ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান-শতাধিক পরিচালকের পদত্যাগ এ মাসেই by ফখরুল ইসলাম
দেশের ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (লিজিং কোম্পানি) শতাধিক পরিচালককে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই পদ ছাড়তে হবে। কারণ, আইন অমান্য করে একই সঙ্গে তাঁরা তিন ধরনের কোম্পানিতে পরিচালক হিসেবে বহাল আছেন।
কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত।
কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত।
আবার পরিচালকদের অনেকেই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতা। তাঁরা এরই মধ্যে বিধানটি বাতিলে নানাভাবে চেষ্টা করছেন। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে এখনো কঠোর। মন্ত্রণালয় মনে করছে, দেশের সম্পদ গুটি কয়েক ব্যক্তির হাতে পুঞ্জীভূত হতে না দেওয়াই এর উদ্দেশ্য।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন থেকেই সুবিধাটি তাঁরা ভোগ করে আসছিলেন। যাঁরা ব্যাংকের পরিচালক, তাঁরা বিমারও পরিচালক। একই সঙ্গে তাঁরা আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও পরিচালক। এতে দেশের সম্পদ গুটি কয়েক ব্যক্তির হাতে জিম্মি হয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়। দেশ ও জনগণের স্বার্থে সেই সুযোগ আর দেওয়া হবে না।’
বিমা আইন, ২০১০-এর ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিমাকারীর পরিচালক একই শ্রেণীর বিমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধীকৃত অন্য কোনো বিমাকারীর বা কোনো ব্যাংক কোম্পানির বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইডরা) সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, দেশের ৬০টি বেসরকারি বিমা কোম্পানির মধ্যে ২৮টিতেই এ ধরনের পরিচালক রয়েছেন। তাঁদের সংখ্যা ১০০ জনের বেশি। ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান—তিনটিতেই পরিচালক রয়েছেন ২২ জন। বিমার পরিচালক থাকার পাশাপাশি ব্যাংকেরও পরিচালক রয়েছেন ৫৪ জন। অন্যদিকে, একই সঙ্গে বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে সিটি জেনারেল ও নর্দার্ন জেনারেল ইনস্যুরেন্সের আটজন করে এ ধরনের পরিচালক রয়েছেন।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সের পরিচালক, আবার শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকেরও পরিচালক। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি সিটি ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের (বিএফআইসি) পরিচালক।
জনতা ইনস্যুরেন্সের পরিচালক পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম ইউসিবিএলেরও পরিচালক। তিনিসহ তাঁর ছেলেও যুগপৎ পরিচালক। এর মধ্যে আজিজ আল কায়সার জনতা ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি আইডিএলসি ফিন্যান্স ও সিটি ব্যাংকের পরিচালক। শওকত আজিজ জনতা ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি ইউসিবিএল এবং রুবেল আজিজ আইডিএলসি ফিন্যান্স ও সিটি ব্যাংকের পরিচালক। আরেক পরিচালক এম এ সবুর ইউসিবিএলের পরিচালক।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ জাইদি সাত্তার এশিয়া ইনস্যুরেন্স ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং তারিক সুজাত এশিয়া ইনস্যুরেন্স ও বে লিজিংয়ের পরিচালক। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং তাঁর স্ত্রী উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিডব্লিউসিসিআই) সভাপতি সেলিমা আহমাদ নিটল ইনস্যুরেন্সের পরিচালক। একই সঙ্গে তাঁরা এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টেরও পরিচালক। ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্সের পরিচালক লুৎফর রহমান আইএফআইসি ব্যাংকেরও পরিচালক। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম নর্দার্ন জেনারেল ইনস্যুরেন্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ক্যাপিটাল ও রিলায়ান্স ফিন্যান্সের পরিচালক। তাঁর ভাই আবদুস সামাদ নর্দার্ন ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি রিলায়ান্স ফিন্যান্স ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক।
এফবিসিসিআইর সভাপতি এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই সঙ্গে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, সরকার এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। সম্পদের পুঞ্জীভূত হতে না দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকে আইনটি করা হলেও অন্য দেশে কিন্তু তা আছে। এখন পদত্যাগ করতে বলা হলে শেয়ার তো আর বিক্রি করে দেওয়া হবে না, বরং আত্মীয়স্বজনের নামে হস্তান্তর করতে হবে।’
সূত্র জানায়, বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অবশ্য অনেক কোম্পানিই বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে তাদের কোম্পানিতে যুগপৎ পরিচালক নেই। বিষয়টি এখন যাচাই করে দেখা হবে।
২০১১ সালের অক্টোবরে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর গত ২৬ জানুয়ারি কোম্পানিগুলোর উদ্দেশে এক তাগাদাপত্রে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৯ ফেব্রুয়ারির পর ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আর যুগপৎ পরিচালক থাকা যাবে না।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিমা আইনের যুগপৎ পরিচালক বিষয়ক ধারাটির বাতিল চায় অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির ৪০তম বৈঠকে কমিটি ‘১৯৩৮ সালের বিমা আইনেও এ রকম বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু পরে তা রহিত করা হয়েছিল। বিদ্যমান আইন থেকেও তা রহিত হওয়া দরকার।’—এ রকম সুপারিশ করে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আইন এবং এই সময়ে তা সংশোধনের সুযোগ নেই। যাঁরা ভাবছেন, সংশোধন হয়ে যাবে, তাঁরা ভুল করছেন।’ পণ্য উৎপাদনের অন্য কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক খাত গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না বলেও মনে করেন মুহিত।
ইডরার চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর্থিক খাতে শৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার বিমা আইন প্রণয়ন করেছে, আর আমরা তা বাস্তবায়ন করছি মাত্র।’
পদত্যাগ না করলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—জানতে চাইলে শেফাক আহমেদ বলেন, ‘পরিচালকেরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে বিমা আইনের ৫০ ধারা অনুযায়ী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তাদের অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
যোগাযোগ করলে বিমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমা আইনের এ ধারাটি সংশোধনের দাবি জানাই। কারণ, আমরা মনে করি, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে একই ব্যক্তি থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।’
সাবেক অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও এখন একই ব্যক্তি ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারেন না। বাংলাদেশ হলো দুঃখজনক এক বিরল দেশ। সুতরাং দেরিতে হলেও উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয় এবং তা বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।’
পদত্যাগ করলেও মালিকানা তো পরিচালকদের হাতেই থাকবে—ব্যবসায়ীদের এমন প্রশ্ন তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালকদের উদ্দেশে আকবর আলি খান বলেন, ‘খালি তাঁরাই বুদ্ধিমান আর অন্যরা সব বেকুব, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। অর্থনীতির স্বার্থ দেখতে হলে দেশের আর্থিক খাত কতিপয় লোকের হাতে জিম্মি হতে দেওয়া যাবে না।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন থেকেই সুবিধাটি তাঁরা ভোগ করে আসছিলেন। যাঁরা ব্যাংকের পরিচালক, তাঁরা বিমারও পরিচালক। একই সঙ্গে তাঁরা আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও পরিচালক। এতে দেশের সম্পদ গুটি কয়েক ব্যক্তির হাতে জিম্মি হয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়। দেশ ও জনগণের স্বার্থে সেই সুযোগ আর দেওয়া হবে না।’
বিমা আইন, ২০১০-এর ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিমাকারীর পরিচালক একই শ্রেণীর বিমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধীকৃত অন্য কোনো বিমাকারীর বা কোনো ব্যাংক কোম্পানির বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইডরা) সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, দেশের ৬০টি বেসরকারি বিমা কোম্পানির মধ্যে ২৮টিতেই এ ধরনের পরিচালক রয়েছেন। তাঁদের সংখ্যা ১০০ জনের বেশি। ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান—তিনটিতেই পরিচালক রয়েছেন ২২ জন। বিমার পরিচালক থাকার পাশাপাশি ব্যাংকেরও পরিচালক রয়েছেন ৫৪ জন। অন্যদিকে, একই সঙ্গে বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে সিটি জেনারেল ও নর্দার্ন জেনারেল ইনস্যুরেন্সের আটজন করে এ ধরনের পরিচালক রয়েছেন।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সের পরিচালক, আবার শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকেরও পরিচালক। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি সিটি ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের (বিএফআইসি) পরিচালক।
জনতা ইনস্যুরেন্সের পরিচালক পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম ইউসিবিএলেরও পরিচালক। তিনিসহ তাঁর ছেলেও যুগপৎ পরিচালক। এর মধ্যে আজিজ আল কায়সার জনতা ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি আইডিএলসি ফিন্যান্স ও সিটি ব্যাংকের পরিচালক। শওকত আজিজ জনতা ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি ইউসিবিএল এবং রুবেল আজিজ আইডিএলসি ফিন্যান্স ও সিটি ব্যাংকের পরিচালক। আরেক পরিচালক এম এ সবুর ইউসিবিএলের পরিচালক।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ জাইদি সাত্তার এশিয়া ইনস্যুরেন্স ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং তারিক সুজাত এশিয়া ইনস্যুরেন্স ও বে লিজিংয়ের পরিচালক। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং তাঁর স্ত্রী উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিডব্লিউসিসিআই) সভাপতি সেলিমা আহমাদ নিটল ইনস্যুরেন্সের পরিচালক। একই সঙ্গে তাঁরা এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টেরও পরিচালক। ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্সের পরিচালক লুৎফর রহমান আইএফআইসি ব্যাংকেরও পরিচালক। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম নর্দার্ন জেনারেল ইনস্যুরেন্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ক্যাপিটাল ও রিলায়ান্স ফিন্যান্সের পরিচালক। তাঁর ভাই আবদুস সামাদ নর্দার্ন ইনস্যুরেন্সের পাশাপাশি রিলায়ান্স ফিন্যান্স ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক।
এফবিসিসিআইর সভাপতি এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই সঙ্গে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ, সরকার এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। সম্পদের পুঞ্জীভূত হতে না দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকে আইনটি করা হলেও অন্য দেশে কিন্তু তা আছে। এখন পদত্যাগ করতে বলা হলে শেয়ার তো আর বিক্রি করে দেওয়া হবে না, বরং আত্মীয়স্বজনের নামে হস্তান্তর করতে হবে।’
সূত্র জানায়, বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অবশ্য অনেক কোম্পানিই বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে তাদের কোম্পানিতে যুগপৎ পরিচালক নেই। বিষয়টি এখন যাচাই করে দেখা হবে।
২০১১ সালের অক্টোবরে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর গত ২৬ জানুয়ারি কোম্পানিগুলোর উদ্দেশে এক তাগাদাপত্রে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৯ ফেব্রুয়ারির পর ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আর যুগপৎ পরিচালক থাকা যাবে না।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিমা আইনের যুগপৎ পরিচালক বিষয়ক ধারাটির বাতিল চায় অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির ৪০তম বৈঠকে কমিটি ‘১৯৩৮ সালের বিমা আইনেও এ রকম বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু পরে তা রহিত করা হয়েছিল। বিদ্যমান আইন থেকেও তা রহিত হওয়া দরকার।’—এ রকম সুপারিশ করে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আইন এবং এই সময়ে তা সংশোধনের সুযোগ নেই। যাঁরা ভাবছেন, সংশোধন হয়ে যাবে, তাঁরা ভুল করছেন।’ পণ্য উৎপাদনের অন্য কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক খাত গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না বলেও মনে করেন মুহিত।
ইডরার চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর্থিক খাতে শৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার বিমা আইন প্রণয়ন করেছে, আর আমরা তা বাস্তবায়ন করছি মাত্র।’
পদত্যাগ না করলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—জানতে চাইলে শেফাক আহমেদ বলেন, ‘পরিচালকেরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে বিমা আইনের ৫০ ধারা অনুযায়ী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তাদের অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
যোগাযোগ করলে বিমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমা আইনের এ ধারাটি সংশোধনের দাবি জানাই। কারণ, আমরা মনে করি, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে একই ব্যক্তি থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।’
সাবেক অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও এখন একই ব্যক্তি ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারেন না। বাংলাদেশ হলো দুঃখজনক এক বিরল দেশ। সুতরাং দেরিতে হলেও উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয় এবং তা বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।’
পদত্যাগ করলেও মালিকানা তো পরিচালকদের হাতেই থাকবে—ব্যবসায়ীদের এমন প্রশ্ন তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালকদের উদ্দেশে আকবর আলি খান বলেন, ‘খালি তাঁরাই বুদ্ধিমান আর অন্যরা সব বেকুব, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। অর্থনীতির স্বার্থ দেখতে হলে দেশের আর্থিক খাত কতিপয় লোকের হাতে জিম্মি হতে দেওয়া যাবে না।’
No comments