প্রচ্ছদ-সৈয়দ শামসুল হক : কথাসাহিত্যের পরিব্রাজন by জাকির তালুকদার
সৈয়দ শামসুল হকের একটি সাহিত্যদৃষ্টি রয়েছে। সেই সাহিত্যদৃষ্টি একই সঙ্গে মৌলিক এবং চলিষ্ণু। আমাদের এই বাংলা ভাষায় তো বটেই, পৃথিবীর সব ভাষাতেই এমন অজস্র লেখক ছিলেন এবং রয়েছেন, যারা নিয়মিত গল্প-উপন্যাস লিখে চলেন। বছরের পর বছর ধরে, যুগের পর যুগ ব্যেপে তারা গল্প রচনা করে চলেন, উপন্যাস নির্মাণ করে চলেন এবং যথানিয়মে সবাই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যান। সময় নির্মমভাবে তাদের সবাইক নিশ্চিহ্ন করে
ফেলে বিস্মৃতির ধূলির আচ্ছাদন নির্মাণ করে। এমন নয় যে তাদের গল্প-উপন্যাস সমকালে কিছুটা বিলোড়ন তোলে না। আবার এমনও নয় যে সমকালীন মানদণ্ডে তাদের কোনো কোনো রচনা মোটামুটি উৎকৃষ্ট মানের লেখা বলে বিবেচিত হয় না। তবু তারা বিলীন হয়ে যান সময়ের গর্ভে। এই বেদনাদায়ক পরিণতির পেছনে নিশ্চয়ই একাধিক কারণ বিদ্যমান। তবে সবার ক্ষেত্রে যে কারণটি সাধারণভাবে দেখতে পাওয়া যায় তা হচ্ছে, তাদের কোনো নিজস্ব সাহিত্যভাবনা, সাহিত্যদৃষ্টি বা সাহিত্যদর্শন থাকে না। সৈয়দ শামসুল হকের একটি নিজস্ব সাহিত্যদর্শন আছে। এবং সেই দর্শনের সঙ্গে মিল রেখে তিনি নিজের জন্য পরিপূর্ণ নিজস্ব একটি সাহিত্যভাষাও নির্মাণ করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। সেই কারণে, সৈয়দ হকের সব রচনাই তার নিজস্বতাচিহ্নিত রচনা। তার কোনো রচনাই_ যেমন কবিতা, যেমন গল্প, যেমন উপন্যাস, যেমন কাব্যনাটক, যেমন মঞ্চনাটক, যেমন বিশেষ ধরনের প্রবন্ধগুলো_ নিছক কব্জির কলাকৌশলমাত্র নয়। বরং সব সৃষ্টিই একেকটি অসাধারণ কারুকৃতি। সৃজন উৎসবে মেতে ওঠা মননফসল। যেহেতু কথাসাহিত্য হচ্ছে প্রত্যক্ষত সবচেয়ে জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্যমাধ্যম, তাই অনেকেই লেখকের গল্প-উপন্যাসের মধ্যে ফুটে ওঠা দর্শনকেই লেখকের জীবনদর্শন বলে ভেবে নিতে অভ্যস্ত। আমরা যদি সেই সিদ্ধান্ত পর্যন্ত যেতে না-ও চাই, তবু সৈয়দ হক সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, জীবনকে দেখার যে বিশেষ ধরনটিকে তিনি আবিষ্কার করেছেন, তার কথাসাহিত্যেও সেই দর্শনের ছায়াপাত ঘটেছে। কখনও প্রবলভাবে, কখনও প্রচ্ছন্নে।
মনে রাখা দরকার, সাতচলি্লশ-উত্তর আমাদের এই ভূখণ্ডে কথাসাহিত্যের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় শূন্যহাতে। দেশবিভাগের অনেক বঞ্চনার মতো সাহিত্যিক অবকাঠামো থেকেও পুরোপুরি বঞ্চিত হওয়ার কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে আমাদের লেখক-প্রকাশকদের। মুদ্রণ অবকাঠামো, প্রকাশনা অবকাঠামো, বিপণন অবকাঠামো_ সবকিছুই ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক। ফলে এই ভূখণ্ডের কথাসাহিত্যের কর্মীদের জন্য রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, প্রভাতকুমার এবং তাদের পরবর্তী সতীনাথ ভাদুড়ী-জগদীশ গুপ্ত, মানিক-তারাশঙ্কর-বিভূতিভূষণের নান্দনিক উত্তরাধিকার ভিন্ন আর কোনো পুঁজি ছিল না বললেই চলে। এই রকম পরিস্থিতিতে কথাসাহিত্যের চর্চা করেছেন ইবরাহীম খাঁ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, মাহবুব-উল-আলম, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল ফজল, আবু জাফর শামসুদ্দীন, মবিন উদ্দিন আহমেদ, শাহেদ আলী, শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আবু রুশদ, আবু ইসহাক প্রমুখ। শওকত ওসমান ছিলেন এদের মধ্যে তুলনামূলক প্রাগ্রসর। তবে পরিপূর্ণ সাহিত্যিক একজনই ছিলেন। তিনি হচ্ছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তিনি শুধু নিজের ভাষার কথাসাহিত্যের উত্তরাধিকারকেই বহন করেননি, উপরন্তু বিশ্বসাহিত্যে যেসব সাহিত্যিক এবং মতাদর্শিক ভাব-আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছিল, সেগুলোর সঙ্গেও সমন্বিত করেছিলেন নিজের মনন এবং লেখনীকে। ফলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ খুব দ্রুতই নিজের গল্প-উপন্যাসকে তুলে নিতে পেরেছিলেন এমন এক উচ্চতায়, যেখানে তার সমকালীন আর কেউই পেঁৗছুতে পারেননি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর শক্তিশালী উত্তরপুরুষ হচ্ছেন সৈয়দ শামসুল হক।
০২.
সৈয়দ শাসমুল হক কথাসাহিত্যে কাজ করছেন প্রায় ষাট বছর ধরে। খুব সঙ্গত কারণেই তার সূচনালগ্নের রচনা আর বর্তমানকালের রচনা এক নয়। মনোযোগের সঙ্গে পূর্বাপর পাঠ করলে বোঝা যায়, সৈয়দ হকের গল্প-উপন্যাসের বাঁকবদল ঘটেছে খুবই ধীরে ধীরে। অনেকটা প্রাকৃতিক বিবর্তনের মতো ধীর কিন্তু অমোঘ নিয়মে। ফলত তার গল্পভাবনা এবং উপন্যাসভাবনাও চলিষ্ণুতার ধর্ম মেনেই বিবর্তিত হয়েছে ক্রমান্বয়ে। তিনি এখন যে ধরনের গল্প বা উপন্যাস লেখেন, সেগুলো আর আগের মতো নেই। যেমন তিনি নিজের বর্তমান সময়ের গল্পকে আর গল্প বলেন না। বলেন 'গল্প-প্রবন্ধ'। সেই গল্প বা গল্প-প্রবন্ধকে আবার তিনি এককথায় বলেন 'বিশেষ ধরনের মিছে-কথা'। তার জবানীতে সেই মিছে-কথার একমাত্র দাবি এই যে, তার ভেতরে সম্ভবপরতা থাকতে হবে ষোল আনা, নইলে তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। আমরা এখন জানি যে, এই সম্ভবপরতাই রয়েছে গল্প-উপন্যাসের গল্প-উপন্যাস হয়ে ওঠার মূলে। কল্পনা নয়, বানানো কিছু নয়, যা হয়নি কিন্তু অবশ্যই হতে পারত_ মানুষের তৈরি মানুষ নিয়ে যাবতীয় কথা-কাহিনী তো এটাই।
সৈয়দ হক আমাদের দেশের সেই প্রজন্মের লেখক, যারা একটি নতুন দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে গড়ে উঠতে দেখেছেন। দেখেছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে তৈরি করার সরকারি ও সামাজিক প্রক্রিয়াসমূহ এবং নিজেদের লেখায় ধারণও করেছেন মধ্যবিত্তের সেই গড়ে ওঠার প্রক্রিয়াগুলোকে। পূর্ববঙ্গীয় কৃষকের পাকিস্তান আন্দোলন-আচ্ছন্নতা, এবং পাকিস্তান প্রাপ্তির পরপরই প্রত্যাশা-পরিপন্থী ঘটনাবলির কারণে বিমূঢ় ও হতচকিত হয়ে পড়াও তাদের মতো সৈয়দ শামসুল হকেরও দৃষ্টি এড়ায়নি। এই সবকিছুর অন্তরালে যে অসুস্থ রাজনীতি, সৈয়দ হক সেই রাজনীতিটিকেও শনাক্ত করেছেন। তবু রাজনৈতিক লেখক বলতে যা বোঝায়, সৈয়দ শামসুল হক তা নন। তিনি রাজনীতিকে বুঝে নিতে চান ব্যক্তির ওপর রাজনীতির অভিঘাত এবং সেই ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া দেখার মাধ্যমে। রাজনীতি এবং সময় ব্যক্তিকে বাধ্য করে তার সেই মূল্যবোধগুলোকে পুনর্বিবেচনা করতে, যেগুলোকে তিনি শাশ্বত বলে ধারণা করে এসেছেন। ধরা যাক সৈয়দ হকের প্রথম দিককার লেখা 'সম্রাট' গল্পের কথা। নিজের সংসারের সম্রাট জহির আহমেদ। তিনি নিজেকে সম্রাটই ভাবেন সংসারের। সংসারের অন্য সদস্যরা সেটা মেনেও নেন। কারণ পুরুষতান্ত্রিক ও এক ব্যক্তির উপার্জনকেন্দ্রিক সংসার এভাবেই বয়ে চলতে অভ্যস্ত ছিল বহুকাল ধরে। জহির সাহেব স্ত্রী-সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেন নিজের সব ইচ্ছা-অনিচ্ছা। পুরো গল্পে তার একটি দমচাপা আবহ ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পকার। কিন্তু চিরকাল যে তার নিজের সংসারের সবকিছু তার ইচ্ছাতেই ঘটবে, তা তো নয়। জহির সাহেব না জানলেও বা মানলেও তার ব্যত্যয় ঘটবেই। ছাত্ররা যখন ভাষার দাবিতে আন্দোলন করে, সেই আন্দোলনকে অরাজকতা মনে করেন তিনি। তার বাইশ বছর বয়সের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ূয়া ছেলে শাহেদ যেন নিজেকে কোনোমতেই সেই সব অরাজক আন্দোলনে না জড়ায়, সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেন তিনি। সংসারের সম্রাট ভেবেছিলেন তার সতর্কবাণীই যথেষ্ট। কিন্তু সময়ের আহ্বান শাহেদের কানে ঠিকই পেঁৗছে গেছে। সেই আহ্বানের শক্তি পিতার নিষেধের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি প্রখর। একদিন জহির সাহেব নিজেদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া মিছিলের প্রথম সারিতে স্লোগানরত শাহেদকে দেখতে পান। আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, শাহেদ তার পিতার সামনে নিজেকে গোপন করার কোনো চেষ্টাই করেনি বরং স্লোগানের দৃপ্ততা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। সংসারের সম্রাট এই ধৃষ্টতা সইতে পারেননি। পুলিশ শাহেদকে গ্রেপ্তার করতে এলে তিনি নিদ্বর্িধায় গম্ভীর নিরাসক্তভাবে তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন পুত্রকে। কিন্তু পর মুহূর্তেই টের পেলেন তার সেই সংসার-সাম্রাজ্য মোটেও অটুট নেই। গল্পটি শুরু হয়েছিল বাইশ বছর আগে তার নিজ হাতে পোঁতা আমগাছের প্রসঙ্গ দিয়ে। শাহেদের বয়সও বাইশ। গল্প শেষে যুগপৎ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। শাহেদকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, হঠাৎ উদ্দাম বাতাসে আমগাছটি দুলতে থাকে, আর সেদিনই প্রথম হাঁটার জন্য ক্র্যাচ নিতে ভুলে যাওয়ায় জহির সাহেব সিঁড়িতে গড়িয়ে পড়েন। গল্পে সবগুলো ঘটনা একসঙ্গে মিলে একটি প্রতীকী ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তোলে।
এভাবেই সৈয়দ হক পূরণ করেন তার একের পর এক গল্পের অন্তর্বয়ন। তিনি পাঠককে দেখিয়ে দিতে পারেন যে, রাজনীতির উল্লেখ ছাড়াও রাজনীতিকে কেন্দ্র করে গল্প নির্মিত হতে পারে। এবং সেই গল্প মানুষের সংগ্রাম ও সংগ্রামশীলতার পাশাপাশি জীবনযাপনের দ্বন্দ্বকেও যথেষ্ট নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। তবে মাঝে মধ্যে সমাজকে পাশ কাটিয়ে, সমাজের দ্বান্দ্বিকতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি ব্যক্তিকে মূল চালকের আসনে বসিয়ে দেন। এটি ব্যক্তিপূজা প্রবণতায় আচ্ছন্ন আমাদের দক্ষিণ এশীয় মানসের সাধারণ ত্রুটি। এই প্রবণতা এতটাই সর্বজনীন যে এটিকে ত্রুটি না বলে অনেক সময়ই স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়ে থাকে। সৈয়দ শামসুল হকের মতো প্রাগ্রসর চিন্তার লেখকও এই প্রবণতার শিকার হয়ে পড়েন। আবার কাটিয়েও ওঠেন নিজেই। এখানেই তার শক্তির পরিচয়। এখানেই তার প্রাগ্রসরতার চিহ্ন। সেই প্রাগ্রসরতা ধরা পড়ে 'রক্তগোলাপ' উপন্যাসে। রচনাকাল জানা না থাকলে এই উপন্যাসটিকে আমরা সহজেই লাতিন জাদুবাস্তবতা-অনুসারী একটি উপন্যাস বলে দাবি করতে পারতাম। কিন্তু রচনাকাল এবং প্রকাশকাল বলে দিচ্ছে যে আমাদের এই ভূখণ্ডে যখন কেউ জাদুবাস্তবতার নামই শোনেননি, পৃথিবীর সাহিত্যেও যখন জাদুবাস্তবতা নামের প্রপঞ্চটি কারও কানে ধ্বনিত হয়নি, সেই সময়েই সৈয়দ হক রচনা করেছিলেন তার এই উপন্যাস। এটিকে আমরা কী বলব! নিজেদের এই প্রাপ্তি নিয়ে আমাদের কোনো উদ্যাপনই নেই!
০৩.
নিজের জন্য নিজের মতো একটি গদ্য নির্মাণে সক্ষম হয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক। অভিজাত ধীর চালের, ইংরেজি গদ্যের মতো কমা ও সেমিকোলনবহুল একটি গদ্য তার। এই গদ্যটি ক্লাসিকধর্মীও বটে। এ ধরনের একটি গদ্য নির্মাণের সাফল্য নিশ্চিতই একজন গদ্যশিল্পীকে আত্মপ্রসাদের সুযোগ এনে দেবে। তবে এ ধরনের গদ্য দিয়ে একমাত্র জমাটবাঁধা দুঃখ এবং বুকচাপা প্রেম ছাড়া অন্য অনুভূতিগুলোকে তীব্রভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব বলে মনে হয় না। সেই কারণেই সম্ভবত সৈয়দ হকের মুক্তিযুদ্ধের গল্প-উপন্যাসও হয়ে ওঠে অবরুদ্ধ, বুকচাপা সময় ও আবহের গল্প। এমনকি তার 'নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাসও তীব্রতা নিয়ে ফেটে পড়ার বদলে অবরুদ্ধতা নিয়ে গুমরে গুমরে ওঠাটাকেই প্রাধান্য দিয়ে রাখে।
০৪.
নিরন্তর নিরীক্ষাশীলতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিলে সৈয়দ হকের কোনো তুলনা আমাদের বাংলাদেশে তো বটেই, রবীন্দ্রোত্তর বাংলা ভাষাতেই দুর্লভ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে তিনি এক অন্তহীন পরিব্রাজক। সৈয়দ শামসুল হক আমাদের দেশের সেই বিরল লেখকদের একজন, যিনি দশকের গণ্ডি ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন। তিনি গল্পনির্মাণে, গল্পভাবনায়, গল্পবয়নে সব সময়ই সমসাময়িক। কখনও কখনও সময়ের তুলনায় এগিয়েও যান। গল্প এবং উপন্যাসের সর্বশেষ প্রকরণটিও তার আয়ত্তাধীন। অথচ তিনি সর্বাংশে প্রকরণবাদী নন। দুঃসাহসী না হলে নিরীক্ষাপ্রবণ হওয়া যায় না। কেননা একটি পর্যায়ে পেঁৗছে যশ-খ্যাতি পাওয়ার পর কেউ আর সহজে সেই জায়গাটি ছেড়ে নড়তে চান না। ফলে যা ঘটে তা হচ্ছে পুনরাবৃত্তি এবং শক্তিক্ষয়। নিজের লেখা থেকে নিজেই নকল করা। আমাদের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত লেখক তো বটেই, তরুণ লেখকরাও প্রায়শই পুনরাবৃত্তির রোগে আক্রান্ত। পুনরাবর্তনে সৈয়দ হকের প্রচণ্ড অনীহা। সেই কারণে বারংবার নিজেরই নির্মিত সুরম্য সৌধসকল, যা তাকে খ্যাতি-প্রতিপত্তি এনে দিয়েছে বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে, সেই সৌধ পর্যন্ত তিনি অনায়াসে ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েন বারংবার নতুন গৃহের সন্ধানে। নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে চলতে গিয়ে বারবার রক্তাক্ত হতে হয় তাকে, তবু পথ চলতে ভয় পান না তিনি। আর অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই তিনি সাফল্যের দেখা কিছু-না-কিছু পেয়েই যান। বিরান-বিমুখ প্রান্তরে কখনও সুদৃশ্য হর্ম্যরাজি, কখনও খড়ের আটচালা গেঁথে তুলতে পারেন তিনি। সেই কারণেই বাংলা ভাষার প্রবীণতম থেকে শুরু করে নবীনতম লেখকের কাছে সৈয়দ শামসুল হক অবশ্যপাঠ্য। সেই কারণেই বাংলা সাহিত্যের প্রাপ্তমনস্ক পাঠকের পাঠ্যতালিকার সবচেয়ে ওপরের দিকে তার রচনার স্থান। সেই কারণেই বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম সর্বসাম্প্রতিক নাম যেমন সৈয়দ শামসুল হক, তেমনি আবার অন্যতম প্রাগ্রসর নামও সৈয়দ শামসুল হক। া
মনে রাখা দরকার, সাতচলি্লশ-উত্তর আমাদের এই ভূখণ্ডে কথাসাহিত্যের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় শূন্যহাতে। দেশবিভাগের অনেক বঞ্চনার মতো সাহিত্যিক অবকাঠামো থেকেও পুরোপুরি বঞ্চিত হওয়ার কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে আমাদের লেখক-প্রকাশকদের। মুদ্রণ অবকাঠামো, প্রকাশনা অবকাঠামো, বিপণন অবকাঠামো_ সবকিছুই ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক। ফলে এই ভূখণ্ডের কথাসাহিত্যের কর্মীদের জন্য রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, প্রভাতকুমার এবং তাদের পরবর্তী সতীনাথ ভাদুড়ী-জগদীশ গুপ্ত, মানিক-তারাশঙ্কর-বিভূতিভূষণের নান্দনিক উত্তরাধিকার ভিন্ন আর কোনো পুঁজি ছিল না বললেই চলে। এই রকম পরিস্থিতিতে কথাসাহিত্যের চর্চা করেছেন ইবরাহীম খাঁ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, মাহবুব-উল-আলম, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল ফজল, আবু জাফর শামসুদ্দীন, মবিন উদ্দিন আহমেদ, শাহেদ আলী, শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আবু রুশদ, আবু ইসহাক প্রমুখ। শওকত ওসমান ছিলেন এদের মধ্যে তুলনামূলক প্রাগ্রসর। তবে পরিপূর্ণ সাহিত্যিক একজনই ছিলেন। তিনি হচ্ছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। তিনি শুধু নিজের ভাষার কথাসাহিত্যের উত্তরাধিকারকেই বহন করেননি, উপরন্তু বিশ্বসাহিত্যে যেসব সাহিত্যিক এবং মতাদর্শিক ভাব-আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছিল, সেগুলোর সঙ্গেও সমন্বিত করেছিলেন নিজের মনন এবং লেখনীকে। ফলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ খুব দ্রুতই নিজের গল্প-উপন্যাসকে তুলে নিতে পেরেছিলেন এমন এক উচ্চতায়, যেখানে তার সমকালীন আর কেউই পেঁৗছুতে পারেননি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর শক্তিশালী উত্তরপুরুষ হচ্ছেন সৈয়দ শামসুল হক।
০২.
সৈয়দ শাসমুল হক কথাসাহিত্যে কাজ করছেন প্রায় ষাট বছর ধরে। খুব সঙ্গত কারণেই তার সূচনালগ্নের রচনা আর বর্তমানকালের রচনা এক নয়। মনোযোগের সঙ্গে পূর্বাপর পাঠ করলে বোঝা যায়, সৈয়দ হকের গল্প-উপন্যাসের বাঁকবদল ঘটেছে খুবই ধীরে ধীরে। অনেকটা প্রাকৃতিক বিবর্তনের মতো ধীর কিন্তু অমোঘ নিয়মে। ফলত তার গল্পভাবনা এবং উপন্যাসভাবনাও চলিষ্ণুতার ধর্ম মেনেই বিবর্তিত হয়েছে ক্রমান্বয়ে। তিনি এখন যে ধরনের গল্প বা উপন্যাস লেখেন, সেগুলো আর আগের মতো নেই। যেমন তিনি নিজের বর্তমান সময়ের গল্পকে আর গল্প বলেন না। বলেন 'গল্প-প্রবন্ধ'। সেই গল্প বা গল্প-প্রবন্ধকে আবার তিনি এককথায় বলেন 'বিশেষ ধরনের মিছে-কথা'। তার জবানীতে সেই মিছে-কথার একমাত্র দাবি এই যে, তার ভেতরে সম্ভবপরতা থাকতে হবে ষোল আনা, নইলে তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। আমরা এখন জানি যে, এই সম্ভবপরতাই রয়েছে গল্প-উপন্যাসের গল্প-উপন্যাস হয়ে ওঠার মূলে। কল্পনা নয়, বানানো কিছু নয়, যা হয়নি কিন্তু অবশ্যই হতে পারত_ মানুষের তৈরি মানুষ নিয়ে যাবতীয় কথা-কাহিনী তো এটাই।
সৈয়দ হক আমাদের দেশের সেই প্রজন্মের লেখক, যারা একটি নতুন দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে গড়ে উঠতে দেখেছেন। দেখেছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে তৈরি করার সরকারি ও সামাজিক প্রক্রিয়াসমূহ এবং নিজেদের লেখায় ধারণও করেছেন মধ্যবিত্তের সেই গড়ে ওঠার প্রক্রিয়াগুলোকে। পূর্ববঙ্গীয় কৃষকের পাকিস্তান আন্দোলন-আচ্ছন্নতা, এবং পাকিস্তান প্রাপ্তির পরপরই প্রত্যাশা-পরিপন্থী ঘটনাবলির কারণে বিমূঢ় ও হতচকিত হয়ে পড়াও তাদের মতো সৈয়দ শামসুল হকেরও দৃষ্টি এড়ায়নি। এই সবকিছুর অন্তরালে যে অসুস্থ রাজনীতি, সৈয়দ হক সেই রাজনীতিটিকেও শনাক্ত করেছেন। তবু রাজনৈতিক লেখক বলতে যা বোঝায়, সৈয়দ শামসুল হক তা নন। তিনি রাজনীতিকে বুঝে নিতে চান ব্যক্তির ওপর রাজনীতির অভিঘাত এবং সেই ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া দেখার মাধ্যমে। রাজনীতি এবং সময় ব্যক্তিকে বাধ্য করে তার সেই মূল্যবোধগুলোকে পুনর্বিবেচনা করতে, যেগুলোকে তিনি শাশ্বত বলে ধারণা করে এসেছেন। ধরা যাক সৈয়দ হকের প্রথম দিককার লেখা 'সম্রাট' গল্পের কথা। নিজের সংসারের সম্রাট জহির আহমেদ। তিনি নিজেকে সম্রাটই ভাবেন সংসারের। সংসারের অন্য সদস্যরা সেটা মেনেও নেন। কারণ পুরুষতান্ত্রিক ও এক ব্যক্তির উপার্জনকেন্দ্রিক সংসার এভাবেই বয়ে চলতে অভ্যস্ত ছিল বহুকাল ধরে। জহির সাহেব স্ত্রী-সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেন নিজের সব ইচ্ছা-অনিচ্ছা। পুরো গল্পে তার একটি দমচাপা আবহ ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পকার। কিন্তু চিরকাল যে তার নিজের সংসারের সবকিছু তার ইচ্ছাতেই ঘটবে, তা তো নয়। জহির সাহেব না জানলেও বা মানলেও তার ব্যত্যয় ঘটবেই। ছাত্ররা যখন ভাষার দাবিতে আন্দোলন করে, সেই আন্দোলনকে অরাজকতা মনে করেন তিনি। তার বাইশ বছর বয়সের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ূয়া ছেলে শাহেদ যেন নিজেকে কোনোমতেই সেই সব অরাজক আন্দোলনে না জড়ায়, সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেন তিনি। সংসারের সম্রাট ভেবেছিলেন তার সতর্কবাণীই যথেষ্ট। কিন্তু সময়ের আহ্বান শাহেদের কানে ঠিকই পেঁৗছে গেছে। সেই আহ্বানের শক্তি পিতার নিষেধের শক্তির চেয়ে অনেক বেশি প্রখর। একদিন জহির সাহেব নিজেদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া মিছিলের প্রথম সারিতে স্লোগানরত শাহেদকে দেখতে পান। আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, শাহেদ তার পিতার সামনে নিজেকে গোপন করার কোনো চেষ্টাই করেনি বরং স্লোগানের দৃপ্ততা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। সংসারের সম্রাট এই ধৃষ্টতা সইতে পারেননি। পুলিশ শাহেদকে গ্রেপ্তার করতে এলে তিনি নিদ্বর্িধায় গম্ভীর নিরাসক্তভাবে তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন পুত্রকে। কিন্তু পর মুহূর্তেই টের পেলেন তার সেই সংসার-সাম্রাজ্য মোটেও অটুট নেই। গল্পটি শুরু হয়েছিল বাইশ বছর আগে তার নিজ হাতে পোঁতা আমগাছের প্রসঙ্গ দিয়ে। শাহেদের বয়সও বাইশ। গল্প শেষে যুগপৎ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। শাহেদকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, হঠাৎ উদ্দাম বাতাসে আমগাছটি দুলতে থাকে, আর সেদিনই প্রথম হাঁটার জন্য ক্র্যাচ নিতে ভুলে যাওয়ায় জহির সাহেব সিঁড়িতে গড়িয়ে পড়েন। গল্পে সবগুলো ঘটনা একসঙ্গে মিলে একটি প্রতীকী ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তোলে।
এভাবেই সৈয়দ হক পূরণ করেন তার একের পর এক গল্পের অন্তর্বয়ন। তিনি পাঠককে দেখিয়ে দিতে পারেন যে, রাজনীতির উল্লেখ ছাড়াও রাজনীতিকে কেন্দ্র করে গল্প নির্মিত হতে পারে। এবং সেই গল্প মানুষের সংগ্রাম ও সংগ্রামশীলতার পাশাপাশি জীবনযাপনের দ্বন্দ্বকেও যথেষ্ট নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। তবে মাঝে মধ্যে সমাজকে পাশ কাটিয়ে, সমাজের দ্বান্দ্বিকতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি ব্যক্তিকে মূল চালকের আসনে বসিয়ে দেন। এটি ব্যক্তিপূজা প্রবণতায় আচ্ছন্ন আমাদের দক্ষিণ এশীয় মানসের সাধারণ ত্রুটি। এই প্রবণতা এতটাই সর্বজনীন যে এটিকে ত্রুটি না বলে অনেক সময়ই স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়ে থাকে। সৈয়দ শামসুল হকের মতো প্রাগ্রসর চিন্তার লেখকও এই প্রবণতার শিকার হয়ে পড়েন। আবার কাটিয়েও ওঠেন নিজেই। এখানেই তার শক্তির পরিচয়। এখানেই তার প্রাগ্রসরতার চিহ্ন। সেই প্রাগ্রসরতা ধরা পড়ে 'রক্তগোলাপ' উপন্যাসে। রচনাকাল জানা না থাকলে এই উপন্যাসটিকে আমরা সহজেই লাতিন জাদুবাস্তবতা-অনুসারী একটি উপন্যাস বলে দাবি করতে পারতাম। কিন্তু রচনাকাল এবং প্রকাশকাল বলে দিচ্ছে যে আমাদের এই ভূখণ্ডে যখন কেউ জাদুবাস্তবতার নামই শোনেননি, পৃথিবীর সাহিত্যেও যখন জাদুবাস্তবতা নামের প্রপঞ্চটি কারও কানে ধ্বনিত হয়নি, সেই সময়েই সৈয়দ হক রচনা করেছিলেন তার এই উপন্যাস। এটিকে আমরা কী বলব! নিজেদের এই প্রাপ্তি নিয়ে আমাদের কোনো উদ্যাপনই নেই!
০৩.
নিজের জন্য নিজের মতো একটি গদ্য নির্মাণে সক্ষম হয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক। অভিজাত ধীর চালের, ইংরেজি গদ্যের মতো কমা ও সেমিকোলনবহুল একটি গদ্য তার। এই গদ্যটি ক্লাসিকধর্মীও বটে। এ ধরনের একটি গদ্য নির্মাণের সাফল্য নিশ্চিতই একজন গদ্যশিল্পীকে আত্মপ্রসাদের সুযোগ এনে দেবে। তবে এ ধরনের গদ্য দিয়ে একমাত্র জমাটবাঁধা দুঃখ এবং বুকচাপা প্রেম ছাড়া অন্য অনুভূতিগুলোকে তীব্রভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব বলে মনে হয় না। সেই কারণেই সম্ভবত সৈয়দ হকের মুক্তিযুদ্ধের গল্প-উপন্যাসও হয়ে ওঠে অবরুদ্ধ, বুকচাপা সময় ও আবহের গল্প। এমনকি তার 'নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাসও তীব্রতা নিয়ে ফেটে পড়ার বদলে অবরুদ্ধতা নিয়ে গুমরে গুমরে ওঠাটাকেই প্রাধান্য দিয়ে রাখে।
০৪.
নিরন্তর নিরীক্ষাশীলতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিলে সৈয়দ হকের কোনো তুলনা আমাদের বাংলাদেশে তো বটেই, রবীন্দ্রোত্তর বাংলা ভাষাতেই দুর্লভ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে তিনি এক অন্তহীন পরিব্রাজক। সৈয়দ শামসুল হক আমাদের দেশের সেই বিরল লেখকদের একজন, যিনি দশকের গণ্ডি ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন। তিনি গল্পনির্মাণে, গল্পভাবনায়, গল্পবয়নে সব সময়ই সমসাময়িক। কখনও কখনও সময়ের তুলনায় এগিয়েও যান। গল্প এবং উপন্যাসের সর্বশেষ প্রকরণটিও তার আয়ত্তাধীন। অথচ তিনি সর্বাংশে প্রকরণবাদী নন। দুঃসাহসী না হলে নিরীক্ষাপ্রবণ হওয়া যায় না। কেননা একটি পর্যায়ে পেঁৗছে যশ-খ্যাতি পাওয়ার পর কেউ আর সহজে সেই জায়গাটি ছেড়ে নড়তে চান না। ফলে যা ঘটে তা হচ্ছে পুনরাবৃত্তি এবং শক্তিক্ষয়। নিজের লেখা থেকে নিজেই নকল করা। আমাদের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত লেখক তো বটেই, তরুণ লেখকরাও প্রায়শই পুনরাবৃত্তির রোগে আক্রান্ত। পুনরাবর্তনে সৈয়দ হকের প্রচণ্ড অনীহা। সেই কারণে বারংবার নিজেরই নির্মিত সুরম্য সৌধসকল, যা তাকে খ্যাতি-প্রতিপত্তি এনে দিয়েছে বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে, সেই সৌধ পর্যন্ত তিনি অনায়াসে ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েন বারংবার নতুন গৃহের সন্ধানে। নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে চলতে গিয়ে বারবার রক্তাক্ত হতে হয় তাকে, তবু পথ চলতে ভয় পান না তিনি। আর অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই তিনি সাফল্যের দেখা কিছু-না-কিছু পেয়েই যান। বিরান-বিমুখ প্রান্তরে কখনও সুদৃশ্য হর্ম্যরাজি, কখনও খড়ের আটচালা গেঁথে তুলতে পারেন তিনি। সেই কারণেই বাংলা ভাষার প্রবীণতম থেকে শুরু করে নবীনতম লেখকের কাছে সৈয়দ শামসুল হক অবশ্যপাঠ্য। সেই কারণেই বাংলা সাহিত্যের প্রাপ্তমনস্ক পাঠকের পাঠ্যতালিকার সবচেয়ে ওপরের দিকে তার রচনার স্থান। সেই কারণেই বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম সর্বসাম্প্রতিক নাম যেমন সৈয়দ শামসুল হক, তেমনি আবার অন্যতম প্রাগ্রসর নামও সৈয়দ শামসুল হক। া
No comments