বাংলাদেশ রেলওয়ে-যোগাযোগে রাখতে পারে যুগান্তকারী ভূমিকা
নটার ট্রেন কটায় ছাড়ে। এমন প্রবাদ চালু আছে আমাদের রেলওয়ে সম্পর্কে। রেলওয়ের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রই অনিয়মে ভরা। এ কারণে যাত্রীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বছরের পর বছর। সরকারও এ খাতে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনছে।
অথচ সঠিক পরিকল্পনা, বিনিয়োগ ও সততা কার্যকর হলে বাংলাদেশের রেলওয়ে খাত হতে পারে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। আর লোকসানের বদনাম কাটিয়ে হতে পারে লাভবান সরকারি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলওয়ের উন্নয়ন অপরিহার্য হওয়ার পরও স্বাধীনতা লাভের পর এ পর্যন্ত কোনো সরকারই এ খাতের উন্নয়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাব ও দুর্নীতি এই খাতকে ক্রমেই লোকসানের জাঁতাকলে ফেলে দেওয়ার পরও এই খাতের প্রতি অবহেলা দিনের পর দিন বেড়েছেই। প্রয়োজনীয় এবং দক্ষ জনবল সংকটও রেলওয়েকে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার পর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অবহেলার কারণে সেগুলো শেষ করতে দ্বিগুণ কিংবা তার চেয়ে বেশি সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্পের ব্যয় কয়েকগুণ বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে, এমন প্রমাণও রেলওয়েতে আছে। আবার কোনো কোনো প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেক। রেলওয়েকে গতিশীল করতে হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করতে হবে। তা না হলে রেলের চাকা চালু থাকলেও সরকারি তহবিলে যথাযথ অর্থ সমাগম হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। প্রতিবন্ধকতাগুলো স্পষ্ট কিন্তু কোনো সরকারই সেগুলো দূর করার আন্তরিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেনি। বরং রেলওয়ের ভূমি নিয়ে কিভাবে অবৈধ ব্যবসা করা যায়, সেদিকে নজর দিয়েছেন দলীয় নেতারা। দাতাগোষ্ঠীর মধ্যে কেউ কেউ রেল খাতের উন্নয়নে নিরুৎসাহী ছিল অতীতে। কিন্তু হালে এর প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনার কথা সবাই স্বীকার করছেন; সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাকে এখনো যুগের উপযোগী বলার কোনো সুযোগ নেই। এখনো রেলওয়ে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশাল ভূমিকা রাখছে। বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে এ খাতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অথচ চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগে এখনো সিঙ্গেল লাইনই রয়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথকে দুই লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা থাকলেও তা কখনো আলোর মুখ দেখছে না। অতি সম্প্রতি রাজধানীর যানজট নিরসনের উদ্দেশ্যে মেট্রো রেল স্থাপনের যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, সরকার পরিবর্তনের পর তা বহাল থাকে কি না কেউ বলতে পারছে না। সব মিলে রেলওয়েকে যেভাবে অধঃপতনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা থেকে রক্ষা করতে হলে সততা, আন্তরিকতা, সঠিক পরিকল্পনা, অর্থায়ন, দক্ষ জনবল কাঠামো সৃষ্টি সর্বাধিক জরুরি বলে আমরা মনে করি।
No comments