শুধু বন্ধ নয়, আইন ভঙ্গের উপযুক্ত শাস্তি হোক-এবার হাওরে ইটভাটার উৎপাত


যেখানেই দুর্নীতি-অনিয়ম-পরিবেশ ধ্বংসের ঘটনা, সেখানেই সরকারদলীয় লোকজনের যোগসাজশ মোটামুটি অবধারিত। এরই চলতি উদাহরণ হলো হাকালুকি হাওরে যুবলীগ নেতার ইটভাটা চালু করা। সিলেটের হাকালুকি হাওর প্রতিবেশ-সংকটাপন্ন এলাকা, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে এমন এলাকার প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এই অনিয়মের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট কারও
কোনো তৎপরতা ছিল না। তবে, বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোয় এ বিষয়ে সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পর পরিবেশ অধিদপ্তর স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ইটভাটা দুটি প্রাথমিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, প্রথম আলোয় খবর প্রকাশের আগে তাঁরা এ বিষয়ে কিছু জানতেনও না।
হাওর এলাকা বছরের অর্ধেক সময় পানিমগ্ন থাকে, বাকি সময় সেখানে ধানচাষ হয়। একে তো হাওর, দ্বিতীয়ত কৃষিজমি হওয়ায় সেখানে ইটভাটা করার কোনো সুযোগই নেই। তার পরও সেখানে চিমনিবিহীন দুটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। একটির মালিক ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আব্দুল মছব্বির, অন্যটি তাঁর বন্ধু হুমায়ুন কবীরের। তাঁরা কেউই ইটভাটা করার জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি, পনিবেশ অধিদপ্তরও সময়মতো হস্তক্ষেপ করেনি। এই সুযোগে দুটি ইটভাটা চালু হয়েছিল, গাছ কেটে কাঠ দিয়ে সেই ইট পোড়ানোও চলছিল। এতে করে হাওর এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এ ধরনের প্রবণতা এখনই বন্ধ না করা গেলে অচিরেই ইটের ভাটার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু হতাশার ব্যাপার হলো, যে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ছিল প্রতিবেশ-সংকটাপন্ন এলাকায় নিয়মের বাইরে কিছু হওয়া ঠেকানো, তাঁরা রীতিমতো উদাসীন। সরকারদলীয় লোকের প্রভাব এবং সরকারি প্রশাসনের উদাসীনতা তাই দুজনে দুজনার হয়ে হাকালুকি হাওরের ক্ষতি করতে পারছে।
আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ইটভাটা দুটি স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করবে এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত, অব্যাহত পরিবেশ ধ্বংসের কার্যকলাপ থেকে তাদের নেতা-কর্মীদের বিরত রাখা।

No comments

Powered by Blogger.