তামিমের দুঃস্বপ্নের সিরিজ
বলা হতো পরম বন্ধু! দু'জনের একজন ছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক, অন্যজনের কাঁধে ছিল সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর সেই পদবিটা চলে গেলেও এক বন্ধু রয়েছেন তার মতোই, অন্যজন ছিটকে গেছেন অনেকটা দূরে। এক বন্ধু সাকিব যখন বিশ্বসেরা টেস্ট অলরাউন্ডারের সম্মান মুকুট পেয়েছেন। অন্যজন তামিম ইকবাল রানখরায় ভুগে কাহিল হয়ে পড়েছেন। ঘাড়ে ব্যথা বলে যিনি জাতীয় লীগ খেলেননি, হাঁটুতে ব্যথা বলে যিনি চট্টগ্রাম
ট্রেনিং ক্যাম্প শেষ করেননি। শেষ বেলায় যিনি টি২০ ম্যাচটিও খেলতে সাহস দেখাননি_ সেই তামিম মাঠে নামলেও, রানের দেখা পাননি। কখনও হাফিজের বলে, কখনও উমর গুলে নিজেই গুলিয়ে গেছেন তামিম।
টেস্ট সিরিজে ৫২.২৫ গড়ে সাকিবের সংগ্রহ ২০৯ রান। এর মধ্যে আছে ক্যারিয়ারসেরা ১৪৪ রানের ইনিংসটি। বল হাতেও বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনিই সেরা, দুই টেস্টে ৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া মাঝারি মানের পারফরম্যান্স অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, নাসির হোসেনের। মুশফিক দুই টেস্টে করেছেন ১৪৬ রান। এর মধ্যে মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের ৫৩ সর্বোচ্চ। তবে দলের তরুণ সদস্য নাসির হোসেন দুই টেস্টে ১৩০ রান করলেও দলের অনেকের চেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। বিশেষ করে মিরপুরে বিপর্যয়ের মুখে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি পাক বোলিং আক্রমণকে রুখে দিয়ে তিনি যে সাহসিকতার সঙ্গে ৭৯ রানের ইনিংসটি খেলেন, সত্যিই তা প্রশংসার যোগ্য। তবে পুরো সিরিজে ছন্নছাড়া ব্যাট চালালেও মিরপুরে ৯৭ রানের চমৎকার ইনিংস দিয়ে পিঠ বাঁচিয়ে নিয়েছেন শাহরিয়ার নাফীস। আর ডেব্যু ইনিংসে ৭৮ রানের ঝলমলে ইনিংস খেললেও পরের তিন ইনিংসে ব্যর্থ নাজিমউদ্দিন।
তবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করার পর এত বাজে সময় কাটেনি তামিমের। মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের ২১ রানই এ সিরিজে তার সর্বোচ্চ। প্রথম ইনিংসে করেন ১৪ রান। চট্টগ্রাম টেস্টের উভয় ইনিংসে তার রান ৯ এবং ১৫। দুই টেস্টে তার সংগ্রহ ১৪.৭৫ গড়ে ৫৯ রান। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শুরুতেই বিতর্কের মুখে পড়েন তামিম। ইনজুরির জন্য ২৯ নভেম্বর সিরিজের একমাত্র টি২০ ম্যাচটি খেলেননি তিনি। গুজব আছে, অনেকটা ইচ্ছে করেই ওই ম্যাচ খেলেননি। এরপর ওয়ানডে সিরিজে দলে ফিরলেও কিছুই করতে পারেননি। তার খেয়ালি ব্যাটিংয়ের জন্য চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডের আগে টেকনিক্যাল কমিটি নাকি তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার কথা পর্যন্ত ভেবেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত মাঠে নেমেছিলেন তিনি। মাঠের বাইরের এসব ঘটনা নিশ্চিতভাবেই এ ড্যাশিং ওপেনারের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে। তবে মাঠের বাইরের ঘটনার সঙ্গে দুর্ভাগ্যও পিছু নিয়েছিল তার।
মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ ভালো ব্যাট চালাচ্ছিলেন তামিম; কিন্তু উমর গুলের একটি বাউন্সার তার হেলমেটে লেগে স্লিপে মিসবাহর হাতে গেলেও আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
তামিমের মতো আরও একজন সিরিজটা মনে রাখতে চাইবেন না। তিনি হলেন সহ-অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। চার ইনিংসে তার মোট রান ৫০। এর মধ্যে মিরপুরে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২ রান করেছেন। তবে ওই ইনিংসটির সমাপ্তির ধরন দেখে তার টেস্ট খেলার যোগ্যতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের বিপক্ষে ধারাবাহিকতার জন্য গত বছরের শুরুতে সুনীল গাভাস্কারের মতো মানুষ যাকে বিশ্বের সেরা ৬ নম্বরের মর্যাদা দিয়েছিলেন_ এ সিরিজে সেই রিয়াদ একটু উপরে ব্যাট করতে নেমেই চরম ব্যর্থ। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ক্যাচও ড্রপ করেছেন তিনি।
বোলিংয়ে সাকিবের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ উইকেট দখল করেছেন বাঁ-হাতি স্পিনার ইলিয়াস সানি। তবে এ সিরিজে বল করার পর্যাপ্ত সুযোগ তিনি পাননি। যদিও অধিনায়ক মুশফিক এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, কন্ডিশন এবং ম্যাচের পরিস্থিতির কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। তবে সাকিবের পর বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন সাত বছর পর টেস্ট খেলতে নামা পেসার নাজমুল হোসেন। এক টেস্টে তিনি পেয়েছেন ৩ উইকেট।
No comments