তীব্র শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা by বদরুদ্দোজা সুমন

তীব্র শীতের কারণে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী রোগ নিউমোনিয়া। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিউমোনিয়ায় বেশ কয়েকজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে কমপক্ষে আটজন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ের আধুনিক সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আরও এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র জানায়, আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের প্রায় ৩০ শতাংশ জ্বর ও


শ্বাসকষ্টের (সম্ভাব্য নিউমোনিয়া) রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর দুই বছরের কমবয়সী আনুমানিক ৫০ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এর বড় অংশই ঘটে শীত মৌসুমে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, প্রতি বছরই শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ে। এ সময় শিশুকে ঠাণ্ডা থেকে দূরে না রাখলে প্রাণহানির ঝুঁকি থাকবেই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্র জানায়, আউটডোরে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ তাদের শিশুসন্তান নিয়ে আসছেন। তাদের অধিকাংশই দরিদ্র ও ছিন্নমূল পরিবারের। গত কয়েক দিনের তীব্র ঠাণ্ডার কারণে রোগীর চাপ এখন সর্বোচ্চ। ঢামেক শিশু বিভাগের অধ্যাপক
ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। ঠাণ্ডায় বুকে কফ জমে ফুসফুস ও শ্বাসনালি আক্রান্ত হওয়ায় শিশুরা নিউমোনিয়ায় ভুগছে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটডোরে গতকাল সকালে উপস্থিত হয়ে শিশু চিকিৎসকের কক্ষের সামনে তীব্র ভিড় দেখা যায়। সুলতানা বেগম নামে একজন সমকালকে বলেন, কাঁচা ঘরে দেড় বছরের শিশুকন্যাকে একটি কাঁথা মুড়িয়ে রেখেছিলেন। বুকে কফ জমে ঘড় ঘড় শব্দ হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট দেখে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
শিশু বিশেষজ্ঞরা জানান, অপুষ্টি, শিশুকে ঘরে অপরিচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে রাখা, নিয়মমতো বুকের দুধ না খাওয়ানোয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়া, নিউমোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ইত্যাদি কারণে বিশেষত শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। লক্ষণ দেখামাত্র দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এবং একটানা কয়েক দিন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করালে শিশুর জীবন সুরক্ষিত থাকবে।
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় সেখানে নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগের ছোবল প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে গত তিন দিনে সন্দেহভাজন নিউমোনিয়ায় ৭ শিশু ও বিভিন্ন গ্রামে শীতজনিত রোগে আরও ১০ জনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
টিকা দেশে আসেনি
নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে চললেও দেশে এখনও সরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা হয়নি। সরকার নিউমোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা চালালেও এখনও সেটি অনিশ্চিত। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাকসিনটি সংযুক্ত হলে এমডিজি-৪ অর্জন (শিশুমৃত্যু কমানো) সহজ হয়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.