গৃহহীন ও ক্ষুধার্তের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে
আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ। কিন্তু যখন প্রকাশ পায় যে, এই দেশে ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা তখন সত্যিই আশ্চর্য হতে হয়।
আশ্চর্যজনক মনে হলেও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন গৃহহীন এবং ক্ষুধার্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন শহরজুড়েই গৃহহীন ও ক্ষুধার্তদের যাযাবরের মতো ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। সরকারের বাজেট সঙ্কটের কারণে এদের সহায়তা প্রদান করাও হুমকির মধ্যে রয়েছে। কিছুদিন আগে দেশটির বিভিন্ন শহরের মেয়রদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ রকম চিত্রই তুলে ধরা হয়। ২৫টি শহরের ওপরে পরিচালিত জরিপের অর্ধেকের বেশি শহরে গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে। জরিপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৫টি শহরকে বেছে নেয়া হয়। এ শহরগুলোর আকারে ও সম্পদে ভিন্নতা রয়েছে। এর মধ্যে বস্টন, শিকাগো, ক্লেভল্যান্ড, ডালাস, লসএ্যাঞ্জেলেস, সল্টলেক সিটি উল্লেখযোগ্য। জরিপে দেখা যায়, এসব শহরের ৫১ শতাংশে জরুরী খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। প্রতি ছয়জনের একজন অর্থাৎ ১৭ শতাংশ বয়স্ক এবং ৮ দশমিক ৫ শতাংশ গৃহহীন। এ ছাড়া প্রায় প্রত্যেকটি শহরেই প্রথমবার জরুরী খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন এমন ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে।দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মন্দাই মূলত এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। বৈশ্বিক মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে একটা সময় নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বেকারত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারের ব্যয় সঙ্কোচনের কারণে নতুন কর্মসংস্থানও তুলনামূলক কম হতে থাকে। আর এর ফলে অনেক মানুষকেই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। পরিস্থিতি এখন কিছুটা উন্নতি ঘটলেও দীর্ঘদিনের মন্দার প্রভাব এখনও পুরোপুরি বিদ্যমান। যেসব পরিবার আগে মধ্যম মানের বাড়িতে বসবাস করত, এখন তাদের মাথার ওপরে ছাদ নেই। বেঁচে থাকার জন্য এখন বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সহায়তার প্রয়োজন পড়ছে তাদের।
কিন্তু বেশিরভাগ নিম্ন ও মধ্যআয়ের মার্কিন নাগরিকরা মনে করছেন, ফিসক্যাল ক্লিফ শুরু হলে সরকারী সহায়তা তহবিল হ্রাস পাবে। ফলে জরুরী বেকারত্ব হ্রাস সুবিধার মতো প্রকল্পগুলো বাতিল হতে পারে। এতে সঙ্কট আরও বেশি ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চরম মন্দার সময় দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বেড়েছে। বর্তমানে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ফলে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ ১০ থেকে কমে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু এখনও দেশটির দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশ যা দেশটির অর্থনীতির জন্য এক নেতিবাচক ধারণা। এই দেশটিতে প্রায় ৪ কোটি ৭৭ লাখ লোক এখনও খাদ্য সহায়তার ওপরে নির্ভরশীল। জরিপে অংশ নেয়া ৯৫ শতাংশ শহরেই বিক্রয়কেন্দ্রগুলোয় খাদ্য উপাদান কমানো হয়েছে। অর্ধেকের বেশি শহরে শিশুসহ গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব হয়নি। খাদ্য সমস্যা আগামী বছরে আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।
সাম্প্রতিক সময়ে স্যান্ডি ঝড়,বেকারত্ব সমস্যা,সরকারের ব্যয় সঙ্কোচন নীতিসহ আরও কিছু কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের রিপাবলিকান নেতারা আগামী বছরের জন্য করবৃদ্ধি ও ব্যয় সঙ্কোচন নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে গৃহীত পদক্ষেপ এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে কতটুকু ভূমিকা পালন করবে তাই এখন দেখার বিষয়।
অর্থনীতি ডেস্ক।
No comments