এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন-অসামঞ্জস্য দূর করা হোক
২০১২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। পরীক্ষার রুটিন ঘোষিত হওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার সময়সূচি বা রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন ঢাকার শীর্ষস্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা।
তারা তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন রুটিন পরিবর্তনের জন্য। অন্যথায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং পরীক্ষা বর্জনেরও হুমকি দিয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সারা দেশেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পুষ্ট হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু কিংবা ভালোভাবে পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে রুটিন বা পরীক্ষার সময়সূচির একটি বড় ভূমিকা আছে, তা অস্বীকারের উপায় নেই। নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স সম্পন্ন করার পর যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তা একটি পর্যায়ের চূড়ান্ত ধাপ। এই ধাপটি সফলভাবে পেরোনোর জন্য সব শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন-সাধনা-প্রচেষ্টা থাকে। কিন্তু রুটিন যদি এ ক্ষেত্রে বৈরী হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা অবশ্যই দুঃখ এবং আপত্তিজনক ব্যাপার। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনার চাপ অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়ে একটু বেশি থাকে। তাদের শুধু লিখিত পরীক্ষাই নয়, ব্যবহারিক পরীক্ষাও দিতে হয়। অথচ এই বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার আগে প্রয়োজনীয় ছুটি রাখা হয়নি। যাঁরা এই রুটিন কিংবা পরীক্ষার সময়সূচি প্রণয়ন করেছেন তাঁদের দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়াই স্বাভাবিক। কারণ ঘোষিত রুটিনে দেখা গেছে, বাণিজ্য বিভাগের পরীক্ষা চলবে ৫০ দিন ধরে আর ২৯ দিনের মধ্যে শেষ হবে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বশীলরা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে কোন বিবেচনায় এমন অসামজ্ঞস্যপূর্ণ রুটিন ঘোষণা করলেন- এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠাই তো খুব স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের যে বক্তব্য পাওয়া গেছে, তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে পলিটিক্যালি মোটিভেটেড হিসেবে দেখাটা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পরীক্ষার সময়সূচি বারবার পরিবর্তন করার চেয়ে একবার তা ভেবেচিন্তে ঘোষণা করলেই অহেতুক অসন্তোষ কিংবা ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠত না।
পরীক্ষা তাড়াতাড়ি শেষ করার চিন্তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের স্মরণে আছে, গত বছরও পরীক্ষার রুটিন কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছিল। এবার অসামঞ্জস্যপূর্ণ রুটিন ঘোষণা করে প্রমাণ করা হলো গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে কোনো শিক্ষা নেওয়া হয়নি। আমরা মনে করি, ঘোষিত রুটিন এবং শিক্ষার্থীদের দাবি সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্রুত একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যাঁরা রুটিন সাজিয়েছেন তাঁরা দক্ষতা-দূরদর্শিতার পরিচয় রাখেননি। যদি তাই হতো, তাহলে এত অসামঞ্জস্য দেখা যেত না। আমরা আশা করি, বড় ধরনের তিক্ততা সৃষ্টির আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর যৌক্তিক সুরাহা করতে সক্ষম হবে।
No comments