শিক্ষাভবনে শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ কর্নার
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) নেয়া পদক্ষেপ সাড়া জাগিয়েছে পুরো শিক্ষা প্রশাসনে। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৬৪ বছর পর শিক্ষা ভবনে শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালসংবলিত গেট, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ও শিক্ষা ভবন লাইব্রেরি এখন শিক্ষা প্রশাসনের আলোচনার বিষয়।
এদিকে ভাষা আন্দোলনে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার যুগান্তকারী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে আজও শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি, সেখানে তা নির্মাণ করবে শিক্ষা অধিদফতর। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। এদিকে মাউশির উদ্যোগে সাড়া দিয়ে দেশের প্রতিটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার এবং লাইব্রেরি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা পরিষদ।এর আগে ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই সরকারের বিশেষ উদ্যোগে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র শিক্ষা অধিদফতরকে শিক্ষক-কর্মচারীবান্ধব করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। চার বছরের মাথায় এসে শতভাগ দুর্নীতি ও সমালোচনাকে কাটিয়ে উঠতে না পারলেও ইতিহাসের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি আশার সঞ্চার হয়েছে বলেই মনে করেন শিক্ষকরা। ইতোধ্যেই বদলে গেছে অধিদফতরের চিরাচরিত ভুতুড়ে পরিবেশ। কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। এতে কমেছে দুর্নীতি ও শিক্ষক হয়রানি। রচনা করা হয়েছে শিক্ষা ভবনের ৬৫ বছরের ইতিহাস। শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা যে কোন মুহূর্তে সাক্ষাত পাচ্ছেন মাউশির মহাপরিচালকের, যা অতীতে ছিল অকল্পনীয়। সংস্থার সব শাখাই এখন শিক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত। ঘুষ লেনদেন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি নিয়ে অতীতে প্রায়ই মারামারি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটত শিক্ষা ভবনে। কিন্তু বিগত চার বছরে শিক্ষা ভবনে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) ওয়েবসাইট। এতে রাখা হয়েছে ডিজিস কর্নার নামে একটি ‘ওয়েব পেজ’। ‘’ ঠিকানায় মেইল করে ৭ দিনের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে তথ্য, সমাধান ও পরামর্শ। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, সারাদেশের শিক্ষায় প্রাণকেন্দ্র এই প্রতিষ্ঠান তার ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল করেছে। আমাদের আরও ভাল করতে হবে। এদিকে এত কিছুর পরেও পুরো শিক্ষা প্রশাসনসহ শিক্ষক সমাজের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হচ্ছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে সম্প্রতি নেয়া কয়েকটি পদক্ষেপ। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৬৪ বছর পর এবারই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনার প্রাণকেন্দ্র ‘শিক্ষা ভবন’ পেল শহীদ মিনার, মহান মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালসংবলিত সুদৃশ্য গেট। মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন নতুন সাজে অধিদফতর। স্থাপিত হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্নার ও লাইব্রেরি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি দিয়ে গ্যালারি স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে বহু বছর ধরে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি জানানো হচ্ছিল, শিক্ষা অধিদফতরে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। দেশের লাখ লাখ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে উদ্যোগ নেয়া হোক। কিন্তু কখনই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষত অধিদফতরের মহাপরিচালকদের অনাগ্রহের কারণে এই দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের একান্ত সহযোগিতায় বহু বছরের এই দাবি পূরণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান-উর-রশীদ।
এদিকে অধিদফতরের সঙ্গে এবার সারাদেশে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে শুরু হয়েছে নতুন উদ্যোগ। দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই- বহু দিনের এই সঙ্কটের সমাধান হতে যাচ্ছে। দেশের যেসব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই তার তালিকা তৈরি করে সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণ করবে অধিদফতর। মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান-উর-রশীদ তাদের এ উদ্যোগের কথা জানিয়ে বলেছেন, শীঘ্রই এ কাজ আমরা করতে যাচ্ছি। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের একটি অংশে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। শিক্ষা অধিদফতরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার উদ্বোধনের পর কর্মকর্তারা এই কাজে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে অধিদফতরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপনের পর একই উদ্যোাগ গ্রহণ করেছে উপজেলা পরিষদ এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই পরিষদের নেতৃবৃন্দু অধিদফতরকে জানিয়েছে, আপনাদের উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরাও পরিষদ কমপ্লেক্সের একটি অংশে নির্মাণ করতে যাচ্ছি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোঃ নোমান-উর-রশীদ বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্নার তৈরি করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এখন সারাদেশ থেকে বিভিন্ন কাজে আসা লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী গ্রন্থাগারে বসে বই পড়তে পারবেন। এ ছাড়া তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। কর্নারে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি প্রদর্শন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এর কলেবর বাড়ানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি সেখানে আমাদের উদ্যোগেই তা নির্মাণ করা হবে। সরকারের পুরো এই কর্মযজ্ঞের কারণে শিক্ষাঙ্গন মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে আরও অনেক বেশি সমুন্নত রাখতে পারবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
No comments