ইবাদতের নিয়ত by মুফতি মাহফূযুল হক

হুজুর, নামাজের নিয়তটা একবার বলে দিন। জানাজার নামাজ ও ঈদগাহে ইমামের কাছে ওই আরজি পেশ করতে শোনেননি_ এমন মানুষ সম্ভবত এ দেশে পাওয়া যাবে না। আমাদের ইমাম সাহেবরা মুসলি্লদের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আরবি ও বাংলা ভাষায় নামাজের নিয়ত বলে দেন। সঙ্গে আরও বলেন, যারা আরবি পারেন তারা আরবিতে নিয়ত করবেন। আর যারা আরবি নিয়ত পারেন না তারা বাংলায় নিয়ত করবেন।


রমজান মাস ঘনিয়ে এলে বিভিন্ন ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সেবা সংস্থা সেহরি ও ইফতারির সময়সূচি ছাপিয়ে বিলি করে। এর অধিকাংশটিতেই রোজা ও তারাবির নিয়ত আরবি ও বাংলায় লেখা থাকে।
প্রায় সব গ্রামের হাটে মাঝে মধ্যেই মাইকে শোনা যায়, আসুন সহজ নূরানি নামাজ শিক্ষা বই নিয়ে যান। আমাদের এ বইয়ে পাবেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত, শবেবরাতের নামাজের নিয়ত, শবেকদরের নামাজের নিয়ত, তারাবি নামাজের নিয়ত, দুই ঈদের নামাজের নিয়ত, জানাজা নামাজের নিয়ত, রোজার নিয়ত। বিশেষ করে রমজান ও শবেবরাতের আগে এ বই প্রচুর বিক্রি হয়। যে কোনো নামাজের প্রাক্কালে নিয়ত নিয়ে এই যে বলাবলি ও মাতামাতি শরিয়ত অনুসারে এ নিয়তের রূপরেখা কী_ তা একটু তলিয়ে দেখা দরকার।
নামাজসহ সব ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত নিয়ত। সব মুহাদ্দিস ও ফকিহ এক মত যে, নিয়ত খাঁটি না হলে ইবাদতের কোনো সওয়াব পাওয়া যাবে না। হাদিসে আছে, অবশ্যই সব কাজের পারলৌকিক প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। কোরআনে আছে, মানুষকে খাঁটি নিয়তে ইবাদত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়ত ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিভাষা। ইসলামে এর স্বতন্ত্র সংজ্ঞা আছে। মোল্লা আলী কারির (রহ.) মতে, 'আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোনো কাজের ইচ্ছা মনে পোষণ করাকে নিয়ত বলে।' আল্লামা ইবনুল আবিদীনের মতে, 'কোনো কাজ সম্পাদন করা বা বর্জন করার ব্যাপারে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ও আনুগত্য করার ইচ্ছাকে নিয়ত বলে।' ফতোয়ায়ে আলমগীরিতে নামাজের নিয়তের পরিচয় দেওয়া আছে, 'নামাজ আরম্ভ করার ইচ্ছা।' ওপরে বর্ণিত সব সংজ্ঞা দ্বারা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে যায়, নিয়ত করতে হয় মনে মনে। মুখে উচ্চারণ করাকে নিয়ত বলে না। এরপরও আমাদের বিজ্ঞ ফকিহরা আরও খোলামেলা ও সাদামাটা আলোচনা করে নিয়তের বিষয়টি উম্মাহর জন্য অতি সহজ করে দিয়েছেন।
ইবাদতের নিয়ত মুখে বলার প্রামাণ্য আলোচনা করতে গিয়ে আল্লামা ইবনুল হুমাম মন্তব্য করেছেন, 'কোনো সহিহ বা জয়িফ হাদিসে বর্ণিত নেই যে, নবী (সা.) নামাজ শুরু করার প্রাক্কালে মুখে বলতেন অমুক নামাজের নিয়ত করলাম। কোনো সাহাবি তাবেয়িরও এরূপ বলার প্রমাণ নেই। এমনকি চার ইমামও এরূপ বলতে বলেননি। বরং হাদিসে আছে, নবী (সা.) নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলতেন।' মূলত আরবি বা বাংলায় মুখের কোনো ভাষায় নিয়ত আদায় হয় না। তা আদায় হয় মনের ইচ্ছা দ্বারা। আপনি কী কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন, তা কেন করবেন, তা আপনার ওপর ফরজ নাকি নফল_ এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর কাজ শুরু করার প্রাক্কালে নিশ্চিতরূপে আপনার মনে যদি জানা থাকে তাহলেই বুঝবেন নিয়ত হয়ে গেছে। এবার সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত ইবাদত শুরু করুন।

No comments

Powered by Blogger.