নতুন প্রজাতির কাছিম by মনিরুল খান
বাংলাদেশে এমন কিছু এলাকা আছে, যেখানে বন্যপ্রাণী তথা জীববৈচিত্র্যের ওপর এখনো কোনো প্রাণিবৈজ্ঞানিক জরিপ পরিচালিত হয়নি। এসব এলাকায় বেশ কিছু পশুপাখি ও গাছপালা রয়েছে, যাদের নাম বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বন্যপ্রাণীর কোনো তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়নি। এমনই এক এলাকা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের অজানা বন্যপ্রাণীর সন্ধানে সম্প্রতি (নভেম্বর ২০১১) গিয়েছিলাম বান্দরবানের থানচি
উপজেলার পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রেম্যাক্রি খালের উজানে। পাহাড়ি চিরসবুজ অরণ্য ভেদ করে বয়ে চলা এই খালের মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে গেলাম এমন এক কাছিম, যার উপস্থিতি বাংলাদেশে আগে কখনো রেকর্ড করা হয়নি।’ প্রজাতিটির ইংরেজি নাম Asiatic Softshell Turtle, আর বৈজ্ঞানিক নাম Amyda cartilaginea। ১৭৭০ সালে বৈজ্ঞানিক বোদ্যারত এ প্রজাতিটির প্রথম নামকরণ করেন Testudo cartilaginea, যা কয়েকবার নাম বদলের মধ্য দিয়ে এসে এখন Amyda cartilaginea-তে দাঁড়িয়েছে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রেজা খান এর বাংলা নাম দিয়েছেন ‘পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিম’।
আমাদের মিঠাপানির ধুম এবং খালুয়া কাছিমের মতো দেখতে, কিন্তু আকারে বেশ ছোট ও চ্যাপ্টা আকৃতির এ কাছিমের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৮৩ সেন্টিমিটার। এর খোলসের ওপরের অংশের সামনের প্রান্তে অবস্থিত এক সারি গোলাকার গুটিকা (টিউবারকল) এবং সরু ও লম্বা নাক দেখে সহজেই অন্য সব কাছিম প্রজাতি থেকে আলাদা করে চেনা যায়। এ কাছিমের ওপরের অংশ ধূসর থেকে জলপাই রঙা এবং নিচের অংশ সাদা অথবা হালকা ধূসর হয়ে থাকে। কম বয়সী কাছিমের ওপরের অংশে অনেক কালো ও হলদে ফোটা এবং উঁচু উঁচু লম্বাটে দাগ থাকে, যা বয়স বাড়ার সময় পর্যায়ক্রমে খোলসের ওপরের চামড়ার সঙ্গে মিশে যায়।
নিশাচর পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিমের প্রধান খাবার পাহাড়ি নদী ও জলাশয়ের মাছ, ব্যাঙ, ব্যাঙাচি, চিংড়ি ও পোকামাকড়। এরা নদী বা জলাশয়ের ধারে গর্ত খুঁড়ে বছরে তিন-চারবার পাঁচ থেকে ৩০টি করে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ১৩০-১৪০ দিন। বিশ্বব্যাপী বিপন্ন (ভালনারেবল) এই কাছিম প্রজাতির বিস্তৃতি মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরাম রাজ্য থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা, জাভা ও বর্নিও দ্বীপ পর্যন্ত। বাংলাদেশে এর প্রাপ্তিতে পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিমের বৈশ্বিক বিস্তৃতি পশ্চিমে কিছুটা বর্ধিত হলো।
যেসব দেশে এই কাছিম পাওয়া যায়, সব দেশের মানুষ একে শিকার করে মাংসের জন্য। বাংলাদেশের যে দুর্গম এলাকায় এ কাছিম পাওয়া গেছে, সেখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। ‘আমি প্রথমে একটা অল্পবয়সী কাছিম জীবিত পেলেও একই দিনে একটা মাঝবয়সী মৃত কাছিম পাই স্থানীয় ম্রো সম্প্রদায়ের কাছিম শিকারিদের কাছে। তাঁরা বর্শা নিয়ে বের হন কাছিম শিকারে। তাঁরা নদীর তলায় কাদামাটি ও ছোট পাথরের মধ্যে বর্শা গেঁথে গেঁথে লুকিয়ে থাকা কাছিমের অবস্থান শনাক্ত করেন। এভাবে কাছিম শিকার চলতে থাকলে বাংলাদেশে কাছিম নির্বংশ হতে খুব বেশি দিন সময় লাগবে না। বিপন্ন এই পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিমকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে জরিপ চালিয়ে এর প্রধান আবাসস্থলগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করতে হবে। সে সঙ্গে স্থানীয় ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের জন্য বিকল্প আমিষের সংস্থান করে কাছিম শিকার থেকে বিরত রাখতে হবে।’
লেখক: বন্যপ্রাণী গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
আমাদের মিঠাপানির ধুম এবং খালুয়া কাছিমের মতো দেখতে, কিন্তু আকারে বেশ ছোট ও চ্যাপ্টা আকৃতির এ কাছিমের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৮৩ সেন্টিমিটার। এর খোলসের ওপরের অংশের সামনের প্রান্তে অবস্থিত এক সারি গোলাকার গুটিকা (টিউবারকল) এবং সরু ও লম্বা নাক দেখে সহজেই অন্য সব কাছিম প্রজাতি থেকে আলাদা করে চেনা যায়। এ কাছিমের ওপরের অংশ ধূসর থেকে জলপাই রঙা এবং নিচের অংশ সাদা অথবা হালকা ধূসর হয়ে থাকে। কম বয়সী কাছিমের ওপরের অংশে অনেক কালো ও হলদে ফোটা এবং উঁচু উঁচু লম্বাটে দাগ থাকে, যা বয়স বাড়ার সময় পর্যায়ক্রমে খোলসের ওপরের চামড়ার সঙ্গে মিশে যায়।
নিশাচর পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিমের প্রধান খাবার পাহাড়ি নদী ও জলাশয়ের মাছ, ব্যাঙ, ব্যাঙাচি, চিংড়ি ও পোকামাকড়। এরা নদী বা জলাশয়ের ধারে গর্ত খুঁড়ে বছরে তিন-চারবার পাঁচ থেকে ৩০টি করে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ১৩০-১৪০ দিন। বিশ্বব্যাপী বিপন্ন (ভালনারেবল) এই কাছিম প্রজাতির বিস্তৃতি মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরাম রাজ্য থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা, জাভা ও বর্নিও দ্বীপ পর্যন্ত। বাংলাদেশে এর প্রাপ্তিতে পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিমের বৈশ্বিক বিস্তৃতি পশ্চিমে কিছুটা বর্ধিত হলো।
যেসব দেশে এই কাছিম পাওয়া যায়, সব দেশের মানুষ একে শিকার করে মাংসের জন্য। বাংলাদেশের যে দুর্গম এলাকায় এ কাছিম পাওয়া গেছে, সেখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। ‘আমি প্রথমে একটা অল্পবয়সী কাছিম জীবিত পেলেও একই দিনে একটা মাঝবয়সী মৃত কাছিম পাই স্থানীয় ম্রো সম্প্রদায়ের কাছিম শিকারিদের কাছে। তাঁরা বর্শা নিয়ে বের হন কাছিম শিকারে। তাঁরা নদীর তলায় কাদামাটি ও ছোট পাথরের মধ্যে বর্শা গেঁথে গেঁথে লুকিয়ে থাকা কাছিমের অবস্থান শনাক্ত করেন। এভাবে কাছিম শিকার চলতে থাকলে বাংলাদেশে কাছিম নির্বংশ হতে খুব বেশি দিন সময় লাগবে না। বিপন্ন এই পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিমকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে জরিপ চালিয়ে এর প্রধান আবাসস্থলগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করতে হবে। সে সঙ্গে স্থানীয় ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদের জন্য বিকল্প আমিষের সংস্থান করে কাছিম শিকার থেকে বিরত রাখতে হবে।’
লেখক: বন্যপ্রাণী গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments