পাবনায় ৪৫ অবৈধ ইটভাটা

পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই ফসলি জমি নষ্ট করে পাবনায় ৪৫টি ইটভাটা চলছে অবৈধভাবে। ভাটাগুলোর কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, দেখা দিচ্ছে নানা রোগব্যাধি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ১১৫টি ইটভাটা চলছে। এর মধ্যে সরকারি অনুমোদন রয়েছে ৭০টির।


বাকি ৪৫টি ভাটার কোনো অনুমোদন নেই। প্রতিটি ভাটা গড়ে উঠেছে পাঁচ থেকে সাত একর ফসলি জমির ওপর। এভাবে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভাটার কারণে প্রায় ৩০০ একর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে।
চাটমোহর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের কৃষক রজব আলী জানান, তাঁর গ্রামে এ বছর ২০ বিঘা ফসলি জমির ওপর একটি নতুন ভাটা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ওই ভাটার মালিক আবদুল মতিন জানান, জমিগুলোতে ভালো ফসল হতো না। তাই এখানে ভাটা তৈরি করা হয়েছে। এতে জমির মালিকেরাও উপকৃত হয়েছেন। তাঁরা জমিগুলো ইজারা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা পেয়েছেন।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘গত বছর অনুমোদনহীন ৩০টি ভাটা ইট তৈরি করেছে। চলতি বছর নতুন করে এমন আরও ১৫টি ভাটা যোগ হয়েছে। নতুন ভাটা তৈরি করতে হলে ফসলি জমির বিকল্প নেই। এ কারণে অধিকাংশ ভাটাই ফসলি জমি ও লোকালয়ে তৈরি হয়েছে। আমরা অবৈধ এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে জানিয়েছি। প্রশাসন কয়েক দফা এদের ইটভাটা বন্ধের নির্দেশও দিয়েছে। কিন্তু ভাটার মালিকেরা প্রভাব খাটিয়ে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরি নিষিদ্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইটভাটা তৈরি করতে কৃষি কার্যালয়ের অনুমোদন লাগে না। তাই ফসলি জমি নষ্ট হলেও কৃষি কার্যালয়কে কেউ তোয়াক্কা করে না।
সরেজমিনে এসব ভাটা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনুমোদনহীন ইটভাটাগুলোর অধিকাংশই লোকালয়ে ও ফসলি জমি নষ্ট করে গড়ে তোলা হয়েছে। পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর, বাংলাবাজার, বেড়া উপজেলার আমিনপুর, বাঁধের হাট, সৈয়দপুর, সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ও ফরিদপুর উপজেলার বেড়হাউলিয়া গ্রামে অনুমোদনহীন বেশ কিছু ইটভাটায় অবৈধ ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এসব ভাটার আশপাশের এলাকার গাছপালা মরে যাচ্ছে। শ্বাসজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ।
সদর উপজেলার বাংলাবাজার মুজিব বাঁধের বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ‘ইট পুরানে ধূমেয় ঘরবাড়ি, গাছপালা সব কালা হয়া গেছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা পেটেও এই ধূমে যাচ্ছে। এহন নিশ্বেস নিতি কষ্ট লাগে। মনে কয় পেটের মদ্যিও কালা হয়া গেছে।’
সিভিল সার্জন গাজীউল আলম বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলার কারণে মানুষের হাঁপানি, শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ, যক্ষ্মা, টনসিলের সমস্যা এবং শ্বাসজনিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। জেলায় এ ধরনের রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
অবৈধ ইটভাটার বিষয়টি স্বীকার করে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) বেনজামিন রিয়াজী বলেন, ‘অনুমোদন ছাড়া ইটভাটা চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অনুমোদনহীন বেশ কিছু ইটভাটা থেকে জরিমানা আদায় করেছি। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত থকবে।’

No comments

Powered by Blogger.