২০১৪ সালে পরিবর্তন দিয়ে মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু : ড. কামাল
চলমান রাজনৈতিক টানাপড়েন থেকে দেশ ২০১৪ সালে মুক্তি পাবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট আইনজীবী, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, সামনে আরো ১২ মাস সময় আছে। এ সময়ের মধ্যেই এ নিয়ে কাজ করা হবে। সারা দেশ থেকে ভালো মানুষগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে।
মানুষ এখন পরিবর্তন চায় জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর প্রধানমন্ত্রীসহ অনেককেই দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম আয়োজিত 'গণতন্ত্র ও চলমান রাজনীতি' শীর্ষক অনলাইন সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে, তিনি গণতন্ত্রের সেবক, জনগণের সেবক। তিনি যদি সেটা বুঝতে না পারেন তাহলে তখন সেটা আমাদের বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে।' প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের আগের মতো আবারও জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে জনমত গঠন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন ড. কামাল। তিনি বলেন, 'ষাটের দশকের তরুণদের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর আচরণ গা-সওয়া হয়নি বলেই তারা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলেন। তাই এখন আমাদের গা-সওয়া হলে চলবে না। আমাদেরও রুখে দাঁড়াতে হবে।'
রাজনীতিতে পুলিশ বাহিনীকে নিকৃষ্টভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে মত দিয়ে ড. কামাল বলেন, 'পুলিশকে রুগ্ণ রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। তাদের জনগণের বন্ধু করতে হবে। নিরপেক্ষ, দলীয়করণমুক্ত কোনো দল আমরা দেখতে পাইনি। সুপ্রিম কোর্ট আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার সুযোগ রেখেছিলেন, নির্দেশনা দিয়েছিলেন; কিন্তু সে নির্দেশনা না মেনেই সরকার মাত্র ১০ মিনিটে একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা বাতিল করেছে। যা হতে পারে না।' এ অভিমত ড. কামালের।
ড. কামাল হোসেন বলেন, 'নতুন বছরের প্রাক্কালে বিজয়ের মাসের শেষে আমরা একটা পরিবর্তন চাই। যেখানে নাগরিকদের ভূমিকা থাকবে। রুগ্ণ রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবের বদলে একটি সুস্থ রাজনীতি হবে। যে রাজনীতির জন্য আমরা অতীতে বহির্বিশ্বে অনেক সম্মান পেয়েছি।' এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'স্বাধীনতার পর আমাদের দেশ গরিব ছিল। এর পরও বিদেশে গিয়ে অনেক সম্মান পেয়েছি। তারা আমাদের বলেছে, তোমরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছ।'
ড. কামাল বলেন, 'আমার মনে হয় না সরকারপ্রধান রাতে ভালো ঘুমান। কারণ একজন প্রধানমন্ত্রী সফল হলে ১৬ কোটি মানুষ সফল হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে যাঁরা থাকেন তাঁরা তাঁকে ভালো করতে দেন না।'
১৫ আগস্ট আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, 'যাঁরা জীবন দিয়ে গেছেন তাঁরা কিসের জন্য জীবন দিয়েছেন, সেটা আমাদের বুঝতে হবে। দীর্ঘ সময় আমরা পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়িয়েছি। এখনো আমরা সেই গ্লানি থেকে মুক্ত হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'
বর্তমান সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল; কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, 'বিএনপিতেও মুক্তিযোদ্ধা আছে, এটা আমি স্বীকার করি। দেশের স্বাধীনতার জন্য মূল যে রাজনৈতিক শক্তি কাজ করেছে সেই দল (আওয়ামী লীগ) যখন এবার জনগণের সমর্থন অর্জন করে তখন কী আশা ছিল আর কী আনন্দ পেয়েছিলাম, তা বোঝানো যাবে না। আশা ছিল দেশে সুশাসন ফিরে আসবে। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।'
১৫ আগস্টে সপরিবারে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের সময় কোথায় ছিলেন- এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ড. কামাল হোসেন বলেন, '১৫ আগস্টের সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম। শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আমি জার্মানির বনে ছুটে গিয়েছিলাম। আমার ভূমিকা কী ছিল, তা শেখ হাসিনাই বলুক। আমি মনে করি, সেই ঘটনা (বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড) দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আঘাত। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর জুলফিকার আলী ভুট্টো কেবিনেট ডেকেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে মুসলিম রিপাবলিকান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।'
পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, 'বাহাত্তরের সংবিধানকে ফিরিয়ে আনতেও কম জীবন দিতে হয়নি। কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীর ৮০০ মানুষ জীবন দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। এসব ভুলে গেলে চলবে না।'
জাতির জনকের সান্নিধ্য পাওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, জীবনে অনেক খ্যাতি-অর্থ অর্জন করতে পারবে, কিন্তু জনগণের সেবা করার চেয়ে বেশি কিছু নেই। হাজার কোটি টাকাও তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।'
পাকিস্তান আমলের কথা উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, "১৯৪৬ সালের ভোটে বাঙালিরা পাকিস্তানকে ৫০ ভাগ ভোট দিয়েছিলাম, আশা ছিল আমাদের অধিকার পাব। কিন্তু যখনই আমাদের ভাষার ওপর আঘাত এলো, অশ্রদ্ধা দেখাল- আমরা একবাক্যে 'নো' বলার শক্তি দেখিয়েছি। এ শক্তি প্রদর্শন করতে পেরে আমরা গর্ব বোধ করি।" রাজধানীতে ৪০-৫০ শতাংশ মানুষের বাসস্থান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যারা দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছে, তারা কি এটা চেয়েছিল। রাজধানীতে বস্তি উচ্ছেদ করার পর আমি সেখানে গেলে এক নারী আমাকে বলেন, আমার স্বামী বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্ত করে আনতে সংগ্রাম করেছে। আর আওয়ামী লীগের লোকজনই আমাদের উচ্ছেদ করে। এটা কি আমরা চেয়েছিলাম?'
নাগরিকদের দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, '৭৫ ভাগ মেজরিটি থাকলেই সেই ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করা যাবে না। তাকে দেশদ্রোহী বলা শুরু করবে। এটা রাজা-রানির দেশের কথা। জনগণই এ দেশের ক্ষমতার মালিক। সমালোচনা করা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। যারা নাক উঁচু করে বলেন নাগরিক সমাজ কারা, তাদের বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব জনপ্রতিনিধি জনগণের সেবক। আর এটা বলা যদি দেশদ্রোহিতা হয়, তাহলে আমি এ কথা বলে গর্ব বোধ করি।'
দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না বা দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই সব- ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্ত প্রকৃত গণতন্ত্র কি না বাংলানিউজের কনসালট্যান্ট এডিটর জুয়েল মাজহারের এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, 'এ প্রশ্নটি আমার জীবনের বড় পুরস্কার। কারণ এ প্রশ্নেই আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়েছি। আমি দীর্ঘ চিঠি লিখে সেই সময়ে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম।'
সমসাময়িক প্রসঙ্গ টেনে ড. কামাল বলেন, 'দেশে যাঁরা ওপর তলায় আছেন, তাঁরাই দেশের সম্পদ পাচার করছেন। আর প্রবাসীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা উপার্জন করছেন, তাঁরা দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।' হলমার্কসহ সাম্প্রতিক অর্থ কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'এত সব ঘটনা ঘটছে, কিন্তু এসবের তদন্ত হচ্ছে না কেন? আর এসব ঘটনায় কত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব বিষয় গা সওয়া হয়ে গেছে মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে গা সওয়া হয়নি। তাই ২০১৪ সালে একটি পরিবর্তন এনে মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণ সে পরিবর্তন আনবে।'
'সামনে ১২ মাস আছে। এ সময়ের মধ্যে অন্তত ৯ মাসের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২০ জন লোক কি আমরা বের করতে পারব না?' প্রশ্ন ড. কামালের। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, 'গত নির্বাচনে আমি যাঁকে ভোট দিয়েছি, তাঁকে আর আমি ভোট দেব না। যাঁকে বিশ্বস্ত মনে করতে পারি, তাঁকে ভোট দেব। আর এ প্রক্রিয়া তিন মাস আগে শুরু করলে হবে না। আজ থেকেই শুরু করতে হবে।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামা ও বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর জয়ের উদাহরণ টেনে ড. কামাল হোসেন বলেন, 'সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটনের বিপরীতে ওবামার বিজয় কিংবা নারায়ণগঞ্জে আইভীর জয় কেউ ভাবতে পারেনি। তবে আমি মনে করি, সত্তরের নির্বাচনেও এমনই সাফল্য এসেছিল। ২০১৪ সালে এমন একটি পরিবর্তন আসতে পারে।' তিনি বলেন, 'সত্তরে বঙ্গবন্ধু আমাকে চিফ ইলেকশন ইনচার্জ করেছিলেন। হাজারখানেক ভলান্টিয়ার আর কাগজ-কাঠ পেনসিল নিয়ে কার্বন পেপার দিয়ে কপি করে ভোটারদের কপি হাতে নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলাম। রাজধানীতে এমন বাড়ি ছিল না, যেখানে যাইনি। মানুষের মধ্যে একটি অভূতপূর্ব সাড়া এসেছিল, যার ফল আমরা নির্বাচনে পেয়েছিলাম।' 'আজ বাঁচতে হলে দেশকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে,' মত ড. কামালের।
প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে কামাল বলেন, '২০১৪ সালের পর প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর বিদায় দেখতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি সুযোগ পেয়ে যা করেছেন, সে জন্য সুযোগ হারিয়েছেন।'
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, 'পদ্মা সেতুর কেলেঙ্কারির পর একজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কেন প্যাট্রিয়ট বলেছেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিরুদ্ধে এজাহার হলো, তিনি গ্রেপ্তার হলেন। আমি তো মনে করি, সেক্রেটারির ওপরে মন্ত্রী, তাঁর ওপরে আরো প্রধানরা যুক্ত থাকেন। এটা সংবিধানের কথা। তাঁরা কেউ এ ঘটনায় দায় এড়াতে পারেন না।'
পুলিশ বাহিনীর প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, '১৮৮১ সালের পুলিশ আইন একবিংশ শতাব্দীতেও চলছে। এটি বদলাতে হবে। পুলিশকে টাকা দিয়ে পোস্টিং-পদোন্নতি নিতে হয়। পুরনো সরকারের সময়কার অনেক পুলিশ সদস্যকে বিদায় করে দেওয়া হয়। আমি নিজে এমন অনেককে আইনিভাবে পুনর্বহাল করেছি। তারা আমাকে বলেছে কিভাবে মন্ত্রীরা ঘুষ নেন। পুলিশকে রাজনীতিবিদরা যারা কুকর্ম করে তাদের খুশি করতে বাধ্য করে। তাই পুলিশকে জনগণের বন্ধু করতে হবে। তাদের মুক্ত করতে হবে।'
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এই সংবিধান প্রণেতা বলেন, 'আমাদের বিবেক ও সংবিধান থেকে দিকনির্দেশনা নিতে চাই। দেশটা কোনো গোষ্ঠী বা পরিবারের নয়। সৎভাবে নির্ভয়ে কাজ করবে, প্রয়োজনে ঝুঁকি নেবে- এমন লোক প্রয়োজন। সারা দেশে ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় এমন লোক নিশ্চেই আছে।'
ড. কামাল বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক শব্দ নিয়ে টানাটানি করতে চাই না। সবাই চাই অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর এ নিরপেক্ষ বলতে এক দলকে বোঝায় না। তবে নিরপেক্ষ না থাকার যে প্রবণতা, দেশের কোনো রাজনৈতিক দলই সেখান থেকে বের হতে পারেনি।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের প্রতি ইঙ্গিত করে ড. কামাল হোসেন বলেন, 'রাজনৈতিক প্রয়োজনে দলীয় কর্মীদের লেলিয়ে দেওয়ার মতো নির্দেশ যাঁরা দেন, আমি মনে করি এটা মানসিক অসুস্থতা। এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া উচিত।'
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, 'আর দুই দিন পর নতুন বছর আসছে। শহীদরা যে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্রকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রাখতে হবে। যদি বর্তমান সরকারের ঘোষিত পদ্ধতিতেই নির্বাচন হয় তবে দেশে শান্তি আসবে না।' সমাধানের প্রশ্নে ড. কামাল বলেন, 'সদিচ্ছা থাকলে সমাধান হতে পাঁচ মিনিটের ব্যাপার। চলমান রাজনীতি অস্ত্র, টাকা আর পেশিশক্তির জোর ও একটি রুগ্ণ রাজনীতি ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জে আইভী আমাদের আলো দেখিয়েছেন। আমরা যদি এগুলো বলতে শুরু করি তবে একটি বন্ধন নিশ্চয়ই তৈরি হবে। বায়ান্নতে, চুয়ান্নতে, ঊনসত্তরে, ষোলোই ডিসেম্বরে ও নব্বইয়ে আমরা যেমন জয়ী হয়েছি; ২০১৪-তেও ইনশাআল্লাহ জয়ী হব। আগামীর বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। আর সেই লক্ষ্যে যদি আমরা চেষ্টা না করি তাহলে আমাদের অনেক মাসুল দিতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মানুষকে অনেক বেশি মাসুল দিতে হবে।'
মাইনাস টু নয়, প্লাস ওয়ান প্রয়োজন : তুহিন মালিক
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. তুহিন মালিক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বড় প্রতিপক্ষই হচ্ছে সুশাসন, দেশের সংবিধান। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা দলগুলোর কারোই অগ্রাধিকার নয়।
গণতন্ত্র কেমন হওয়া উচিত- এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও কলাম লেখক ড. তুহিন মালিক বলেন, 'গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে আমরা আসলে শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটি হারিয়ে ফেলেছি। সেই স্থান দখল করে নিয়েছে দুর্বৃত্তায়ন। স্বাধীন দেশের মাটিতে গণতন্ত্রের যে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল তা আজ উল্টো পথে হাঁটছে। এখানে শিষ্টের পালন না হয়ে দুষ্টের পালন হচ্ছে। আইন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কার্যত মনে হচ্ছে, দুষ্টলোকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। যখন দেখি রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে বিকাশের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ভিআইপি মর্যাদায় নিয়ম লঙ্ঘন করে রাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, আইজিপি, ডিআইজি, র্যাবের প্রধান- কেউ জানেন না। অন্যদিকে তুচ্ছ অপরাধে একজন সাধারণ মানুষকে জেলে পচে মরতে হচ্ছে, তাকে উচ্চ মূল্য দিয়ে বিচার কিনতে হয়।'
এ প্রসঙ্গে ড. তুহিন মালিক প্রশ্ন রেখে বলেন, 'তাহলে কি আইন লুটেরা-দুর্বৃত্তদের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে না? এ যেন এক মাকড়সার জাল- ছোটরা আটকে যায় আর বড়রা জাল কেটে বেরিয়ে যায়।'
বিদ্যমান এ গণতন্ত্রকে ড. তুহিন মালিক 'কোরবানির হাটে'র সঙ্গে তুলনা করে বলেন, 'রাজনীতির অবস্থা এমন যে পশুকে চড়ামূল্যে কিনে নেওয়ার মতো। জনগণ সব ক্ষমতার উৎস যদি থাকে, তাহলে বিশ্বজিৎকে কেন সবার সামনে মরতে হলো? আর এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যে বক্তব্য আমরা শুনছি, তাহলে কি বিশ্বজিৎ মুসলমান হলে তাঁর মৃত্যু সঠিক ছিল?'
শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশের মুক্তির পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ড. মালিক বলেন, 'আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গণতন্ত্রের চর্চা থেকে আমাদের বের হওয়া উচিত। ২০ দিন হয়ে গেল, বিকাশকে কেউ খুঁজছে না।' চলমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'চলমান রাজনীতি মূল পথে হাঁটছে না। প্রধান দুই দলেই (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) মূলের চেয়ে কাণ্ড বড় হয়ে যাচ্ছে। দুই দলকেই অশুভ শক্তি চালাচ্ছে। এরশাদ রাজনৈতিক দল করতে পারবেন, এটা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি।'
বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিএনপি নেতা শাজাহান সিরাজ, রাশেদ খান মেনন প্রমুখের সমালোচনা করে তুহিন মালিক বলেন, 'আমরা যাঁদের নিয়ে গর্ব করি, তাঁদের যদি স্খলন হয়- তাহলে আমরা কাদের অনুসরণ করব? বোঝা গেল মন্ত্রিত্বই বড় জিনিস, আদর্শ নয়।'
'নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কলঙ্কিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি খুনি-অপরাধীদের ক্ষমা করে দিচ্ছেন, আর মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ঋণের জন্য একজন কৃষককে কোমরে দড়ি বাঁধা হয়।'
তুহিন মালিক প্রশ্ন রেখে বলেন, 'এ সংবিধান কার? যে সংবিধান নিয়ে কথা বললেই মৃত্যুদণ্ড হবে! যাঁদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে সংবিধান প্রণয়নের জন্য পাঠিয়েছি, তাঁরা তাঁদের স্বার্থে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছেন।'
'বিএনপির সময়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি কেলেঙ্কারি হয়নি, আর এখন তো ব্রিজই খেয়ে ফেলা হচ্ছে। আগে দেশে দুর্নীতির খ্যাতি জাতীয় পর্যায়ে ছিল, এখন তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়েছে', যোগ করেন তুহিন মালিক।
দুই নেত্রীর (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'দুই নেত্রীই বড় সমস্যা। তাঁরা গৌতম বুদ্ধের মতো পূজনীয় হতে চান। দেবীদের (দুই নেত্রী) এ অসুস্থতাই নাকি গণতন্ত্র? ব্যক্তি কি দলের চেয়ে বড়? রাষ্ট্রকে যাঁরা জোগান দেবেন, তাঁরাই যদি বড় হয়ে যান, তবে মৌলিক মানবাধিকারের স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়।'
সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে যাঁরা মাথা ফাটাফাটি করলেন, তাঁরাই এখন আর এর মধ্যে নেই। তাঁরা কিসের ভিত্তিতে এটা বাতিল করলেন?'
সংবিধানকে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষ ভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন- এসব প্রতিষ্ঠানকে কেউ শক্তিশালী করবে না। স্থানীয় সরকার কাঠামোকে কেউ শক্তিশালী করবে না। প্রত্যেক দলের মহাসচিব সব সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হন। মূলত এ মন্ত্রণালয় থেকে যে রেভিনিউ আসে তা ওই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়। তাই একে দুস্থ রাজনৈতিক পুনর্বাসনকেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।'
দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পক্ষে আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেলের দাঁড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'তাহলে উনার (সুরঞ্জিতের) নিখোঁজ ড্রাইভারের পক্ষে কে দাঁড়াবে। অ্যাটর্নি জেনারেলের তো রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা। তাঁরা মনে করেন, যাঁদের জনগণ নির্বাচিত করে ক্ষমতায় পাঠান, তাঁরাই সব সম্পদ-সুবিধা ভোগ করবেন।'
বিদ্যমান এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের ভাবতে হবে এ পেশিশক্তি, কালো টাকার প্রভাবমুক্ত হওয়ার উপায় কী? এর জন্য প্যারাসিটামল দিলে হবে না। ব্যবচ্ছেদ (সার্জারি) করতে হবে। থ্রিজি (নতুন বিকল্প) কিংবা 'এ'-'বি'র বাইরে কে না চায়। বিকল্প বের করতেই হবে। এটা বলা ধৃষ্টতা হবে, এর পরও বলব, হাসিনা-খালেদার চেয়ে ভালো বিকল্প হতে হবে। যাঁরা বিকল্প হিসেবে আসছেন, তাঁরা কার্টুন মার্কা লোক। হাসিনা-খালেদার বিরুদ্ধে তাঁদের চেয়ে কম যোগ্যতার লোক দিলে হবে না। জনগণ ভালো জিনিস দিলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো নেবে। একটা পুরুষ লাগবে। আরব্যরজনীর মতো তেজস্বী পুরুষ। মাইনাস টু দিয়ে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। প্লাস ওয়ান দরকার। এ পরিবর্তনের জন্য দুই নেত্রীর চেয়ে বড় দেবতা হতে হবে।'
রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, 'ফেসবুক-টুইটারের প্রতিক্রিয়া দেখলে বোঝা যায়। পরিবর্তন এখন সময়ের ব্যাপার। ভয়কে জয় করতে হবে। ন্যাচারাল জাস্টিস বলতে কিছু একটা আছে। একজন নিশ্চয়ই দাঁড়িয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধুর মতো। সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।'
দেশে রাজনীতি নয়, অপরাজনীতি চলছে : বদিউল আলম
বিশিষ্ট গবেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, দেশে এখন রাজনীতি নয়, অপরাজনীতি চলছে। দেশে ক্ষমতা আজ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হচ্ছে না। ব্যক্তি বা পরিবারের জন্যই চলছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সংসদীয় কমিটিগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না। এর কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই।
সংসদীয় কমিটি অনেকটা রাবার স্ট্যাম্প বডিতে পরিণত হয়েছে বলেও মত দেন তিনি।
'বিরোধী দলের মধ্যে সংসদকে কার্যকর করার সদিচ্ছা নেই বলে তারা সংসদের বাইরে থাকছে। তাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্বই হচ্ছে সংসদে যাওয়া', বলেন বদিউল আলম। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ না করলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
ড. কামাল বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে, তিনি গণতন্ত্রের সেবক, জনগণের সেবক। তিনি যদি সেটা বুঝতে না পারেন তাহলে তখন সেটা আমাদের বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে।' প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের আগের মতো আবারও জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে জনমত গঠন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন ড. কামাল। তিনি বলেন, 'ষাটের দশকের তরুণদের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর আচরণ গা-সওয়া হয়নি বলেই তারা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলেন। তাই এখন আমাদের গা-সওয়া হলে চলবে না। আমাদেরও রুখে দাঁড়াতে হবে।'
রাজনীতিতে পুলিশ বাহিনীকে নিকৃষ্টভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে মত দিয়ে ড. কামাল বলেন, 'পুলিশকে রুগ্ণ রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। তাদের জনগণের বন্ধু করতে হবে। নিরপেক্ষ, দলীয়করণমুক্ত কোনো দল আমরা দেখতে পাইনি। সুপ্রিম কোর্ট আরো দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার সুযোগ রেখেছিলেন, নির্দেশনা দিয়েছিলেন; কিন্তু সে নির্দেশনা না মেনেই সরকার মাত্র ১০ মিনিটে একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা বাতিল করেছে। যা হতে পারে না।' এ অভিমত ড. কামালের।
ড. কামাল হোসেন বলেন, 'নতুন বছরের প্রাক্কালে বিজয়ের মাসের শেষে আমরা একটা পরিবর্তন চাই। যেখানে নাগরিকদের ভূমিকা থাকবে। রুগ্ণ রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবের বদলে একটি সুস্থ রাজনীতি হবে। যে রাজনীতির জন্য আমরা অতীতে বহির্বিশ্বে অনেক সম্মান পেয়েছি।' এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'স্বাধীনতার পর আমাদের দেশ গরিব ছিল। এর পরও বিদেশে গিয়ে অনেক সম্মান পেয়েছি। তারা আমাদের বলেছে, তোমরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছ।'
ড. কামাল বলেন, 'আমার মনে হয় না সরকারপ্রধান রাতে ভালো ঘুমান। কারণ একজন প্রধানমন্ত্রী সফল হলে ১৬ কোটি মানুষ সফল হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে যাঁরা থাকেন তাঁরা তাঁকে ভালো করতে দেন না।'
১৫ আগস্ট আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, 'যাঁরা জীবন দিয়ে গেছেন তাঁরা কিসের জন্য জীবন দিয়েছেন, সেটা আমাদের বুঝতে হবে। দীর্ঘ সময় আমরা পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়িয়েছি। এখনো আমরা সেই গ্লানি থেকে মুক্ত হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'
বর্তমান সরকারের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল; কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, 'বিএনপিতেও মুক্তিযোদ্ধা আছে, এটা আমি স্বীকার করি। দেশের স্বাধীনতার জন্য মূল যে রাজনৈতিক শক্তি কাজ করেছে সেই দল (আওয়ামী লীগ) যখন এবার জনগণের সমর্থন অর্জন করে তখন কী আশা ছিল আর কী আনন্দ পেয়েছিলাম, তা বোঝানো যাবে না। আশা ছিল দেশে সুশাসন ফিরে আসবে। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।'
১৫ আগস্টে সপরিবারে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের সময় কোথায় ছিলেন- এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ড. কামাল হোসেন বলেন, '১৫ আগস্টের সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম। শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আমি জার্মানির বনে ছুটে গিয়েছিলাম। আমার ভূমিকা কী ছিল, তা শেখ হাসিনাই বলুক। আমি মনে করি, সেই ঘটনা (বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড) দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আঘাত। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর জুলফিকার আলী ভুট্টো কেবিনেট ডেকেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে মুসলিম রিপাবলিকান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।'
পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, 'বাহাত্তরের সংবিধানকে ফিরিয়ে আনতেও কম জীবন দিতে হয়নি। কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীর ৮০০ মানুষ জীবন দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। এসব ভুলে গেলে চলবে না।'
জাতির জনকের সান্নিধ্য পাওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, জীবনে অনেক খ্যাতি-অর্থ অর্জন করতে পারবে, কিন্তু জনগণের সেবা করার চেয়ে বেশি কিছু নেই। হাজার কোটি টাকাও তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।'
পাকিস্তান আমলের কথা উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, "১৯৪৬ সালের ভোটে বাঙালিরা পাকিস্তানকে ৫০ ভাগ ভোট দিয়েছিলাম, আশা ছিল আমাদের অধিকার পাব। কিন্তু যখনই আমাদের ভাষার ওপর আঘাত এলো, অশ্রদ্ধা দেখাল- আমরা একবাক্যে 'নো' বলার শক্তি দেখিয়েছি। এ শক্তি প্রদর্শন করতে পেরে আমরা গর্ব বোধ করি।" রাজধানীতে ৪০-৫০ শতাংশ মানুষের বাসস্থান নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যারা দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছে, তারা কি এটা চেয়েছিল। রাজধানীতে বস্তি উচ্ছেদ করার পর আমি সেখানে গেলে এক নারী আমাকে বলেন, আমার স্বামী বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্ত করে আনতে সংগ্রাম করেছে। আর আওয়ামী লীগের লোকজনই আমাদের উচ্ছেদ করে। এটা কি আমরা চেয়েছিলাম?'
নাগরিকদের দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, '৭৫ ভাগ মেজরিটি থাকলেই সেই ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করা যাবে না। তাকে দেশদ্রোহী বলা শুরু করবে। এটা রাজা-রানির দেশের কথা। জনগণই এ দেশের ক্ষমতার মালিক। সমালোচনা করা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। যারা নাক উঁচু করে বলেন নাগরিক সমাজ কারা, তাদের বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব জনপ্রতিনিধি জনগণের সেবক। আর এটা বলা যদি দেশদ্রোহিতা হয়, তাহলে আমি এ কথা বলে গর্ব বোধ করি।'
দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না বা দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই সব- ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্ত প্রকৃত গণতন্ত্র কি না বাংলানিউজের কনসালট্যান্ট এডিটর জুয়েল মাজহারের এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, 'এ প্রশ্নটি আমার জীবনের বড় পুরস্কার। কারণ এ প্রশ্নেই আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়েছি। আমি দীর্ঘ চিঠি লিখে সেই সময়ে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম।'
সমসাময়িক প্রসঙ্গ টেনে ড. কামাল বলেন, 'দেশে যাঁরা ওপর তলায় আছেন, তাঁরাই দেশের সম্পদ পাচার করছেন। আর প্রবাসীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা উপার্জন করছেন, তাঁরা দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন।' হলমার্কসহ সাম্প্রতিক অর্থ কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'এত সব ঘটনা ঘটছে, কিন্তু এসবের তদন্ত হচ্ছে না কেন? আর এসব ঘটনায় কত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব বিষয় গা সওয়া হয়ে গেছে মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে গা সওয়া হয়নি। তাই ২০১৪ সালে একটি পরিবর্তন এনে মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণ সে পরিবর্তন আনবে।'
'সামনে ১২ মাস আছে। এ সময়ের মধ্যে অন্তত ৯ মাসের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২০ জন লোক কি আমরা বের করতে পারব না?' প্রশ্ন ড. কামালের। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, 'গত নির্বাচনে আমি যাঁকে ভোট দিয়েছি, তাঁকে আর আমি ভোট দেব না। যাঁকে বিশ্বস্ত মনে করতে পারি, তাঁকে ভোট দেব। আর এ প্রক্রিয়া তিন মাস আগে শুরু করলে হবে না। আজ থেকেই শুরু করতে হবে।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামা ও বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর জয়ের উদাহরণ টেনে ড. কামাল হোসেন বলেন, 'সাবেক ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটনের বিপরীতে ওবামার বিজয় কিংবা নারায়ণগঞ্জে আইভীর জয় কেউ ভাবতে পারেনি। তবে আমি মনে করি, সত্তরের নির্বাচনেও এমনই সাফল্য এসেছিল। ২০১৪ সালে এমন একটি পরিবর্তন আসতে পারে।' তিনি বলেন, 'সত্তরে বঙ্গবন্ধু আমাকে চিফ ইলেকশন ইনচার্জ করেছিলেন। হাজারখানেক ভলান্টিয়ার আর কাগজ-কাঠ পেনসিল নিয়ে কার্বন পেপার দিয়ে কপি করে ভোটারদের কপি হাতে নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলাম। রাজধানীতে এমন বাড়ি ছিল না, যেখানে যাইনি। মানুষের মধ্যে একটি অভূতপূর্ব সাড়া এসেছিল, যার ফল আমরা নির্বাচনে পেয়েছিলাম।' 'আজ বাঁচতে হলে দেশকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে,' মত ড. কামালের।
প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে কামাল বলেন, '২০১৪ সালের পর প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর বিদায় দেখতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি সুযোগ পেয়ে যা করেছেন, সে জন্য সুযোগ হারিয়েছেন।'
পদ্মা সেতুর দুর্নীতি প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, 'পদ্মা সেতুর কেলেঙ্কারির পর একজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কেন প্যাট্রিয়ট বলেছেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিরুদ্ধে এজাহার হলো, তিনি গ্রেপ্তার হলেন। আমি তো মনে করি, সেক্রেটারির ওপরে মন্ত্রী, তাঁর ওপরে আরো প্রধানরা যুক্ত থাকেন। এটা সংবিধানের কথা। তাঁরা কেউ এ ঘটনায় দায় এড়াতে পারেন না।'
পুলিশ বাহিনীর প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, '১৮৮১ সালের পুলিশ আইন একবিংশ শতাব্দীতেও চলছে। এটি বদলাতে হবে। পুলিশকে টাকা দিয়ে পোস্টিং-পদোন্নতি নিতে হয়। পুরনো সরকারের সময়কার অনেক পুলিশ সদস্যকে বিদায় করে দেওয়া হয়। আমি নিজে এমন অনেককে আইনিভাবে পুনর্বহাল করেছি। তারা আমাকে বলেছে কিভাবে মন্ত্রীরা ঘুষ নেন। পুলিশকে রাজনীতিবিদরা যারা কুকর্ম করে তাদের খুশি করতে বাধ্য করে। তাই পুলিশকে জনগণের বন্ধু করতে হবে। তাদের মুক্ত করতে হবে।'
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এই সংবিধান প্রণেতা বলেন, 'আমাদের বিবেক ও সংবিধান থেকে দিকনির্দেশনা নিতে চাই। দেশটা কোনো গোষ্ঠী বা পরিবারের নয়। সৎভাবে নির্ভয়ে কাজ করবে, প্রয়োজনে ঝুঁকি নেবে- এমন লোক প্রয়োজন। সারা দেশে ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় এমন লোক নিশ্চেই আছে।'
ড. কামাল বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক শব্দ নিয়ে টানাটানি করতে চাই না। সবাই চাই অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর এ নিরপেক্ষ বলতে এক দলকে বোঝায় না। তবে নিরপেক্ষ না থাকার যে প্রবণতা, দেশের কোনো রাজনৈতিক দলই সেখান থেকে বের হতে পারেনি।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের প্রতি ইঙ্গিত করে ড. কামাল হোসেন বলেন, 'রাজনৈতিক প্রয়োজনে দলীয় কর্মীদের লেলিয়ে দেওয়ার মতো নির্দেশ যাঁরা দেন, আমি মনে করি এটা মানসিক অসুস্থতা। এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া উচিত।'
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, 'আর দুই দিন পর নতুন বছর আসছে। শহীদরা যে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্রকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রাখতে হবে। যদি বর্তমান সরকারের ঘোষিত পদ্ধতিতেই নির্বাচন হয় তবে দেশে শান্তি আসবে না।' সমাধানের প্রশ্নে ড. কামাল বলেন, 'সদিচ্ছা থাকলে সমাধান হতে পাঁচ মিনিটের ব্যাপার। চলমান রাজনীতি অস্ত্র, টাকা আর পেশিশক্তির জোর ও একটি রুগ্ণ রাজনীতি ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জে আইভী আমাদের আলো দেখিয়েছেন। আমরা যদি এগুলো বলতে শুরু করি তবে একটি বন্ধন নিশ্চয়ই তৈরি হবে। বায়ান্নতে, চুয়ান্নতে, ঊনসত্তরে, ষোলোই ডিসেম্বরে ও নব্বইয়ে আমরা যেমন জয়ী হয়েছি; ২০১৪-তেও ইনশাআল্লাহ জয়ী হব। আগামীর বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। আর সেই লক্ষ্যে যদি আমরা চেষ্টা না করি তাহলে আমাদের অনেক মাসুল দিতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মানুষকে অনেক বেশি মাসুল দিতে হবে।'
মাইনাস টু নয়, প্লাস ওয়ান প্রয়োজন : তুহিন মালিক
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. তুহিন মালিক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বড় প্রতিপক্ষই হচ্ছে সুশাসন, দেশের সংবিধান। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা দলগুলোর কারোই অগ্রাধিকার নয়।
গণতন্ত্র কেমন হওয়া উচিত- এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও কলাম লেখক ড. তুহিন মালিক বলেন, 'গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে আমরা আসলে শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটি হারিয়ে ফেলেছি। সেই স্থান দখল করে নিয়েছে দুর্বৃত্তায়ন। স্বাধীন দেশের মাটিতে গণতন্ত্রের যে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল তা আজ উল্টো পথে হাঁটছে। এখানে শিষ্টের পালন না হয়ে দুষ্টের পালন হচ্ছে। আইন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কার্যত মনে হচ্ছে, দুষ্টলোকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। যখন দেখি রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে বিকাশের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ভিআইপি মর্যাদায় নিয়ম লঙ্ঘন করে রাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, আইজিপি, ডিআইজি, র্যাবের প্রধান- কেউ জানেন না। অন্যদিকে তুচ্ছ অপরাধে একজন সাধারণ মানুষকে জেলে পচে মরতে হচ্ছে, তাকে উচ্চ মূল্য দিয়ে বিচার কিনতে হয়।'
এ প্রসঙ্গে ড. তুহিন মালিক প্রশ্ন রেখে বলেন, 'তাহলে কি আইন লুটেরা-দুর্বৃত্তদের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে না? এ যেন এক মাকড়সার জাল- ছোটরা আটকে যায় আর বড়রা জাল কেটে বেরিয়ে যায়।'
বিদ্যমান এ গণতন্ত্রকে ড. তুহিন মালিক 'কোরবানির হাটে'র সঙ্গে তুলনা করে বলেন, 'রাজনীতির অবস্থা এমন যে পশুকে চড়ামূল্যে কিনে নেওয়ার মতো। জনগণ সব ক্ষমতার উৎস যদি থাকে, তাহলে বিশ্বজিৎকে কেন সবার সামনে মরতে হলো? আর এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যে বক্তব্য আমরা শুনছি, তাহলে কি বিশ্বজিৎ মুসলমান হলে তাঁর মৃত্যু সঠিক ছিল?'
শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশের মুক্তির পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ড. মালিক বলেন, 'আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গণতন্ত্রের চর্চা থেকে আমাদের বের হওয়া উচিত। ২০ দিন হয়ে গেল, বিকাশকে কেউ খুঁজছে না।' চলমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'চলমান রাজনীতি মূল পথে হাঁটছে না। প্রধান দুই দলেই (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) মূলের চেয়ে কাণ্ড বড় হয়ে যাচ্ছে। দুই দলকেই অশুভ শক্তি চালাচ্ছে। এরশাদ রাজনৈতিক দল করতে পারবেন, এটা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি।'
বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিএনপি নেতা শাজাহান সিরাজ, রাশেদ খান মেনন প্রমুখের সমালোচনা করে তুহিন মালিক বলেন, 'আমরা যাঁদের নিয়ে গর্ব করি, তাঁদের যদি স্খলন হয়- তাহলে আমরা কাদের অনুসরণ করব? বোঝা গেল মন্ত্রিত্বই বড় জিনিস, আদর্শ নয়।'
'নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কলঙ্কিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি খুনি-অপরাধীদের ক্ষমা করে দিচ্ছেন, আর মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ঋণের জন্য একজন কৃষককে কোমরে দড়ি বাঁধা হয়।'
তুহিন মালিক প্রশ্ন রেখে বলেন, 'এ সংবিধান কার? যে সংবিধান নিয়ে কথা বললেই মৃত্যুদণ্ড হবে! যাঁদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে সংবিধান প্রণয়নের জন্য পাঠিয়েছি, তাঁরা তাঁদের স্বার্থে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছেন।'
'বিএনপির সময়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি কেলেঙ্কারি হয়নি, আর এখন তো ব্রিজই খেয়ে ফেলা হচ্ছে। আগে দেশে দুর্নীতির খ্যাতি জাতীয় পর্যায়ে ছিল, এখন তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়েছে', যোগ করেন তুহিন মালিক।
দুই নেত্রীর (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'দুই নেত্রীই বড় সমস্যা। তাঁরা গৌতম বুদ্ধের মতো পূজনীয় হতে চান। দেবীদের (দুই নেত্রী) এ অসুস্থতাই নাকি গণতন্ত্র? ব্যক্তি কি দলের চেয়ে বড়? রাষ্ট্রকে যাঁরা জোগান দেবেন, তাঁরাই যদি বড় হয়ে যান, তবে মৌলিক মানবাধিকারের স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়।'
সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে যাঁরা মাথা ফাটাফাটি করলেন, তাঁরাই এখন আর এর মধ্যে নেই। তাঁরা কিসের ভিত্তিতে এটা বাতিল করলেন?'
সংবিধানকে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষ ভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন- এসব প্রতিষ্ঠানকে কেউ শক্তিশালী করবে না। স্থানীয় সরকার কাঠামোকে কেউ শক্তিশালী করবে না। প্রত্যেক দলের মহাসচিব সব সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হন। মূলত এ মন্ত্রণালয় থেকে যে রেভিনিউ আসে তা ওই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়। তাই একে দুস্থ রাজনৈতিক পুনর্বাসনকেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।'
দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পক্ষে আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেলের দাঁড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'তাহলে উনার (সুরঞ্জিতের) নিখোঁজ ড্রাইভারের পক্ষে কে দাঁড়াবে। অ্যাটর্নি জেনারেলের তো রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা। তাঁরা মনে করেন, যাঁদের জনগণ নির্বাচিত করে ক্ষমতায় পাঠান, তাঁরাই সব সম্পদ-সুবিধা ভোগ করবেন।'
বিদ্যমান এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের ভাবতে হবে এ পেশিশক্তি, কালো টাকার প্রভাবমুক্ত হওয়ার উপায় কী? এর জন্য প্যারাসিটামল দিলে হবে না। ব্যবচ্ছেদ (সার্জারি) করতে হবে। থ্রিজি (নতুন বিকল্প) কিংবা 'এ'-'বি'র বাইরে কে না চায়। বিকল্প বের করতেই হবে। এটা বলা ধৃষ্টতা হবে, এর পরও বলব, হাসিনা-খালেদার চেয়ে ভালো বিকল্প হতে হবে। যাঁরা বিকল্প হিসেবে আসছেন, তাঁরা কার্টুন মার্কা লোক। হাসিনা-খালেদার বিরুদ্ধে তাঁদের চেয়ে কম যোগ্যতার লোক দিলে হবে না। জনগণ ভালো জিনিস দিলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো নেবে। একটা পুরুষ লাগবে। আরব্যরজনীর মতো তেজস্বী পুরুষ। মাইনাস টু দিয়ে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। প্লাস ওয়ান দরকার। এ পরিবর্তনের জন্য দুই নেত্রীর চেয়ে বড় দেবতা হতে হবে।'
রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, 'ফেসবুক-টুইটারের প্রতিক্রিয়া দেখলে বোঝা যায়। পরিবর্তন এখন সময়ের ব্যাপার। ভয়কে জয় করতে হবে। ন্যাচারাল জাস্টিস বলতে কিছু একটা আছে। একজন নিশ্চয়ই দাঁড়িয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধুর মতো। সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।'
দেশে রাজনীতি নয়, অপরাজনীতি চলছে : বদিউল আলম
বিশিষ্ট গবেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, দেশে এখন রাজনীতি নয়, অপরাজনীতি চলছে। দেশে ক্ষমতা আজ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হচ্ছে না। ব্যক্তি বা পরিবারের জন্যই চলছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সংসদীয় কমিটিগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না। এর কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই।
সংসদীয় কমিটি অনেকটা রাবার স্ট্যাম্প বডিতে পরিণত হয়েছে বলেও মত দেন তিনি।
'বিরোধী দলের মধ্যে সংসদকে কার্যকর করার সদিচ্ছা নেই বলে তারা সংসদের বাইরে থাকছে। তাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্বই হচ্ছে সংসদে যাওয়া', বলেন বদিউল আলম। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ না করলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
No comments