প্রবৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা-জনজীবনের দুর্ভোগ কমানো প্রয়োজন
অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, আমাদের দেশের অর্থনীতি আজ চাপের মুখে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। আর এ জন্য তিনি আর্থিক খাতে অভ্যন্তরীণ নীতি ও ব্যবস্থাপনাগত কিছু ত্রুটির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। সন্দেহ নেই, এসব ত্রুটির কারণে সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তার পরও খোলামেলা স্বীকারোক্তির জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তাঁকে আরও বেশি ধন্যবাদ জানাতে পারতাম, এই
পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি কী করতে যাচ্ছেন অথবা তাঁর পরিকল্পনাগুলো কী কী এবং সেগুলো থেকে আমরা কতটুকু আশাবাদী হতে পারি_সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা দিলে। তবে তাঁর দু-একটি বক্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বেশি দামে উৎপাদন করা নিয়ে বিদ্যমান সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, 'মিডিয়াগুলোতে বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমালোচনা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরাও একই কথা বলছেন। কিন্তু আমি এ বিষয়ে চিন্তিত নই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ার কারণেই গত বছর দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪১ শতাংশ।' রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়াটা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ফলে দেশে জ্বালানি তেলের আমদানির পরিমাণ যে এক লাফে দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে গেল, সে কারণে এই খাতে ভর্তুকিও প্রায় দ্বিগুণ হলো, অন্যদিকে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেল এবং সেখানেও বিশাল ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, ব্যাংক থেকে সরকারকে অধিক হারে ঋণ নিতে হচ্ছে_এসব কারণ কি দেশের মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলেনি? সেই মূল্যস্ফীতির অভিঘাত তো জনজীবনকে রীতিমতো দুর্বিষহ করে তুলেছে। তার পরও এসব খাতে ভর্তুকি কমানোর নামে এসব সেবা ও পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকেই বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি থেকে ভর্তুকি মেটাতে পারলে এই প্রশ্ন হয়তো উঠত না, কিন্তু তা তো হয়নি। আর বর্তমান সরকারের তিন বছরের মাথায় এসেও যদি দেশ ক্রমেই বেশি করে বেশি দামের বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল হতে থাকে, তাহলে মিডিয়াগুলোর সমালোচনা না করে উপায় থাকে কি?
তিন বছরে সরকারের অনেক ব্যর্থতার মধ্যে দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারাটা খুবই পীড়াদায়ক। সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরসহ সীমান্ত ছাপিয়ে অবৈধ পণ্যের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার হার কমে যাচ্ছে, বাড়ছে হুন্ডির মতো অবৈধ পথ। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে নানা উপলক্ষে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তদুপরি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে মূল্যস্ফীতি যদি কেবল বাড়তেই থাকে, তাহলে অর্থমন্ত্রীর মতো আমরা তো নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। দেশে মূল্যস্ফীতি এখন দুই অঙ্কের ঘরে বা দশ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা আশা করি, সরকার কেবল প্রবৃদ্ধির চিন্তায় নিজেদের আটকে না রেখে জনজীবনের দুর্ভোগের দিকগুলো নিয়েও চিন্তিত হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
তিন বছরে সরকারের অনেক ব্যর্থতার মধ্যে দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারাটা খুবই পীড়াদায়ক। সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরসহ সীমান্ত ছাপিয়ে অবৈধ পণ্যের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার হার কমে যাচ্ছে, বাড়ছে হুন্ডির মতো অবৈধ পথ। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে নানা উপলক্ষে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তদুপরি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে মূল্যস্ফীতি যদি কেবল বাড়তেই থাকে, তাহলে অর্থমন্ত্রীর মতো আমরা তো নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। দেশে মূল্যস্ফীতি এখন দুই অঙ্কের ঘরে বা দশ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা আশা করি, সরকার কেবল প্রবৃদ্ধির চিন্তায় নিজেদের আটকে না রেখে জনজীবনের দুর্ভোগের দিকগুলো নিয়েও চিন্তিত হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
No comments