রাষ্ট্র-বিলম্বিত স্বপ্ন এখনও দেখে বাংলাদেশ by সুজা মাহমুদ
বাংলাদেশের রাজনীতি একই চক্রে চক্রায়মান। অর্থনীতি বিশ্বায়নের প্রভাবে এগিয়ে আছে। রাজনীতি সে তালে তাল রাখতে পারছে না বলেই অর্থনীতি খোঁড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে আশ্রয় দিয়ে লালায়িত করছে রাজনীতি। পরিবারতন্ত্র, দলতন্ত্র প্রাধান্য পাচ্ছে গণতন্ত্রের নামে। চার দশক ধরে রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র উপহার দিতে পারেনি। মানুষ সুস্থ রাজনীতি চায় অর্থাৎ সত্য গণতন্ত্র চায়, চায় দুর্বৃত্তায়নমুক্ত অর্থনীতি সময়ের সঙ্গে একটি দেশ,
একটি জাতি পরিবর্তিত হতে থাকে। সে পরিবর্তন হয় প্রগতির পথে, উন্নয়নের পথে। পরিবর্তনের পথে চলি্লশ বছর খুব বেশি সময় না হলেও কমও নয়। বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেওয়ার সময়কালের চলি্লশ বছর অতিক্রম করল ২০১১তে। চার দশকে বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে আর কতটা এগোতে পারত, এ নিয়ে বিতর্কের শেষ বা শুরু নেই। বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ১৯০৫-এর আগেই অর্থাৎ রেনেসাঁ বা নবজাগরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বঙ্গভঙ্গের ঘটনার মধ্য দিয়ে। তবে তখনও বাঙালি একক ভারতের ভেতরে থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছে। বঙ্গভঙ্গের ঘটনা একটু হলেও সে স্বপ্নের মাঝখানে রঙ পাল্টে দেয়। যার ফলে রবীন্দ্রনাথের রাখিবন্ধন পূর্ববঙ্গে তেমন সাড়া জাগাল না। আবার পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় বিভেদটাকে প্রকাশ করে দিল। এ সত্যকে অস্বীকার না করাই ভালো। কলকাতাকেন্দ্রিক প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গ রদ হলো, পূর্ববঙ্গের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেল স্বাধীনতার জন্য। জিন্নাহর পাকিস্তান আন্দোলন সেই আকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগিয়ে পূর্ববঙ্গকে পূর্ব পাকিস্তান করতে সাহায্য করল। ভুল ভাঙল এক বছর পরেই। অতএব আবার উন্মুখ হলো স্বাধীনতার জন্য পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা।
স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় একাত্তরে রক্ত দিতে তাই দ্বিধা করেনি পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা। 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম' হাঁকটুকুই যথেষ্ট ছিল। পশ্চিমবঙ্গ তাকিয়ে দেখল, কেমন করে পূর্ববঙ্গ তাদের ফেলে বাংলাদেশ হয়ে গেল। যেমনটি পলাশী প্রান্তরে দেখেছিল দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে এক ভিনদেশি আরেক ভিনদেশিকে পরাজিত করে দেশটিকে নিয়ে গেল। অনেক সময় লেগেছে বাঙালদের, তারপরও বাঙালরাই বাঙালির দেশ বাংলাদেশ ভিনদেশিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিতে নিল। বাঙালির নিজের বলতে জাতীয় রাষ্ট্র হলো। জাতি হিসেবে স্বাধীন-সার্বভৌম হলো।
একটি স্বাধীন জাতি যুদ্ধ করে রাষ্ট্র তৈরি করে কি নিজেদের মধ্যে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিয়ে ঝগড়া করে? অদ্ভুত প্রশ্ন, তাই না? না, করে না, স্পষ্ট উত্তর। অথচ চলি্লশ বছর, চার দশক ধরে বাংলাদেশের বাঙালিরা করছে। কেন করছে? যে কোনো রাষ্ট্রে রাষ্ট্রের পরিচালক শক্তিগুলো ঝগড়া করে যুক্তি খাড়া করে, কখনও কখনও হাতাহাতি করে সীমিতভাবে, কণ্ঠ উঁচু করে গালাগালি করে শালীনতা বজায় রেখে; কিন্তু দেশের অস্তিত্বকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয় না। নিজের মাতৃভূমিকে অন্য রাষ্ট্রের হাতে ধর্ষিত হতে দেয় না।
রাষ্ট্র পরিচালনায় ঝগড়া করতে হয়, সুপরিচালনার কারণে। যাকে রাষ্ট্র দর্শনে গণতন্ত্র বলে। পুঁজিতন্ত্রে, সমাজতন্ত্রে_ দুটিতেই গণতন্ত্র আছে। যদিও রকমফের রয়েছে। সভ্য মানুষ মাত্রই কোনো না কোনো ধর্ম দর্শনে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রের উল্লেখ ধর্মের স্বীকৃত রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাবলিতে পাওয়া যায়। পরিবার থেকে সমাজ এবং সমাজ থেকে রাষ্ট্র, অতএব পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় বিবাদ অবশ্যম্ভাবী। বিবদমানদের মধ্যকার ঝগড়া হয় একক থাকার জন্য। প্রাচীন গ্রিসের চর্চা করত। বস্তুবাদীরা যার নাম দিয়েছেন ডায়লেক্টিক্যাল ম্যাটেরিয়ালিজম। ঞযব গধৎীরধহ রহঃবৎঢ়ৎবঃধঃরড়হ ড়ভ ৎবধষরঃু ঃযধঃ ারবংি সধঃঃবৎ ধং ঃযব ংড়ষব ংঁনলবপঃ ড়ভ পযধহমব ধহফ ধষষ পযধহমব ধং ঃযব ঢ়ৎড়ফঁপঃ ড়ভ ধ পড়হংঃধহঃ পড়হভষরপঃ নবঃবিবহ ড়ঢ়ঢ়ড়ংরঃবং ধৎরংরহম ভৎড়স ঃযব রহঃবৎহধষ পড়হঃৎধফরপঃরড়হং রহযবৎবহঃ রহ ধষষ বাবহঃং, রফবধং, ধহফ সড়াবসবহঃং.
মার্কসীয় ব্যাখ্যায়, ঐক্য-দ্বন্দ্ব-ঐক্য হয় রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে। রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অপরের সম্পূরক। একটি আরেকটির বিপক্ষ নয়। একটি আরেকটির থেকে পিছিয়ে পড়লে রাষ্ট্র মুখ থুবড়ে পড়ে। পুঁজিবাদীরা মুখে না মানলেও ঐক্য-দ্বন্দ্ব-ঐক্য বজায় রাখে, রাষ্ট্রের স্বার্থে। ব্যত্যয় হলে বিপদ। প্রমাণ, বিগত সময় থেকে আজকের আরব বসন্ত পর্যন্ত অনুধাবন করলে বোঝা যায় এর সঠিকতাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব পরিসরে যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে না পেঁৗছলেও এগিয়েছে অনেক দূর। অর্থনীতির চরিত্রটাই এমন। জীবনের তাগিদে মানুষ তাকে তাড়িত করে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত করে এবং অর্থনীতি পরিবর্তিত হতে শুরু করলে সমাজ অভ্যন্তরে নতুন সম্ভাবনার ভ্রূণ জন্ম নেয়। রাজনীতি সেই নবজন্মের চালিকার ভূমিকায় সহায়তা বা ইন্ধন জোগায়। বাংলাদেশে রাজনীতি নতুন সম্ভাবনাকে সহায়তা করতে পারছে না বলেই বিবাদ করছে, আর সেই বিবাদের সীমাকে অতিক্রম করে আপন রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে বিপন্ন করার অভিমুখে ঠেলে দিচ্ছে। রাজনীতির এই ঝগড়ার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছে ধর্মকেও। রাষ্ট্র ও ধর্ম এক নয়। রাষ্ট্র সবার, ধর্ম ব্যক্তির। ভারতীয় সভ্যতার আদি বিকাশে দ্রাবিড়দের হটিয়ে দিয়ে আর্যরা ব্রাহ্মণ্যবাদকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। তখন মার্কস-অ্যাঙ্গেলস ছিলেন না, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ছিল না। কিন্তু মানুষের প্রতিবাদ ছিল। সেই প্রতিবাদকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ। সমাজ অভ্যন্তরে অর্থনীতির কারণে যে পরিবর্তন ঘটেছিল তিনি তাকে বৌদ্ধ ধর্মে রূপ দেন। রাজনীতিতে তার সমন্বয় ঘটান সম্রাট অশোক এবং পরে রাজা হর্ষবর্ধন। ধর্মকে রাষ্ট্রের বাইরে রেখে রাজ্য শাসন করেছিলেন তারা। ফলে ভারত সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার পেয়েছিল, বৌদ্ধ ধর্মেরও প্রসার হয়েছিল চীন ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। হিন্দু ধর্মের প্রসার হয়েছিল সে সঙ্গে। রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্রাহ্মণ্যবাদ আবার ফিরে এলে ভারতবর্ষ দুর্বল হয়ে যায়। বাইরের শক্তি বিবদমান ভারতের খণ্ডিত খণ্ডিত অংশ দখল করেছে অতি সহজে।
বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়। এ জন্য নাগরিকরা ক্ষুব্ধ নয়। যারা ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বনি তোলে তারাও নয়। ক্ষোভ দেখা দেয়, যখন ধর্মকে রাষ্ট্রের পরিচালনায় চাপিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে, তখন। সভা, সমিতি, রেডিও, টেলিভিশনে ইসলামী আচরণ প্রধান কিংবা একক বলা চলে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করতে ইনশাল্লাহ উচ্চারণ করেছিলেন। এখন যারা ক্ষমতায় তারাও বলেন। তা ছাড়া আসসালামু আলাইকুম ও আল্লাহ হাফেজ ব্যবহার করতে রাজনৈতিক বক্তা থেকে সংবাদ পাঠিকা, কেউ ভোলেন না। শুক্রবারে কোরআন-হাদিস আলোচনা নিয়মিত ব্যাপার। রাষ্ট্র ও ধর্ম পরস্পরের বিপক্ষ অবস্থানে আছে, এ কথা বলা অন্যায়। যারা গেল গেল রব তুলছে, তারা ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে সজ্ঞানে। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক আন্দোলন, আরব বসন্ত, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপক্ষের বা পক্ষের রাজনীতি নয় বলেই বাংলাদেশে যারা তালেবানি আন্দোলন করতে চেয়েছিলেন, তারা নীরব হয়ে আছেন। ধর্মকে উভয় পক্ষ ব্যবহার করছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বেলাতেও। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পশ্চিমা জাদুকরদের সম্মোহনে সম্মোহিত হয়ে মৌলবাদের ভূত দেখছেন সর্বত্র। জনগণকেও তাই দেখাচ্ছেন। সর্বহারা বা কমিউনিস্ট কতজনকে হত্যা করা হয়েছে উত্তরবঙ্গে? তারা তো মৌলবাদের প্রতিপক্ষ। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আরও একটি দল ছিল, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা শুধু নয়, লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ করেছিল। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় তারা ক্ষমতায় এসেছিল। আজ তাদের অস্তিত্ব অনুভূত না হলেও, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের ঘটনা ঘটানোর আগে-পরে তারাই ছিল সক্রিয় পর্দার আড়ালে। সেই মুসলিম লীগ সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে শোনা যায় না। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে পাকিস্তানে মন্ত্রে পুনঃদীক্ষিত করেছিল জামায়াত নয়. মুসলিম লীগ। তারাই ঘটিয়েছিল পনের আগস্টের মতো ঘটনা।
বাংলাদেশের রাজনীতি একই চক্রে চক্রায়মান। অর্থনীতি বিশ্বায়নের প্রভাবে এগিয়ে আছে। রাজনীতি সে তালে তাল রাখতে পারছে না বলেই অর্থনীতি খোঁড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে আশ্রয় দিয়ে লালায়িত করছে রাজনীতি। পরিবারতন্ত্র, দলতন্ত্র প্রাধান্য পাচ্ছে গণতন্ত্রের নামে।
চার দশক ধরে রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র উপহার দিতে পারেনি। মানুষ সুস্থ রাজনীতি চায় অর্থাৎ সত্য গণতন্ত্র চায়, চায় দুর্বৃত্তায়নমুক্ত অর্থনীতি। বাংলাদেশের মানুষ এখনও স্বপ্ন দেখে মুক্তির, যে মুক্তির ঘোষণা ঘোষিত হয়েছিল একাত্তরে।
সুজা মাহমুদ :লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক
স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় একাত্তরে রক্ত দিতে তাই দ্বিধা করেনি পূর্ববঙ্গের বাঙালিরা। 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম' হাঁকটুকুই যথেষ্ট ছিল। পশ্চিমবঙ্গ তাকিয়ে দেখল, কেমন করে পূর্ববঙ্গ তাদের ফেলে বাংলাদেশ হয়ে গেল। যেমনটি পলাশী প্রান্তরে দেখেছিল দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে এক ভিনদেশি আরেক ভিনদেশিকে পরাজিত করে দেশটিকে নিয়ে গেল। অনেক সময় লেগেছে বাঙালদের, তারপরও বাঙালরাই বাঙালির দেশ বাংলাদেশ ভিনদেশিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিতে নিল। বাঙালির নিজের বলতে জাতীয় রাষ্ট্র হলো। জাতি হিসেবে স্বাধীন-সার্বভৌম হলো।
একটি স্বাধীন জাতি যুদ্ধ করে রাষ্ট্র তৈরি করে কি নিজেদের মধ্যে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিয়ে ঝগড়া করে? অদ্ভুত প্রশ্ন, তাই না? না, করে না, স্পষ্ট উত্তর। অথচ চলি্লশ বছর, চার দশক ধরে বাংলাদেশের বাঙালিরা করছে। কেন করছে? যে কোনো রাষ্ট্রে রাষ্ট্রের পরিচালক শক্তিগুলো ঝগড়া করে যুক্তি খাড়া করে, কখনও কখনও হাতাহাতি করে সীমিতভাবে, কণ্ঠ উঁচু করে গালাগালি করে শালীনতা বজায় রেখে; কিন্তু দেশের অস্তিত্বকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয় না। নিজের মাতৃভূমিকে অন্য রাষ্ট্রের হাতে ধর্ষিত হতে দেয় না।
রাষ্ট্র পরিচালনায় ঝগড়া করতে হয়, সুপরিচালনার কারণে। যাকে রাষ্ট্র দর্শনে গণতন্ত্র বলে। পুঁজিতন্ত্রে, সমাজতন্ত্রে_ দুটিতেই গণতন্ত্র আছে। যদিও রকমফের রয়েছে। সভ্য মানুষ মাত্রই কোনো না কোনো ধর্ম দর্শনে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রের উল্লেখ ধর্মের স্বীকৃত রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাবলিতে পাওয়া যায়। পরিবার থেকে সমাজ এবং সমাজ থেকে রাষ্ট্র, অতএব পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় বিবাদ অবশ্যম্ভাবী। বিবদমানদের মধ্যকার ঝগড়া হয় একক থাকার জন্য। প্রাচীন গ্রিসের চর্চা করত। বস্তুবাদীরা যার নাম দিয়েছেন ডায়লেক্টিক্যাল ম্যাটেরিয়ালিজম। ঞযব গধৎীরধহ রহঃবৎঢ়ৎবঃধঃরড়হ ড়ভ ৎবধষরঃু ঃযধঃ ারবংি সধঃঃবৎ ধং ঃযব ংড়ষব ংঁনলবপঃ ড়ভ পযধহমব ধহফ ধষষ পযধহমব ধং ঃযব ঢ়ৎড়ফঁপঃ ড়ভ ধ পড়হংঃধহঃ পড়হভষরপঃ নবঃবিবহ ড়ঢ়ঢ়ড়ংরঃবং ধৎরংরহম ভৎড়স ঃযব রহঃবৎহধষ পড়হঃৎধফরপঃরড়হং রহযবৎবহঃ রহ ধষষ বাবহঃং, রফবধং, ধহফ সড়াবসবহঃং.
মার্কসীয় ব্যাখ্যায়, ঐক্য-দ্বন্দ্ব-ঐক্য হয় রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে। রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অপরের সম্পূরক। একটি আরেকটির বিপক্ষ নয়। একটি আরেকটির থেকে পিছিয়ে পড়লে রাষ্ট্র মুখ থুবড়ে পড়ে। পুঁজিবাদীরা মুখে না মানলেও ঐক্য-দ্বন্দ্ব-ঐক্য বজায় রাখে, রাষ্ট্রের স্বার্থে। ব্যত্যয় হলে বিপদ। প্রমাণ, বিগত সময় থেকে আজকের আরব বসন্ত পর্যন্ত অনুধাবন করলে বোঝা যায় এর সঠিকতাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব পরিসরে যেখানে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে না পেঁৗছলেও এগিয়েছে অনেক দূর। অর্থনীতির চরিত্রটাই এমন। জীবনের তাগিদে মানুষ তাকে তাড়িত করে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত করে এবং অর্থনীতি পরিবর্তিত হতে শুরু করলে সমাজ অভ্যন্তরে নতুন সম্ভাবনার ভ্রূণ জন্ম নেয়। রাজনীতি সেই নবজন্মের চালিকার ভূমিকায় সহায়তা বা ইন্ধন জোগায়। বাংলাদেশে রাজনীতি নতুন সম্ভাবনাকে সহায়তা করতে পারছে না বলেই বিবাদ করছে, আর সেই বিবাদের সীমাকে অতিক্রম করে আপন রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে বিপন্ন করার অভিমুখে ঠেলে দিচ্ছে। রাজনীতির এই ঝগড়ার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছে ধর্মকেও। রাষ্ট্র ও ধর্ম এক নয়। রাষ্ট্র সবার, ধর্ম ব্যক্তির। ভারতীয় সভ্যতার আদি বিকাশে দ্রাবিড়দের হটিয়ে দিয়ে আর্যরা ব্রাহ্মণ্যবাদকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। তখন মার্কস-অ্যাঙ্গেলস ছিলেন না, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ছিল না। কিন্তু মানুষের প্রতিবাদ ছিল। সেই প্রতিবাদকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ। সমাজ অভ্যন্তরে অর্থনীতির কারণে যে পরিবর্তন ঘটেছিল তিনি তাকে বৌদ্ধ ধর্মে রূপ দেন। রাজনীতিতে তার সমন্বয় ঘটান সম্রাট অশোক এবং পরে রাজা হর্ষবর্ধন। ধর্মকে রাষ্ট্রের বাইরে রেখে রাজ্য শাসন করেছিলেন তারা। ফলে ভারত সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার পেয়েছিল, বৌদ্ধ ধর্মেরও প্রসার হয়েছিল চীন ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। হিন্দু ধর্মের প্রসার হয়েছিল সে সঙ্গে। রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্রাহ্মণ্যবাদ আবার ফিরে এলে ভারতবর্ষ দুর্বল হয়ে যায়। বাইরের শক্তি বিবদমান ভারতের খণ্ডিত খণ্ডিত অংশ দখল করেছে অতি সহজে।
বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়। এ জন্য নাগরিকরা ক্ষুব্ধ নয়। যারা ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বনি তোলে তারাও নয়। ক্ষোভ দেখা দেয়, যখন ধর্মকে রাষ্ট্রের পরিচালনায় চাপিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে, তখন। সভা, সমিতি, রেডিও, টেলিভিশনে ইসলামী আচরণ প্রধান কিংবা একক বলা চলে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করতে ইনশাল্লাহ উচ্চারণ করেছিলেন। এখন যারা ক্ষমতায় তারাও বলেন। তা ছাড়া আসসালামু আলাইকুম ও আল্লাহ হাফেজ ব্যবহার করতে রাজনৈতিক বক্তা থেকে সংবাদ পাঠিকা, কেউ ভোলেন না। শুক্রবারে কোরআন-হাদিস আলোচনা নিয়মিত ব্যাপার। রাষ্ট্র ও ধর্ম পরস্পরের বিপক্ষ অবস্থানে আছে, এ কথা বলা অন্যায়। যারা গেল গেল রব তুলছে, তারা ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে সজ্ঞানে। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক আন্দোলন, আরব বসন্ত, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপক্ষের বা পক্ষের রাজনীতি নয় বলেই বাংলাদেশে যারা তালেবানি আন্দোলন করতে চেয়েছিলেন, তারা নীরব হয়ে আছেন। ধর্মকে উভয় পক্ষ ব্যবহার করছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বেলাতেও। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পশ্চিমা জাদুকরদের সম্মোহনে সম্মোহিত হয়ে মৌলবাদের ভূত দেখছেন সর্বত্র। জনগণকেও তাই দেখাচ্ছেন। সর্বহারা বা কমিউনিস্ট কতজনকে হত্যা করা হয়েছে উত্তরবঙ্গে? তারা তো মৌলবাদের প্রতিপক্ষ। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আরও একটি দল ছিল, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা শুধু নয়, লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ করেছিল। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় তারা ক্ষমতায় এসেছিল। আজ তাদের অস্তিত্ব অনুভূত না হলেও, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের ঘটনা ঘটানোর আগে-পরে তারাই ছিল সক্রিয় পর্দার আড়ালে। সেই মুসলিম লীগ সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে শোনা যায় না। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে পাকিস্তানে মন্ত্রে পুনঃদীক্ষিত করেছিল জামায়াত নয়. মুসলিম লীগ। তারাই ঘটিয়েছিল পনের আগস্টের মতো ঘটনা।
বাংলাদেশের রাজনীতি একই চক্রে চক্রায়মান। অর্থনীতি বিশ্বায়নের প্রভাবে এগিয়ে আছে। রাজনীতি সে তালে তাল রাখতে পারছে না বলেই অর্থনীতি খোঁড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে আশ্রয় দিয়ে লালায়িত করছে রাজনীতি। পরিবারতন্ত্র, দলতন্ত্র প্রাধান্য পাচ্ছে গণতন্ত্রের নামে।
চার দশক ধরে রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র উপহার দিতে পারেনি। মানুষ সুস্থ রাজনীতি চায় অর্থাৎ সত্য গণতন্ত্র চায়, চায় দুর্বৃত্তায়নমুক্ত অর্থনীতি। বাংলাদেশের মানুষ এখনও স্বপ্ন দেখে মুক্তির, যে মুক্তির ঘোষণা ঘোষিত হয়েছিল একাত্তরে।
সুজা মাহমুদ :লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক
No comments