আন্তমন্ত্রণালয় সভা-মালয়েশিয়ার শর্ত সংশোধন করতে আলোচনা

পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার দেওয়া প্রস্তাবে যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো সংশোধন করতে হবে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব খোন্দকার আনোরুল ইসলাম। গতকাল রোববার সেতু ভবনে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে অনেক শর্ত আছে।


এগুলো পূরণ করতে হলে অন্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা লাগবে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মালয়েশিয়ার শর্তগুলো সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) রাখা যাবে না। দুই পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তির সময় শর্ত অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে সবাই।
এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শর্তগুলো সংশোধন করতে হবে। এসব শর্তের ওপর আইনি মতামতও নেওয়া হবে।’ কবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক হয়নি। শিগগির সই হবে। অবশ্য মালয়েশিয়ার পত্রপত্রিকায় প্রচার করা হয়েছে যে ২১ ফেব্রুয়ারি এমওইউ সই হবে। ১০ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া চিঠি দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি এমওইউ সইয়ের আহ্বান জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকারকে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনসহ অন্যান্য দেশের কোনো প্রস্তাব আছে কি না, জানতে চাইলে সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, মালয়েশিয়ার বাইরে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ প্রস্তাব দেয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছে।
মালয়েশিয়া বা অন্যদের দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হলে বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিল করতে হবে। এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সর্বশেষ অবস্থান জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন, তা-ই হবে। চুক্তি বাতিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো সার-সংক্ষেপ এখন কোন পর্যায়ে আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সার-সংক্ষেপ গেছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) চলে যেতে পারে। অথবা সেতু বিভাগ হয়েও যেতে পারে।’
বৈঠকে উপস্থিত একজন জানান, মালয়েশিয়ার সঙ্গে সই করার জন্য যে খসড়া এমওইউ করা হয়েছে, সে বিষয়ে বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তবে বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের আগে থেকে খসড়া এমওইউর সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি। বৈঠকেও এর কোনো কপি সরবরাহ করা হয়নি। শুধু পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করে মতামত চাওয়া হয়। তাই অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এভাবে ক্ষণিকের জন্য দেখে মন্তব্য করা কঠিন।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার প্রস্তাব এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত রূপ দিতে চায় সরকার। ইআরডির প্রতিনিধি আবারও স্মরণ করিয়ে দেন যে মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে হলে বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের সঙ্গে করা আগের চুক্তি বাতিল করতে হবে। সেতু বিভাগের সচিব আশ্বস্ত করেন যে এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বৈঠকে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির মতামত চাওয়া হলে তাঁরা খসড়া এমওইউ ও মালয়েশিয়ার শর্তগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরামর্শ দেন। আয়ের ওপর শুল্ক-সুবিধা ও কর মওকুফ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আনোয়ারুল ইসলাম। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম ছাড়াও ইআরডি, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.