পদ্মা সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণ- স্থাপনার দাম নির্ধারণে অনিয়ম by সত্যজিৎ ঘোষ
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবায় অধিগ্রহণ করা জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে গণপূর্ত বিভাগের বিরুদ্ধে। অনেকের ঘরের মূল্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর গাইড বাঁধের জন্য জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ও দিয়ারা নাওডোবা মৌজার ১৫৫ দশমিক ১৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। অধিগ্রহণ করা এলাকায় ৪৩০টি পরিবারের বসবাস।
জেলা প্রশাসন ও সেতু বিভাগ গত বছরের ১ নভেম্বর জমির ওপর স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করে। তালিকা অনুযায়ী স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের জন্য জেলা প্রশাসন গত ১৬ জুলাই গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেয়। ২০ ডিসেম্বর গণপূর্ত বিভাগ থেকে মূল্যতালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন তালিকা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনের জন্য সেতু বিভাগের কাছে পাঠাবে। গণপূর্ত বিভাগ থেকে মূল্যতালিকা চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে গত ২৮ নভেম্বর আবেদন করা হয়। গণপূর্ত বিভাগ ২৬ ডিসেম্বর এ প্রতিবেদককে মূল্যতালিকা সরবরাহ করে।
তালিকা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নাওডোবা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘরের মূল্য বাড়িয়ে তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। পদ্মার তীরবর্তী হওয়ায় এলাকার বেশির ভাগ ঘর পাটকাঠি, বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে নির্মিত। বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী কোনো ঘরের মূল্যই ছয় লাখ টাকার বেশি নয়। গাইড বাঁধের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করার পর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য অনেকে ফসলি জমি ও বাগানে ঘর নির্মাণ করেছে। সেসব ঘরেরও মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোহামঞ্চদ মনিরুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী আলী নুর, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান, কার্য সহকারী আবু তাহের খান ও নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন মূল্যতালিকা প্রস্তুত করেন।
এর মধ্যে মনিরুল ইসলামের বাড়ি প্রকল্প এলাকার পাশে জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর গ্রামে। নাওডোবা মৌজার ৭৬১ নম্বর দাগের ওপরে মোতালেব জমাদ্দার, তাঁর ছেলে রাজা মিয়া ও সুরুজ মিয়ার তিনটি টিনের বসতঘর নির্মাণ রয়েছেন। ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের ঘরগুলোর বর্তমান বাজার দর ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা। কিন্তু মূল্য নিধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪৪ টাকা। তাঁদের বাড়ির পেছনে পদ্মার তীরে পরিত্যক্ত জায়গায় দুটি পাটকাঠির ঘর ও তিনটি টিনের ছাপরা ঘর রয়েছেন। ঘরগুলোতে কেউ বসবাস করে না। বাজারমূল্য অনুযায়ী ঘরগুলোর দাম তিন থেকে চার লাখ টাকা। মোতালেব জমাদ্দারের পুত্রবধূ জোসনা বেগমের নামে ঘরগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ লাখ ২৩ হাজার ৪৫৯ টাকা।
জোসনা বেগম বলেন, ‘ঘরের মূল্য কত হয়েছে জানি না। মনির ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আমার স্বামী যোগাযোগ করে মূল্যতালিকায় আমার নাম উঠিয়েছেন।’ এমন পাঁচটি ঘর নির্মাণে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে মোতালেব জমাদ্দার, রাজা মিয়া ও সুরুজ মিয়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জমির হাওলাদারকান্দি গ্রামের ইব্রাহিম খানের বাড়িতে ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের দুটি টিনের ছাপরা ঘর রয়েছে। বাঁশ ও কাঠের অবকাঠামোর ওপরে টিন দিয়ে নির্মিত ঘরগুলোর একটিতে জেনারেটরের মাধ্যমে এলাকায় ৬০টি পরিবারে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবসা করেন। মূল্যতালিকায় তাঁর নামে ৩১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫১ টাকা উঠেছে। বাজারমূল্য অনুযায়ী দুটি ঘর ও জেনারেটরের মূল্য চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা।
ইব্রাহিম খান বলেন, ‘৩৫০টি বাড়িতে জেনারেটরের সংযোগ আছে, এমন তথ্য মনির ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে লিখিয়েছি। তিনি কত টাকা বিল করেছেন জানি না। একটু বেশি বিল করার কথা।’ ্র
শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোহামঞ্চদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্প এলাকার পাশে আমার বাড়ি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা আমার পরিচিত। তাদের অনুরোধে সামান্য কিছু মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। কারও কাছ থেকে আর্থিক কোনো সুবিধাও নেওয়া হয়নি।’
নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, ‘মূল্যতালিকাটি জমা হওয়ার পরে আমাদের কাছে মনে হয়েছে কিছু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। এ কারণে তালিকাটি যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষ করে অনুমোদনের জন্য সেতু বিভাগে পাঠানো হবে।’
জেলা প্রশাসন ও সেতু বিভাগ গত বছরের ১ নভেম্বর জমির ওপর স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করে। তালিকা অনুযায়ী স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের জন্য জেলা প্রশাসন গত ১৬ জুলাই গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেয়। ২০ ডিসেম্বর গণপূর্ত বিভাগ থেকে মূল্যতালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন তালিকা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনের জন্য সেতু বিভাগের কাছে পাঠাবে। গণপূর্ত বিভাগ থেকে মূল্যতালিকা চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে গত ২৮ নভেম্বর আবেদন করা হয়। গণপূর্ত বিভাগ ২৬ ডিসেম্বর এ প্রতিবেদককে মূল্যতালিকা সরবরাহ করে।
তালিকা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নাওডোবা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘরের মূল্য বাড়িয়ে তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। পদ্মার তীরবর্তী হওয়ায় এলাকার বেশির ভাগ ঘর পাটকাঠি, বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে নির্মিত। বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী কোনো ঘরের মূল্যই ছয় লাখ টাকার বেশি নয়। গাইড বাঁধের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করার পর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য অনেকে ফসলি জমি ও বাগানে ঘর নির্মাণ করেছে। সেসব ঘরেরও মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোহামঞ্চদ মনিরুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী আলী নুর, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান, কার্য সহকারী আবু তাহের খান ও নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন মূল্যতালিকা প্রস্তুত করেন।
এর মধ্যে মনিরুল ইসলামের বাড়ি প্রকল্প এলাকার পাশে জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর গ্রামে। নাওডোবা মৌজার ৭৬১ নম্বর দাগের ওপরে মোতালেব জমাদ্দার, তাঁর ছেলে রাজা মিয়া ও সুরুজ মিয়ার তিনটি টিনের বসতঘর নির্মাণ রয়েছেন। ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের ঘরগুলোর বর্তমান বাজার দর ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা। কিন্তু মূল্য নিধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪৪ টাকা। তাঁদের বাড়ির পেছনে পদ্মার তীরে পরিত্যক্ত জায়গায় দুটি পাটকাঠির ঘর ও তিনটি টিনের ছাপরা ঘর রয়েছেন। ঘরগুলোতে কেউ বসবাস করে না। বাজারমূল্য অনুযায়ী ঘরগুলোর দাম তিন থেকে চার লাখ টাকা। মোতালেব জমাদ্দারের পুত্রবধূ জোসনা বেগমের নামে ঘরগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ লাখ ২৩ হাজার ৪৫৯ টাকা।
জোসনা বেগম বলেন, ‘ঘরের মূল্য কত হয়েছে জানি না। মনির ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আমার স্বামী যোগাযোগ করে মূল্যতালিকায় আমার নাম উঠিয়েছেন।’ এমন পাঁচটি ঘর নির্মাণে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে মোতালেব জমাদ্দার, রাজা মিয়া ও সুরুজ মিয়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জমির হাওলাদারকান্দি গ্রামের ইব্রাহিম খানের বাড়িতে ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের দুটি টিনের ছাপরা ঘর রয়েছে। বাঁশ ও কাঠের অবকাঠামোর ওপরে টিন দিয়ে নির্মিত ঘরগুলোর একটিতে জেনারেটরের মাধ্যমে এলাকায় ৬০টি পরিবারে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবসা করেন। মূল্যতালিকায় তাঁর নামে ৩১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫১ টাকা উঠেছে। বাজারমূল্য অনুযায়ী দুটি ঘর ও জেনারেটরের মূল্য চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা।
ইব্রাহিম খান বলেন, ‘৩৫০টি বাড়িতে জেনারেটরের সংযোগ আছে, এমন তথ্য মনির ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে লিখিয়েছি। তিনি কত টাকা বিল করেছেন জানি না। একটু বেশি বিল করার কথা।’ ্র
শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোহামঞ্চদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্প এলাকার পাশে আমার বাড়ি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা আমার পরিচিত। তাদের অনুরোধে সামান্য কিছু মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। কারও কাছ থেকে আর্থিক কোনো সুবিধাও নেওয়া হয়নি।’
নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, ‘মূল্যতালিকাটি জমা হওয়ার পরে আমাদের কাছে মনে হয়েছে কিছু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। এ কারণে তালিকাটি যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষ করে অনুমোদনের জন্য সেতু বিভাগে পাঠানো হবে।’
No comments