এ কোন বর্বরতা!-দৃষ্টান্তমূলক, কঠোর শাস্তি হোক পাষণ্ড স্বামীর
শিউরে ওঠার মতো খবর। আজকের দিনেও এমন হতে পারে? সমাজের উঁচুতলার একটি সুশিক্ষিত পরিবারে এমন ঘটনা কেমন করে ঘটে? এটা কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কুফল, নাকি পুরুষের হীনম্মন্যতার সহিংস প্রকাশ? দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন শিক্ষিকা এভাবে নির্যাতিত হতে পারেন তাঁর স্বামীর দ্বারা, আজকের দিনে এটা ভাবা যায় না।
আজকের দিনে, যখন সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ_তখন একটি সুশিক্ষিত পরিবারের কোনো নারী সদস্য এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করবেন কেন? এ লজ্জা শুধু ওই পরিবারটির নয়, এই সমাজের_এই দেশের। এ ঘটনা আবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমরা একটুও অগ্রসর হতে পারিনি। কেবলই পেছনের দিকে যাচ্ছি। যাচ্ছি অন্ধকারের দিকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা মঞ্জুর। স্বামীর নির্যাতনে তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অন্য চোখটির অবস্থাও ভালো নয়। শুধু চোখ নয়, পুরো শরীরের ওপর দিয়েই যে ধকল গেছে তাঁর, তাতে তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। হাসপাতালের বিছানায় শায়িত রুমানা মঞ্জুরের রক্তাক্ত ছবিটি যেকোনো মানুষকেই নাড়া দেবে। রুমানা মঞ্জুরের ভাষ্য অনুযায়ী, ১০ বছরের দাম্পত্য জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সয়ে এসেছেন তিনি। কেন? সামাজিক সম্মানটুকু রক্ষার জন্যই হয়তো দীর্ঘদিন সহ্য করেছেন নির্যাতন। নারীর পুষে রাখা দীর্ঘদিনের সংস্কার থেকেই হয়তো টিকিয়ে রাখতে চেয়েছেন পারিবারিক বন্ধন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। স্বামী নামের পাষণ্ড পুরুষের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি রুমানা মঞ্জুর। তাঁর পেশা, বিদেশে তাঁর উচ্চশিক্ষা_কোনো কিছুই তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি। চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
বাংলাদেশে পারিবারিক নির্যাতন অনেক পুরনো। নারী নির্যাতন চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যৌতুকের কারণে হরহামেশাই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও নারী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন পাস হয়েছে গত বছর। কিন্তু আমরা সেই আইনের সুফল কি কোথাও দেখতে পাচ্ছি! পারিবারিক সদস্যদের দ্বারা কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে তাকে সুরক্ষা দিতেই আইনটি করা হয়েছে। গোটা বিশ্বে নারীর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশেও। সব ক্ষেত্রেই নারী তার দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চাকরিক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা ও অবদান আজ অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে এখনো অবস্থা অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে বলেই মনে হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতায় প্রতিবছর ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ২ শতাংশ। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড উভয় বিধানই রাখা হয়েছে এই আইনে। কিন্তু এর পরও নারীর প্রতি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রুমানা মঞ্জুরের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা থেকে এটাও প্রমাণিত হয়, এই সমাজের কোনো স্তরেই নারী নিরাপদ নয়। নারীকে আজও সেই নিছক পণ্য, ক্রীতদাসী বা ভোগের বস্তু ও উৎপাদনের যন্ত্রই ভাবা হয়।
রুমানা মঞ্জুরকে নির্যাতনকারী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক, কঠোর শাস্তি দিতে হবে এই পাষণ্ডকে। শুধু পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন নয়, প্রয়োজনে ফৌজদারি দণ্ডবিধির প্রচলিত আইনে তাঁর বিচার করতে হবে। আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই পাষণ্ডকে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করবে।
No comments