রোডমার্চ, একাধিক জনসভা শেষে ঢাকামুখী হবে বিএনপি by টিপু সুলতান ও একরামুল হক

গামী মাসে চট্টগ্রাম অভিমুখে চারদলীয় জোটের রোডমার্চ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করতে চায় বিএনপি। এই লক্ষ্যে চট্টগ্রামের কর্মসূচি শেষে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকটি বড় জনসভা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে। দলের সূত্রগুলো জানায়, সরকারবিরোধী ‘গণজাগরণ’ গড়ে তোলা এবং কর্মীদের উজ্জীবিত করতে ঢাকার আশপাশের জেলায় বেশ কয়েকটি জনসভার পর


আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজধানীতে গণজমায়েত, গণমিছিল, ঢাকা অবরোধ বা অন্য কোনো নামে বড় কর্মসূচি দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে চায় বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া ও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার বিচার কার্যক্রম গতি পাওয়ায় দলটি ফেব্রুয়ারির মধ্যে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। এ ছাড়া জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমও চলছে। এই অবস্থায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে সর্বশক্তি নিয়ে নামতে জোটের শরিক জামায়াতের মধ্যেও তাড়া রয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের রোডমার্চের পর সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে বড় কর্মসূচি ঘোষণার কথা আমরা আগেই বলেছি। তারপর ঢাকার আশপাশে জনসভা বা পরে ঢাকায় কী কর্মসূচি দেওয়া হবে, এসব বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। জোটের শরিকদের সঙ্গে এবং দলের স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।’
যোগাযোগ করা হলে চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাও চট্টগ্রামের রোডমার্চ শেষে রাজধানীর আশপাশের জেলায় জনসভা এবং পরে ঢাকায় বড় কর্মসূচির ব্যাপারে একই রকম আভাস দিয়েছেন।
জামায়াতের ঢাকা মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ইতিপূর্বে বিভিন্ন রোডমার্চ কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া নিজেই নেতা-কর্মী ও দেশবাসীকে ঢাকায় আসতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে রেখেছেন। তাই ঢাকায় আসার আগে ‘ওয়ার্মআপ’ কর্মসূচি হিসেবে আশপাশের জেলায় জনসভাও হতে পারে।
এদিকে চার দলের চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি সফল করতে সেখানে বিএনপি ও জামায়াত ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দল দুটির নেতারা জানিয়েছেন।
আর রোডমার্চকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা করছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা। তাঁদের শঙ্কা জামায়াত-শিবিরকে ঘিরে। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ ঢাকায় একাধিক প্রতিবেদনও পাঠিয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির বিবদমান তিনটি পক্ষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের ঐক্যের সমীকরণের পাশাপাশি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের ভূমিকা কী হতে পারে, সে ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি রোডমার্চ ও চট্টগ্রামের জনসভায় জামায়াত ও শিবির কীভাবে শক্তি দেখাবে, তা আমরা যাচাই করে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছি।’
অবশ্য পুলিশের আশঙ্কা অমূলক বলে মনে করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা চার দলের রোডমার্চ। জামায়াতে ইসলামী জোটের অংশীদার। চট্টগ্রামে খালেদা জিয়ার সমাবেশে তারা উপস্থিত থাকবে। তারা তো নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন নয়।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকায় একটি ঘোষিত কর্মসূচিকে উপলক্ষ করে যেভাবে চোরাগোপ্তা হামলা হয়েছে এবং আরও যে পরিকল্পনার তথ্য বেরিয়ে আসছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষভাবে তৎপর থাকতে হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন। পরদিন চট্টগ্রামে জনসভায় তিনি বক্তৃতা করবেন। ওই জনসভা থেকে সরকার পতন আন্দোলনের বড় কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।
এই কর্মসূচিকে উপলক্ষ করে যাতে কেউ নাশকতামূলক কিছু করতে না পারে, তার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতাও।
নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, তারা রোডমার্চ কর্মসূচি পালনের আড়ালে জামায়াত-শিবিরের চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে তাঁদের কাছে তথ্য আছে।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির ও সাংসদ শামসুল ইসলাম পুলিশের আশঙ্কা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘বরং আমরাই হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছি। সরকার আমাদের রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না। পুলিশ ও র‌্যাবকে আমাদের পেছনে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
শামসুল ইসলাম বলেন, রোডমার্চ শেষে জনসভায় জামায়াতের হাজার হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত হবেন। সেভাবেই তাঁদের প্রস্তুতি চলছে।
জনসভার স্থান ঠিক হয়নি: চট্টগ্রামে খালেদা জিয়ার জনসভার স্থান গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। ৯ জানুয়ারি নগরের আউটার স্টেডিয়াম কিংবা পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভা করতে আগ্রহী তারা।
কিন্তু আউটার স্টেডিয়ামের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে। তাই সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া আউটার স্টেডিয়ামে চার দলকে জনসভা করার অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা কম।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আউটার স্টেডিয়াম কিংবা পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসভা করতে চাই। ওরা (আওয়ামী লীগ) আউটার স্টেডিয়ামে নাচ-গান ও মেলা করতে পারলে আমরা কেন জনসভা করার অনুমতি পাব না?’
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রোডমার্চ ও জনসভা সফল করার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। চট্টগ্রামে যে মাঠেই সমাবেশ হোক, জনসভায় মানুষের ঢল নামবে।’
এর আগে গত ১০ ও ১১ অক্টোবর সিলেট অভিমুখে যাত্রার মধ্য দিয়ে খালেদার এই রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর ১৮ ও ১৯ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ২৬ ও ২৭ অক্টোবর খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ করে চার দল। চট্টগ্রামের মাধ্যমে এই রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। বিএনপির আশা, এরপর তারা নতুন স্তরে নিয়ে যাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন।

No comments

Powered by Blogger.