চারদিক- বাইক্কা বিলে সূর্য উৎসব by মশহুরুল আমিন
খুব ছোট একটা দল নিয়ে এবারের সূর্য উৎসব। পাখিদের নিরাপদ বিচরণের জন্য বিখ্যাত বাইক্কা বিলে এবারের আয়োজন। চেনা গেল না? তাই তো? শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত হাইল হাওরের একটি অংশ হচ্ছে এ বাইক্কা বিল। ১৩০টি বিল নিয়ে হাইল হাওর।
হাইল হাওরের তিনটি বিলের স্থানীয় নাম বাইক্কা বিল। মিঠাপানির মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র এ বিল। এ ছাড়া জলজ উদ্ভিদের এক দুর্লভ জাদুঘর বলা চলে এ বিলকে।দেশীয় ও পরিযায়ী পাখিদের কোলাহলে বছরের ৩৬৫ দিনই জমজমাট থাকে বিল। স্থানীয় গ্রামবাসীদের হূদয় নিংড়ানো নিরাপত্তায় পাখিদের বসবাস। পাখিরা বিরক্ত হবে, এমন কোনো কাজ আপনি-আমি করতে পারব না। ঝাকানাকা চকচকে কাপড়, উচ্চ স্বরে কোলাহল অথবা মাইক, বিদ্যুতের জন্য জেনারেটর—এসব কিছুই করা বা রাখা যাবে না।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মিত কার্যক্রম হচ্ছে এ সূর্য উৎসব। বছরের প্রথম দিনটিতে দেশের অপরিচিত বা সাধারণত যাওয়া হয়ে ওঠে না—এমন জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের আয়োজন করা এবং বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখা।
সহস্রাব্দের প্রথম সূর্যোদয়লগ্ন ২০০১ সালের জানুয়ারির ১। সহস্রাব্দের প্রথম সূর্যোদয় দেখতে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে আয়োজন করা হয় প্রথম সূর্য উৎসব। এর পর থেকে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্যোৎসবের আয়োজন করা হয়।
অভিযাত্রী বন্ধুদের মাঝে অ্যাডভেঞ্চার-প্রকৃতি-বিজ্ঞানবিষয়ক মেধা ও সৃজনশীল উদ্ভাবনী শক্তিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রতিবছর নিয়মিতভাবে এ সূর্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ উৎসবে দেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানকর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিক, প্রকৃতিবিদ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, মিডিয়া কর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন।
প্রথমবারের মতো সূর্য উৎসবে যোগ দিতে আগ্রহীদের জন্য জেনে রাখা ভালো, সূর্য উৎসব কোনো বিলাস ভ্রমণ নয়। এর আয়োজক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কোনো ভ্রমণ সংস্থাও নয়। এটা একটা অ্যাডভেঞ্চারমূলক অভিযান। পুরো অভিযানে থাকা-খাওয়া, শোয়া, গোসল, বাথরুমসহ সবকিছুতেই সর্বোচ্চ কষ্ট হবে। যেতে হবে এ কষ্টটা স্বীকার করেই।
আরও যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা প্রয়োজন—সব কাপড় পুরোনো, বহুল ব্যবহূত সাদা, হালকা নীল, হালকা সবুজ হলেই ভালো হয়। লাল-কমলা ইত্যাদি উজ্জ্বল রং ও গাঢ় কালো কাপড় ব্যবহার না করাই ভালো। কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য এবং আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, আপনার সব ব্যবহার্য জিনিস পুরো সময়ই আপনার নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে এবং আপনাকেই বহন করতে হবে। সুতরাং, জিনিসপত্র নেওয়ার সময় এ বিষয়টি ভালো মনে রাখবেন। অংশগ্রহণে আগ্রহীদের অংশগ্রহণ ফিসহ নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। একজনের পরিবর্তে অপর একজনকে উৎসবে গ্রহণ করা হবে না।
অভিযাত্রীদের যা যা সঙ্গে আনতে পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে: বিছানাপত্র (তোশক, চাদর, বালিশ, লেপ, কম্বল) অথবা স্লিপিং ব্যাগ (হালকা ও সহজে বহনযোগ্য)। ন্যূনতম পরিধেয় বস্ত্র, হালকা জ্যাকেট, উইন্ডব্রেকার, সানক্যাপ। টর্চলাইট ও এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাটারি, পানির বোতল (ফিতাসহ যাতে কাঁধে বা ঘাড়ে ঝোলানো যায়), দুরবিন, ডায়েরি, কলম, সানস্ক্রিন লোশন। প্রত্যেকের সম্ভাব্য শারীরিক সমস্যা বিবেচনা করে ওষুধ নিতে হবে। বই পড়তে চাইলে সঙ্গে করে বই।
আমরা যাচ্ছি ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ রাত ১১টা ৩০ মিনিটে। আর বাইক্কা বিল থেকে ঢাকা ফিরব ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি রাতে। এখনো সময় আছে, আমাদের সঙ্গে যাওয়ার।
আগ্রহী বন্ধুরা, বাইক্কা বিল সূর্য উৎসবে যেতে চাইলে আজই যোগাযোগ করতে হবে—তুষার ০১৮১৮০১৫৫৭০।
আপনি যাচ্ছেন কি?
মশহুরুল আমিন
No comments