সাকিব নাম্বার ওয়ান by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

'নাম্বার ওয়ান শাকিব খান'_ ঢালিউডের হিট ছবির একটি। ছবির কল্পনায় চাইলেই এমন একটি নাম দিয়ে দেওয়া যায়, সিনেমা হলের অন্ধকারে বসা দর্শকদের কাছে তা হিটও হয়ে যায়; কিন্তু বাস্তব জীবনে ক'জন 'নাম্বার ওয়ান' হতে পারেন? কেউ পারুক আর না পারুক, ক্রিকেটের ময়দানে কিন্তু একজনই 'নাম্বার ওয়ান' রয়েছেন বাংলাদেশের। যিনি শুধু দেশের গণ্ডিতেই নায়ক নন, পুরো ক্রিকেট বিশ্বের কাছেই 'অলরাউন্ডার নাম্বার ওয়ান'। তিনি সাকিব আল হাসান,


গতকাল দেশের হয়ে গৌরবগাথা রচনা করেছেন। এতদিন শুধু বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়ানডের অলরাউন্ডার র‌্যাংকিংয়েই নাম্বার ওয়ান ছিলেন, গতকাল আইসিসি থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে_ 'বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এখন থেকে রিলায়েন্স আইসিসি টেস্ট অলরাউন্ডার র‌্যাংকিংয়ে এক নম্বর জায়গাটি দখল করেছেন।' দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিসের ৩৬৯৬ দিনের পোক্ত আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছেন এক বাংলাদেশি। রেকর্ড গড়েছেন টেস্ট র‌্যাংকিং ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী (২৪ বছর ২৭২ দিন) অলরাউন্ডার হয়ে। ক্যালিসের চেয়ে ৭ পয়েন্ট বেশি ৪০৪ নিয়ে কাল থেকে বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হয়েছেন সাকিব। শুধু বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে নন, উপমহাদেশের কোনো ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট
অলরাউন্ডারের এক নম্বর জায়গাটি প্রথমবারের মতো দখল করলেন সাকিব আল হাসান।
সমর্থকরা তো বটেই, সাকিব নিজেও এ অর্জনকে সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে দেখছেন। 'পাকিস্তান সিরিজ শেষ হওয়ার পরই প্রথম জানতে পারলাম। ভীষণ ভালো লাগছে। এতদিন শুধু ওয়ানডেতেই সেরা ছিলাম,আজ থেকে টেস্টেও এক নম্বর। ভাবতেই দারুণ লাগছে...।' বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তখনই প্রথম আইসিসি থেকে আসা খবরটি জানতে পারেন। যেটাকে বছরের সেরা উপহার বলা যায় সাকিবের। কেননা অক্টোবরে জিম্বাবুয়ে সিরিজে ব্যর্থতার পর অধিনায়কত্ব হারাতে হয় সাকিবকে। খোয়াতে হয় একটি ব্যক্তিগত সম্মানও; কিন্তু অধিনায়কত্ব খোয়ালেও পারফরম্যান্সে ভাটা পড়তে দেননি তিনি। এ বছর বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে মোট ৫টি। যেখানে সাকিব মোট রান করেছেন ৪৫৪, উইকেটও শিকার করেছেন ২১টি। দলের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা নিম্নমুখী হলেও সাকিব ছিলেন স্রোতের বিপক্ষে সাঁতরে চলা একটি প্রাণ। যিনি পাকিস্তান সিরিজেও সব খারাপের মধ্যে ছিলেন কিছু ভালোর উদাহরণ হয়ে। ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৪ রানের পাশাপাশি ৬ উইকেট শিকার করেছেন। যা কি-না এর আগে কোনো বাংলাদেশি করে দেখাতে পারেননি। এ সিরিজে মোহাম্মদ ইউনিসের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০৯ রান সাকিবের। উইকেট শিকারিদের মধ্যেও তিনি বাংলাদেশিদের মধ্যে শীর্ষে।
হোয়াইটওয়াশ হওয়া সিরিজে যেখানে সবার মুখে দাগ পড়েছে, সেখানে সাকিব একাই ছিলেন কিছুটা রঙিন হয়ে। শুধু পাকিস্তান সিরিজের পারফরম্যান্সে নয়, বিগত জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ধারাবাহিকতার ফল পেয়েছেন সাকিব আইসিসির কাছ থেকে। রিলায়েন্স আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে অলরাউন্ডার তালিকায় শীর্ষে থাকার পাশাপাশি ব্যাটিং এবং বোলিং তালিকাতেও কিছুটা এগিয়েছেন। টেস্ট ব্যাটিং র‌্যাংকিংয়ে সাকিবের অবস্থান এখন ৩১ আর বোলিংয়ে ৭ নম্বরে। ওয়ানডে ক্রিকেটের অলরাউন্ডার র‌্যাংকিয়েও ৪২০ পয়েন্ট নিয়ে সাকিব শীর্ষে রয়েছেন। ওয়ানডের বোলিং ৭ আর ব্যাটিংয়ে ২৪ নম্বর জায়গায় রয়েছে সাকিব আল হাসানের নাম। টেস্ট অলরাউন্ডার র‌্যাংকিংয়ে সাকিবের চেয়ে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন জ্যাক ক্যালিস। তারপরই রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টরি, অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন এবং ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের টেস্ট খেলার সুযোগ কম। এর মাঝে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের মাঠে খেলবে শ্রীলংকার বিপক্ষে এবং অস্ট্রেলিয়া মোকাবেলা করবে ভারতের সঙ্গে। সুতরাং সাকিবের শীর্ষস্থান ধরে রাখাটা নির্ভর করছে লংকানদের বিপক্ষে জ্যাক ক্যালিস এবং ভারতীয়দের বিপক্ষে শেন ওয়াটসনের পারফরম্যান্সের ওপর। কেননা সাকিবের চেয়ে ক্যালিস ৭ আর ওয়াটসন ২৫ পয়েন্ট পিছিয়ে।
সমর্থকরা এসব নিয়ে ভাবতে পারেন কিন্তু সাকিব এসব নিয়ে মোটেই ভাবেন না। তার কাছে বর্তমানটাই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। আর সে কারণেই তিনি মাঠে গিয়ে পারফর্ম করতে পারেন সবকিছু ভুলে।

No comments

Powered by Blogger.