প্রসঙ্গ :প্রফেসর ইউনূস by আতিকুল হক চৌধুরী
আমার কাছে তার কোনো স্বার্থ নেই। তার কাছেও আমার স্বার্থ নেই। তাই বিনা দ্বিধায় কিন্তু স্পষ্ট করেই বলছি অযথা তার স্তুতি গাইবার জন্য নয়; আবার অহেতুক নিন্দা করার জন্যও নয়।
কয়েক মাস ধরে তাকে নিয়ে যেসব অভিযোগ প্রায় প্রতিদিন উঠছে, অনবরতই উঠছে সে সম্পর্কে দেশের অতি সাধারণ নগণ্য একজন নাগরিক হিসেবে কয়েকটি কথা আজ নিবেদন করতে চাইছি। আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন, নরওয়ের একটি টিভি চ্যানেলে একজন প্রতিবেদকের একটি ডকুমেন্টারি প্রচারিত হওয়ার পর দিন থেকেই প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ উঠছে কেন? তহবিল স্থানান্তরে যে কোনো দুর্নীতি ছিল না সে সম্পর্কে নরওয়ের সরকারও তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। অবশ্যই এটা লক্ষণীয়, নিজেদের দেশের কোনো নামিদামি ব্যক্তি, গুণী ব্যক্তি সম্পর্কে বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পত্রপত্রিকায় কোনো সাধুবাদ প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কেউ কেউ সেই ব্যক্তির উল্টো সমালোচনা করে বলতে থাকি, 'এর মধ্যে অবশ্যই কোনো একটা লিংক আছে'। আবার সেই বিদেশিদের মুখেই বা তাদের কোনো পত্রপত্রিকায় বা মিডিয়ায় যখন আমাদের দেশের কোনো ব্যক্তিবিশেষের নিন্দাবাদ শুনি কেউ কেউ আমরা তখনই বলে ফেলি, 'ঠিক। ঠিক কাজটি হয়েছে'।
কে বা কারা প্রকৃত দোষী ও অপরাধী তা একদিন অবশ্যই প্রকাশ পাবে। সত্যের এমন এক শক্তি আছে যে সে সব মিথ্যাকে পরাভূত করে আপন শক্তিতেই আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবেই। জগৎ সংসারে আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত ভালোলাগা ও মন্দলাগার মাপকাঠিতেই একজন মানুষকে বিচার করি। আফ্রিকার বিশিষ্ট চিন্তাবিদ জুলিয়ন বেন্ডারের একটি উক্তি, 'ডব ফড় হড়ঃ যধঃব ধহু ড়হব নবপধঁংব যব রং নধফ. ডব ঃযরহশ যরস নধফ নবপধঁংব বি যধঃব যরস.' যে কোনো ব্যবসায় মুনাফা অর্জন অবশ্যই একটি বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু সেই লাভ বা মুনাফা অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে ব্যক্তিগত ভোগ-লালসায় তা প্রয়োগ করা আর দরিদ্র মানুষের কল্যাণে তা নিয়োগ করার মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অবশ্যই ইতিহাসের সঠিক রায়ের প্রয়োজন। অরবিন্দের একটি কথা আছে, 'ঞযব ঁষঃরসধঃব াধষঁব ড়ভ ধ সধহ ফড়বং হড়ঃ ফবঢ়বহফ ড়হ যিধঃ যব ংধুং হড়ৎ বাবহ যিধঃ যব ফড়বং, নঁঃ ধপঃঁধষরঃু ড়হ যিধঃ যব নবপড়সবং.' মানুষের এই 'ঁষঃরসধঃব াধষঁব ও ধপঃঁধষষু ড়হ যিধঃ যব নবপড়সবং' দেখার জন্য ইতিহাসের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয় বৈকি! কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিই সমালোচনার ঊধর্ে্ব হতে পারেন না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের তদারকির ক্ষমতা ও অধিকার অবশ্যই সরকারের আছে। প্রফেসর ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের ওপর সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি। সেই কমিটি একটি নিরপেক্ষ রিপোর্ট পেশ করবে সেই আশা দেশবাসী অবশ্যই পোষণ করে। তবে একটি ব্যাপার অবশ্যই পীড়াদায়ক, যে কোনো সম্মানিত ব্যক্তির সমালোচনা আর তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা কি এক কথা? নোবেল লরেটের পরিচয় বাদ দিলেও বিদেশে থাকাকালীন যিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি হিসেবে কাজ করেছেন, পত্রপত্রিকায় লিখেছেন, বছরের পর বছর যে মানুষটি দেশে-বিদেশে একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তাকে যদি আজ নিজের দেশের মাটিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক আদালত থেকে আর এক আদালতে জামিনের জন্য আবেদন জানাতে এভাবে অসম্মানিত হতে হয় তবে এ অসম্মান কি সমাজের নিষ্ঠাবান শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন নয়? নোবেল পাওয়ার আগেও আমরা যারা প্রফেসর ইউনূসকে দীর্ঘদিন ধরে জানি তারা তাকে একজন নিষ্ঠাবান, কর্মবীর, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক, মানুষের কল্যাণের জন্য কার্যরত একজন প্রকৃত সৎ, দেশপ্রেমিক, নিরহঙ্কার, হাসিখুশি মনের সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেই জানি এবং আমাদের এই ধারণা পরিবর্তনের কোনো কারণ এখন পর্যন্ত ঘটেনি। বঙ্গবল্পুব্দর প্রতিষ্ঠিত দেশ বাংলাদেশে তিনিই বিশ্ব শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম বাঙালি। এজন্য অবশ্যই আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত। আমরা মনে করি, দেশ-বিদেশে পুরস্কার ও তিরস্কারের চেয়েও একজন সত্যিকার গুণী ব্যক্তির কাছে সবচেয়ে মূল্যবান মানুষের কল্যাণে প্রকৃত সত্যকে আবিষ্কার। নোবেল লরেট প্রফেসর ইউনূসকে আমরা এই আবিষ্কারক হিসেবেই দেখতে চাই চিরদিন। তাই বলি, প্রফেসর ইউনূস অবশ্যই প্রাসঙ্গিক ছিলেন ও চিরদিনই থাকবেন, আমাদের মধ্যে কেউ চাইলেও বা না চাইলেও।
আতিকুল হক চৌধুরী :নাট্যকার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
কে বা কারা প্রকৃত দোষী ও অপরাধী তা একদিন অবশ্যই প্রকাশ পাবে। সত্যের এমন এক শক্তি আছে যে সে সব মিথ্যাকে পরাভূত করে আপন শক্তিতেই আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবেই। জগৎ সংসারে আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত ভালোলাগা ও মন্দলাগার মাপকাঠিতেই একজন মানুষকে বিচার করি। আফ্রিকার বিশিষ্ট চিন্তাবিদ জুলিয়ন বেন্ডারের একটি উক্তি, 'ডব ফড় হড়ঃ যধঃব ধহু ড়হব নবপধঁংব যব রং নধফ. ডব ঃযরহশ যরস নধফ নবপধঁংব বি যধঃব যরস.' যে কোনো ব্যবসায় মুনাফা অর্জন অবশ্যই একটি বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু সেই লাভ বা মুনাফা অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে ব্যক্তিগত ভোগ-লালসায় তা প্রয়োগ করা আর দরিদ্র মানুষের কল্যাণে তা নিয়োগ করার মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অবশ্যই ইতিহাসের সঠিক রায়ের প্রয়োজন। অরবিন্দের একটি কথা আছে, 'ঞযব ঁষঃরসধঃব াধষঁব ড়ভ ধ সধহ ফড়বং হড়ঃ ফবঢ়বহফ ড়হ যিধঃ যব ংধুং হড়ৎ বাবহ যিধঃ যব ফড়বং, নঁঃ ধপঃঁধষরঃু ড়হ যিধঃ যব নবপড়সবং.' মানুষের এই 'ঁষঃরসধঃব াধষঁব ও ধপঃঁধষষু ড়হ যিধঃ যব নবপড়সবং' দেখার জন্য ইতিহাসের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয় বৈকি! কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিই সমালোচনার ঊধর্ে্ব হতে পারেন না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের তদারকির ক্ষমতা ও অধিকার অবশ্যই সরকারের আছে। প্রফেসর ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের ওপর সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি। সেই কমিটি একটি নিরপেক্ষ রিপোর্ট পেশ করবে সেই আশা দেশবাসী অবশ্যই পোষণ করে। তবে একটি ব্যাপার অবশ্যই পীড়াদায়ক, যে কোনো সম্মানিত ব্যক্তির সমালোচনা আর তাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা কি এক কথা? নোবেল লরেটের পরিচয় বাদ দিলেও বিদেশে থাকাকালীন যিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি হিসেবে কাজ করেছেন, পত্রপত্রিকায় লিখেছেন, বছরের পর বছর যে মানুষটি দেশে-বিদেশে একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তাকে যদি আজ নিজের দেশের মাটিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক আদালত থেকে আর এক আদালতে জামিনের জন্য আবেদন জানাতে এভাবে অসম্মানিত হতে হয় তবে এ অসম্মান কি সমাজের নিষ্ঠাবান শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন নয়? নোবেল পাওয়ার আগেও আমরা যারা প্রফেসর ইউনূসকে দীর্ঘদিন ধরে জানি তারা তাকে একজন নিষ্ঠাবান, কর্মবীর, অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানমনস্ক, মানুষের কল্যাণের জন্য কার্যরত একজন প্রকৃত সৎ, দেশপ্রেমিক, নিরহঙ্কার, হাসিখুশি মনের সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেই জানি এবং আমাদের এই ধারণা পরিবর্তনের কোনো কারণ এখন পর্যন্ত ঘটেনি। বঙ্গবল্পুব্দর প্রতিষ্ঠিত দেশ বাংলাদেশে তিনিই বিশ্ব শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম বাঙালি। এজন্য অবশ্যই আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত। আমরা মনে করি, দেশ-বিদেশে পুরস্কার ও তিরস্কারের চেয়েও একজন সত্যিকার গুণী ব্যক্তির কাছে সবচেয়ে মূল্যবান মানুষের কল্যাণে প্রকৃত সত্যকে আবিষ্কার। নোবেল লরেট প্রফেসর ইউনূসকে আমরা এই আবিষ্কারক হিসেবেই দেখতে চাই চিরদিন। তাই বলি, প্রফেসর ইউনূস অবশ্যই প্রাসঙ্গিক ছিলেন ও চিরদিনই থাকবেন, আমাদের মধ্যে কেউ চাইলেও বা না চাইলেও।
আতিকুল হক চৌধুরী :নাট্যকার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
No comments