ছয় দিনে আট জেলায় ৬৬ জনের মৃত্যু, প্রতিদিনই হাসপাতালে নতুন রোগী-‘এমন ঠান্ডা মুই আগত দেখো নাই, বাও’
জারে (শীতে) মরি যাইছি। কাম-কাজ করা যায়ছে না। কাম করির না পাইরলে ছাওয়া-পাওয়া খাইবে কী?’ কথাগুলো আব্বাস আলীর (৬৫)। তাঁর বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের শালন গ্রামে।একই গ্রামের নালো বর্মণ (৬০) বলেন, ‘এমন ঠান্ডা মুই আগত দেখো নাই, বাও।’ শৈত্যপ্রবাহ আর হিমেল হওয়ায় থেমে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দুর্ভোগে পড়েছে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
শীত ও শীতজনিত রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। গত ছয় দিনে বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ৬৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের বেশির ভাগই বয়স্ক ও শিশু।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, তীব্র শীতে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
পরিবার, এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সিরাজগঞ্জ: জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গত দুই দিনে শীতজনিত কারণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: সদর উপজেলার সয়দাবাদ পুনর্বাসন এলাকার হারুন (৭০), শাহজাদপুর আন্দারকোঠা গ্রামের ওজা খাতুন (৪৫), শর্মিলা খাতুন (৭০), রায়গঞ্জ উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের রোজিনা (৬৫), মেরু সেখ (৭৫), সামিল দাখিল গ্রামের মোফাজ্জল (৭০), কাজীপুর উপজেলার নতুন মাইবাড়ি গ্রামের মজিদ (৫৭), সামনা (৭৫), হাত নাদা গ্রামের রহমান আলী (৮৫), সালাভরা গ্রামের শাহজাহান (৭০), বেলকুচি উপজেলার দিঘুলিয়া গ্রামের জালাল মল্লিক (৬৫), মেহেরনগর গ্রামের তাওহিদ (১২), রাজ্জাক মোল্লা (৫৫), তেবাড়িয়া গ্রামের আবদুল ব্যাপারী (৭৫), বেলকুচি সদরের মছির উদ্দীন (৮২), তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের ভীমচরণ মুরারী (৯০), দেশী গ্রামের বরনী রানী ওরাও (৭৫) ও গুরপিপুল গ্রামের কংকনি ওরাও (৬৫)।
কুড়িগ্রাম: সদর ও নাগেশ্বরীতে তিন দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: নাগেশ্বরীর কুটি নাওডাঙ্গাছিট টারি গ্রামের মোশারফ আলী (৩২), গোবর্ধনকুটি গ্রামের আনছার আলী (৮৫), মমিনগঞ্জ গ্রামের আমিনা খাতুন (৭), ছালেহা (৭৫), মেছনীরপাড় গ্রামের আজিমুদ্দিন (৬৫), সদরের মফিজল (৬৭) ও রাজারহাট উপজেলার আবেদ আলী (৭৮)।
এ ছাড়া সদর হাসপাতালে আরও ১২টি শিশু মারা গেছে। এরা হলো: ইমাম, সাদিয়া, নিরাশা, সুচরিতা, রোকসানা, মারুফা, সোহাগ, শাহিদা, হাফিজুর ও নয়ন। দুজনের নাম পাওয়া যায়নি।
খুলনা: জেলার দাকোপ উপজেলায় তিন দিনে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: ঝড়খালী গ্রামের নরেশ মণ্ডল (৭৫), কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের সুধান্ন মণ্ডল (৭২), ফণীভূষণ মণ্ডল (৭৮), উত্তর বাণীশান্তা গ্রামের গোবিন্দ মণ্ডল (৬৭), রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী (৭২), মিশানখালী গ্রামের ফুলজান বিবি (৭৮), মারুফা বেগম (৫৭), কামারখোলা গ্রামের তারাপদ হালদার (৭২), কালিনগর গ্রামের আনারতি রায় (৬২) ও বারইখালী গ্রামের আনোয়ারা বেগম (৫৮)।
যশোর: যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ শাহনাজ মিল্কি জানান, ছয় দিনে শীতজনিত রোগে আটটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বুধবারই মারা গেছে তিন শিশু। এরা হলো: রত্না, মিথিলা, ফাতেমা, অনিতা, আয়েশা, সুরাইয়া, শারমিন ও জহুরা।
হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ মাহফুজুর রহমান তীব্র ঠান্ডায় শিশুদের সুস্থ রাখতে গরম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানোর পাশাপাশি সব সময় গরম কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও পীরগাছা (রংপুর): বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় চার দিনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: বদরগঞ্জের গুয়ালাপাড়া গ্রামের অহিদুল হক (৭০), ওসমানপুর খিয়ারপাড়া গ্রামের রেজিয়া বেগম (৭২), তারাগঞ্জের ইকরচালি গ্রামের সোলেমা খাতুন (৭২), কাসাইপাড়ার কাকরু মিয়া (৭০) ও পরামানিকপাড়ার জমিলা খাতুন (৬৫)।
এ ছাড়া পীরগাছায় গতকাল সকালে মারা গেছেন একজন। তিনি হলেন উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান (৭৫)। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনটি শিশুসহ ২১ ব্যক্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।
ধুনট (বগুড়া): বগুড়ার ধুনটে দুই দিনে দুই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন পূর্ব ভরনশাহী গ্রামের হালিমা খাতুন (৪০) ও পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামের আমেনা বেওয়া (৬৫)।
সুনামগঞ্জ: তীব্র শীতে সুনামগঞ্জে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। সিভিল সার্জন এ টি এম এ রকিব চৌধুরী জানান, সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ২৫টি শয্যার বিপরীতে বুধবার সকালেও রোগী ছিল ৬০ জন। তারা সবাই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত।
বুধবারে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। এরা হলো: শহরের হাসননগর এলাকার সাব্বির আহমদ (৩৫) ও শহরতলির মাইজবাড়ি গ্রামের আনন্দ (১)।
কালকিনি (মাদারীপুর): বুধবার রাতে কালকিনি পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুর পখিরা গ্রামে সবুজ নামে দুই মাসের এক শিশু মারা গেছে। শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তীব্র শীতে সবুজ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সকালে হাসপাতালে নেব ভেবেছিলাম। কিন্তু রাতেই মারা যায়।’
নীলফামারী: নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে গতকালও ২১টি শিশু ভর্তি ছিল। এদের মধ্যে একটি শিশু ডায়রিয়া ও বাকিরা শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত। হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা দিলীপ কুমার রায় বলেন, শীতে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, তীব্র শীতে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
পরিবার, এলাকাবাসী ও হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সিরাজগঞ্জ: জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গত দুই দিনে শীতজনিত কারণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: সদর উপজেলার সয়দাবাদ পুনর্বাসন এলাকার হারুন (৭০), শাহজাদপুর আন্দারকোঠা গ্রামের ওজা খাতুন (৪৫), শর্মিলা খাতুন (৭০), রায়গঞ্জ উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের রোজিনা (৬৫), মেরু সেখ (৭৫), সামিল দাখিল গ্রামের মোফাজ্জল (৭০), কাজীপুর উপজেলার নতুন মাইবাড়ি গ্রামের মজিদ (৫৭), সামনা (৭৫), হাত নাদা গ্রামের রহমান আলী (৮৫), সালাভরা গ্রামের শাহজাহান (৭০), বেলকুচি উপজেলার দিঘুলিয়া গ্রামের জালাল মল্লিক (৬৫), মেহেরনগর গ্রামের তাওহিদ (১২), রাজ্জাক মোল্লা (৫৫), তেবাড়িয়া গ্রামের আবদুল ব্যাপারী (৭৫), বেলকুচি সদরের মছির উদ্দীন (৮২), তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের ভীমচরণ মুরারী (৯০), দেশী গ্রামের বরনী রানী ওরাও (৭৫) ও গুরপিপুল গ্রামের কংকনি ওরাও (৬৫)।
কুড়িগ্রাম: সদর ও নাগেশ্বরীতে তিন দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: নাগেশ্বরীর কুটি নাওডাঙ্গাছিট টারি গ্রামের মোশারফ আলী (৩২), গোবর্ধনকুটি গ্রামের আনছার আলী (৮৫), মমিনগঞ্জ গ্রামের আমিনা খাতুন (৭), ছালেহা (৭৫), মেছনীরপাড় গ্রামের আজিমুদ্দিন (৬৫), সদরের মফিজল (৬৭) ও রাজারহাট উপজেলার আবেদ আলী (৭৮)।
এ ছাড়া সদর হাসপাতালে আরও ১২টি শিশু মারা গেছে। এরা হলো: ইমাম, সাদিয়া, নিরাশা, সুচরিতা, রোকসানা, মারুফা, সোহাগ, শাহিদা, হাফিজুর ও নয়ন। দুজনের নাম পাওয়া যায়নি।
খুলনা: জেলার দাকোপ উপজেলায় তিন দিনে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: ঝড়খালী গ্রামের নরেশ মণ্ডল (৭৫), কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের সুধান্ন মণ্ডল (৭২), ফণীভূষণ মণ্ডল (৭৮), উত্তর বাণীশান্তা গ্রামের গোবিন্দ মণ্ডল (৬৭), রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী (৭২), মিশানখালী গ্রামের ফুলজান বিবি (৭৮), মারুফা বেগম (৫৭), কামারখোলা গ্রামের তারাপদ হালদার (৭২), কালিনগর গ্রামের আনারতি রায় (৬২) ও বারইখালী গ্রামের আনোয়ারা বেগম (৫৮)।
যশোর: যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ শাহনাজ মিল্কি জানান, ছয় দিনে শীতজনিত রোগে আটটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বুধবারই মারা গেছে তিন শিশু। এরা হলো: রত্না, মিথিলা, ফাতেমা, অনিতা, আয়েশা, সুরাইয়া, শারমিন ও জহুরা।
হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ মাহফুজুর রহমান তীব্র ঠান্ডায় শিশুদের সুস্থ রাখতে গরম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানোর পাশাপাশি সব সময় গরম কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও পীরগাছা (রংপুর): বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় চার দিনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: বদরগঞ্জের গুয়ালাপাড়া গ্রামের অহিদুল হক (৭০), ওসমানপুর খিয়ারপাড়া গ্রামের রেজিয়া বেগম (৭২), তারাগঞ্জের ইকরচালি গ্রামের সোলেমা খাতুন (৭২), কাসাইপাড়ার কাকরু মিয়া (৭০) ও পরামানিকপাড়ার জমিলা খাতুন (৬৫)।
এ ছাড়া পীরগাছায় গতকাল সকালে মারা গেছেন একজন। তিনি হলেন উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান (৭৫)। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনটি শিশুসহ ২১ ব্যক্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।
ধুনট (বগুড়া): বগুড়ার ধুনটে দুই দিনে দুই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন পূর্ব ভরনশাহী গ্রামের হালিমা খাতুন (৪০) ও পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামের আমেনা বেওয়া (৬৫)।
সুনামগঞ্জ: তীব্র শীতে সুনামগঞ্জে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। সিভিল সার্জন এ টি এম এ রকিব চৌধুরী জানান, সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ২৫টি শয্যার বিপরীতে বুধবার সকালেও রোগী ছিল ৬০ জন। তারা সবাই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত।
বুধবারে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। এরা হলো: শহরের হাসননগর এলাকার সাব্বির আহমদ (৩৫) ও শহরতলির মাইজবাড়ি গ্রামের আনন্দ (১)।
কালকিনি (মাদারীপুর): বুধবার রাতে কালকিনি পৌর এলাকার লক্ষ্মীপুর পখিরা গ্রামে সবুজ নামে দুই মাসের এক শিশু মারা গেছে। শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তীব্র শীতে সবুজ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সকালে হাসপাতালে নেব ভেবেছিলাম। কিন্তু রাতেই মারা যায়।’
নীলফামারী: নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে গতকালও ২১টি শিশু ভর্তি ছিল। এদের মধ্যে একটি শিশু ডায়রিয়া ও বাকিরা শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত। হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা দিলীপ কুমার রায় বলেন, শীতে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
No comments