গো. আযমের রি-ট্রায়ালের ওপর আসামিপক্ষের শুনানি শেষ
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের পক্ষে মামলা রি-ট্রায়ালের ওপর আসামি পক্ষ শুনানি শেষ করেছে।
আজ দ্বিতীয় দিনের মতো মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আসামি পক্ষ রি-ট্রায়ালের ওপর শুনানি করবে। তাদের বক্তব্য শেষ হলেই প্রসিকিউশন শুনানি করবে। এদিকে ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের ব্যক্তিগত কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের সেই কথোপকথন প্রচার করা যাবে না ট্রাইব্যুনালের এমন নির্দেশ থাকা সত্ত্বে¡ও ভিন্ন কৌশলে তা প্রচার করা হচ্ছে। আসামি পক্ষ আবেদনগুলোর সঙ্গে ঐ কথোপকথনের অংশবিশেষ জুড়ে দিয়ে তা আবার সাংবাদিকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে এটা আসামি পক্ষের ভিন্ন কৌশল। আমরা যথাসময়ে এর জবাব দেব। এদিকে দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেছেন, বিচারকে বিলম্বিত করার কৌশল হিসেবে তারা এ সমস্ত কাজ করছে। তারা একই সঙ্গে দেশে- বিদেশে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে ।একটি সূত্র জানিয়েছে, আসামি পক্ষ প্রথম থেকে নানা অজুহাতে বিচারকাজ যাতে বিলম্বিত হয় সে ধরনের হেন কাজ নেই যা করছে না। তারা দেশে ও বিদেশে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সর্বশেষ তৎপরতা ছিল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুলের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দেয়া। যা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো জোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর আগে স্কাইপের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও মেল হ্যাকিং করা হয়। হ্যাকিং করাটা অপরাধ। তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৫ ও ৫৭ ধারায় হ্যাকিংয়ের অপরাধ সম্পর্কে বলা আছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, অপরাধ প্রমাণ হলে ৬ থেকে ১৪ বছরের জেল হতে পারে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে। এই অপরাধমূলক কাজের অংশ হিসেবে আমার দেশ ধাররাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আদেশ দিয়েছে মিডিয়াতে ঐ কথোপকথন প্রকাশ করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, তাদের হ্যাকিং করা কর্মকা- পর্বতপ্রমাণ অপরাধতুল্য। তারা শুধু বিচারকে সময়ক্ষেপণ করার জন্যই এটা করছে। জামায়াত হিটলারের চেয়েও বড় অপরাধ করেছে। হিটলার যেমন ইহুদীদের হত্যা করেছে জামায়াতের নেতারা তেমনি হিন্দুদের হত্যা করেছে। তারা হিন্দু না মুসলমান তা প্রমাণের জন্য পরনের কাপড় পর্যন্ত খুলেছে। তাদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। তিনি আরও বলেন, জামায়াত এখনও স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, আমরা অবশ্যই ওদের কথার জবাব দেব। আমরা কি জবাব দেব এটা এই মুহূর্তে প্রকাশ করব না। আগে তারা যা বলার বলে নিক। তিনি আরও বলেন, জামায়াতের আইনজীবীরা শুরু থেকেই মামলা ডিলে করার জন্য একের পর এক আবেদন করেছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদের ঐ সকল আবেদন গ্রহণ করেছে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে কোন আবেদন গ্রহণ করেছেন, আবার কোন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। সর্বশেষ তারা যে আবেদনগুলো করেছে তার ওপর তারা এখন শুনানি করছে। আমরা এর জবাব দেব।
এর আগে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার পুনর্শুনানিতে আসামি পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর প্রতিবেদ করেছেন। প্রতিবাদ করে তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, তিনি এ কথা বলতে পারেন না। কারণ সাবেক চেয়ারম্যান এখনও সিটিং জাজ। সাবমিশন এমন হবে যাতে আমরা এপ্রিসিয়েট করতে পারি। বিচারপতির ডিগনিটি রক্ষা করে কথা বলা উচিত। এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, সিটিং জাজকে নিয়ে ‘জালিয়াতি’ বলবেন না। এ সময় মিজানুল ইসলাম তাঁর কথা প্রত্যাহার করে নেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম একই কথা বার বার বলায় এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একই কথা ২০ বার বলছেন কেন। ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য প্রসিকিউটরও এর প্রতিবাদ করেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৬ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। আসামির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও দ্রুত বিচার করার স্বার্থে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২-এ এখন বিএনপি জামায়াতের ১৪জনের বিচার কাজ চলছে। যাদের বিচার চলছে তারা হলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি, জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য আব্দুল আলীম। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা আবদুস ছুবহান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাজী মোবারক, পটুয়াখালীর রুস্তম আলী, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সাবেক রুকন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার। এছাড়া তদন্ত সংস্থা ১১ অক্টোবর পলাতক দুই জামায়াত নেতা মোঃ আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন শাখায় জমা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৪ মামলার মধ্যে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। যে কোন দিন তাদের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করায় আসামি পক্ষ তিনটি মামলায় রি-ট্রায়ালের আবেদন করেছে। এর মধ্যে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলাও রয়েছে। সে কারণে রি-ট্রায়ালের আবেদনের ওপর শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঐ আদেশ স্থগিত থাকবে। গোলাম আযমের মামলার রি-ট্রায়ালের ওপর আসামি পক্ষ শুনানি শেষ করেছে। তার পক্ষে শুনানি করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এখন মাওলানা সাঈদীর মামলার রি- ট্রায়ালের ওপর শুনানি চলছে। এটা শেষ হলে জামায়াতের আমির নিজামীর মামলা রি-ট্রায়ালের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে করা এক প্রসিকিউটরের অপসারণের ওপর শুনানিও হওয়ার কথা রয়েছে। এগুলো শেষ হলেই এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু তাঁদের বক্তব্য রাখবেন।
No comments