পদ্মা সেতু দেশীয় অর্থায়নেও নির্মাণ করা সম্ভব by মোহাম্মদ আবদুর রহমান খান
পদ্মা বহুমুখী সেতু। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। বর্তমান সরকারও এই সেতু নির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু বিশ্বব্যাংক কথিত দুর্নীতির ধুয়া তুলে ঋণ প্রদান স্থগিত করে দিয়েছিল। এখন দুর্নীতির অভিযোগ তারা আর বহাল রাখতে পারছে না; কিন্তু ঋণদানের জন্য ছয় মাস সময় চাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ ব্যাপারে এক প্রটোকল স্বাক্ষর করতে পারে। আবার চীনও এ সেতু নির্মাণে সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী এর আগে পিপিপি বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে সম্ভব হতে পারে বলেও জানিয়েছেন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক যে পথে হাঁটে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অন্য দাতারাও ঠিক বিশ্বব্যাংকের পথকেই অনুসরণ করছে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের এখন কী করা প্রয়োজন, সেটা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকেই বিবেচনা করতে ও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেক বিশেষজ্ঞ, এমন কি সাধারণ মানুষও বলে থাকেন, বিদেশি ঋণ মানে প্রকল্পকে দাতাদের ইচ্ছাধীন করে দেওয়া। এ ছাড়াও আছে চড়া সুদ এবং বিদেশি পরামর্শকদের পেছনে মোটা অঙ্ক ব্যয়। এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, বিদেশি ঋণ আর এর সুদ পরিশোধ করতে করতে বাংলাদেশে অর্থনীতি এখন রীতিমতো কাহিল। বিশ্বব্যাংকসহ অনেক ঋণদাতা উচ্চ সুদসহ নানা অসম্মানজনক শর্তারোপ করে সরকারকেও বিব্রত করছে বা করে থাকে। আবার এও দেখা যায়, বিশ্বব্যাংকসহ অনেক অর্থ লগি্নকারী প্রতিষ্ঠানও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে ঋণের জালে আটকে চুষে চুষে খাচ্ছে। তারা উজাড় করে দিচ্ছে এসব দেশের অর্থভাণ্ডার, করছে তাদের কঙ্কালসার।
কিন্তু একটু ঝুঁকি নিলেই বিশ্বব্যাংক কিংবা অন্য কোনো দাতা সংস্থার অর্থ ছাড়াও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যায়। তবে সে জন্য বর্তমান সরকারকে একটি সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। প্রসঙ্গত বলা যায়, আমাদের দেশের অনেক সংস্থার অর্থনৈতিক অবস্থা এখন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সে ক্ষেত্রে ওই সব সংস্থা পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্পে অনায়াসে অর্থায়নে সহায়তা করতে পারে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, বিটিআরসি গত তিন বছরে টেলিকম সেক্টর থেকে বিপুল রাজস্ব আয় করেছে। কেবল ২০০৯-২০১১ সাল পর্যন্ত বিটিআরসির রাজস্ব আদায় করেছে ১১ হাজার ৯৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর ২০০২-২০১১ সাল পর্যন্ত মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ৯৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ থেকে বোঝা যায়, বিটিআরসি দেশের অর্থনীতিতে কী বিরাট ভূমিকা রাখছে। তাই পদ্মা সেতু নির্মাণে বিটিআরসি বিশাল অঙ্কের অর্থ জোগান দিতে পারে।
বাস্তবায়িত করার আগেই পদ্মা সেতুর শেয়ার বাজারে ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করা যায়। আর তা করা হলে পদ্মা ও বঙ্গবন্ধু বহুমুখী যমুনা সেতুর শেয়ারবাজারে ছাড়ার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন অর্থের উৎস সৃষ্টি হবে, তেমনি স্থানীয় বিনিয়োগও উৎসাহিত হবে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে বিদেশি ঋণের জাল থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসার যে সক্রিয় অনুশীলন শুরু হবে তাতে করে এর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বাড়তি শক্তি জোগানো হবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্কার সাধন করেছে। এতে করে সরকার প্রশংসাও অর্জন করেছে। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন, বিদেশি ঋণের বোঝা থেকে দেশকে মুক্ত করা জাতীয় অর্থনীতিতে নয়া রক্ত সঞ্চারের জন্য অপরিহার্য। তাই এসব বিকল্প ব্যবস্থার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। বিপুল ভোটে জয়ী বর্তমান সরকারি জাতীয় পর্যায়ে বিদেশি ঋণ গ্রহণ প্রবণতাকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। যার ফলে অবকাঠামো ও নির্মাণসহ জাতীয় কর্মকাণ্ডে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ প্রবাহ সৃষ্টির দিকে অগ্রসর হতে পারবে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কাজে লাগাতে পারলে তা হবে দেশের জন্য একটি উৎকৃষ্ট পাইলট প্রজেক্ট।
লেখক : সেতু বিভাগের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
কিন্তু একটু ঝুঁকি নিলেই বিশ্বব্যাংক কিংবা অন্য কোনো দাতা সংস্থার অর্থ ছাড়াও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যায়। তবে সে জন্য বর্তমান সরকারকে একটি সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। প্রসঙ্গত বলা যায়, আমাদের দেশের অনেক সংস্থার অর্থনৈতিক অবস্থা এখন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সে ক্ষেত্রে ওই সব সংস্থা পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্পে অনায়াসে অর্থায়নে সহায়তা করতে পারে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, বিটিআরসি গত তিন বছরে টেলিকম সেক্টর থেকে বিপুল রাজস্ব আয় করেছে। কেবল ২০০৯-২০১১ সাল পর্যন্ত বিটিআরসির রাজস্ব আদায় করেছে ১১ হাজার ৯৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর ২০০২-২০১১ সাল পর্যন্ত মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ৯৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ থেকে বোঝা যায়, বিটিআরসি দেশের অর্থনীতিতে কী বিরাট ভূমিকা রাখছে। তাই পদ্মা সেতু নির্মাণে বিটিআরসি বিশাল অঙ্কের অর্থ জোগান দিতে পারে।
বাস্তবায়িত করার আগেই পদ্মা সেতুর শেয়ার বাজারে ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করা যায়। আর তা করা হলে পদ্মা ও বঙ্গবন্ধু বহুমুখী যমুনা সেতুর শেয়ারবাজারে ছাড়ার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন অর্থের উৎস সৃষ্টি হবে, তেমনি স্থানীয় বিনিয়োগও উৎসাহিত হবে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে বিদেশি ঋণের জাল থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসার যে সক্রিয় অনুশীলন শুরু হবে তাতে করে এর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বাড়তি শক্তি জোগানো হবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্কার সাধন করেছে। এতে করে সরকার প্রশংসাও অর্জন করেছে। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন, বিদেশি ঋণের বোঝা থেকে দেশকে মুক্ত করা জাতীয় অর্থনীতিতে নয়া রক্ত সঞ্চারের জন্য অপরিহার্য। তাই এসব বিকল্প ব্যবস্থার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। বিপুল ভোটে জয়ী বর্তমান সরকারি জাতীয় পর্যায়ে বিদেশি ঋণ গ্রহণ প্রবণতাকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। যার ফলে অবকাঠামো ও নির্মাণসহ জাতীয় কর্মকাণ্ডে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ প্রবাহ সৃষ্টির দিকে অগ্রসর হতে পারবে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কাজে লাগাতে পারলে তা হবে দেশের জন্য একটি উৎকৃষ্ট পাইলট প্রজেক্ট।
লেখক : সেতু বিভাগের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
No comments