স্মরণ-বন্ধু থাক আমার সঙ্গে পদ্মফোটা জলে

ল, কাদা আর গ্রামের সাধারণ মানুষের গন্ধ গায়ে নিয়ে বেড়ে উঠেছেন সনাতন। জন্ম তাঁর বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার হুড়কা গ্রামে। ছবির প্রতি ভালোবাসার শুরু শৈশবেই। স্কুলের বই পড়ার আগে পাতার পরপাতা মুগ্ধ হয়ে ছবি দেখতেন। আগে ছবি দেখা, তারপর বই পড়া_এভাবেই ছবির বর্ণিল ভুবনের সঙ্গে পরিচয় সনাতনের। স্কুলের পড়া শেষে অন্যরা যখন খেলার মাঠ দাঁপিয়ে বেড়াত, ছোট্ট সনাতন তন্ময় হয়ে বসে থাকত পুকুর


পাড়ে। নিমগ্ন চেতনায় দেখত ঈশ্বরদীঘিতে মাছের জলকেলি, পুকুরের পানিতে বয়সী বটের চেহারা। নিমগ্নতা আর একাকীত্বের সঙ্গে এভাবেই জানাশোনা
হয় তাঁর।
সনাতন বিশ্বাস লেখাপড়া করেছেন খুলনা আর্ট কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনিস্টিটিউটে। স্বল্পদৈর্ঘ্য তাঁর লেখাপড়ার জীবন। তবে সাফল্যের গৌরবে ভাস্বর। অন্য বন্ধুদের চেয়ে সহজেই আলাদা করে ফেলা যায় তাঁর কাজ। জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধু মংলা নদী, সুন্দরবনের গোলপাতা, বাঘ, ভল্লুক, নানা রঙের পাখি আর গ্রামের সাধারণ মানুষ_এরা সবাই বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে সনাতনের কাজের ভুবনে। তিনি নিজেও চিন্তা_চেতনায়, জীবনযাপনে ছিলেন খেটে খাওয়া একজন। কখনোই ভুলতে চাননি বর্ষাকালে জল-কাদা পেরিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ার কঠিন দিনগুলো। কারণ তাঁর কাছে গ্রামের চেহারা এমনই চিরন্তন বাঙালি গ্রাম। সাধারণ মানুষের বেদনা, জীবন যন্ত্রণা আর চিরন্তন সত্যগুলোকে আশ্রয় করেই জীবনযাপন করেছেন সনাতন বিশ্বাস। ফলে শিল্পী হয়েও তিনি ছিলেন অন্যরকমের একজন।
সনাতনের বিশ্বাসগুলো ছিল একেবারেই আলাদা। স্বাধীনতা খুঁজতেন তিনি। ছেলেবেলাতেই স্কুল পালিয়ে খেলতে যেতেন অন্য পাড়াতে। বাবা পাড়াময় খুঁজে বেড়াতেন, মা ছেলেকে শাসন না করার জন্য বকুনি খেতেন। ছেলেবেলার সেই অল্প একটুখানি স্বাধীনতার জন্য বকুনি খাওয়া ছেলেটির কাছে বড় হয়ে স্বাধীনতার বিশ্বাস বদলে গেল_সমাজ, ব্যক্তিজীবন থেকে আদায় করে নেওয়া একটু একটু স্বাধীনতা নিয়ে মানুষ চূড়ান্ত স্বাধীনতা লাভ করে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
প্রতিবছর সনাতনের বন্ধু-বান্ধবরা তাঁর মৃত্যুদিন_২৪ ডিসেম্বরকে ঘিরে জন্মভূমি হুড়কা গ্রামে মেলার আয়োজন করেন। সেখানে বাংলার সনাতন বিশ্বাসগুলোকে ভালোবাসেন_এমন মানুষ জড় হন। তাঁরা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করেন কাদামাটির সন্তানকে। এ বছরের আয়োজনে শামিল হবার জন্য আপনাকেও আমন্ত্রণ।

ওমর শাহেদ

No comments

Powered by Blogger.