নাগরিক সেবা-নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে

নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত করা হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রশাসক। ভবিষ্যতে মেয়র নির্বাচনের পর ঢাকা মহানগরীর দুই প্রান্তে দুই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিশ্চিত করবেন নাগরিক সেবা। কিন্তু সিটি করপোরেশন বিভক্তির পর কতটুকু নিশ্চিত করা গেছে নাগরিক সেবা? সিটি করপোরেশনের অধিবাসীদের জন্য নাগরিক সেবা সহজতর হয়েছে নাকি বেড়েছে জটিলতা। নগরীর উন্নয়নে কি গতি এসেছে নাকি স্থবির হয়ে


পড়েছে উন্নয়ন কার্যক্রম? মোটকথা, ডিসিসি বিভক্তির পর নাগরিক সেবা কতটুকু নিশ্চিত করা গেছে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। বিভক্তির পর কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে দুই সিটি করপোরেশনের? পত্রিকান্তরে পরিবেশিত খবরে বলা হয়েছে, অধুনালুপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের জন্য ২০১১-১২ অর্থবছরের বরাদ্দ করা বাজেট উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পেয়েছে ৫৯৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা, আর দক্ষিণ অংশ পেয়েছে ১ হাজার ৫৯৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তবে এর মধ্যে অভিন্ন যেসব প্রকল্প আছে, তার বাজেট সব দক্ষিণ অংশে ধরা হয়েছে। অভিন্ন প্রকল্পের বাজেট ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। বিলুপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিস্তারিত তালিকা তৈরি হয়েছে। হিসাবে ৩৪ একর জায়গা বেশি পেয়েছে ডিসিসি উত্তর। দক্ষিণের চেয়ে এসব জমির দামও ঢের বেশি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পেয়েছে মোট ৪২৯ একর সম্পত্তি, আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি ৪৬৩ একর। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, সম্পত্তিতে পিছিয়ে পড়ায় রাজস্ব আদায়েও পিছিয়ে থাকবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কারণ উত্তরে হোল্ডিংয়ের সংখ্যা বেশি। দক্ষিণে হোল্ডিং-সংখ্যা এক লাখ ২২ হাজার ৭৯৮টি। এখান থেকে গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৬১ কোটি টাকা, আর ডিসিসি উত্তরের এক লাখ ৪০ হাজার ৪৭৮টি হোল্ডিং থেকে গত অর্থবছরে রাজস্ব এসেছে ৪৯৬ কোটি টাকা। দক্ষিণ অংশের রাজস্ব আয় কম হওয়ায় সেখানকার নাগরিক কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতেও বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে পারে।
প্রকাশিত ওই খবরে আরো বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন বিভাজনের পর রাস্তা মেরামত ও সংস্কারকাজ থেমে আছে। শুকনো মৌসুমে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বর্ষায় ভেঙে যাওয়া রাস্তাগুলো সংস্কারের কথা ছিল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আরবান প্রকল্পের আওতায় পুরো শহরে সংস্কারকাজ পরিচালিত হওয়ার কথা। জানা গেছে, বিভাজনের বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি অনেক ঠিকাদারের কাছে। সে কারণে উন্নয়নকাজ আপাতত বন্ধ রেখেছে তারা। এর পাশাপাশি নাগরিক সেবার অন্য ভোগান্তির উদাহরণও আছে। বছরের শেষ সময়ে এখন রাজধানীর স্কুলে ভর্তির মৌসুম শুরু হয়েছে। স্কুলে ভর্তির জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে ভিড় বাড়ছে কাউন্সিলরদের কার্যালয়ে। কিন্তু সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর কাউন্সিলররা আর এমন সনদ দিতে পারছেন না। ফলে তৈরি হয়েছে জটিলতা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের কাউন্সিলরদের স্বাক্ষরেই পেছনের তারিখে দেওয়া হচ্ছে সনদ। সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসের সন্ধান না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই এমন কৌশল নিয়েছে নাগরিকরা।
এসবের বাইরেও নাগরিক সেবা না পাওয়ার অন্য উদাহরণ তো আছেই। রাজধানীতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। দেওয়া যাচ্ছে না গ্যাস সংযোগ। এমন অবস্থায় নাগরিক সেবার নিশ্চয়তা কোথায়? বিভক্ত ডিসিসিতে নাগরিক সেবা বিঘি্নত হতে পারে, ডিসিসি বিভক্ত করার সময় অনেকেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। শুরুতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও তা পর্যায়ক্রমে দূর করা যেতে পারে। সে ব্যাপারে এখন থেকে সচেষ্ট হতে হবে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.