এটাই সাঁওতালদের সবচেয়ে বড় উত্সব-সাঁওতাল গ্রামগুলোতে সহ্রাই উত্সবের ধুম

বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতাল গ্রামগুলোতে এখন চলছে সহ্রাই উত্সব। অনেকে এই উত্সবকে ‘বাধনা পরব’ বলে থাকেন। এ উত্সবই সাঁওতালদের সবচেয়ে বড় উত্সব। এ উত্সবের সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নেই। তবে আমন ধান কেটে নেওয়ার পর সাধারণত মাঘ-ফাল্গুন মাসের মধ্যেই এই উত্সবের আয়োজন করা হয়, একেক গ্রামে একেক দিন।


গ্রামের নেতৃস্থানীয় লোকজন নিয়ে বৈঠক করে উত্সবের দিন নির্ধারণ করে থাকেন। এ উত্সব চলে তিন থেকে পাঁচ দিনব্যাপী। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই পিঠা-পুলি তৈরির ধুম পড়ে। আর মাটির হাঁড়িতে ভাতের সঙ্গে গাছগাছড়া দিয়ে তৈরি এক ধরনের গুলি (বড়ি) মিশিয়ে গাঁজন-প্রক্রিয়ায় বানানো হয় ‘হান্ডি’ (মাদকজাতীয় পানীয়)। আত্মীয়-কুটুমদের আপ্যায়ন করার জন্য এটা অপরিহার্য। তবে অপরিণত বয়স্ক বা অবিবাহিত নারী-পুরুষেরা সাধারণত হাঁড়িয়া পান করে না।
বিকেলে খোলা মাঠ বা কেটে নেওয়া ধানখেতে ‘মারাংবুরুর’ উদ্দেশ্যে পূজা ও গ্রামের সবার মঙ্গল কামনা করে আনুষ্ঠানিক শুরু করা হয় সহরাই উত্সব। মাটির কলসি বা বড় হাঁড়ি থেকে বিতরণ করা হয় হাঁড়িয়া। এ আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করেন গ্রামের পুরোহিত, যাকে ‘নাইকি’ বলা হয়। এরপর গোধূলিবেলায় গ্রামের রাখাল বালকেরা গরুর পাল নিয়ে এগিয়ে আসেন অনুষ্ঠানস্থলের দিকে। সেখানে মাটিতে রাখা হয় ডিম। যার গরুর পায়ের আঘাতে ভাঙে ডিম, সেই গরু এবং গরুর মালিককে মনে করা হয় ভাগ্যবান হিসেবে এবং সামনের এই উত্সব অনুষ্ঠানের হাঁড়িয়া সরবরাহের দায়িত্ব চাপে তাঁর কাঁধে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতাল গ্রাম দেলবাড়ির কর্নেলিউস মুর্মু জানান, পরিবারে বাবা ও ছেলেরা তাঁদের নিজেদের মেহমানদের নিমন্ত্রণ করে থাকেন। নিমন্ত্রিত অতিথিদের নতুন কাপড় দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে অভাব-অনটনের কারণে অনেকেই তা পারেন না।
গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতি বাড়িতেই রয়েছে আত্মীয়-কুটুম। কুটুমদের নিয়ে চলছে হাঁড়িয়া পান। আর বয়স্ক নারী-পুরুষেরা গানের আসর বসান। সাংস্কৃতিক দলের নেতা শিমুল মারান্ডির বাড়ির সামনে হলুদ শাড়ি পরে খোঁপায় ফুল দিয়ে সেজেগুজে এসেছে তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীরা।

No comments

Powered by Blogger.