ছোটদের বড় সাফল্য অনেক ছাত্রছাত্রী আছে, যারা শুদ্ধরূপে বাংলা বা ইংরেজী লিখতে পারে না। এ কারণেই সর্বস্তরে মানসম্পন্ন প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষা জরুরী
আমাদের শিক্ষায় নতুন সম্ভাবনার আলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী, অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল পরীক্ষার (জেডিসি) ফল এক সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক পৃথকভাবে এ ফল প্রকাশ করে। এবার প্রাথমিকে ৯৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ইবতেদায়ীতে ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জেএসসি ৮৬ দশমিক ১১ শতাংশ ও জেডিসিতে ৯০ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। অষ্টম শ্রেণীর এই সমাপনী পরীক্ষায় সার্বিক পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক পরীক্ষার এবং দুপুর ১২টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে পৃথক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রায় একই সময়ে স্কুলগুলোতে পরীক্ষার ফল পৌঁছে যায়। ভাল ফল অর্জনকারী স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়। অনেক স্কুলে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল। তারা এক সঙ্গে উচ্ছ্বাস ও আনন্দে মেতে ওঠে। সন্তানদের সাফল্যে বাবা-মার আনন্দের সীমা ছিল না। রাজধানীর কিছু খ্যাতনামা স্কুলে ছিল কিছুটা অন্য ধরনের পরিবেশ। সেখানে ড্রামের তালে তালে নেচে খুদে শিক্ষার্থীরা আনন্দ প্রকাশ করে। ফল প্রকাশের পরই ছিল রাজধানীর মিষ্টির দোকানে উপচেপড়া ভিড়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গত বছরের চেয়ে এবার দ্বিগুণেরও বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ ছাড়া ইবতেদায়ী, জেএসসি ও জেডিসিতে বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।এবার প্রাথমিক, ইবতেদায়ী, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় যে লাখো শিক্ষার্থী সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের প্রতি অভিনন্দন। তাদের সাফল্যে সমগ্র জাতি গর্বিত; কারণ এই শিশু-কিশোররাই জাতির ভবিষ্যত। তারাই আগামীদিনের রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হবে। তবে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রাথমিক ও স্কুল শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী দেশে লেখাপড়ার মান বেড়েছে কি? এখন বিশ্বে প্রয়োগভিত্তিক লেখাপড়ার গুরুত্ব বেশি। ইতোপূর্বে দেখা গেছে, আমাদের দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক ছাত্রছাত্রী পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এ ধরনের অনেক ছাত্রছাত্রী আছে, যারা শুদ্ধরূপে বাংলা বা ইংরেজী লিখতে পারে না এ কারণেই সর্বস্তরে মানসম্পন্ন প্রয়োগভিত্তিক শিক্ষা জরুরী।
জ্ঞান বিকাশ ও আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পৃথিবী দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এই পরিবর্তন নীতি পৃথিবীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেখাতে হবে। পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে সত্যিকার আলোকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী গড়তে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে শুদ্ধরূপে বাংলা ও ইংরেজী ভাষা লেখা, পড়া ও বলা শেখাতে হবে। শেখাতে হবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এছাড়া সঙ্গীত ও শরীরচর্চাকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা জরুরী। বস্তুত হাতে কলমে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই পাঠ্যসূচীতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রয়োজন। সরকার এ লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেনÑ এটাই সবার প্রত্যাশা।
No comments