সমাজে নারীর ভূমিকা by নিগার সুলতানা
ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা, সমাজ ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ আধ্যাত্মিক এবং অন্য সব গুণের ক্ষেত্রে নারীকে সর্বোচ্চ অবস্থানে দেখতে চায়। পরিবার ও মানবসমাজের সদস্য হিসেবে নারীকে সবচেয়ে কল্যাণময়ী হিসেবে গড়ে তোলাও ইসলামের অন্যতম লক্ষ্যআল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে স্পষ্টভাবে বলেছেন, সব মানুষ এক পরিবারের। সুরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'হে মানবজাতি! সেই রবকে তুমি মানো যিনি তোমাদের একটি
মূল সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সত্তা থেকে তার সাথিকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই দু'জন থেকে তিনি অসংখ্য নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন।'
এ বিশ্বের যা কিছু কল্যাণকর তার অর্ধেকই নারী জাতির অবদান। কিন্তু এই সভ্যতার যুগেও প্রতিদিন বহুসংখ্যক কিশোরী, যুবতী কিংবা নারী অমানবিকতা, নৃশংসতা, পাশবিকতা এবং নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে, নারীর অধিকার ও সম্মান যদি যথাযথভাবে উপলব্ধি করা হয় তাহলে বিভিন্ন সমাজে নারীর অবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটবে।
ইসলাম নারীকে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছে। নারী হচ্ছে মানবীয় সত্তার এক কোমল ও সুন্দর অংশ।
নারী মহান আল্লাহর এক অসাধারণ সৃষ্টি। কারণ পুরুষের উন্নতি ও পূর্ণতার পথে নারীর সহযোগিতা অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিক উন্নতি, সামাজিক অগ্রগতি, গঠনমূলক কাজ এবং বিশ্বের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনার কাজে দায়িত্ব পালনের জন্য নারীকে অবশ্যই সুযোগ দেওয়া উচিত। প্রত্যেক সুস্থ সমাজেই নারীর রয়েছে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা। আর এদিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য অভিন্ন। একজন মানুষের পক্ষে যত বেশি সম্ভব ভালো গুণাবলি অর্জন করা ও পূর্ণতার শিখরে পেঁৗছাই মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য। পবিত্র কোরআনে ভালো মানুষ এবং মন্দ মানুষের উদাহরণ দেওয়ার সময় নারী ও পুরুষ উভয়েরই দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে। নারীরা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে সবসময়ই সংকট বা সমস্যার উৎস ছিল_ এমন ভুল ধারণা দূর করা এবং নারীর মানবীয় মর্যাদা তুলে ধরার জন্যই পবিত্র কোরআন এ ধরনের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছে। ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা, সমাজ ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ আধ্যাত্মিক এবং অন্য সব গুণের ক্ষেত্রে নারীকে সর্বোচ্চ অবস্থানে দেখতে চায়। পরিবার ও মানবসমাজের সদস্য হিসেবে নারীকে সবচেয়ে কল্যাণময়ী হিসেবে গড়ে তোলাও ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ছাড়া অন্য কেউই মাতৃত্বের ও সহধর্মিণীর গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নয়। মায়েদের ত্যাগ ও ভালোবাসা ছাড়া মানবীয় প্রতিভার বিকাশ ও সমাজের স্থায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। কারণ, মায়েরাই সমাজের প্রধান ভিত্তি তথা পরিবারের প্রশান্তির উৎস। ইসলামী ব্যবস্থায় নারীর জন্য যে সীমাবদ্ধতা তা তার নারীসুলভ প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই। ইসলামে পুরুষের জন্যও ভিন্ন আঙ্গিকে এ ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতা নারী ও পুরুষের প্রতিভার অপচয় রোধ করে। আর এ জন্যই আমরা নারীকে ভোগ্যসামগ্রী হিসেবে তুলে না ধরার আহ্বান জানাই এবং তাদের পবিত্রতা ও পর্দা বা হিজাব বজায় রাখার পরামর্শ দিই।
No comments