চারদিক-ঢেমশায় এসো মিলন অঙ্গনে
স্বপন চৌধুরী ও দীলিপ চৌধুরী ঘুম থেকে ওঠেন খুব ভোরে। হাঁটতে বের হন, কোনো বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ডাক দিয়ে যান সে বাড়ির পড়ুয়া ছেলেমেয়েকে। লক্ষ্য একটাই, সবাই যাতে শিক্ষার আলো পায়। স্কুলজীবন থেকে তাঁরা জড়িয়ে ছিলেন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করতেন দেশ গড়ার কাজে।
দেশ স্বাধীন হলো। ফিরে এলেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। অনেকের মতো ফিরলেন না স্বপন-দীলিপ। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ
দেশ স্বাধীন হলো। ফিরে এলেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। অনেকের মতো ফিরলেন না স্বপন-দীলিপ। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ
হলেন। গৌরবান্বিত করলেন পুরো এলাকার মানুষকে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর বিজয়ের এই মাসে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার ঢেমশা উচ্চবিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পুনর্মিলনী উপলক্ষে তাই তাঁদের স্মৃতি হূদয় ভিজিয়ে দিচ্ছে অনেকের। ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ঢেমশা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গৌরবের শতবর্ষ উৎসব হবে। ২৪ ডিসেম্বর শনিবার সকালে উৎসব শুরু হবে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয়সংগীত ও মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশনের মাধ্যমে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে। এরপর উৎসবসংগীত ও শোভাযাত্রা। সারা দিনের আয়োজনের মধ্যে রয়েছে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। আলোচনায় প্রধান অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এ ছাড়া আলোচনা করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজিম, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সোমনাথ ঘোষ। সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সুফিয়ান। ২৫ ডিসেম্বর রোববার রয়েছে রক্তদান কর্মসূচি, স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠান, আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান। আলোচনায় প্রধান অতিথি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আলোচনা করবেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার সিরাজুল হক খান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক মো. নওশের আলী খান, জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদ ও পুলিশ সুপার মো. জেড এ মোরশেদ। ওই দিন রাতে রয়েছে কবিগানের লড়াই। রয়েছে হাডুডু, ডাংগুলি, কানামাছি, ক্রিকেট ও ফুটবল ম্যাচ। এ ছাড়া ২৩ ডিসেম্বর থেকে স্কুলের পাশের মাঠে থাকছে তিন দিনের মেলা। মেলায় খেজুর রস, শীতের পিঠা, বাঙালির ঐতিহ্যের খাবার, মহেশখালীর পান, পটিয়ার পেয়ারা, শুঁটকিসহ নানা মন্ডামিঠায়ের দোকান থাকবে।
বট আর অশ্বত্থের গ্রাম ঢেমশা। সারি সারি এসব গাছ অনেককালের সাক্ষী। কালের সাক্ষী হয়ে আছে পুরোনো জমিদারবাড়ির অনেক সুষমা শিল্পও। সেখানের গোপন কুঠুরিতে ইতিহাসের কান্নার পাশাপাশি রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়াও। ইতিহাস বলে, ঢেমশা উচ্চবিদ্যালয় আত্মপ্রকাশ করে ১৯০৭ সালে। তখন এর নাম ছিল সুবর্ণময়ী মাইনর স্কুল। জমিদার ছত্রনারায়ণ চৌধুরীর তিন ছেলে গৌরসুন্দর চৌধুরী, কৃষ্ণমোহন চৌধুরী ও রামরতন চৌধুরীর যৌথ উদ্যোগে তাঁদের মা সুবর্ণময়ী চৌধুরীর নাম অনুসারে এই বিদ্যালয়ের নাম হয়। সময়ের আবর্তনে ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে অনেকেই এখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন। অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।
একটা সময় ছিল, আশপাশের বেশ কটি গ্রাম থেকে এই বিদ্যালয়ে অনেকে পড়তে আসতেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দয়াল হরি মজুমদার বলেন, ‘পড়ালেখার মান উন্নয়নে আমরা সব সময় সচেতন। গত কয়েক বছরের এসএসসির ফল সেটা প্রমাণ করে। এ ছাড়া দেশের প্রতি মমত্ব বা অসাম্প্রদায়িক চেতনা গড়ে তোলার বিষয়টিতেও শিক্ষকেরা নজর দেন।’ শতবর্ষ উদ্যাপন পরিষদ ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এই স্কুলের ছাত্ররা প্রতিনিধিত্ব করছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই এই মিলনমেলার মূল লক্ষ্য।’ এই স্কুল ঘিরে স্বপ্নের কথাও জানালেন তিনি। বিদ্যায়তনকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কমপ্লেক্স হিসেবে গড়ে তোলা, খেলার মাঠ সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ, গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ দেওয়া, শিক্ষকদের আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা, একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার গড়ে তোলাসহ আরও অনেক কিছু রয়েছে সে তালিকায়।
দুই দিনের মিলনমেলায় অংশ নিতে পরিষদের পক্ষ থেকে এই কর্মযজ্ঞে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গৌরবের শতবর্ষে তাঁদের আহ্বান, ‘এসো আনন্দিত মিলন অঙ্গনে।’ তাঁদের আশা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, অপার নির্ভরতা, সহূদয় প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও মমত্ববোধের এক মহামিলন হবে শতবর্ষ উৎসবে। শেকড় ছেড়ে যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁরা ফিরে আসবেন শেকড়ের টানে। যাঁরা এ বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে এখন অনেক উঁচুতে তাঁরা হয়তো ঘুড়ির লাটাইয়ের আহ্বানে আবার মিলিত হবেন বিজয়ের আনন্দ সময়ে।
শান্তনু চৌধুরী
shantanu.reporter@gmail.com
বট আর অশ্বত্থের গ্রাম ঢেমশা। সারি সারি এসব গাছ অনেককালের সাক্ষী। কালের সাক্ষী হয়ে আছে পুরোনো জমিদারবাড়ির অনেক সুষমা শিল্পও। সেখানের গোপন কুঠুরিতে ইতিহাসের কান্নার পাশাপাশি রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়াও। ইতিহাস বলে, ঢেমশা উচ্চবিদ্যালয় আত্মপ্রকাশ করে ১৯০৭ সালে। তখন এর নাম ছিল সুবর্ণময়ী মাইনর স্কুল। জমিদার ছত্রনারায়ণ চৌধুরীর তিন ছেলে গৌরসুন্দর চৌধুরী, কৃষ্ণমোহন চৌধুরী ও রামরতন চৌধুরীর যৌথ উদ্যোগে তাঁদের মা সুবর্ণময়ী চৌধুরীর নাম অনুসারে এই বিদ্যালয়ের নাম হয়। সময়ের আবর্তনে ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে অনেকেই এখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন। অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।
একটা সময় ছিল, আশপাশের বেশ কটি গ্রাম থেকে এই বিদ্যালয়ে অনেকে পড়তে আসতেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দয়াল হরি মজুমদার বলেন, ‘পড়ালেখার মান উন্নয়নে আমরা সব সময় সচেতন। গত কয়েক বছরের এসএসসির ফল সেটা প্রমাণ করে। এ ছাড়া দেশের প্রতি মমত্ব বা অসাম্প্রদায়িক চেতনা গড়ে তোলার বিষয়টিতেও শিক্ষকেরা নজর দেন।’ শতবর্ষ উদ্যাপন পরিষদ ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এই স্কুলের ছাত্ররা প্রতিনিধিত্ব করছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই এই মিলনমেলার মূল লক্ষ্য।’ এই স্কুল ঘিরে স্বপ্নের কথাও জানালেন তিনি। বিদ্যায়তনকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কমপ্লেক্স হিসেবে গড়ে তোলা, খেলার মাঠ সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ, গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ দেওয়া, শিক্ষকদের আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা, একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার গড়ে তোলাসহ আরও অনেক কিছু রয়েছে সে তালিকায়।
দুই দিনের মিলনমেলায় অংশ নিতে পরিষদের পক্ষ থেকে এই কর্মযজ্ঞে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গৌরবের শতবর্ষে তাঁদের আহ্বান, ‘এসো আনন্দিত মিলন অঙ্গনে।’ তাঁদের আশা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, অপার নির্ভরতা, সহূদয় প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও মমত্ববোধের এক মহামিলন হবে শতবর্ষ উৎসবে। শেকড় ছেড়ে যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁরা ফিরে আসবেন শেকড়ের টানে। যাঁরা এ বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে এখন অনেক উঁচুতে তাঁরা হয়তো ঘুড়ির লাটাইয়ের আহ্বানে আবার মিলিত হবেন বিজয়ের আনন্দ সময়ে।
শান্তনু চৌধুরী
shantanu.reporter@gmail.com
No comments