দিতে হবে আরও নয় কোটি ডলার। সব মিলিয়ে মোট ব্যয় হবে ২৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ফেরত দিতে হবে, তাও আবার ৪০ বছরে। এর মধ্যে প্রথম ১০ বছর কোনো অর্থই দিতে হবে না।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দেওয়ার কথা ছিল ১২০ কোটি ডলার। এই ঋণের সেবা ব্যয় বা সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ছিল ৬১ কোটি ডলার, জাইকা ৪০ কোটি ডলার এবং ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) ঋণ ১৪ কোটি ডলার। জাইকার সুদের হার দশমিক শূন্য এক শতাংশ, এডিবির সুদের হার গড়ে দেড় শতাংশ এবং আইডিবির প্রায় তিন শতাংশ।
সুতরাং বলা যায়, মূল ঋণের বাইরে খুব কম অর্থই পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। আর মালয়েশিয়া সেতু তৈরি করলে তারা বিনিয়োগের অন্তত পাঁচ গুণ বেশি অর্থ তুলে নিয়ে যাবে। টোল আদায় হবে স্থানীয় মুদ্রায়, আর মালয়েশিয়াকে তা দিতে হবে ডলারে।
আবার টোলের পরিমাণও দ্বিগুণ করতে হবে। এখন বঙ্গবন্ধু সেতুতে বড় ট্রাকের জন্য টোল দিতে হয় এক হাজার ৪০০ টাকা, বাসের জন্য ৯০০ টাকা এবং কারের জন্য টোলের পরিমাণ ৫০০ টাকা। তুলনামূলকভাবে অনুন্নত দক্ষিণ বঙ্গে যাতায়াতের জন্য এই পরিমাণ টোল কত মানুষ দিতে পারবে, সেটিও একটি প্রশ্ন। এ কারণেই হয়তো মালয়েশিয়া শর্ত দিয়েছে যে প্রাক্কলনের তুলনায় কম যান চললে সরকারকেই এর জন্য ভর্তুকি দিতে হবে।
এখানে আরেকটি বিষয়ের উল্লেখ করা যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে অনেকগুলো ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছিল। সেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তেল কিনতে এখন বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশ। প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে জ্বালানি তেল আনতে হচ্ছে সরকারকে। সেই তেল আবার ভর্তুকিমূল্যে দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে। এই বিদ্যুৎ কিনে তা আবার কম দরে দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এর ফলে এখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে টান পড়েছে এবং ডলারের দাম বেড়ে গেছে। মালয়েশিয়া পদ্মা সেতু নির্মাণ করলে একই ধরনের আর্থিক দায় নিতে হবে সরকারকে। ফলে অর্থনীতি নিয়ে সর্বদাই এক ধরনের আশঙ্কা বয়ে বেড়াতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বদলে বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা যখন দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বা পিআরএসপি চাপিয়ে দেয়, তখন বাংলাদেশ তা সানন্দে মেনে নিয়েছিল। এটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার ঘটনা। অথচ সে সময়ে ভারত বলে দিয়েছিল তাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আছে, দাতাদের সেটাই মানতে হবে। দাতাদের মানতে হয়েছিল। আর এর ১০ বছর পর এসে এই সরকার দাতাদের অর্থ না নেওয়ার কথা বলা শুরু করল পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে। তাও আবার বিশ্বব্যাংক সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর। বলা যায়, পদ্মা সেতু নিয়ে এই বিপত্তি কেবল একটি মানুষের কারণে। অথচ এর দায় নিতে হচ্ছে পুরো দেশকে।
পদ্মা সেতুতে মালয়েশিয়া বিনিয়োগ করবে ২৩০ কোটি ডলার। এই অর্থ তারা দুবাই মুদ্রাবাজার থেকে সংগ্রহ করবে। মালয়েশিয়া বলছে, নির্মাণ, পরিচালনা, সুদ পরিশোধ ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত তাদের ব্যয় হবে ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ৫০ বছরে তাদের আয় হবে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার।
২০১৬ সালে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত টোল বাবদ কী পরিমাণ আয় হবে, তার একটি হিসাব মালয়েশিয়া দেখিয়েছে। বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে বর্তমানে যে হারে টোল আদায় হচ্ছে, সে হারে পদ্মা সেতুর টোল আদায় করা হলে আয় হবে ৫৮০ কোটি মার্কিন ডলার। দ্বিগুণ করা হলে হবে ৯৮৬ কোটি ডলার এবং এর ওপর ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরলে ২০৫০ সালের মধ্যে আয় হবে এক হাজার ১৯৯ কোটি মার্কিন ডলার। এ তো গেল ৩৪ বছরের হিসাব। সেতুর মালিকানা ৫০ বছর হলে আয় বেড়ে এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
আর যদি সেতুর মালিকানা বাংলাদেশের থাকে? পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৮১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর বাইরে প্রকল্পকালীন সময়ে সুদ ও সেবা বা সার্ভিস চার্জ হিসেবে দিতে হবে আরও নয় কোটি ডলার। সব মিলিয়ে মোট ব্যয় হবে ২৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ফেরত দিতে হবে, তাও আবার ৪০ বছরে। এর মধ্যে প্রথম ১০ বছর কোনো অর্থই দিতে হবে না।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দেওয়ার কথা ছিল ১২০ কোটি ডলার। এই ঋণের সেবা ব্যয় বা সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ছিল ৬১ কোটি ডলার, জাইকা ৪০ কোটি ডলার এবং ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) ঋণ ১৪ কোটি ডলার। জাইকার সুদের হার দশমিক শূন্য এক শতাংশ, এডিবির সুদের হার গড়ে দেড় শতাংশ এবং আইডিবির প্রায় তিন শতাংশ।
সুতরাং বলা যায়, মূল ঋণের বাইরে খুব কম অর্থই পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। আর মালয়েশিয়া সেতু তৈরি করলে তারা বিনিয়োগের অন্তত পাঁচ গুণ বেশি অর্থ তুলে নিয়ে যাবে। টোল আদায় হবে স্থানীয় মুদ্রায়, আর মালয়েশিয়াকে তা দিতে হবে ডলারে।
আবার টোলের পরিমাণও দ্বিগুণ করতে হবে। এখন বঙ্গবন্ধু সেতুতে বড় ট্রাকের জন্য টোল দিতে হয় এক হাজার ৪০০ টাকা, বাসের জন্য ৯০০ টাকা এবং কারের জন্য টোলের পরিমাণ ৫০০ টাকা। তুলনামূলকভাবে অনুন্নত দক্ষিণ বঙ্গে যাতায়াতের জন্য এই পরিমাণ টোল কত মানুষ দিতে পারবে, সেটিও একটি প্রশ্ন। এ কারণেই হয়তো মালয়েশিয়া শর্ত দিয়েছে যে প্রাক্কলনের তুলনায় কম যান চললে সরকারকেই এর জন্য ভর্তুকি দিতে হবে।
এখানে আরেকটি বিষয়ের উল্লেখ করা যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে অনেকগুলো ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছিল। সেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তেল কিনতে এখন বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশ। প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে জ্বালানি তেল আনতে হচ্ছে সরকারকে। সেই তেল আবার ভর্তুকিমূল্যে দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে। এই বিদ্যুৎ কিনে তা আবার কম দরে দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এর ফলে এখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে টান পড়েছে এবং ডলারের দাম বেড়ে গেছে। মালয়েশিয়া পদ্মা সেতু নির্মাণ করলে একই ধরনের আর্থিক দায় নিতে হবে সরকারকে। ফলে অর্থনীতি নিয়ে সর্বদাই এক ধরনের আশঙ্কা বয়ে বেড়াতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বদলে বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা যখন দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বা পিআরএসপি চাপিয়ে দেয়, তখন বাংলাদেশ তা সানন্দে মেনে নিয়েছিল। এটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার ঘটনা। অথচ সে সময়ে ভারত বলে দিয়েছিল তাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আছে, দাতাদের সেটাই মানতে হবে। দাতাদের মানতে হয়েছিল। আর এর ১০ বছর পর এসে এই সরকার দাতাদের অর্থ না নেওয়ার কথা বলা শুরু করল পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে। তাও আবার বিশ্বব্যাংক সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর। বলা যায়, পদ্মা সেতু নিয়ে এই বিপত্তি কেবল একটি মানুষের কারণে। অথচ এর দায় নিতে হচ্ছে পুরো দেশকে।
No comments