১১ সেপ্টেম্বর হামলা-যে অংশীদারি আমাদের প্রয়োজন by বারাক ওবামা

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী আক্রমণের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমাদের মনে পড়ে যায় যে নয়-এগারোর আক্রমণটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই ছিল না, এটা ছিল সারা বিশ্বের ওপর, সমগ্র মানবতার ওপর এবং আমাদের সেই সব প্রত্যাশার ওপর, যার ভাগীদার আমরা সবাই।


আমরা স্মরণ করি, সেদিন যে তিন হাজার নির্দোষ মানুষ হারিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৯০টিরও বেশি দেশের শত শত নাগরিক ছিল। তাদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন জাতি ও ধর্মবিশ্বাসের নারী ও পুরুষ, ছিল যুবা ও বৃদ্ধ। আজকের এই ভাবগম্ভীর বার্ষিকীতে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে আমরা তাদের পরিবার ও জাতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।
আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি, ১০ বছর আগের সেই সময় কীভাবে সমগ্র বিশ্ব এক হয়ে গিয়েছিল। ঘটনার আকস্মিকতায় পৃথিবীজুড়ে প্রতিটি শহর থমকে গিয়েছিল। মানুষজন গির্জায়, মসজিদে, সিনাগগে এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে গিয়ে প্রার্থনা করেছিল। আর আমরা যারা যুক্তরাষ্ট্রে আছি, তারা কখনোই ভুলব না যে কীভাবে পৃথিবীর প্রতিটি জায়গায় মানুষ আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, সংহতি জানিয়েছিল, মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনায় নিমগ্ন ছিল আর ফুলে ফুলে ছেয়ে ফেলেছিল আমাদের দূতাবাসগুলোকে।
আমরা স্মরণ করি যে, নয়-এগারোর পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে আমরা একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলাম। বৃহত্তর সহযোগিতার অংশ হিসেবে আমরা আল-কায়েদাকে আফগানিস্তানের প্রশিক্ষণের ছাউনি থেকে বিতাড়িত করেছি, তালেবানকে হটিয়েছি এবং আফগানিস্তানের জনগণকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে বাঁচার একটি সুযোগ করে দিয়েছি। যা-ই হোক, এর পরবর্তী বছরগুলো ছিল অত্যন্ত কঠিন এবং নয়-এগারোর পরে বিশ্বজুড়ে অংশীদারির যে উদ্দীপনা আমরা অনুভব করেছিলাম, তা হারিয়ে গেল।
বিশ্বব্যাপী আমাদের যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে, পূর্ণোদ্যমে তা মোকাবিলা করার জন্য যে বৈশ্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আমি কাজ করছি। পারস্পরিক সম্পৃক্ততার এই নবযুগে, আমরা পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ভিত্তিতে জাতি এবং জনগণের সঙ্গে অংশীদারি গড়ে তুলেছি।
একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে, আমরা দেখিয়েছি যে আমাদের নাগরিকদের ইচ্ছাশক্তি এবং ধৈর্যের সামনে সন্ত্রাসীরা দাঁড়াতে পারে না। আমি এটা স্পষ্ট করে দিয়েছি যে যুক্তরাষ্ট্র ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত নয় এবং ভবিষ্যতেও কখনো লিপ্ত হবে না। বরং আমরা আমাদের সহযোগী এবং অংশীদারদের সঙ্গে মিলে সেই আল-কায়েদার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, যারা বহু দেশ আক্রমণ করেছে এবং হাজার হাজার নির্দোষ নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছে। আর এর এক বিশাল অংশ ছিল মুসলমান জনগোষ্ঠী। এই সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে, আফ্রিকা থেকে এশিয়ায়, আল-কায়েদার সব ভুক্তভোগীকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি, আর সেই সঙ্গে স্মরণ করি তাদের পরিবার ও সতীর্থ নাগরিকদের সাহসিকতা ও দৃঢ় মনোবলকে।
একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে আমরা আল-কায়েদার পরিকল্পনাগুলো ভেস্তে দিয়েছি, ওসামা বিন লাদেন ও তাঁর অনেক নেতাকে উচ্ছেদ করেছি এবং আল-কায়েদাকে পরাজিত হওয়ার পথে নিয়ে এসেছি। ইতিমধ্যে, সারা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে জনগণ দেখিয়ে দিচ্ছে যে ন্যায়বিচার ও মর্যাদার নিশ্চিত পথটি হচ্ছে অহিংস নৈতিকতার পথ, নির্দয় সন্ত্রাস ও সহিংসতা নয়। এটা স্পষ্ট যে উগ্র চরমপন্থীরা পিছিয়ে পড়ছে এবং ভবিষ্য ৎ তাদেরই জন্য, যারা গড়তে চায়, ধ্বংস চায় না।
সেই সব জাতি ও জনগণ যারা শান্তি ও সমৃদ্ধ ভবিষ্য ৎ খুঁজছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অংশীদার খুঁজে পাবে। যদিও আমরা নিজেদের দেশেই একটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি, তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে নেতৃত্বদানে একটি অনন্য ভূমিকা পালন করে যাবে। আমরা যখন ইরাক থেকে আমাদের বাকি সৈন্যদের সরিয়ে আনব এবং এই দায়িত্ব আফগানিস্তানের কাছে হস্তান্তর করব, তখনো আমরা ইরাকি ও আফগানদের তাদের জনগণের জন্য নিরাপত্তা দিতে এবং সুযোগ তৈরি করে দিতে সহযোগিতা দিয়ে যাব।
পৃথিবীময়, আমরা শান্তির অন্বেষায়, মানুষকে দারিদ্র্য থেকে উঠিয়ে আনার মতো উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতাদান, খাদ্যনিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও সুশাসনব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কঠোর কাজের ধারা অব্যাহত রাখব, যাতে করে নাগরিক ও সমাজের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়।
সেই সঙ্গে পুনরায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি যে আমরা নিজের দেশে আমাদের মূল্যবোধগুলোকে অক্ষুণ্ন রাখব। অভিবাসীদের জাতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি দেশের ও সংস্কৃতির জনগণকে স্বাগত জানায়। এই নব্য আমেরিকানরা ১০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া অন্যান্য নির্দোষ ভুক্তভোগী আমেরিকানের মতোই আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কোনো বর্ণের বা গোত্রের, ভিন্ন পটভূমি বা বিশ্বাস থেকে আসা সত্ত্বেও আমরা সবাই একটি অভিন্ন প্রত্যাশায় বাঁধা। আর তা হলো, আমরা যেন এই বিশ্বকে বর্তমান ও ভবিষ্য ৎ প্রজন্মের জন্য আরও ভালো একটি স্থান করে দিতে পারি। আমরা যাদের হারিয়েছি, এটা নিশ্চয়ই তাদেরও পাওনা ছিল।
যারা নয়-এগারোতে আমাদের আক্রমণ করেছিল, তারা চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের মধ্যে একটি ব্যবধান গড়ে তুলতে। তারা ব্যর্থ হয়েছে। আজ সেই হামলার দশম বার্ষিকীতে, সে সময় হারিয়ে যাওয়া মানুষের স্মরণে আমরা আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। তাদের এই স্মৃতিতর্পণে, আমরা পারস্পরিক অংশীদারি ও সম্মানবোধের চেতনাকে পুনর্ব্যক্ত করছি, যাতে আমরা এমন পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি, যেখানে সব মানুষ সমমর্যাদা, স্বাধীনতা ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
বারাক ওবামা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

No comments

Powered by Blogger.