'শত্রু সম্পত্তি' আইন-মৃত আইনকে কেন ধরে রাখার চেষ্টা
স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে পাকিস্তানের ঘোষিত নির্যাতন-নিবর্তনমূলক আইন কার্যকর থাকার কথা নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই আইনটিই এখনো নিপীড়নের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও আইনটি সরকারিভাবে এবং আদালতের রায়ের মাধ্যমে একাধিকবার মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
আইনটি প্রণীত হয়েছিল তৎকালে এ দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে যাঁরা দেশ ত্যাগ করেছিলেন, তাঁদের পারিবারিক সম্পত্তির ব্যাপারে। তাঁদের সম্পত্তিকে ঘোষণা করা হয়েছিল শত্রু সম্পত্তি। এ আইনের মাধ্যমে স্পষ্টতই দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হয়েছিল। কারণ মুসলমান কোনো নাগরিক দেশ ত্যাগ করলে সেই সম্পত্তি কিন্তু কখনো রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করেনি। তাঁর সম্পত্তি তাঁর উত্তরাধিকারী কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যরা ভোগদখল করার আইনানুগ অধিকার পেয়েছেন। কিন্তু ব্যত্যয় ঘটেছে শুধু অমুসলমানদের সম্পত্তির ক্ষেত্রে। শুধু তাঁদের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেই সরকার ক্ষান্ত হয়নি, অনেক সম্পত্তি তারা যথেচ্ছভাবে লিজও দিয়েছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু আইনটি বাতিল করে দেন ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ। সংগত কারণেই এ আইনের বলে আর কোনো সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচ থেকে যায়। একসময় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দেখা হয় সেসব সম্পত্তি। সেই অর্পিত সম্পত্তিও কার্যত শত্রু সম্পত্তিরই পরিবর্তিত নাম বলে গণ্য হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শত্রু সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের মেয়াদকালের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে তারা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রণয়ন করে। সেই আইনটিও যথার্থ ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে সব মহল থেকেই সংশোধন সাপেক্ষে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করতে বলা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী একটি শক্তিশালী মহলের ইচ্ছায় কাঙ্ক্ষিত আইন প্রণয়ন হয়ে ওঠেনি। এমনকি বর্তমান সরকার গত নির্বাচনের আগেও নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি উল্লেখ করার পরও তাদের মেয়াদের আড়াই বছর অতিক্রান্ত হলেও বিষয়টির সুরাহা করেনি। গত বছর জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু প্রস্তাব তৈরি হয়। বাস্তব হচ্ছে, এর সঠিক কোনো সমাধান এখনো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা উচ্চ আদালতের রায়ের দিকে তাকাতে পারি। উচ্চ আদালত এই আইনকে মৃত বলে ঘোষণা দিয়েছেন আগেই।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এমন একটি মৃত আইনের মাধ্যমেই দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সম্পত্তিও শত্রু সম্পত্তির খৰের নিচে পড়েছে। দেশের অহংকার হিসেবে গণ্য এমন কয়েকজন নাগরিক কিংবা বিদেশের নাগরিক হলেও যাঁদের সম্পত্তি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত হওয়ার দাবি রাখে, সেগুলোও শত্রু সম্পত্তির ভাগ্য বরণ করেছে এই দেশে। এমন একটি সংবাদ কালের কণ্ঠে গতকাল বুধবার প্রকাশিত হওয়ার পর সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগে, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শহীদ জি সি দেবের মতো মনীষীদের সম্পত্তি যেখানে সরকারিভাবে ইতিহাসের স্মারক হিসেবে সংরক্ষণ করার কথা, সেই সম্পত্তি কিভাবে শত্রু সম্পত্তি হয়ে যায়! এই মুহূর্তে জাতীয় স্বার্থে দেশের সেই সব গুণীজনের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। কারো উত্তরাধিকারী দেশে থাকলে তাঁদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সব উত্তরাধিকারীই যেন পূর্বপুরুষের সম্পত্তি ফিরে পেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু আইনটি বাতিল করে দেন ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ। সংগত কারণেই এ আইনের বলে আর কোনো সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচ থেকে যায়। একসময় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে দেখা হয় সেসব সম্পত্তি। সেই অর্পিত সম্পত্তিও কার্যত শত্রু সম্পত্তিরই পরিবর্তিত নাম বলে গণ্য হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শত্রু সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের মেয়াদকালের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে তারা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রণয়ন করে। সেই আইনটিও যথার্থ ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে সব মহল থেকেই সংশোধন সাপেক্ষে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করতে বলা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী একটি শক্তিশালী মহলের ইচ্ছায় কাঙ্ক্ষিত আইন প্রণয়ন হয়ে ওঠেনি। এমনকি বর্তমান সরকার গত নির্বাচনের আগেও নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি উল্লেখ করার পরও তাদের মেয়াদের আড়াই বছর অতিক্রান্ত হলেও বিষয়টির সুরাহা করেনি। গত বছর জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু প্রস্তাব তৈরি হয়। বাস্তব হচ্ছে, এর সঠিক কোনো সমাধান এখনো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা উচ্চ আদালতের রায়ের দিকে তাকাতে পারি। উচ্চ আদালত এই আইনকে মৃত বলে ঘোষণা দিয়েছেন আগেই।
অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এমন একটি মৃত আইনের মাধ্যমেই দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সম্পত্তিও শত্রু সম্পত্তির খৰের নিচে পড়েছে। দেশের অহংকার হিসেবে গণ্য এমন কয়েকজন নাগরিক কিংবা বিদেশের নাগরিক হলেও যাঁদের সম্পত্তি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত হওয়ার দাবি রাখে, সেগুলোও শত্রু সম্পত্তির ভাগ্য বরণ করেছে এই দেশে। এমন একটি সংবাদ কালের কণ্ঠে গতকাল বুধবার প্রকাশিত হওয়ার পর সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগে, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শহীদ জি সি দেবের মতো মনীষীদের সম্পত্তি যেখানে সরকারিভাবে ইতিহাসের স্মারক হিসেবে সংরক্ষণ করার কথা, সেই সম্পত্তি কিভাবে শত্রু সম্পত্তি হয়ে যায়! এই মুহূর্তে জাতীয় স্বার্থে দেশের সেই সব গুণীজনের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। কারো উত্তরাধিকারী দেশে থাকলে তাঁদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সব উত্তরাধিকারীই যেন পূর্বপুরুষের সম্পত্তি ফিরে পেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
No comments